“Rise of a Genius” এক জিনিয়াসের উত্থান ।
কে সেই জিনিয়াস?
সে গল্পই আজ লিখতে বসেছি ।
জেইন আস্টিন (Jane Astin)।জন্ম ১৭৭৫- মৃত্যু ১৮১৭
যে নাম টি লেখালেখি জগতের সবার প্রায় জানা।
ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক দের মধ্যে একজন নারী লেখিকা । তিনি এমন কিছু উপন্যাস লিখে গেছেন যার বিষয় বস্তু সর্ব কালের,সব সময়ের জন্য এবং যা কিনা ইউনিভার্সাল । যে বিষয়বস্তু একটা দেশ ,কালচার এবং কোন গোস্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । যাকে বলা হয় মানুষের গল্প।
যে বই গুলো তিনি লিখেছেন তার মধ্যে ১) Pride and prejudice 2) Sense and Sensibility 3) Emma ৪) Persuasion 5) Mansfield 6) Northhanger Abbey
গল্পের বিষয় বস্তু নারী পুরুষের মনের ভিতরের গল্প ,আত্মার অন্তঃস্থলের গল্প। যা কিনা সময় কাল ভেদ করে সব সময়ের জন্য বিবেচিত। আর যা মনে হয় আজও তা ঘটছে ।
জেইন আস্টিন তার জীবনের গল্পঃ
তার জীবনের গল্প লিখতে নামকরা বেশ কয় জন লেখক লেখিকা, গবেষক, ফিল্ম পরিচালক , একট্রেস কাজ করেছেন। তার রেখে যাওয়া হাজার হাজার চিঠি পত্র যা ছিল তা থেকে পাওয়া তথ্য বের করতে হয়েছে। যা জেইন লিখেছিলেন তার প্রিয় বড় বোনের কাছে। তার বড় বোন কাসান্দ্রা (Cassandra)অনেক চিঠি পুড়িয়ে ফেলে ছিলেন ।
তবে গবেষক রা এই চিঠি এবং বই এর নভেলের ডায়ালগ থেকে তার জীবনি আবিষ্কার করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার নিজের মনের মধ্যে প্রবেশ করা একটা সহজ ব্যাপার নয় । তার নিজের ভাবনা চিন্তা যা সে তার বোনের কাছে লিখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয় । তার অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তা ভাবনা সেই চিঠিতে ছিল। তার আয়ু ছিল মাত্র ৪১ বছর ।
কাসান্দ্রা মনে করেছিল অনেক চিঠি তাকে ফানি হিসেবে নিবে অথবা মনে হবে সে দুষ্টু। কিছু চিঠি আপত্তিকর বা আক্রমণাত্মকর ।যা অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বা কেউ হয়ত আপসেট হতে পারে।এই জন্য সে অনেক চিঠি পুড়িয়ে ফেলে।
তাদের বাড়ী
যার জন্ম এবং বড় হয়ে উঠা হ্যাম্পসায়ারের একটি নিভৃত নীরিবিলি গ্রামে। তিনি স্ব- শিক্ষিত । সাধারন ভাবে জীবন যাপন করা একটি মেয়ে । এবং এখান থেকেই তিনি হয়ে উঠেন গ্রেটেস্ট রাইটার ।
যার লেখনীর মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় সে ছিল একজন শক্তিশালী এবং ফানি পারসোনালিটির মানুষ । সে যা করতে চায় বা যা হতে চায় তাই সে করে দেখিয়েছে । এই স্থান টিতে সে কোন কম্প্রোমাইজ করে নাই ।
১৭৯৩ সাল
ব্রিটেনের ক্ষমতায় তখন King George III,
এই সময় টিতে তখন ব্রিটেনের ব্যাবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির সময় ,স্লেভ বা দাসত্ব এবং সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করনের সময়।যার মধ্যে দিয়ে ব্রিটেন তার ভাগ্য গড়ে তুলছিল ।
“সবার সমান অধিকার এবং সমান সুযোগ দিতে হবে” এই চিন্তা ধারা তখন শক্তিশালী হচ্ছিল আগের রীতি নীতি ভেঙ্গে দিয়ে।
ফ্রান্স রেভুলেসানের প্রভাব ব্রিটেনে এসে ঢেউ লাগে। মানুষ মানুষে আর ধনী গরীবে ভেদাভেদ মানুষ পছন্দ করছিল না।
ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধে ব্রিটেন জয় লাভ করলেও অস্ত্র কিনতে টাকা খরচ হওয়াতে ব্রিটেন অর্থ কষ্টে পড়ে। যার ফলে চারদিকে হাহাকার আরম্ভ হয়। ব্রিটেন এর দারিদ্র চরম শিখরে উঠে । খাদ্য দ্রব্যের দাম উর্ধ গতি তে বাড়তে থাকে।
সময় টা এমন ছিল যখন নিজের কেমন পরিবারে জন্ম তা দিয়ে মানুষ কে বিচার করা হতো । পরিবারের স্টাটাস নির্ভর করতো অর্থের বিচার দিয়ে, মানুষ হিসেবে নয়।
মানুষের সন্মান নির্ভর করতো কোন স্টাটাস পুর্ন পরিবারে তার জন্ম তা দিয়ে। একটা মেয়ে ধনী পরিবারে জন্ম হলে তার বিয়ে হতো ধনী পরিবারে। ধনী ঘরের মেয়ে বা ছেলের সাথে গরীব ঘরের মেয়ের বিয়ে হতো না।
