জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ গৃহপালিত,বাধ্য,অর্থশূন্য শিক্ষা ছাড়া নারী মানেই “আদর্শ নারী” (ব্রিটেনে ১৮০০ শতকে নারী )
পশ্চিমা বিশ্বের বর্তমান একুশ শতকে বসবাস কারি মানুষের  পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন ভিক্টোরিয়ান আমলে নারীর অবস্থান কি ছিল ।
“রি প্রডাকটিভ সিস্টেম” অর্থাৎ বাচ্চা জন্ম দেয়ার ব্যাপার টি একজন নারীর থাকে তাই একজন নারীকে সে  সময়ের পুরুষরা দেখতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারা অক্ষম মানুষ হিসেবে । কারন এই কাজে লিপ্ত থাকতে থাকতেই তার জীবন কাটত । ছিলনা বার্থ কন্ট্রোল । অভাগা নারী । গরু ছাগলের মত তাকে একটার পর  একটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভ ধারণ করে চলতে থাকতে হতো।
 পুরুষের দৃষ্টিতে নারী ইমোসনাল,  এবং unstable.
যেই তারা বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করতো  সেই  একজন নারীকে  মোটামুটি স্লেভের মত জীবন যাপন করতে হতো।
বিয়ে করা মানেই তার নিজের অস্তিত্ব শেষ।স্বামীর অস্তিত্বই তার অস্তিত্ব । নিজের আলাদা কোন সিদ্ধান্ত  থাকতে পারবেনা । স্বামীর অঙ্গুলি হেলনে তাকে উঠাবসা করতে হবে। সে হবে গৃহপালিত । বিবাহিত মানেই সম্পূর্ণ ভাবে স্বামীর কাছে আত্মসমর্পণ এবং স্বামীর সুপারভিসনে তাকে চলতে হবে।
অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতা হীন করে রাখাঃ 
একজন নারীর হাতে টাকা বা  সম্পত্তি থাকলে সে শক্তিশালী হবে এটা পুরুষ মানুষ চাইতো না ।এটাতে  তাদের পৌরষত্যে  বাধে ।তারা দেখতে চাই  দুর্বল নারী।
মাথার উপরে ছাদ  এবং দুইবেলা খাবারের নিশ্চয়তার জন্য  এবং আমি “বিবাহিত” এটা দেখানোর জন্য নারী তার সম্পত্তি বা  টাকা পয়সা যা বিয়ের  আগে যা ছিল   বা  বাবার কাছ থেকে যা পেতো তা স্বামীর কাছে দিতে ব্যাধ্য থাকতো। সেগুলোর মালিক নারী আর নয় সেগুলো স্বামীর।নিজের বলে সে কিছু রাখতে পারবে না ।
ভালো নারীর সংজ্ঞা
স্ত্রী কে মারধোর না করার জন্য আইন ছিল না। একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ঘরে বন্দী করে যা ইচ্ছা তাই করতে পারতো। সাপ্রেস ,ব্যাধ্য থাকা, মাথা নত করে সব মেনে নেয়াকে “একজন ভালো নারী ” বলে মনে করা হতো । শুধু স্বামী নয় সমাজ এবং ধর্ম মতেও তাই মনে করা হতো ।
এই ভাবেই একজন বিবাহিত নারীর কাছ থেকে অন্যায়,   অন্যায্য জিনিস আশা করা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল ।
স্বামী পরিত্যাগ? 
সম্ভব নয় । আইন নাই । যতই ড্রিংক করে মারধোর করুক, চিৎকার করে ভাঙ্গাচুরা করুক বা  পরকীয়ার দোষ তার থাক, বিচার চাইলে বা ডিভোর্স চাইলে  প্রমাণ দেখাতে হবে  নারীকে।  কিন্তু স্বামী ছোটখাটো কারনেই  স্ত্রীকে ছাড়তে পারতো ।
শিক্ষা?
নারীর জন্য শিক্ষা নয় । বাবার বাড়ি তে থাকা অবস্থায় বাড়িতে গৃহ শিক্ষকের কাছে ভাষা শিক্ষা,ঘরকন্যা  আর পিয়ানো এটাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে ।  স্কুল গমন নয়। স্কুল যাবে পুত্র সন্তান। বেশি শিক্ষা স্বামীরা পছন্দ করেনা। শিক্ষিত হলে চোখমুখ খুলে যায় ,দমিয়ে রাখা যাবে না ।এই ছিল পুরুষের মনোভাব ।
বাবার সম্পত্তি? 
না সেটাতেও মেয়ের ভাগ নাই তা পাবে পুত্র । যদি কোনো বাবা সম্পত্তি দায় যৌতুক হিসাবে তা স্বামীর দখলে থাকবে তার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। শুধু তাই নয় তার জুয়েলারি টাকা পয়সায় তার আর নিজস্ব নয়।
‘স্বামীকে খুশি রাখা’ কিভাবে? 
বোকা বোকা ভাব দেখানো,  ন্যাকামি করে কথা  বলা এবং জেনেও না জানার ভাব দেখানো একজন আদর্শ নারীর মুখচ্ছবি ধরে রাখতে হবে । যার অর্থ “তুমিই বেশি জানো”
ওয়েস্ট লন্ডনের হাইড পার্ক কর্নার বা রিজেন্ট পার্কের সুরম্য অট্টালিকার কাছ দিয়ে চলতে গিয়ে ভিক্টোরিয়ান আমলের  রঙ্গিন পালক গোঁজা ফ্যান্সি হ্যাট পরা মেয়ে গুলোর ছবি ভেসে উঠতে পারে ,  যখন চল ছিল   “বিয়ে” একজন নারীর সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। মাথার মুকুটের মত সন্মানজনক  ।
যার পেছনে ছিল Unfair expectation ,unjust requirements . 
“Marrage is the crowning achievement of a woman’s life”
“As with marriage however there were unjust requirements and unfair expectation”
“এই ভাবে একজন নারীর কাছ থেকে অন্যায় অন্যায্য ভাবে ব্যাবহার আশা করা হতো”
তথ্য সূত্রঃ 
British women in the nineteenth century, Kathryn Gleadle
Women work of sexual politics,  Bridget Hill
A history of Divorce in Western Society,Cambridge Phillips
English MaritalViolence in Litigation,Literature and the press ,Bailey Joanne
Victorian Era Women’s Rights,VL McBeath
১৭৯জন ৫০জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