
হাসপাতালে পোঁছেই ছায়া খবর নিলো কোন কেবিনে দেওয়া হয়েছে অনিককে, ছায়া ওর শ্বশুরকে নিয়ে সেই কেবিনের দরজায় গিয়ে নক করলে অনিকের বাবা দরজা খুলে ধরলেন।
আনকেল অনিক নাকি জেগেছে?
এসো মা আগে ভিতরে আসো, অনিকের বাবা ছায়াদেরকে ভিতরে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে ধরলেন।
ছায়া দ্রুত এগিয়ে গিয়ে অনিকের বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, অনিক ঘুমাচ্ছে দেখে ফিরে তাকালো অনিকের মার দিকে, আন্টি ও না জেগেছিলো?
অনিকের মা এগিয়ে এসে ছায়াকে সরিয়ে নিয়ে গেলো এক সাইডে এরপর বললেন, ও জেগেছিলো কিন্তু সবাইকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিলো, ওর বাবাকে বললো কে উনি?
কি বলছেন, তাহলে কি হবে এখন?
ডাক্তার বললো ওকে নাকি ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে, এই জন্য সাময়িক সমস্যা হয়েছে।
কি ইলেকট্রিক শক কেন দেবে, ছায়া উদ্বীগ্ন হলো।
এখন আবার ওকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, ডাক্তার বললো ও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
এতক্ষণ রওশনের বাবা শুনছিলেন কথা গুলো, উনি জিজ্ঞেস করলেন, ওকে রিলিজ কবে দেবে কিছু বলেছে?
না এখনো কিছু বলেনি।
ছায়া কিছুক্ষণ অনিকের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, অনিকের বাবার ডাকে ফিরে তাকালো, অনিকের বাবা ইশারা করে ডাকাতে এগিয়ে গেলো।
তুমি কি মা আজকেও রাতে থাকবে?
হাঁ আনকেল, আমি সব নিয়ে এসেছি?
কি খাবে বলো, এনে দিই।
না আনকেল, আমি সব নিয়ে এসেছি, ঐ যে ব্যাগে সব আছে।
ঠিক আছে, তাহলে আমরা আজকে যায়, সকালে চলে আসবো।
ঠিক আছে, বাবা আপনি মেডিসিন গুলো ঠিক মতো খাবেন, আন্টি আমি রান্না করে রেখে এসেছি, শুধু ভাতটা করে নিতে হবে।
অনিকের মা এগিয়ে এসে ছায়ার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, দোয়া করি মা যেন জীবনে সবসময় হাসি খুশি থাকিস।
ছায়া হাসার চেষ্টা করলো।
অনিকের মা এবং বাবা এগিয়ে গেলেন অনিকের বেডের ধারে, দুজনেই একে একে অনিকের কপালে চুমু খেলেন, এরপর সবাই বেরিয়ে গেলেন বাসার উদ্দেশ্যে।
ছায়া এগিয়ে গিয়ে অনিকের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো, অনিকের হাত পায়ের প্রতিটি আঙ্গুলেই ব্যান্ডেজ বাঁধা, সাথে বুকের, পেটের বিভিন্ন জায়গাতে ব্যান্ডেজ না থাকলেও মেডিসিন লাগানো।
ছায়া বড় একটা নিশ্বাস ফেলে অনিকের বেডে বসলো, একটা পায়ে প্লাস্টার করা আছে অনিকের, সেইটাতে হাত বুলালো, সেলফোনে রিং হচ্ছে শুনে ছায়া উঠে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো।
হ্যালো ছায়া, অনিক কই, আইসিইউতে দেখছিনা, আফরিনের কণ্ঠে উৎকন্ঠা।
ছায়া ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বললো, আফরিন ওকে আজ দুপুরের পরে কেবিনে দিয়েছে, ছয় তলায় চলে আসো, আমি অপেক্ষা করছি।
ঠিক আছে আসছি।
ছায়া হাত ঘড়িতে সময় দেখলো, রাত দশটা।
আফরিন আর লেভিনকে আসতে দেখে ছায়া এগিয়ে গেলো।
কি খবর, কেমন আছে ও, লেভিনের প্রশ্ন। (ইংরেজিতে)
ভালো আছে বলেই কেবিনে দিয়েছে, কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কি কি হয়েছে আবার, তোতলালো আফরিন।
ডাক্তার বললো, ওকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছিলো।
মানে কি?
কিডন্যাপাররা দিয়েছিলো।
তো?
ও এখন কাউকে চিনতে পারছেনা।
তাহলে এখন কি হবে?
চিন্তা করোনা, এইটা সাময়িক, ঠিক হয়ে যাবে।
চলো ওকে দেখে আসি, লেভিন বললো।
ছায়া ওদেরকে নিয়ে রুমে ফিরে এলো, লেভিন আর আফরিন অনিকের পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো, এরপর বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
কত বড় অমানুষ ছিলো ওরা, কিভাবে যে টর্চার করলো, আফরিনের চোখে পানি।
ওরা চায়নিজ মাফিয়া ছিলো, লেভিন বললো।
ছায়া আর আফরিন অবাক হয়ে তাকালো লেভিনের দিকে।
তোমরা ও ভাবে তাকাচ্ছো কেন, অনিক আমি দুজনই জানতাম কিন্তু ওরা ওকে কিডন্যাপ করবে বুঝতে পারিনি, লেভিনের সরল উত্তর।
তুমি আমাদের আগে জানাওনি কেন, জানালে আমরা নিশ্চয় অনিককে প্রটেক্ট করার ব্যবস্থা করতাম, আফরিন রাগান্বিত হলো।
লেভিন ঠোঁট বাকিয়ে বললো, কচু করতে, ওকে বাংলাদেশের টপ মোস্ট স্পাই এজেন্টরা প্রটেকশন দিচ্ছিলো, ওরাই কিডন্যাপ আটকাতে পারে নাই।
ওরা প্রটেকশন দিচ্ছিলো তুমি কি ভাবে জানতে?
