
আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-বাইশ)
-আমি টেবিলে খাবার দিলাম সবাই খেতে আসেন মিরার ডাক শোনা গেল। মা কোথায়? আকরাম জানতে চাইল। আজাদ বললো মায়ের প্রেশার বেড়েছে রাতে খাবেন না, চলেন স্যার,ভাবি খেতে চলেন আমরা খেয়ে নেই। সবাই টেবিলে বসল আরাফ চারপাশ চেয়ে দেখল প্রিয়া কোথাও নেই।
আজাদের দিকে চেয়ে দেখল তারও মন খারাপ প্লেটে নাড়া ছাড়া করছেন কিছুই খাচ্ছেন না। সবার প্লেটের একই অবস্থা, মিরা চেয়ে দেখল এই প্রথম প্রিয়া খাবার টেবিলে নেই। আজাদ প্রিয়াকে ছাড়াই খেতে বসেছে, আকরাম সাহেবের প্লেটে রুই মাছের মাথাটা দিল মিরা। সবাই খাবার টেবিলে আচ্ছা প্রিয়া কোথায়.?
জ্বি স্যার,
প্রিয়া ওর রুমে।
প্রিয়াকে ডাক! আমাদের সাথে খাবে। নাহ্ স্যার আমরা খেয়ে নেই, প্রিয়া পড়া শেষ করে ওর মায়ের সাথেই খাবে।
আজাদের জবাব শুনে মনোয়ারা কিছুটা রাগ করলো। মিরার সাথে খাবে মানে!! বাচ্চা মেয়ে কি না- কি বলছে ওটা নিয়ে সবাই মন খারাপ করে আছ।
যাও প্রিয়াকে নিয়ে আস, না আমিও খাব না বলেই প্লেট থেকে হাত সরিয়ে বসে রইলেন।
মনোয়ারা লক্ষ করলেন তার কথা শুনে মিরা, আজাদ কেউ এক চুলও জায়গা থেকে সরল না। আরাফ!
জ্বী আম্মু।
যাও প্রিয়া মা-মনিকে নিয়ে আস তারপর আমি খাব। এবার আকরামও প্লেট থেকে হাত সরিয়ে নিল। আরাফ মায়ের আদেশে প্রিয়ার রুমে গেল ৪ বছরে এই প্রথম সে প্রিয়ার রুমে ঢুকলো “দরজাটা খোলা ছিলো প্রিয়া!
প্রিয়া রুম থেকে কোন আওয়াজ আসছিলো না।
আরাফ কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো নাহ! ভিতর থেকে কোন আওয়াজ আসে না। আরাফ অনুমতি না পেয়ে রুমে প্রবেশ করলো প্রিয়া বিছানায় শুয়ে আছে। কাছে গেল প্রিয়া মা,বাবার খাবার টেবিলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে খেতে চল।
এবারও কোন জবাব নেই! আরাফের কানে হালকা একটা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল, আজকের ঘটনাটা নিয়েই হয়ত প্রিয়া কাঁদছে। আরাফ প্রিয়াকে শান্তনা দিবার জন্য বললো! ওই পিচ্চি তুমি কাঁদছো কেন? খেতে চল।
তুমি না খেলে আমিও খাব না বলে দিলাম। এবার প্রিয়া মুখ তুলল, চোখ গুলো ফোলে লাল হয়ে গেছে, পাগলিটা হয়ত তখন থেকেই কেঁদে চলছে।
প্রিয়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। গুন্ডা ছেলে আমি বিয়ে করতে চাই না! প্লীজ আপনি আব্বু,আম্মুকে বলে দেন।
আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।
বিয়ে করতে চান না।
তাহলে আর আব্বু,আম্মুর মন খারাপ হবে না!! আপনি তো অনেক ভালো ছেলে আমার এই অনুরোধ রাখেন প্লীজ! প্লীজ।
প্রিয়ার নিষ্পাপ মুখটা আরাফের সব কষ্ট দূর করে দিল।
হা হা হা হা আমি গুন্ডা ছেলে বেশ সুন্দর নামটা। প্রিয়াও হি হি হি হি করে হেসে দিল। হুম, আপনি একটা গুন্ডা ছেলেই তো!
