
তোমাদের দেখাদেখি আমিও প্রায়ই ঢুকি,
সুদৃশ্য মার্বেলের মতো কাঁচের জারে,
দূর থেকে মনে হয় ওখানে সবাই শুধু হাসে,
আলো আর আলেয়ার ঝংকারে!
সবাই হাসে, গোল্ডফিস, ওরান্ডা, ক্যাটফিস,
অথচ ভিতরে শুধু শোকসন্তাপের হিসহিস,
সবটুকু জল মাছেদের কান্নার ফসল,
যদিও ফেসবুক ভরা হাসিমাখা অসংখ্য মুখ,
দিনান্তে সেটাও তো দিলনা কোনই সুখ!
অমাবস্যার রাতে নিভে যাওয়া দীপাবলি,
সংগোপনে মেলে ধরে নিষিদ্ধ ফুলের কলি,
এখানে মাছেদের প্রচন্ড অসুখ!
পাখির বাজারে ভোরে বদ্ধ বাতাসের ঘোরে,
অবুঝ বাজরিগরের দল ডাকাডাকি করে,
খাঁচার ভিতরে ক্ষুদের মতো ছড়ানো ছিটানো,
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন আকাশ! কাঁপে জ্বরাক্রান্ত বাতাস!
ওই পাখিরা তো দুর্মর সৈন্যের মতো প্রশিক্ষিত,
তবু পড়ে থাকে মরে কাকডাকা ভোরে,
কে জানে কি নাম তাদের অদ্ভুত অসুখের!
ওদের মতোই আমিও পাঠশালা বেয়ে
সুউচ্চ বিদ্যাপীঠ শেষে খোঁজ করেছি ভোরের,
বলেছে বিলের মাঝে ড্রাগন ফলের মতো চাঁদ
ধীরলয়ে হেসে-
আমার নাকি আকাশের অভাব! এই শোকে
হুট করে মরে যাওয়া মানুষের উদ্ভট স্বভাব!
পাড়ার খড়ের গুদাম ঘেঁষে বসতো বুড়ো দাদু,
উত্তরের শীত চাবাতে চাবাতে বলেছিল-
দাদু পিপড়ার মতো উদ্যমী হও!
আমিতো পিপড়ার সাথে মাথা গুজে আজো,
ঘুরেই চলেছি অবিরত ঘুর্ণায়মান পৃথিবীর মতো,
তবু কেন মিললো না হিসাব নিকাশ?
সিটিস্ক্যান মেশিন বলেছে নিখাদ-
‘পিপড়ার মস্তিষ্কে মনের সংকুলান হয়না’
আমারতো হয়েছে তাদের মতোই মন,
কিভাবে করবো বলো তোমার সাথে নৈশভোজে,
মায়াহরিণের খোঁজে অবিরত বিচরণ!
নাক্ষত্রিক বিকালে আর কখনো হবেনা,
ছোট ছোট সুখ দুঃখের স্বতঃস্ফূর্ত বেচাকেনা!
নিদ্রাহীন রাতগুলো বাজে ঢং ঢং,
সবাই ঘুমাতে গেলে জাগে কেউ কেউ ঠিকই,
কথা বলে আরশোলা, গান গায় টিকটিকি,
ভাবলাম আরশোলা হই! রাতটা তবু আমার হোক,
এই পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলে জাগুক দুই স্বাধীন চোখ!
সকাল বেলায় মেঝেতে উড়ে
আরশোলাদের বেনামি লাশ! ওরাও কি কান্না জানে?
বুঝতে পারে জীবনের মানে?
পুরোটা সময় আড়ষ্ট থাকি ওদের মতো হতে গিয়ে,
কখন হঠাৎ পিষে যাব সভ্যতার পায়ের চাপে!
লেখা ও ছবি ক্রেডিট@ সৌবর্ণ বাঁধন
৯টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
সবই সভ্যতার চাপে পিষ্ট। না হুজুর হা হুজুর গুলো তেলাপোকার মতো টিকে থাকে। আর প্রতিবাদী গুলো মরে বা মেরে ফেলে নিশ্চিহ্ন করা হয়। নিশানা কে বা মনে রাখে। চাপা পরে কালেের ধূলাবালিতে। চোখের জলের রং থাকলে ভালো হতো। কি বলেন?
শুভ সকাল।
সৌবর্ণ বাঁধন
চোখের জলের নানান রকম রং আছে মনোজগতের পটভূমিতে। হয়তো সব দেখা যায়না বাস্তবে। অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
হালিমা আক্তার
আমরা সবাই হয়তো সভ্যতার যাঁতাকলে পিষ্ট। দুর থেকে সবকিছুই আলো মনে হলেও, জীবনটা কাঁচের জারে থাকা গোল্ডফিশের মত। আপনার প্রতিটি লেখা অসম্ভব রকম ভালো লাগে। শুভ কামনা রইলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক অনেক শুভকামনা সুপ্রিয় ব্লগার।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জীবন এমনই হাঁসফাস করে কিন্তু উপায় খুঁজে পায় না। অনেক সুন্দর লেখা।
সৌবর্ণ বাঁধন
জীবনের মানেই হয়তো আজন্ম হাঁসফাঁস। অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
রিতু জাহান
বাহ!
দারুন,, শীত তবে চাবানো গেলে ভালোই হতো, নিজেই খুঁজে নিতাম উষ্ণতা।
এক চিলতে আকাশ যদি কালো মেঘে ঢাকে, তবে আমার সত্যিই আকাশের অভাব,,,আরশোলা কান্না জানে কি!
আমারও প্রশ্ন।
দারুন লিখেছেন।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ জানবেন। উত্তরের মানুষ শীতকে জড়িয়েই বড়ো হয়েছি, তাই শীতকে নিয়ে উদ্ভট সব উপমা আসে মাথায়। ছোটবেলার নির্ঘুম রাতে এই প্রশ্নই মাথায় ঘুরতো, আরশোলা কি কান্না জানে? বিজ্ঞান বলে সুগঠিত মস্তিষ্ক ছাড়া আবেগের স্থান সংকুলান হয়না। তবু আমাদের কল্পনা কি আর বিজ্ঞান মেনে চলে!
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
পাখীর মতো আমরা সবাই খাঁচায় বন্দী — খাঁচার ভিতরে ক্ষুদের মতো ছড়ানো ছিটানো,
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন আকাশ! কাঁপে জ্বরাক্রান্ত বাতাস!