সোহেল চৌধুরিই বলেছে আমাকে।
ছায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন সোহেল চৌধুরি, বাংলাদেশ এম্বেসির প্রেস মিনিস্টার?
প্রেস মিনিস্টার নয় সে, সেও একজন স্পাই, ওরাই উদ্ধার করেছে অনিককে।
ছায়া অবাক হয়ে গেলো।
রাতে কি কেউ থাকবে এইখানে, আফরিন জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ আমি আছি, জবাবে ছায়া বললো।
তাহলে আমিও থাকি?
না না, আজকে আমিই থাকি, দুজনই থাকার দরকার কি, তুমি নাহয় অন্যদিন থেকো, তা লেভিন কই গেলো?
জানিনা, বললোনা একটু বেরুচ্ছে।
হুম, আসো ওয়েটিংরুমে বসি, বলেই আফরিনকে নিয়ে ওয়েটিংরুমে এসে বসলো।
তুমি কান্না করেছো?
ছায়া মাথা নিচু করে বসে রইলো, এক সময় চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
ছায়া, তুমি ওকে ভালোবাসো?
ছায়া চোখ তুলে তাকালো আফরিনের দিকে, চোখ ভর্তি জল গড়িয়ে পড়লো দুই গাল বেয়ে।
আফরিনের বুক থেকে বড় নিশ্বাস বেরিয়ে এলো, বললো, চিন্তা করোনা ও ঠিক হয়ে যাবে, আফরিন ছায়ার হাতটা টেনে নিলো নিজের হাতে।
লেভিনকে আসতে দেখে ছায়া চোখ মুছে নিলো হাত দিয়ে।
তোমরা এখানে, আমি আরো রুমে গিয়ে দেখি তোমরা নেই, ছায়ার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো, নাও কিছু কেবাব (কাবাব) নিয়ে এলাম বলেই একটা প্যাকেট আফরিনকে দিয়ে নিজেরটা নিয়ে খেতে শুরু করলো।
তুমি এগুলো আনতে গেলে কেন, আমি নিয়ে এসেছিলাম।
ওগুলো থাক পরে খেও, এখন এগুলো খাও, আমার খুব খিদে লেগেছে।
……. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
১৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এখন কেবল অপেক্ষা আর অপেক্ষা, কবে অনিকের স্মৃতি ফিরে আসে তার জন্য।
অনিকের প্রতি ছায়ার ভালোবাসাটা খুব সুন্দর করেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
শুভ কামনা ভাইজান।
ইঞ্জা
গল্পের খাতিরেই গল্প এগিয়ে চলেছে তার নিজ গতিতে, অনিকের স্মৃতি যাওয়াটা সাময়িক মাত্র, যেকোন সময় ফিরতে পারে, কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি এর পরবর্তীতে কি হতে পারে?
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইজান, অনেকদিন পর প্রথম কমেন্ট পেলাম আপনার, খুব আনন্দিত হলাম আমি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এতো টর্চারের সাইড ইফেক্ট তো থাকবেই। তাও ভালো কথা বলতে পারছে। ভালো লাগছে খুব। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
ইঞ্জা
স্বাভাবিক, টর্চার গুলো ছিলো অমানুষিক, যার কিছু তো ইফেক্ট হবেই।
নিয়মিত পড়ছেন দেখে আপ্লুত এবং আনন্দিত হলাম আপু, ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভীন
অনিকের স্মৃতি কি ফিরবে?
অনিক ঠিক হয়ে যাবে?
অনিক ছায়া কে চিনতে পারবে?
কতশত প্রশ্ন পাঠক মনের কোণে
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এই পর্বও দারুণ হয়েছে
ইঞ্জা
সব প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যাবে আগামী পর্ব গুলোতে আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
অনিক কি তাহলে স্মৃতি শক্তি হারালো ?
তাহলে কি ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিবে ?
দেখা যাক কি আর কি করা।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
স্মৃতি শক্তি হারালেও তা সাময়িক, কিন্তু এরপরেও কি হবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।
ভালো থাকবেন দাদা।
অপরিসীম ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
ছাইরাছ হেলাল
আফরিনের বুকের নিঃশ্বাস কোথায় পৌঁছেয় তা দেখার অপেক্ষায়।
স্মৃতি ফিরে এলে।
আছি কিন্তু।
ইঞ্জা
কিছু কিছু নিশ্বাস বের হলেও তার সাথের না বলা কথা গুলো বুকের মধ্যে আটকে থাকে ভাইজান, যা হয়ত কেউ আর জানবেনা।
আছেন দেখেই আনন্দিত হচ্ছি ভাইজান, অনিঃশেষ ধন্যবাদ জানবেন।
হালিম নজরুল
অনিকের স্মৃতি দ্রুত ফিরে আসুক
ইঞ্জা
আমিও তাই চাই।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
হ্যা অতি টর্চারেই অনিকের এই অবস্থা হয়েছে। লেভিন আসলে যে বিষয়টিকে মামুলি ভেবেছিল সেই চাইনীজদের ব্যাপারে বলা উচিত ছিলো। অনিক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক এটাই কাম্য।
যাই আগের পর্ব পড়ে আসি।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ একমত ভাই, ধন্যবাদ।