প্রিয়ার হাসি বাড়লো সে অনেকটা স্বাভাবিক কান্নার রেশ চোখে মুখে নেই।
আজাদ খাবার টেবিল থেকে প্রিয়া আরাফের হাসির আওয়াজ শোনল। আকরাম মনোয়ারা শোনল মিরা ঘটনা কি ? একটু প্রিয়ার রুমে যাও তো। আকরাম এর কথা শুনে মিরা প্রিয়ার রুমের দরজার সামনে গেল, ভিতর থেকে হাসি শুনতে পেল।
মিরার আর কোন খোঁজ নেই,আজাদ, আকরাম, মনোয়ারা, দাদুমনি একে একে সবাই এসে প্রিয়ার দরজার পাশে আড়ি পাতল। মিরা সবাইকে চুপ থাকার ইশারা করলো এবার আরাফ প্রিয়ার হাসির আওয়াজ আরো বাড়ল।
আচ্ছা পিচ্চি প্রিয়া! এবার বলো তো আমি গুন্ডা ছেলে হলাম কি করে.?
হি হি হি হি তোমার হাসিটা খুব সুন্দর পিচ্চি প্রিয়া।
ধন্যবাদ ভাইয়া বললো প্রিয়া।
-গুন্ডা ছেলে আপনি কখনো আয়নায় নিজের মুখ দেখেছেন?
-নাহ, তো!
-আপনি কত লম্বা দেখেছেন?
-দেখিনি তো!
-আপনি কত সুন্দর দেখেছেন?
-কখনো দেখি নাই।
-আপনার চোখ দুটো কত সুন্দর দেখেছেন?
-আরে বাবা এটাও দেখিনি!
-আপনার হাসিটা কত সুন্দর জানেন.?
-আরাফ মাথা নেড়া নাহ! বুঝাল।
-আপনার নাকটা কত সুন্দর?
– দেখি নাই!
-আপনি কত গুছিয়ে কথা বলেন এটা জানেন.?
-না গো পিচ্চি প্রিয়া জানি নাহ!
সব মিলিয়ে আপনি খুব, খুব, খুব সুন্দর ঠিক পাঞ্জাব নায়কদের মতো বলেই হাসলো প্রিয়া।
তাই তো আমি আপনাকে গুন্ডা ছেলে বলে ডাকি।
-ওরে বাবা আমি তো কখনো আয়নায় মুখ দেখি নাই!!
আমি যে এত সুন্দর এটা প্রথম তুমি বললে পিচ্চি প্রিয়া আর কেউ বলে নাই। তবে আমার আম্মু বলেন আমি নাকি খুব সুন্দর!!
হুম আন্টি ঠিকই বলে আপনি খুব সুন্দর আরাফ ভাইয়া।
-আপনার সাথে আমার কথা বলতে খুব ইচ্ছে করতো কিন্তু গুন্ডা ছেলে আপনি এত লম্বা, এত বিশাল মানুষ বলেই ভয় হতো, তাই দূর থেকে চেয়ে দেখতেই আমার বেশি ভালো লাগে।
-হা হা হা হা করে আরাফ হাসলো সাথে প্রিয়াও হাসি দিল।
-আচ্ছা পিচ্চি প্রিয়া, তুমি আমাকে গুন্ডা ছেলে বলেই ডেকো! নামটা আমার ভিশন পছন্দ হয়েছে, আমি রাগ করবো না ভয় নেই।
প্রিয়া এখন তোমার মন ভালো হয়েছে? প্রশ্ন করলো আরাফ।
-প্রিয়ার ছোট্র জবাব হ্যাঁ।
-গুন্ডা ছেলে আমি তোমাকে বিয়ে না করবো না! প্লীজ আপনি কষ্ট পাবেন না।
-সত্যি প্রিয়া কতটা অঝুঝ আরাফ মনে মনে ভেবে হাসল, পিচ্চি তুমি খুব লক্ষি মেয়ে।
-বাইরে থেকে সবাই আরাফ প্রিয়ার কথা শোনল। লুকিয়ে কারো কথা শোনা অন্যায়! এটা সবাই জানে তবে এত সুন্দর একটা মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরে সবার মুখে হাসি ফুটল।
-আচ্ছা পিচ্চি প্রিয়া আমরা বিয়ে করবো না তবে আমরা ভালো বন্ধু হতে পারি!
