জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ “আধুনিক ব্রিটেন” (১৯০০-২০২৫) উপনিবেশ শেষ, অর্থনৈতিকএবং রাজনৈতিক ক্ষমতা দ্রুত নিচে নামা , সমতা,সাম্য, ন্যায়পরয়ানাতার উদয়
এই সময়টিতে ব্রিটেনের ইতিহাসে বড় বড় উল্লেখ যোগ্য ঘটনা ঘটে ।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। তারেই পরিপ্রেক্ষিতে এখানে সব কিছুর মোড় ঘুরে যায়। যুদ্ধের পর ব্রিটেন তার সব সাম্রাজ্য হারিয়ে ফেলে। তার সাথে সব ক্লাস সিস্টেম বিলীন হয়। তার সাথে যোগ হয় সোশাল টেনশন ।
২০th সেন্চুরি তে সমাজের যে যে পরিবর্তন হয়ঃ
১) জেন্ডার ইকুলিটি বা নারী পুরুষে সমতা ২) দুটো বিশ্ব যুদ্ধ সমাপ্তি ৩) ওয়েল ফেয়ার সিস্টেম বা সামাজিক নিরাপত্তা আরম্ভ (১৯৪৬) ৪) লেবার পার্টি শক্তিশালী১৯৪৫ ৫) সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ৬) ১৯৪৮ NHS প্রতিস্টা ,অর্থাৎ সব মানুষের ইনকাম থেকে ট্যাক্স কেটে রাখা ।
মালটি কালচারাল দেশঃ
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর লেবার সর্টেজ পুরন করতে উপনিবেশ করা দেশ গুলি থেকে প্রচুর লোক আনা হয়। নানা দেশের নানা ইমিগ্রেন্ট লোক আসাতে তাদের খাবার মিউজিক , কালচার ব্রিটেনে আসে । যার ফলে ব্রিটেন মালটিকালচার দেশে পরিণত হয়।
ভিয়েতনাম যুদ্ধঃ
১৯৬০-১৯৭০ পর্যন্ত চার দিকে প্রটেষ্ট আরম্ভ হয়।যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য।
ফেমিনিজম বা নারীবাদ ডেভেলাপমেন্টঃ
১৯৬০ সালে “বার্থ কন্ট্রোল পিল” আবিষ্কার হয় এবং যার ফলে মেয়েরা ভিক্টোরিয়ান আমলের মত গাদা গাদা বাচ্চা নেয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। মেয়েরা স্বাধীনতা পায় ,সময় পায় এবং বেরিয়ে আসে কাজে।
১৯৬৭ সালে অ্যাবরসান আইন এবং ১৯৬৯ সালে ডিভোর্স আইন পাস হয়।
১৯৪৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে বিরাট অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন আসে।
এই সময়ে ব্রিটেনের শক্তি এবং ক্ষমতা দ্রুত নামতে থাকে এবং পৃথিবীর রাজনীতিতে নিজের পজিসান আগের মত আর থাকে না ।
উপনিবেশ করা দেশ একের পর এক স্বাধীন হতে থাকে।
‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’ যোগ দায় আবার তা থেকে বেরিয়ে আসে।
শিল্প উৎপাদনের দেশ থেকে সমস্ত কল কারখানা একের পর এক বন্ধ হতে থাকে। এখন ব্রিটেনের ইনকাম আসে বাইরের দেশ থেকে ছাত্র আনা আর সার্ভিস দেয়া থেকে । জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা কঠিন হয় । ইনফ্লেসান আর রিসেসান বেড়ে যায়। তাই পরিবার স্টার্ট করতে চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে।
শিল্প বিপ্লব এবং সমাজে তার প্রভাবঃ
১৭৬০ সালে ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়। যার ফলে ওয়ার্কিং ক্লাসের সৃষ্টি হয়। ওয়ার্কিং ক্লাস সৃষ্টির ফলে সমাজে পরিবর্তন আসে।
গ্রাম থেকে দরিদ্র লোকজন শহরে আসে কাজের আশায়। তাদের জীবন মান ছিল অসম্ভব খারাপ। বাড়িঘর নাই, রাস্তায় বা বস্তিতে গাদাগাদি করে থাকতেো । খাবার মান খারাপ থাকায় পুষ্টি হীনতা ছিল সাধারণ ব্যাপার । অসুখ হলে সর্ব সান্ত হতে হতো।
১৮৮৬-১৯০০ সালে চার্লস বুবের ‘প্রভার্টি সার্ভে’ থেকে জানা যায় দারিদ্র্যের কারনে তারা দায়ী নয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তারা দারিদ্র্যের শিকার । দরকার তাদের প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
২০থ সেঞ্চুরির আপার ক্লাস বুঝতে পারে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
১৯০৮ সালে শুরু হয় সমাজ সংস্কার । ১৯০৯ সালে মিনিমাম মজুরী নির্ধারণ হয় ।
মানুষের মধ্যে মরালীটি, ফেয়ার মাইন্ডেড বা ন্যায় বিচার বৃদ্ধিঃ
মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন হয় । এটা যে খারাপ তা তারা বুঝতে পারে। সমাজ থেকে ক্লাস সিস্টেম অপসারণ হয়। সবায় মানুষ আর সবার সমান অধিকার আছে ।”ইকুয়াল রাইটস ইকুয়াল অপরচুনিটি” আইন পাস হয়। অর্থাৎ “সবার সমান সুযোগ সমান অধিকার” আছে সবকিছুতে ।
১৯ শতকে ট্রেড ইউনিয়ন সৃষ্টি হয় । তার ফলে কেউ যদি মজুরী কম দায় ওয়ার্কাররা স্ট্রাইকে যেতে পারবে। কাজের জায়গায় উপরের বস খারাপ ব্যাবহার করতে পারবে না। অন্যায় আচরণ করতে পারবে না ।
১৯১১ সালে “National Insurance Act” পাশ হয়। যার ফলে লেবার শ্রেণী অসুস্থ,আঘাত প্রাপ্ত বা বেকার হয়ে পড়লে তাদের ভাতা দেয়ার ব্যাবস্থা হয়। সবার জন্য পেনসন ব্যাবস্থা অনুমোদিত হয়।
নারী পুরুষে সমতাঃ
বিংশ শতাব্দী নারী পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে একটি বিরাট টার্নিং পয়েন্ট । কাজের ক্ষেত্রে, কাজ পেতে, পরিবারে, সম্পত্তির অধিকার ,সিঙ্গেল মাদার হলে নিরাপত্তা এবং বাচ্চাদের সুযোগ বৃদ্ধি ,ফ্রী আবাসন , ডিভোর্স আইন পাশ, বাধ্যতা মূলক ফ্রী স্কুল, বিবাহ আইন, যোরপুর্বক বিয়ে বন্ধ এবং নারী নির্যাতন আইন পাশ এসময়ের বিরাট অর্জন।
সমাজের “শ্রেণী বিভাগ” লুপ্ত হতে থাকেঃ
“শ্রেণী বিভাগ ” ব্যাপার টি জনপ্রিয়তা হারায়। নিজেদের ক্লাস নিয়ে “Attitude” বা হাভভাব বা গর্ব দেখানো বা তার প্রভাব খাটিয়ে সেবা আদায় বন্ধ হয়। সরকারের সব প্রতিস্টানে সেবা দান ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার এবং তাদের কাজ সেবা দেয়া পদের ক্ষমতা দেখানো নয়।
রাজার ক্ষমতা বিনাশ, উপনিবেশ হাত ছাড়াঃ
মোরালীটির আর একটি নাম হল যোরপুর্বক অন্য দেশ দখল চলবে না। চারদিকে “এন্টি কলোনি” মুভমেন্ট এর প্রভাব পড়ে রাজতন্ত্রে। সর্ব প্রথম ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়া স্বাধীন হয়। তার পরে একে একে সব দেশ স্বাধীন হয়ে যায় ।
ইমিগ্রেসানঃ
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রচুর লোকের দরকার হয়। তখন ব্রিটেন কলোনি করা দেশ গুলো থেকে মানুষ নিয়ে আসে । ১৯৪৮ সালে “British Nationality act” দ্বারা প্রথম ১০০০ প্যাসেঞ্জার নিয়ে জামাইকা থেকে লোক আনা হয়। তার পরে ভারত,পাকিস্তান , বাংলাদেশ ,আফ্রিকা ,শ্রীলঙ্কা থেকে অনেক লোক আসে ব্রিটেনে।
ব্রিটেন হয়ে যায় নানা ধর্ম, বর্ন , কালচার,ভাষা ভাষীর দেশ।
বর্তমানে ব্রিটেন আর ক্ষমতাধর শক্তিশালী দেশ নয়। মিডিয়াম সাইজ এর ক্ষমতা। এটা নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কারন নেই ।
কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায় । একটা জাতি হিসেবে এটাকে গ্রহণ করতে না পারা ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বর্তমানে সিরিয়াতে যা ঘটছে তাতে ব্রিটেনের চিৎকার করে কিছু বলা থেমে গেছে।
জাতিগত ভাবেই হোক আর আন্তর্জাতিক ভাবেই হোক ব্রিটেনের ভাষ্য খুব কম মানুষই কেয়ার করে। এটা সত্য আন্তর্জাতিক ভাবে কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব আগের মতো আর গুরুত্ব পায় না ।
প্রথমে দখলের পর দখল তার পরে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর দেউলিয়া,তারপরে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর সাথে স্নায়ু যুদ্ধ । এগুলোই হল এই শতাব্দীর আধুনিক ব্রিটেনের রাজনীতি আর অর্থনীতির গল্প।
হুসনুন নাহার নার্গিস ,লন্ডন
তথ্য সূত্রঃ
20th Century Britain Economic,Cultural and Social Change . Nicole Robertson John Singleton Avram Toylon
In brief Early 20th century London. BBC/Bitesize
Britain 20th Century Study/Smarter
Britain in the 20th century , Progress and Deeline By Oxford University Press
Modern England From the 18th century ,Webbb.R.K. 91980)
Changing view on Britain History ,Harvard University Press , Furber ,Elizabeth Chapin.