
এক সময় খুব বই পড়তাম। নাহ, পাঠ্যবই নয়। না না রকম গল্পের বই।বাসায় মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে। স্কুলে টিচারের চোখ ফাঁকি দিয়ে। বিশেষ করে রোমেনা আফাজের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম । দস্যু বনহুর সিরিয়ালের কথা না বললেই নয়। কি যে এক আকর্ষণ ছিল দস্যু বনহুর এর প্রতি। তখন মনে হতো, বড়ো হয়ে যখন চাকরি করবো। তখন দস্যু বনহুর সিরিয়ালের সব গুলো বই কিনে পড়বো। যদিও তখন পর্যন্ত ১৩২ নম্বর সিরিয়াল পড়ে ফেলেছি। এসএসসি পাশ করার পর দস্যু বনহুর পড়ার আগ্রহ কমে গেল। সব ধরনের বই পড়ারই অভ্যাস ছিল।আরব্য রজনী, থেকে শুরু করে রূপকথার ড্রাকুলা। কেন জানি না বিভূতীভূষণ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই কম পড়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা কতবার পড়েছি হিসেব নাই। যতবার পড়ি ততবারই নতুন মনে হয়।৭ম শ্রেণীতে পড়োর সময় ম্যাক্সিম গোর্কির মা। তার কিছু পরে কবি নজরুলের রিক্তের বেদন, ব্যাথার দান। কবি নজরুলের উপন্যাস আমার কাছে খুব দুর্ভেদ্য মনে হতো।শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত, দেবদাস, পল্লী সমাজ , পথের দাবী, চরিত্রহীন, গৃহদাহ, দত্তা পড়ার মজাই ছিল অন্য রকম।একটা বই শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই। শঙ্খনীল নীল কারাগার ও নন্দিত নরক পড়ার পর, প্রিয় লেখকের তালিকায় যোগ হন হুমায়ূন আহমেদ।শুধু বই পড়া নয়। গল্প উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে হতো আলোচনা। কোন চরিত্র ভালো লাগলো, কেন ভালো লাগলো। তার চুলচেরা বিশ্লেষণ ছিল আড্ডার বিষয়।
ছাত্র জীবনে বই পড়ার জন্য সবাই কম পাওয়া। বেশিরভাগ বই পড়তে হতো মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে। আরেক সমস্যা ছিল বই কিনে পড়া। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কোন বই কিনে পড়েছি বলে মনে হয় না। বেশিরভাগ বই ছিল বান্ধবীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পড়া। এছাড়া স্কুল লাইফে বিশব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বেশ কিছু মূল্যবান বই পড়া হয়েছে।
এক সময় স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে শুধু বই কিনবো আর পড়বো। কিন্তু সময় মানুষ কে ভীষণ ভাবে বদলে দেয়। নগর জীবনের হাজারো ব্যস্ততার মাঝে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ার সময় কোথায়।বই যে একদম পড়ি না। তা নয়। আগের মতো করে আর হয় না। আমার মনে হয় স্কুল লাইফে যতো বই পড়া হয়েছে, বাকি সময়ে তার অর্ধেক বই পড়া হয়ে ওঠে নি। বয়স, সময়, দায়িত্ব অনেক কিছু জীবন থেকে কেড়ে নিয়ে যায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেক স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায়।
ছবি সংগ্রহ-নেট থেকে।
২টি মন্তব্য
নার্গিস রশিদ
আপনার সাথে আমার বই পড়া নিয়ে মিল আছে । তবে পার্থক্য একটু আছে আর তা হল গল্পের বই ভালো লাগেনা ভালো লাগে জানার বই। এর তৃষ্ণা মেটার নয়। ভালো লাগলো আপনার লেখাটি । শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপা। আমার সব ধরনের বই পড়ারই অভ্যাস ছিল। গল্পের বই বেশি পছন্দ ছিল। এখন কবিতা পড়তে ভালো লাগে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।