ঘটনাটা ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে…
বিয়ের তিন বছর পর আমার স্ত্রীর পরিবার আমাদের প্রেমের পরিণয় মানে আমাদের বিয়ে মেনে নেয় এবং আমন্ত্রণ করে তাঁদের বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি থাকি কুয়ালালামপুর! এখান থেকে জোহোর-বাহরু শহরে যাওয়ার জন্য নিতে এসেছিলো আমার এক মামা শশুর। সাত-আট ঘন্টার ড্রাইভিং রাস্তা তাই মামা আর আমি পালা করে ড্রাইভ করবো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রওনা দিলাম আনুমানিক বিকেল পাঁচটার টার দিকে। আমি ড্রাইভ করছি, প্রায় দুই ঘন্টা ড্রাইভ করার পর ছোট্ট একটা ব্রেক নিলাম একটা রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করার জন্য। ঘটনার শুরু এখান থেকেই! স্ত্রী ওয়াশ রুমে গিয়েই অনেক জোরে চিৎকার দিলো, ও আবার তেলাপোকা খুব ভয় পায় তাই ভাবলাম হয়তো তেলাপোকাই হবে কিন্তু না আমি কাছে যেতেই বললো হাই-কমোডের উপর কেউ একজন বসা। আমি উঁকি দিয়ে কিছুই দেখলাম না, বললাম হয়তো মনের ভুল। ও বললো না একটা চাইনিজ ছেলে বয়স ১০/১১ বছর হবে! শর্ট প্যান্ট, হাফ হাতা চেক কলার টি-শার্ট ইন করে পড়া। বললাম পাগল নাকি লেডিস টয়লেটে ছেলে আসবে কোথা থেকে!? কিচ্ছুক্ষণ পর ও একটু শান্ত হলে হালকা নাস্তা করে আবার রওনা দিলাম মামা ড্রাইভিং সিটে আমি ও স্ত্রী পেছনে। হঠাৎ করেই স্ত্রীর আবার চিৎকার ওই ছেলেটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু মুখটা বিভৎস্য ভাবে থেঁতলানো এই সময় মামা মুখ খুললেন এবং বললেন সেও দেখেছেন এবং সাহস দিলেন হাইওয়েতে এইগুলা সাধারণ ঘটনা এই ব্যাপারে যাতে আর কথা না বলি বলেই রেডিওর ভলিউম বাড়িয়ে দিলেন! কিন্তু হঠাৎ করেই মিউজিকের সাউন্ড কমে গেল এমন হলো চার বার।বাড়ালেই কমে যায় দুই/তিন মিনিটের মধ্যেই.. মামা ভাবছেন আমি হয়তো রিমোট দিয়ে সাউন্ড কমাচ্ছি আর আমি ভাবতেছিলাম মামাই হয়তো কামাচ্ছেন বাড়াচ্ছেন এমন সময় মারিয়া বলে উঠলো মামা সাউন্ড কমাচ্ছেন বাড়াচ্ছেন কেন? তখন বুঝলাম আমরা কমাচ্ছি বাড়াচ্ছিনা অটোমেটিক এমন হচ্ছে রাত প্রায় দেড়টা এতক্ষণে পৌছে যাওয়ার কথা কিন্তু আমরা সেই রেস্টুরেন্টের আশেপাশেই আছি প্রায় আড়াই ঘন্টা ড্রাইভ করার পর ও!! মামা গাড়ি থামালেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ড্রাইভ করতে পারবো কিনা? বললাম পারবো সমস্যা নাই। নিচু সুরে আওড়ালাম- “আমি কি আর কাউরে ডরাই?ভাংতে পারি লোহার কড়াই” বললো চালাও কিছুক্ষণ প্লিজ আমি তোমার পাশেই বসছি! কিন্তু বাধাদিয়ে মামাকে মারিয়ার পাশেই বসালাম পেছনের সিটে।
বুঝতে পারছি মামা ভাগনি ভয় পাচ্ছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। আমিও ভাবতেছি এমন কেন হচ্ছে? মনে মনে সময়ের অংক মেলানোর চেষ্টা করছি আর বাংলা ব্যান্ড অর্থহীনের গান ছেড়ে ৮০/৯০ স্পিডে ড্রাইভ করছি হঠাৎ মনে হলো গাড়ি যেন একটু ভাড়ি হয়ে উঠেছে এবং গাড়ির ভেতর আমার বাম পাশ থেকে খুব পঁচা গন্ধ আসছে এমন বাজে গন্ধ আমি কখনো পাইনি ডাস্টবিনের কাছে ছাড়া। মামা গ্লাস নামিয়ে দিতে বললেন কিন্তু শত চেষ্টা করেও নামাতে পারছিলাম না এমন সময় মারিয়া বললো রেজওয়ান গাড়ির সামনে ওই ছেলেটা স্পিড কমাও তা না হলে accident করবা। এই প্রথম আমিও দেখলাম অনেকটা ধোয়ার মত কিছু একটা গাড়ির সামনে, গাড়ি ব্রেক করতেই মিলিয়ে গেলো কিন্তু মনে হলো গাড়ির নিচে কিছু একটা চাপা পড়েছে, মামার নিষেধ করলেন না নামার জন্য কিন্তু আমি নিষেধ অমান্য করেই নামলাম এবং দেখলাম একটা জংলী শুকর গাড়ির নিচে চাপা পড়েছে, রক্তে ভেসে গেছে গাড়ির নিচ কিন্তু গাড়ির কোথাও কিচ্ছু হয়নি হেডলাইট টা একটু ফাটা ছাড়া! দেখে গাড়ির ভেতরে আসলাম। খেয়াল করলাম পচা গন্ধও নেই.. যেতে যেতে আমাদের রাত সাড়ে তিনটা বেজে যায়। পরদিন সকালে সবাইকে ঘটনাটা খুলে বললে আর এক আঙ্কেল বলেন সেখানে অনেকেই ওই বাচ্চাকে দেখে এবং যারা দেখে তাদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো ভাবে এ্যাক্সিডেন্ট করে, বলে আমাদের ভগ্য ভাল তাই সময়ের উপর দিয়ে গেছে জীবনের উপর দিয়ে নয়।
