মহিলা গ্রুপে আসা ‘রাজিয়া বেগমের’ গল্প এবং গ্রুপে আসা মেয়েদেরকে উজ্জীবিত করা 

 

অনেক দিনে পর রাজিয়া বেগম ক্লাসে আসলো ।

কি ব্যাপার রাজিয়া আপা এতদিন কোথায় ছিলেন ?

“কিতা খইতাম আফা পুতের লাগি কইন্যা টুকাই। দেশে যাইবার লাগতো,  ভালো একটা কইন্যা পাইতাম না আফা ” । কন্যা দিয়ে কি করবে?

“পুতের বিয়া দিবার লাগবো না  আফা । বিয়ার বয়স জায়গি  নি আফা।”

তোমার ছেলে না মানসিক রোগী তা ছাড়া ড্রাগ এডিক্ট ।

“বিয়া অইলে সবতা  ঠিক অয়ি  যাইবগি”

তুমি কি করে জানো সব ঠিক হবে ,যারা জন্ম গত ভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত তারা ভালো হয়না। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করনা রাজিয়া । তা ছাড়া আমাদের ধর্মেও আছে পাগল মানুষের বিয়ে করানো উচিৎ নয়।

“মাইয়া  মানুষের আবার জীবন আছে নি আফা ? এটা কি খতা খইলাই । আমার যখন বিয়া হয় আমার জামাইয়ের বয়স ষাট আর আমি আছিলা তেরো চোদ্দ । ভাতের অভাবে মায়ে দিয়া দিছন । ঘরে সতিনও ছিলা, ছিলা মাইরধর , আগের ঘরের আটজন পোলা পুরি ছিলা। মাইয়া দের আফা মুখ বন্দ করি তাহা নাগে।”

শোন রাজিয়া,  দিন বদলেছে  বা বদল হওয়ার চেষ্টা চলছে । অনেক মেয়ে এখন নিজে জেগেছে এবং অন্যকে জাগার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে।

কারণ মেয়েরাও মানুষ ।তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে। অধিকার আছে ভালো একটা নিরাপদ জীবনের।তুমি কষ্ট করেছো বলে একটা নিরাপরাধ মেয়েকে নিয়ে এসে তাকেও একটা কষ্টকর জীবন দিওনা।

কতগুলো মেয়ে কে নিয়ে আলোচনা করবো আজকে ।তারা কেমন করে খারাপ একটা পরিস্থিতি থেকে সরে  এসে সব রকমের  বিপদ মোকাবেলা করেছে এবং এখন তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে অন্য মেয়েদেরকে মুক্তির পথ দেখানোর জন্য।

এই মেয়ে টিকে দ্যাখো , এর নাম মালালা ইউসুফ জায় । স্কুল যাওয়ার অপরাধে তাকে মাথায় গুলি করে  এক পুরুষ । যে কিনা মেয়েদের স্কুল যাওয়া পছন্দ করতনা। চিকিৎসার জন্য সে ব্রিটেন আসে তার বাবামার সাথে । সে এখানে পড়াশুনা শেষ করে অক্সফর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এবং এখন সে নারী শিক্ষার জন্য “মালালা ফান্ড নন প্রফিট অরগানাইজেসান”  খোলেন। তিনি নোবেল পিস পুরস্কার পেয়েছেন  কারণ তিনি মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য লড়েছেন। তার কাজের স্বীকৃতির জন্য ইউনাইটেড ন্যাসান “মালালা ডে” ঘোষণা করেছেন। এর উদ্দেশ্য পৃথিবীর সব মেয়ে যেন শিক্ষার অধিকার পায়।

তারপর রীতা আর একজন নারী  নিয়ে আলোচনা করেন,যার নাম ‘হালিমা অ্যাডেন’ ,ছয় বছর বয়েসে আমেরিকায় আসেন বাবামার সাথে।  তিনি সোমালিয়ার একজন মুসলমান পরিবারের মেয়ে যিনি কিনা  কমুইনিটির সমস্ত বাধা বিপত্তি পার করে হিজাব পরে মডেল হন এবং “ভোগ ম্যাগাজিনের” কভারে  যাকে দেখা যায়।

তাকে ইউনিসেফের অ্যামবেসাডার বানানো হয়েছে এবং তিনি ছোটো শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। তার মতে সব শিশুদের অনেক আশা থাকে কিন্তু সেই আশা পুর্ন করতে পরিবার এবং সমাজ থেকে বাধা আসে । সেই আশা পুর্ন করতে  ডিসক্রিমিনেসান   এবং   অবিচারের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বের হতে হবে এবং সাহসী হতে হবে।

“নাদিয়া মুরাদ” একজন মুসলিম ইরাকি । যিনি কিনা ISIS এর একটা গ্রুপ কত্রিক ধরা পড়ে  তিন মাস যৌন অত্যাচারের সম্মুখীন হন এবং সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন । এই রকম যুদ্ধ ,  দ্বন্দ্ব, বা সংঘাত ময় অবস্থায় নারীরা সব চেয়ে বিপদে পড়ে । কিন্তু তিনি ভেঙ্গে পড়েন নি। “ভিকটিম অব জেনসাইড ” নামে একটি প্রতিস্টান খোলেন। ২০১৮ সালে নোবেল বিজয়ী হন। জার্মানে বসবাস কারি এই সাহসী নারী যুদ্ধে যে নারীরা এইরকম ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাদের অ্যাডভকেসি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

রোহিঙ্গা নারী সমাজ একটি পিছিয়ে পড়া নারী সমাজ। তারা  ব্যাল্য বিয়ে এবং  জোর পুর্বক বিয়ের শিকার। তারা বার্থ কন্ট্রোল কি জানেনা, একটা নাক ফুল দিয়েই একটা পুরুষ একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে । ঘরে ঘরে ৩/৪ টি  করে বউ একটি পুরুষের । প্রত্যেকের ৮/৯ জন করে সন্তান। তারা  শিক্ষা কি জানেনা।

বাংলাদেশী মেয়ে রিমা সুলতান রিমু, যিনি কাজ করছেন রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে রহিঙ্গা ক্যাম্পে । তার মতে নারীকে জাগাতে হবে তাদের অধিকারের জন্য।

তিনি রেডিও আর  পারফর্মিং এর মাধ্যমে এবং ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে তাদের সচেতনা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছেন ।

এই ভাবে রীতা রাজিয়া খাতুনকে বুঝতে শেখায় নারীকেই নিজের ডিসিসান   নিতে হবে। এবং অন্য নারীকেও সাহায্য করতে হবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। পেছনে টানার জন্য নয়।

লেখক এবং গবেষকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস ( নারী ও শিশু অধিকার কর্মী ) লন্ডন

গবেষণা প্রবন্ধঃ নারীকে এগিয়ে নিতে উজ্জীবিত করা

 

 

 

১৯৪জন ১৯৪জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