রুপের ডালি খেলার সের্গেইয়ের মতো এইসব রাতগুলোতে হেটে যাই, তার স্কেটিং রিংকের বাজনা ভালো লাগে বলে আর আমি গাড়ি পাইনি বলে। প্রায় কাছাকাছি হিমে একইরকম নির্জনতায় ডুবে।
কাছাকাছি সাজ পোশাকে, কর্ডুরয়ের পাৎলুন, ভারী জুতো, আর কাঁধের থলে … সের্গেইয়ের সেই ফেল্টহ্যাটের অমিল কেবল।
তার বুকপকেটে হিমশীতল ” পবেদা অর্ডার ক্রস” আর তার নীচে হাড়ের ফাকে আটকে থাকা বুলেটের সার্বক্ষণিক ভোতা ব্যথা, আর আমার বুকপকেটে শীতল কয়েন আর তার নীচে হৃদপিঞ্জরে আটকে পরা মৃত জোনাক। স্বপ্নের ঘুম।
অথচ আমার পাভেলের মতো বাচতে ইচ্ছে করে, নিদেনপক্ষে ইভান, আয়ত্রুশকা, অথবা খামখেয়ালি রুটিওয়ালা বরিসভ।
অথচ, সের্গেইয়ের যুদ্ধদিনের মতো একটা দুরত্ব কেবলই রুপকথার রাতগুলো খুন করে যায়। আর আমি হিমে ডুবে ডুবে একা হেটেই যাই …. প্রতিরাতে আর ছায়ার ভেতর থেকে যখুনি পা রাখি আলোয় তখুনি বুকের সিন্দুকে আড়মোড়া ভাঙ্গে, বালুচরি নকশার সাপ –
বুকের ভেতর মুচড়ে ওঠে গোপনে লালিত, নীলরঙ এক পাপ।
বিড়বিড় করে আউড়ে যাই
– না মরে না মারে,
ন হন্যতে হন্যমান শরীরাঃ
তারপর কানে আসে ” হর মুলাকাত ….. জাগতে জাগতে এক উমর কাটি হো য্যায়সে ”
এইসব কিংখাবে মোড়া টলটলে জোছনার রাতে – জগজিৎ সিংয়ের গান গায় বেপথু ইন্ডিয়ান মাতাল, রোমের রাস্তায় চিল্লায়ে …. আকাশ অন্ধকার, কাল সারাদিন মুখভার থাকবে আকাশের, রোম, অসলো, ঢাকা সবাইকে আগলে রাখে অখণ্ড আকাশ।
আর খন্ডিত জীবনের চৌখুপিতে অবিরাম আলো আধাঁরি এক্কাদোক্কা খেলে।
নোট – ছোট বেলায় বাবা প্রগতি প্রকাশনীর বই এনে দিতেন, রাশিয়ান সাহিত্যের চমৎকার সব অনুবাদ। সেইসব গল্পের চরিত্রেরা এই এতদিন পরেও মাথায় ঘুরপাক খায় …. অনেককাল কেউ বই দেয়না 🙂
১০টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
সেই সের্গেই ভোঁতা বুলেট চেপে চেপে বানালো শীতল কয়েন। হলো অধুনা শিমূল। হৃদপিঞ্জরে যার সাঁপের বাস, সে জোনাকি জ্বালায়, মারেনা। তার চাই কোন শরীর, বিষ উৎপাটনের।
ছোটবেলার পড়া চরিত্রগুলো একদম নিজেরই হয়ে যায় আসলে। খুব সুন্দর। যারা এতো সুন্দর লেখে তারা আমার কাছে সি সার্প, শুধু শুনিই।
বই! সত্যিই কতদিন বই দেয়না কেউ।
আগুন রঙের শিমুল
ভার্চুয়াল সি শার্পেরা রিয়েলিটির ব্লারি ব্যাকগ্রাউন্ড কেবলই 🙂
প্রহেলিকা
তখনকার মস্তিষ্ক কাঁদামাটির মতো ছিল বলেই সব গেঁথে রয়েছে আজোও। এ যেন নিয়তি। নিখাদ সময়টা হারিয়ে গেলেও পীড়ার মাঝে জিইয়ে থাকে। আপনি বরাবরই ভাল লিখেন।
আগুন রঙের শিমুল
ধন্যবাদ প্রহেলিকা (3
ব্লগার সজীব
আজাইরা ব্লগরব্লগর এত ভাল লাগলো কেন?
আগুন রঙের শিমুল
আজাইরা দেইখা মুনেয় 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
“আকাশ অন্ধকার, কাল সারাদিন মুখভার থাকবে আকাশের, রোম, অসলো, ঢাকা সবাইকে আগলে রাখে অখণ্ড আকাশ।”
এই “অখণ্ড আকাশ” নিয়ে কতো কতো ভাবনা।
“আর খন্ডিত জীবনের চৌখুপিতে অবিরাম আলো আধাঁরি এক্কাদোক্কা খেলে।”
আমাদের জীবনের সবগুলো সময়কে এই আকাশ-ই দেখে।
অখন্ড আকাশ দেখে খন্ডিত জীবন, তাই না?
ভাবতে হলো। অনেক ভাবালেন। আপনার লেখার গভীরে যাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বুঝলাম সে ক্ষমতা আমার নেই।
আগুন রঙের শিমুল
হাহাহা আমি গভীর লেখা লিখতে পারিনা। জীবনের খন্ডাংশগুলো পৃথিবী জুড়ে ছরিয়ে গেছে, আমি কি করবো?
মেহেরী তাজ
পাভেল, ইভান, আয়ত্রুশকা,বরিসভ।
এগুলা কি “মা” এর ক্যারেক্টার??? ;?
আগুন রঙের শিমুল
পাভেল আর ইভান উত্তুরে হাওয়া গল্পের চরিত্র, আয়ত্রুশকা ছোট্ট একটা পরী আর বরিসভ খামখেয়ালি বরিসভ গল্পের মুল চরিত্র