ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানাপোড়েন নতুন নয়, বহু বছর ধরেই এই অঞ্চলের অস্থিরতার মূলেই রয়েছে শক্তি, সম্পদ আর রাজনৈতিক আধিপত্যের খেলা। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন — কারণ এবার সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং আমেরিকা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনার উপর হামলা চালিয়েছে।

তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন — এটি কি শুধুই ইরান-ইসরায়েল বিরোধ? নাকি এর পেছনে আছে আরও বড় গ্লোবাল শক্তিগুলোর চিরন্তন সাম্রাজ্যবাদী নীতি, যেখানে তেল, গ্যাস, খনিজ আর অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি ডলারে, আর সেই খরচ হচ্ছে সাধারণ মানুষের করের টাকা থেকে?

আমেরিকার অবস্থান ও দ্বিমুখী নীতি:
অনেকেই বলছেন, আমেরিকার এই হামলা আংশিকভাবে ইসরায়েলকে তুষ্ট করতে — যেন ইসরায়েল দেখে, ‘‘আমরা তোমার পাশে আছি!’’ কিন্তু ইরান পুরোপুরি ধ্বংস হোক, আমেরিকা সেটাও চায় না। তাই হামলার আগে ইরান নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ও পারমাণবিক সম্পদ সুরক্ষিত বাঙ্কারে সরিয়ে নিয়েছে — ফলে কোটি কোটি ডলার খরচ করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেও বাস্তবে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।

এতে বোঝা যায়, একপাশে যুদ্ধ আরেকপাশে হিসাবি কূটনীতি — যার খেসারত দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষ।

রাশিয়ার গোপন সমর্থন:
রাশিয়া সরাসরি যুদ্ধ করছে না, কারণ ইউক্রেন যুদ্ধেই তারা ব্যস্ত। তবে কূটনৈতিকভাবে আর প্রয়োজন হলে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ইরানকে চুপিসারে সহায়তা করছে — যাতে আমেরিকার প্রভাব সীমিত রাখা যায় এবং রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র আরও বাড়ে।

ইরানের শক্তির উৎস:
ইরানের শক্তি শুধুমাত্র সৈন্য আর ক্ষেপণাস্ত্র নয় — তাদের মিলিশিয়া নেটওয়ার্ক, আঞ্চলিক বন্ধু জোট আর ধর্মীয় আবেগ এই লড়াইয়ে মূল চালিকাশক্তি। মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো একক ইসলামী আন্দোলন না থাকলেও, ইরান আঞ্চলিক ছোট ছোট মিত্রতা আর প্রভাব বিস্তার করে এগিয়ে যাচ্ছে।

পারমাণবিক অধিকার ও খরচের খেলা:
ইরান বহুবার বলেছে — আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরায়েল যদি পারমাণবিক বোমা রাখতে পারে, তাহলে তাদেরও অধিকার আছে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক শক্তি গড়ে তোলার। আর এই পারমাণবিক খেলার সাথে জড়িয়ে আছে বিশাল অর্থনীতি — ক্ষেপণাস্ত্র, বাঙ্কার, যুদ্ধজাহাজ, প্রতিরক্ষা চুক্তি — সবই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য, যার টাকা ওঠে আমাদের মতো মানুষের পকেট থেকে।

জিতবে কে? হেরে যাবে কে?
প্রশ্ন জটিল। সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে ইরান একা আমেরিকাকে হারাতে পারবে না। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতি, ধর্মীয় আবেগ আর রাশিয়া-চীনের গোপন সমর্থন নিয়ে তারা মার্কিন প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এটাকে সহজ ‘জয়-পরাজয়’ বলা যাবে না — এটা দীর্ঘমেয়াদি শক্তি, সম্পদ আর জাতীয় পরিচয়ের লড়াই।

ভবিষ্যৎ শঙ্কা:
যদি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে এবং চীন-রাশিয়া আরও সরাসরি জড়িয়ে যায়, তবে বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা — ক্ষতির শিকার হবে সাধারণ মানুষ। তাই যুদ্ধ নয়, শান্তি আর সঠিক তথ্য জানাই আমাদের দায়িত্ব।

আমাদের করণীয়:
আমরা সরাসরি যুদ্ধ থামাতে পারি না, কিন্তু সত্যি কথা ছড়াতে পারি। গুজব আর উস্কানিমূলক খবর থেকে দূরে থাকুন। সচেতন থাকুন, মানবিকতার পক্ষে থাকুন। মধ্যপ্রাচ্য হোক শান্তি আর ন্যায়বিচারের স্থান — লুণ্ঠনের নয়।

১২জন ১২জন

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