এই নিয়ম ছিন্ন করার জন্য “ইকুইলিটি” প্রথার উদ্ভব এবং প্রচার হতে থাকে এই সময়ে। “সবার সমান সন্মান এবং সবার সমান অধিকার” এই চিন্তা ধারার উদ্ভব এই সময়ে ।
স্টিভেন হ্যামসায়ারে বড় হয়ে উঠা জেইন আট ভাইবোনের সংসার , ছয় ভাই এবং তারা দুই বোন। এতো গুলো ভাইবোনের মধ্যে বড় হওয়ার ফলে তার সুবিধা হয়ে ছিল নানান রকমের ক্যারেক্টার পাওয়া । সেই ক্যারেক্টার গুলো সে তার গল্পে দিতে পেরেছে।
তা ছাড়া সে একটি করে গল্প লিখত এবং পরিবারের সবায় কে পড়িয়ে শুনাতো । তারা মনোযোগ সহকারে শুনত এবং আনন্দ পেতো । এই আনন্দ তাকে নুতুন করে লিখতে উৎসাহিত করতো ।
বাবা জর্জ আস্টিন । গ্রামের চার্চে একজন প্রধান ধর্ম যাজক ছিলেন । টাকা পয়সা অঢেল না থাকলেও সন্মান ছিল । যেহেতু তিনি চার্চ এর হেড ছিলেন সেই সুবাদে ফ্রী বাড়ী পেয়ে ছিলেন । আশপাশের অনেক জায়গা সমেত বিরাট এলাকা ঘিরে বাড়ী ।আশপাশে অনেক গাছগাছালি । ছিল চাষের জমি ।
বাবার বেতন তেমন বেশি না থাকার জন্য তাকে অন্য কাজও করতে হতো ।
ছোটো বেলায় দুই বোন কে একটা boarding স্কুলে ভর্তি করানো হয় । কিন্তু দুই বোনেই সেখানে মারাত্মক ভাবে জ্বরে আক্রান্ত হয়। জেইন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। জীবনের সেই ক্রান্তি কালে বড় বোন তাকে নার্সিং করে । তাকে দেখা শুনার দায়িত্ব তার উপরে পড়ে । কাসান্দ্রার পরম স্নেহে যত্নে জেইন আস্টিন কে সেবা করে সুস্থ করে তুলে । যাকে বলা হয় “সিবলিঙ্গ পাওয়ার” অর্থাৎ ভাই বোনের শক্তি শালী ভালবাসার টান।
পরে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় । যার ফলে স্কুলের পড়াশুনা আর এগিয়ে যায় নি ।আর সেই সময়ে পড়াশুনার বিশেষ করে মেয়েদের তেমন চল ছিল না।
লাইব্রেরী
তাতে কি হয়েছে ? জেইন পেয়েছে পারিবারিক বিরাট একটা বই সংগ্রহের লাইব্রেরী । সেখানেই তার দিন কাটতো । বই পড়ে পড়ে। সে ছিল স্বশিক্ষিত ।
তবে এটা ঠিক তাদের অঢেল টাকা পয়সা না থাকলেও ছিল একটা সন্মান যুক্ত ভদ্র পরিবার । আর ছিল বিরাট একটি লাইব্রেরী । সেই লাইব্রেরী তে ৫০০ বই এর সংগ্রহ ।
তখন কার দিনে এমন সীমাবদ্ধ অর্থনইতিক অবস্থার মধ্যে এই রকম একটা লাইব্রেরী থাকা একটা remarkable ব্যাপার । যা চোখে পড়ার মতো।
এই বই এর কালেকসানে ছিল “Political justice”, “Revolution”, “Hamlet”, “Prince of Denmark” । বড় বড় নামকরা লেখকের লেখা World of politics, World Of Literature যা ছিল তার নখোদর্পণে । ইচ্ছা করলেই সে টেনে নিয়ে পড়তে থাকে। শুধু এই বই গুলিই নয় আরও একটা জিনিস ছিল । ছিল নভেল Henry Fielding এবং Tom Jones এর লেখা নভেল, Robinson Crusoe এর Galliver’s Travel ।
বই পড়ার নেসা
বাবার পাশে সোফায় বসে, জানালার কার্নিসে বসে, বাড়ীর পাশে বড় বড় গাছের ডালে বসে তার কাজ ছিল মনের আনন্দে বই পড়া আর তা গলদ্ধ করন করা। যা কিনা তার একটা নেসা ।
অবশ্যই বলতে হবে এই গুলোই তাকে নিয়ে যায় আর সাহায্য করে “ভবিষ্যৎ এর জিনিয়াস” হতে । এই বই ছিল “Fuel For her Future genius” বলেছেন তার জীবন নিয়ে গবেষণা করা গবেষক Dr Louse Curran ।
ছোটো বেলা থেকেই জেইন পড়তে ভালবাসে, পড়াশুনার অতিরিক্ত নেসা তাকে নিজেই গল্প লিখতে শক্তি যোগায় । ছোটো বেলা থেকেই জেইন হাস্যরস যুক্ত লেখা আবার তার মধ্যে দিয়েই পলিটিক্যাল মতাদর্শ ফুটিয়ে তুলতেন। তার লেখা একজন পাঠক কে নিয়ে যাবে এমন একটা পৃথিবীতে যেখানে আছে Vivid Fictionat ক্যারেক্টার ।
বাবার দেয়া ডেস্ক
মেয়ের লেখা শুনতে শুনতে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন মেয়ের মধ্যে একটা বিরাট মেধা আছে। যা তাকে নিয়ে যাবে অনেক উপরে। তাই তার সতেরো তম জন্ম দিনে বাবা তাকে নাম করা এক কাঠের কারিগর দিয়ে বানিয়ে দেয়া লেখার ডেস্ক উপহার দিয়ে ছিলেন । যা ছিল জেইন এর জন্য বাবার কাছ থেকে পাওয়া তার লেখার স্বীকৃতি । জেইনের খুশি দ্যাখে কে।
ক্রমশ