-ওকে, গুন্ডা ছেলে বলেই ছোট্র প্রিয়া হাত বাড়িয়ে দিল আরাফের দিকে।
-আরাফ পরম ভালোবাসায় স্নেহে জড়িয়ে প্রিয়ার হাতে হাত রাখল, চার হাত মিলেমিশে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
পিচ্চি প্রিয়া এবার খেতে চল সবাই আমাদের জন্য অনেকক্ষন ধরে খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে.! আরাফের কথা শুনে সবাই দৌড়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসল। প্রিয়া মুচকি হেসে বললো! চল গুন্ডা ছেলে বলেই দুজনে ড্রাইনিং রুমে গেল।
প্রিয়া আজ আজাদ বা আকরাম এর পাশে না! বরং আরাফের পাশে বসে খেল সবাই খুব খুশি।
রাতের খাবার শেষে দাদুমনি বললেন আজ রাতে আর কোন গল্প, আড্ডা হবে না সারাদিন তোমাদের অনেক জার্নি হয়েছে। সবাই নিজ নিজ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়, কারো কোন কথা থাকলে সকালে বাকি কথা হবে।
কিচির মিচির পাখির ডাক সকালের সোনা রোদ রুমে উঁকি দেয়। আরাফ ধীর পায়ে এগিয়ে আসে জানালার কাছে, গ্রীল ধরে প্রকৃতির বিস্তৃর্ণ প্রান্তরে দৃষ্টি ছড়ায়। দুটো চড়াই তখন ফুরুৎ করে উড়ে যায়। দৃষ্টিসীমার বাইরে আরাফ তাদের আর দেখতে পায় না, গুন্ডা ছেলে! কি করছেন বলেই প্রিয়া আরাফের পিচনে দাঁড়ায়।
….চলবে।
১২টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অনুপম, অতুলনীয় লেখা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে মন্তব্য জানিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
সুপায়ন বড়ুয়া
যাক অবশেষে আরাফ প্রিয়ার বন্ধুত্বটাই
জমবে ভাল।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
সবার মন খারাপ দূর হলো, আরাফ প্রিয়ার বন্ধুত্বে সবাই খুশি হলো এটাই ভালো লাগছে।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে মন্তব্য জানিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
তৌহিদ
আরাফ প্রিয়ার কথোপোথন ভালো লাগছে। এই বন্ধুত্ব টিকে থাকুক এটাই কাম্য।
ভালো লিখেছেন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
আমরাও চাই আরাফ প্রিয়ার মাঝে আর কোন বাঁধা না থাকুক, বন্ধুত্বটা অটুট থাকুক।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে মন্তব্য জানিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
সবার মনের থমথমে ভাব দুর হলো,
হাসি আনন্দে যোগ দিল সবাই।
ভাল লাগছে পড়তে।
পরের পর্বের অপেক্ষায়,
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
পিচ্চি প্রিয়া আর আরাফের বন্ধুত্বে সবাই খুশি, বন্ধুত্বটা অটুট থাকুক।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে মন্তব্য জানিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
সুরাইয়া পারভীন
যাক থমথমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো।
প্রিয়া আরাফের বন্ধত্ব থাকুক যুগ যুগ
পরের পর্বের অপেক্ষায় শুভকামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল আপু।
আমরাও চাই আরাফ প্রিয়ার মাঝে আর কোন বাঁধা না থাকুক, বন্ধুত্বটা অটুট থাকুক।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে মন্তব্য জানিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপু।
হালিম নজরুল
আরাফ আর প্রিয়ার সম্পর্ক আরও মধুর হোক
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মতামতে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় এভাবে মন্তব্য জানিয়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।