আঙ্কেল আরও বলেছিলেন ২০০৭ এর শেষের দিকে এক চাইনিজ বড়লোক পরিবার এ্যাক্সিডেন্ট করে ওই রেস্টুরেন্টের দেড়-দুই কিলোমিটারের মধ্যে। ফ্যামিলির সবাই মারা যায় কিন্তু ওই বাচ্চা টা ছাড়া। পরে সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায় একটা ট্রাক আনুমানিক রাত দুইটার দিকে ওই বাচ্চাটাকে ধাক্কা দিয়ে ওর মাথার উপর দিয়ে দিয়ে চলে যায়..আর বাচ্চাটা তখনই ওখানেই মারা যায়…সেই ড্রেসেই ছিলো যেটা মারিয়া মানে আমার স্ত্রী বর্ননা করেছিলো।
ভুত-প্রেত, আত্মা বা জাদু এগুলোতে আমার ভয় খুবই কম এবং আগ্রহ বেশি তবে সেইদিন আমিও বেশ ভয় পেয়েছিলাম! এ নিয়ে সময়ের গোলক ধাঁধাঁ সম্মুখিন দু’বার হলাম!!
ছবিঃ গুগোল
🍷সমাপ্ত
১২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আল্লাহ্ তুমি রক্ষা কর, খুব ভয় পেয়েছি। 🙁
রেজওয়ান
ভুত, পেত্নীর আতুরঘর মালয়েশিয়া! এমন হন্টেড অনেক রাস্তা, বাড়িঘর আছে মালয়েশিয়া!
ইঞ্জা
;(
মায়াবতী
আল্লাহ তুমি মাফ করো, রেজোয়ান এই ঘটনা কি সত্য কইলা ভাই? সোনেলায় সবাই এই গুলা কি সব অঘটন ঘটন কাহিনী লিখতাছো আর আমি ও আবেগে পইড়া ফেলতাছি!!! কি হইতাছে এই সব!!!
শুনো ভাই এতো সাহস দেহায় আর কোনো দিন রাইত বিরাইতে গাড়ি চালায় কোথাও যাইয়ো না বুঝছো, বেশি সাহস দেখানো ভালো না। ভয়ে কলিজা শুকায় গেছে আমার।
রেজওয়ান
জি আপি খুব দরকার না হলে রাতে লং জার্নিতে ড্রাইভ করি ই না😜ভয়ের কোনো কারণ নাই আপি, মানুষতো মরণশীল-তাই হয়তো ভয়টা একটু কম!🌹ঘটনাটা আসলেই সত্যি..
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথমদিন যেদিন লেখাটি পড়েছি ,মন্তব্য লিখতে পারিনি। আসলে কি লিখবো তাই ভেবেছি। সত্যি ঘটনা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকেনা। ভীষন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বিবরন দিলেন,,ভয় না পাওয়াটা অস্বাভাবিক।
গল্পটি ই বুকের জন্যে একদম পারফেক্ট বলে মনে করছি। বাকিটা ব্লগ কতৃপক্ষ দেখবেন। ইংরেজী নববর্ষ ২০১৯ এর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ভালো থাকুন। -{@
রেজওয়ান
জি আপি আসলেই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পরেছিলাম সেইদিন!😖অনেক ধন্যবাদ আপি আপনিও ভাল ও সুন্দর থাকুন সব সময়!😍শুভ নববর্ষ ২০১৯✌
নীলাঞ্জনা নীলা
ভয় পাবার মতো অবস্থায় আছি। আসলে কিছু সত্য আছে যা কাউকে বিশ্বাস করানো যায় না। আবার অবিশ্বাস করার মতো উপায়ও থাকেনা।
দারুণ লিখেছেন।
রেজওয়ান
😞কিছু কিছু সত্য সেভাবে প্রকাশও করা যায় না! আসলে যে ফেইস করে সে ই বুঝে!😒বেশ ভয় পেয়েছিলাম আমরা!ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্য ও সাপোর্ট করার জন্য😍
নীলাঞ্জনা নীলা
সত্যি সবসময়ই যে কোনো অবস্থাতেই সত্যি।
ভালো থাকুন।
তৌহিদ
কি অদ্ভুত ঘটনা!! সত্যি অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এসব ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
রেজওয়ান
আসলেই ভাই! কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা হয় না🙄ভাল থাকুন সব সময়👌