জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ “কুইন ভিক্টোরিয়া” ব্রিটেনের রানী আর পাক ভারত উপমহাদেশর সম্রাজী
সময় টা ১৮৩৭ । William the fourth এর মৃত্যুর পর ১৮ বছর বয়েসে তাকে ব্রিটেনের রানী হতে হয়। তিনি ছিলেন লয়াল , স্বাধীন চেতা, ডিটারমাইন্ড, অনেস্ট এবং জেনারাস মনের মানুষ।
ব্রিটেনে , তার শাসনকাল অর্থাৎ উনিশ শতক ছিল একটা “পরিবর্তন” এর সময় ।
সে সময় টেকনলজিক্যাল এবং মেকানিক্যাল আবিষ্কার ইউরোপিয়ান সিভিলাইজেসান কে একটা নুতুন রূপ দিচ্ছিল । কিন্তু ভিক্টোরিয়া এই পরিবর্তন কে বাধা দিতেন।
ভিক্টোরিয়া পলিটিক্যাল পাওয়ার কার্যকর করার ক্ষেত্রে যা করতেন তা ছিল তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং তার অজান্তেই সব কর্তব্য পালন করতেন। অর্থাৎ তার ভূমিকা তেমন ছিলনা।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্র চালাতে তার ভূমিকা ছিল “সিরমনিয়াল” ,অর্থাৎ বাইরের দেশ থেকে কেউ আসলে তাকে অভ্যার্তনা জানানো বা হ্যান্ড সেক করা ইত্যাদি ।
এই ভাবেই রাজতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছিল ।
রানী হওয়ার পর তার ভূমিকা কি সে সম্পর্কে তার পরিষ্কার ধারনা ছিল না। তার সিংহাসনের কাজ কি তাও স্পষ্ট ছিল না।
তার মৃত্যুর পর তার পুত্র সপ্তম এডওয়ার্ড এর সময় রাজার ক্ষমতা “পলিটিক্যাল ফোকাস” থেকে একেবারেই চলে যায় এবং তা শুধু মাত্র “সামাজিক ফোকাসের” মধ্যে সীমাবদ্ধ হয় ।
আর এভাবেই রাজতন্ত্রে রাজা রানীর ভূমিকা চেঞ্জ হয়ে গেল । আর যা হয়ে ছিল ভিক্টোরিয়ার আমল থেকেই ।
বিবাহঃ
১৮৪০ সালে ১০ই ফেব্রুয়ারী প্রিন্স আলবার্ট এর সাথে তার বিয়ে হয়। অনেক গুলো ছেলে মেয়ে (নয় জন) হওয়ার ঝামেলা ছাড়া বিবাহিত জীবন ভালোই ছিল ।
একের পর এক সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তাকে প্রত্যেক বার
“এন্টি নেটাল ডিপ্রেসান” এ ভুগতে হয়েছে।তা দেখা দিতো প্রেগনেন্সি চলা কালে এবং বাচ্চা হওয়ার পরে। এবং তার সাথে এই জন্য তার মেজাজ হয়ে গিয়েছিল কন্ট্রোলের বাইরে । অভাগা রানী ভিক্টোরিয়া তা বলে গেছে তার মেয়ের কাছে।
তিনি এত গুলো সন্তান হওয়া একেবারেই পছন্দ করেন নাই। এটাই ছিল তার “Shadow side of marriage”. তিনি তার প্রথম কন্যা ভিকির কাছে লিখিত একটা চিঠিতে লিখেছিলেন “গরু কিংবা এনিম্যালের মত বাচ্চা জন্ম দেয়া তার জীবনের একটা কষ্ট কর অধ্যায়” । আসলে সে সময় তো আমাদের সময় নয় । বার্থ কন্ট্রোলের আবিষ্কার সে সময় হয় নাই ।
তার শাসন আমলে যা যা হয়ে ছিলঃ
১) ইন্ডাস্ট্রির প্রসার ২) অর্থনৈতিক উন্নয়ন ৩) রাজত্বের বিস্তার
বলা হয়ে থাকে “ব্রিটিশ রাজত্বে সুর্য অস্ত যায় না” । তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্য ,আয়ারল্যান্ডর রানী এবং ইন্ডিয়ার ইমপরার ।
ব্রিটিশ ইতিহাসে তার শাসন কাল দীর্ঘ কাল ধরে ছিল।
তার শাসন আমলের সাকসেসফুলের পেছনে যা ছিল তা হল + খুব ভালো অ্যাডভাইজার , + বিশ্বাস যোগ্য মন্ত্রী মণ্ডলী । যারা সাহায্য করেছিল ভালো একটা সরকার চালাতে । তার সাথে সিটিজেন দের বা দেশের জনসাধারণ কে একটা “কোয়ালিটি অফ লাইফ” দিতে পেরেছিল।
যে সব বিষয়ে উন্নতি হয়ে ছিল তা ছিল ১) ভোট দিতে পারার ক্ষেত্রে পরিবর্তন ২) Housing project, 3) শিক্ষার মান বৃদ্ধি ৪) দরিদ্র দের ওয়েলফেয়ার সাপোর্ট ৫) স্লেভারি ব্যান্ড ।
টেকনোলজির উন্নয়নঃ
ব্রিটেনের টেকনোলজি সে সময় এত উন্নতি হয়েছিল যে ব্রিটেন কে বলা হত “Work shop of the world” . ১৮৭৬ সালে ২৬ হাজার টেলিফোন সার্ভিস যোগ হয়। টেলিগ্রাম সিস্টেম পোস্ট অফিসে সেবা দিতো। ১৮৭৬ সালে মার্কনি রেডিও ব্রড কাস্ট চালু করে। ১৮৭৩ সালে রেলওয়ে চালু হওয়াতে ব্যাবসা বাণিজ্যের কাঁচামাল সরবরাহ সহজ হয় এবং সেই কাঁচামাল দিয়ে তৈরি জিনিস বাজারে সরবরাহ করা সহজ হয়েছিল ।
পৃথিবী জুড়ে উপনিবেশঃ
রানী ভিক্টোরিয়ার জীবদ্দশায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিরাট আকার ধারণ করে । প্রথমে তারা যেত বাণিজ্য প্রসারে তারপরে উপনিবেশে পরিণত করত । একদল সাহসী বাণিজ্য প্রসারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় । ১৬ শতকে উত্তর আমেরিকায় তারা স্যাটেল হয়। ১৬৭০ সালে আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, বারমুডা, হন্ডুরাস, অ্যান্টিগুয়া এবং ১৬৫৫ সালে বার্বাডোস, নভাস্কটিয়া এবং জামাইকাটে উপনিবাস বানায়। ১৬৭০ সালে কানাডা দখল করে। ১৬০০ সালে ইস্ট ইন্ডীয়া কোম্পানি ভারতে , তারপরে একি সময়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েসিয়া,পেনাং এবং Malacca তে বাণিজ্য আরম্ভ করে।
১৬০১ সালে আফ্রিকার সিরালা লিয়ন বাণিজ্য আরম্ভ করে এবং ১৭৮৭ সালে সাউথ আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে।
প্রত্যেক দেশ থেকে তারা সস্তায় কাঁচা মাল সংগ্রহ করত এবং তা নিজ দেশে নিয়ে গিয়ে তাদের কলকারখানায় বানিয়ে আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করত ।
রানী ভিক্টোরিয়াকে ইন্ডীয়ার সম্রাজ্ঞী বানানো হয় ১৮৭৬ সালের মে মাসের এক তারিখ । তাদের জন্য সেটা ছিল কৃতকার্য বা সাফল্য আর আমাদের জন্য একটা কালো অধ্যায়ের শুরু । যা থেকে উদ্ধার পেতে আমাদের সময় লাগে দুই শত বছর। এই দখল হয়ে যাওয়ার পেছনে ছিল আমাদের মধ্যে একতা না থাকা, নিজের স্বার্থ ,অর্থের লোভ এবং ক্ষমতার লিপ্সা ।
Laissez-faire Leaders
তার সময় শাসন পরিচালনা করার জন্য কর্মকর্তা গন Laissez-faire Leaders পদ্ধতি অনুসরণ করতেন । তা হলঃ
১) হ্যান্ড অফ ম্যানেজমেন্ট,অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তাদের মতামত কেই গুরুত্ব দেয়া
২) Supportive Style, কর্মচারী দের ট্রেনিং এবং ইডুকেসান এর ব্যাবস্থা করা স্কিল বাড়ানোর জন্য ।
৩) Trusting of employees
4) Wiling to consult অর্থাৎ প্রোজেক্ট এর সাফল্যের জন্য নিজেদের গাইড কেই গুরুত্ব দেয়া এবং ডেড লাইন ঠিক রাখা।
৫) Untroubled by mistakes ,অর্থাৎ ভুল কে দেখা হয় অভিজ্ঞতা হিসেবে এবং তা থেকেই সমাধান বের করা।
১৯০১ সালে রানী ভিক্টোরিয়া মৃত্যু বরন করেন ।তার মৃত্যু তে Henry James বলেছিলেন “We all feel a bit motherless to day” . অর্থাৎ “আমরা মা হারা হয়ে গেলাম”
হুসনুন নাহার নার্গিস,লন্ডন
তথ্য সূত্রঃ
Queen Victoria: The woman who redefined British Monarchy BBC
Victoriya: (r 1837-1901) The Royal Family
queen Victoria A Remarkable Trailblazer
Ahead of her time
Victoriya era
History, society and culture
Britannica
Victoria Biography, Family tree children, Successor and Faets ,britannica