কিরে সোহেল উঠিস না কেন?
মাদ্রাসায় যাবিনা?
হ মা যামু, বাজে কত?
৬ টা
ঠিক ৬ টা মা?
হ ঠিক ৬ টা,
মা আর ১০ মিনিট ঘুমাই, ৬টা ১০ বাজলে ডাইকা দিও।
মা বসে থাকে বালিশ এর পাশে, সোহেল
উঠ বাবা।
হ মা। আড়মোরা ভেঙ্গে ঘুম
থেকে উঠে সোহেল, গোসল করে মাদরাসায়
যায়। পান্তা ভাত আর মরিচ ভর্তায় নাস্তা শেষ হয় তার
সোহেল চল কিছু খেয়ে আসি, ডাক দেয় রহিম।
নারে দোস্ত সকালে যা খাইছি, পেট ফুইলা গেছে।
তোর প্রতিদিন এক কথা? যা আমি খাইয়া আসি। বলেই চলে যায় রহিম।
৬ষ্ট শ্রেনিতে পড়া রহিম বুঝতে পারেনা সোহেল
এর কষ্ট, শুধু জানে সোহেল এর বাবা নাই, আর
ওরা গরিব।
ক্লাস শেষ করে বাউলবাগ যায় সোহেল, খুব ক্লান্ত সে, আজ যেতে ইচ্ছে ছিলোনা, তবু যেতে হয়, সেই সকালের পান্তা ভাত আর মরিচ ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে বের হইছিল সে, এখন দুপুর
২ টা, এক কিলোমিটার রাস্তা হেটে হাপিয়ে যায়
সোহেল।
প্রায় এক ঘন্টা পর রিক্সা যোগে বাসায় ফিরে সে,
রিস্কা ভরতি টিন।
বিল্ডিং এর ঢালাই কাজে ব্যাবহার করা হয় এইগুলা।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ৪ টা বাজার আগেই টিন
সোজা করার জন্য একটা হাতুরি আর
ছেনি নিয়ে কাজে লেগে যায় সোহেল।
এইগুলা ওর বাবার ছিল, ও তো আর সব কাজ পারেনা,
তাই শুধু সোজা করে দেয়, আর বাকি কাজ অন্য মানুষ
করে।
কাজ করতে করতে সন্ধ্যা ৬ টা বেজে যায়,
একটা বিস্কিট আর এক গ্লাস পানি খেয়ে ফোন
করে সে,
সুমন চাচা কাজ শেষ।
ঠিক আছে বাবা, আমি রিক্সা পাঠিয়ে দিচ্ছি,
তুমি অইগুলা বুঝায়া দিয়া পরতে বস বাবা।
আচ্ছ চাচা।
রিক্সা আসে, মাল উঠিয়ে দেয় সোহেল,
রিক্সা ওয়ালা তার হাতে ৩০০ টাকা দেয়, তার কাজের
মুজুরে মূল্য ৫০ আর টিন বাবদ ২৫০ টাকা।
১০ টাকা পকেটে রেখে বাকি টাকা মার হাতে দেয়
সোহেল।
ভাইয়া ভাইয়া.।.।.।
কি বল?
আমাকে ৫ টা টাকা দাওনা? আমি আইসক্রিম খাব।
ভাংতি ৫ টাকা ছোটো বোনের হাতে দেয় সোহেল,
আর বাকিটা রেখে দেয় তার কলম লাগবে বলে।
বড় ২ বোন ওখন বিয়ের বাকি, বয়স্ক মা, শুধু
সোহেল এর একার রোজগারেই চলছে এই
অসহায় পরিবার,
গত বছর এক হরতালের দিনে মিরপুর যাবার পথে এক
হানিফ পরিবহনের বেপরোয়া ড্রাইবার চাপা দেয় সোহেল এরে বাবা কে,
ঘটনা স্থলে নিহত হন তিনি
আমি তার বিদেহি আত্তার মাগফেরাত কামনা করছি,
আর সোহেল এগিয়ে যাও ভাই, শুধু চখের লজ্জায়
কখন ও বলতে পারিনি তোমায় কিছু লাগলে আমায় বল
সালাম ছোটো ভাই হাযার সালাম
সত্য ঘটনা অবলম্বনে, দুইহাজার এগারো শালে নিহত হওয়া সালাম মিস্ত্রির ছেলে , এখন মহাখালী এলাকায় ফিল্টার পানির ভ্যান চালায়,
১২টি মন্তব্য
স্বপ্ন
তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ।
শুন্য শুন্যালয়
এতো অল্প বয়সেই পুরো পরিবারের ভার নেয়া, তা চালিয়ে যাওয়া, সোহেলের মতো এমন হাজার কিশোরদের সালাম জানাচ্ছি। একই শহরে বিচিত্র সব মানুষদের জীবন। কাওকে দেখার সময়ই তো নেই কারো। আপনাকে ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
এটাই জীবনের চরম বাস্তবতা ।
হৃদয়ের স্পন্দন
স্বপ্ন, ধন্যবাদ , সাথে দোয়া রাখবেন সোহেল প্রতিষ্টিত হোক
হৃদয়ের স্পন্দন
শুন্য আপু, কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম, ছেলেটার ইগো প্রচুর, তবু কাজের পাশাপাশি কম্পিউটার বেসিক শিখতে বলেছিলাম, শিখেছে, ওর জন্য ফ্রেন্ড এর অফিসে জব ঠিক করেছি বাট ওকে আর পাইনি 🙁
শুভ কামনা, ভালো থাকুন আপনার লেখা মিস করছি
অরণ্য
ভাই, এরা একটু আলাদা বলেই আপনার নজরে এসেছে। আপনি লিখছেন। এদের কে তথাকথিত চাকরি-বাকরি দিয়ে আটকানো ঠিক না বোধহয়। পৃথিবীকে শেখাবে কারা তাহলে?
হৃদয়ের স্পন্দন
সঞ্জয় দা, এ বাস্তবতা আসলে 🙁 কিছু বলতে পারছিনা, কোথায় যেন থমকে যাচ্ছি
অরণ্য
লেখাটি খুবই ইন্সপায়ারিং। (y)
হৃদয়ের স্পন্দন
সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অরণ্য ভাই
নুসরাত মৌরিন
এত ছোট একটা ছেলে অথচ পুরো সংসারের ঘানি একাই টেনে নিচ্ছে।
আর আমরা সুযোগ সুবিধা পেয়েও শুধু হা-হুতাশ করছি জীবন নিয়ে।
রাজনীতির নিষ্ঠুর বলি হয়ে এমন কত অজস্র সোহেলের জীবন আজ বিভীষিকা সে-খবর কেউ রাখে না।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোস্টের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
কঠিন বাস্তব।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ভাগ্য বিড়ম্বিত আর ক্ষুদার তাড়নায় জীবনের ঘানি টেনে চলা এই মানুষগুলোর সংগ্রামের চিত্র সামনে আসলে কেনো যেনো সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করে।
জীবন সংগ্রামে টিকে যাক, জিতে যাক সোহেল। ভালো থাকুক সোহেল।