প্রবাসী বিপাশার ডায়েরি

নার্গিস রশিদ ১ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ০২:৫৭:৫০পূর্বাহ্ন অন্যান্য মন্তব্য নাই
প্রবাসী বিপাশার ডায়েরি
বিপাশার আয়োজনের শেষ নাই ।
কিসের আয়োজন?
সুটকেস গোছানর আয়োজন। সাড়ে তিন বছর পর সে যাচ্ছে নিজ দেশে পরিবারের কাছে প্রথম বারের মতো । বিয়ের পর সেই যে দেশ ছেড়ে ছিল আর যাওয়া হয়ে উঠেনি ।
হাজার মন ছটফট করলেও সে যেতে  পারেনি ।
কারন কি ?
প্রধান কারন প্লেন ভাড়া  দেয়ার  মতো টাকা তার কাছে নাই। হাজবেন্ডের কাছে তাও নাই। তা ছাড়া এতো টাকা স্বামীর  কাছ থেকে নিয়ে দেশে যাবে তা বিবেকে বাধে।
তার নিজের কামানো আর স্বামীর জমানো টাকা দিয়ে মাথা গোঁজার আস্তানা করতে সব টাকা ফুরিয়ে গেছে।
পরিবারের সব ভাইবোনের জন্য জিনিস নেয়া বিরাট খরচের ব্যাপার । পরিবারটি ও বেশ  বড় ।
তা ছাড়া মার জন্য সব চেয়ে  বেশি জিনিস সে নিয়েছে। সে সময় দেশে কিছুই পাওয়া যেতো না আজকের মতো।
শুধু  ভাই বোন নয় তার সাথে আছে তাদের ছেলে মেয়ে ,বোন জামাই,ভাই বউ, নানা, এবং শ্বশুর বাড়ির লোক  জোন।
বিপাশা সব কিনেছে বাচ্চার বেনিফটের টাকা জমিয়ে জমিয়ে ।
একটা বাচ্চা হয়েছিল ভাগ্যিস তাই বেনিফিট টা পেয়ে ছিল।
ভেবে ছিল এতো আকাঙ্ক্ষার পরে সে যাচ্ছে অনেক দিন থাকবে এবং আঁশ মিটিয়ে থাকবে ।
কপালে থাকলে তো ?
এতো এতো জিনিস কিনলো বিপাশা  তার কোন থ্যাংকস নাই। বরং জিনিস ভালো হয়নি তাই কানে আসলো ।
 এই খানেও বিরাট গ্যাপ । বিপাশা বলতে পারেনা তার অর্থনৈতিক টানা পোড়নের কথা আর পরিবার ভাবে বিরাট ধনী । মা বা ভাইবোন দের কষ্টের কথা বলে দুঃখ দিতে চাইনি বিপাশা। আর সেটায় কাল হয়েছে। কেন যে দেশের মানুষ মনে করে প্রবাসে গেলেই ধনী ।
একবারও কেউ প্রশ্ন করেনা “ভালো ছিলি তো”
“এতো প্লেনের ভাড়া কোথা থেকে যোগাড় করলি”?
“বাচ্চা টা হল কেউ ছিলনা পাশে কি ভাবে সামাল দিলি একলা একলা “?
 এগুলো শোনার ভাগ্য নিয়ে বিপাশা বা বিপাশার মতো শত শত প্রবাসীর ভাগ্য নয়।
কারন সে অভাগা প্রবাসী। তারা  কে মরতেও হবে একলা একলা।
অসুখ বিসুখে বা অপারেশন তাও সামলাতে হবে একলা একলা । অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে পানি দেবারও  কেউ নাই ।
প্রবাসী হয়েছ তো সব শেষ ।
তোমার সঙ্গে সম্পর্ক এখন টাকা পয়সার “লেনা দেনার” ।
বিপাশার ডায়েরি থেকে ।
১০১জন ৮জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