
ঘন্টা খানেক পর সোহেল চৌধুরী ফিরে এসে অনিকের বাবাকে বললো, মি. রাশেদ, অনিক বাংলাদেশ সরকারকে বড় ধরণের হেল্প করার কারণে চায়নিজ মাফিয়া কিং প্রতিশোধ বশত ওকে কিডন্যাপ করে।
কি বললেন?
হাঁ যা বলছি তা অতি সত্যই বলছি, আমাদের জাদরেল এক এজেন্ট জীবনবাজি রেখে ওকে উদ্ধার করে আজ বিকালের দিকে, বাংলাদেশ সরকার মি. অনিকের এই অবদানের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অনিকের সকল চিকিৎসার দ্বায়িত্ব নিয়েছেন।
অনিকের বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন, কি বলবেন বুঝতে পারছেননা, পরিশেষে বললেন, আমার ছেলেটা আজীবন সাহসী, আপনাদেরকে ধন্যবাদ কিন্তু ওরা আবার কোনো ক্ষতি করবে নাতো?
না আর করবেনা, মি. অনিক এখন বিপদমুক্ত, আশা করছি উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এখন নিশ্চিন্ত হলাম, ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।
তাহলে আমি আসি, ভালো থাকবেন।
জ্বি।
সোহেল চৌধুরী চলে গেলে অনিকের মা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি বলে গেলো লোকটা?
না তেমন কিছুনা, বিদায় নিতে এসেছিলো।
ছায়া, তুমি অসুস্থ, তুমি তোমার বাবাকে নিয়ে বাসায় যাও, আগামীকাল সকালে আসবে, আজ রেস্ট করো, রাশেদ সাহেব বললেন।
না আনকেল, আমি একদম ঠিক আছি, আপনারা যান, আমি থাকছি, আন্টিও অসুস্থ, আপনারা আজ কয় রাত ঘুমাননি হিসেব আছে?
হাঁ ভাই, ছায়া ঠিকই বলছে, চলুন রাতটা রেস্ট করে সকাল সকাল চলে আসবো।
আচ্ছা ঠিক আছে, ছায়া থাকুক, মা তোমার কিছু লাগলে কল দিও, অনিকের মা বললেন।
ঠিক আছে আন্টি।
ভাই একটু বসেন আমি আসছি, বলেই রওশনের বাবা চলে গেলেন, পনের বিশ মিনিটের মধ্যে ফিরে এলেন হাতে কিছু প্যাকেট নিয়ে, তা ছায়াকে দিয়ে বললেন, এইখানে দুধ, পানি আর কয়েকটা সেন্ড উইচ আছে, তুই খেয়ে নিস, আমরা আসি।
উনারা বিদায় নিয়ে চলে গেলে ছায়া ওয়েটিংরুমে বসে রইলো, মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে অনিককে দেখে আসে।
মাঝ রাতে অনিকের ঘুম ভাঙলে নার্সরা গিয়ে ওকে চেক করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
পরদিন সকাল নয়টার দিকে অনিকের মাকে নিয়ে অনিকের বাবা এলেন, ছায়া তখন অনিককে দেখছে গ্লাসের ওপারে দাঁড়িয়ে।
অনিকের মা পিছন থেকে ছায়ার কাঁদে হাত দিলে চমকে উঠে ফিরে তাকালো ছায়া।
কি মা, সারা রাত ঘুম হয়নি তোমার, তুমি যাও বাসায়, রেস্ট করে তারপর এসো।
এখন না আন্টি আফরিনরা আসছে, এই কিছুক্ষণ আগে ওরা ফোন দিয়েছিলো, ওরা আসলেই তারপর বাসায় যাবো, ঐ তো এসে গেছে।
আফরিন আর ওর মা ওদের কাছাকাছি এসেই আফরিন বললো, ও কোথায়?
ছায়া ইশারা করে দেখিয়ে দিলো, ওদিকে আফরিনের মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না শুরু করলেন অনিকের মা।
ছলছল চোখে আফরিন জিজ্ঞেস করলো, ওর কি অবস্থা?
জানিনা, ডাক্তার বললো জ্ঞান ফিরার পর উনারা চেক করবেন, আপাতত ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।
লেভিনকে খবর দিয়েছি, ও নিশ্চয় এতক্ষণে চলে আসবে।
বিকেল চারটার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো ছায়ার, দ্রুত উঠে মুখ হাত ধুয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে, রওশনের বাবা ড্রয়িংরুম থেকে তা খেয়াল করে বললেন, উঠেছিস মা, ফ্রিজে সব খাবার আছে, তুই খেয়ে নে।
বাবা আপনি খেয়েছেন?
হাঁরে মা, অনিকের মা সকাল সকাল সব রান্না করে রেখে গিয়েছিলেন, আমি শুধু ভাতটা রান্না করেছি।
আপনি করতে গেলেন কেন, আমাকে ডাকতেন?
তুই সারা রাত ঘুমাসনি, এছাড়া এগুলোর তো অভ্যাস আছেই নাকি?
আচ্ছা বাবা, আমি খেয়ে নিচ্ছি, তার আগে একটু খবর নিয়ে নিই।
লাগবেনা মা, আমি খবর নিয়েছি, অনিককে কিছুক্ষণ আগে কেবিনে দিয়েছে, ও এখনো ঘুমাচ্ছে।
আন্টিরা খেয়েছে?
হাঁ উনারাও খেয়েছেন।
ডাক্তাররা কি কিছু বলেছে বাবা?
হাঁ অনিকের সব নক নাকি উপড়ে ফেলেছিলো কিডন্যাপাররা, প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।
কি বলছেন বাবা, ছায়ার বুকটা কেঁপে উঠলো।
হাঁরে মা, ওকে রক্ত দেওয়া হয়েছে, সাথে কিছু এস্ট্রয়েড জাতীয় মেডিসিন দিয়েছে যেন ব্যাথা কম থাকে।
ছায়ার চোখের জল আর বাঁধ মানলোনা, ও চোখটা লুকালো ওর শ্বশুরের চোখকে ফাঁকি দিয়ে।
ছায়া উঠে রেডি হতে যাওয়ার আগে শ্বশুরকে বললো, বাবা আপনি যাবেন?
হাঁ মা যাবো, তার আগে একটু এদিকে আয়, তোর সাথে কথা আছে।
ছায়া ড্রয়িংরুমে আসলে বললেন, বোস মা।
ছায়া বসলে রওশনের বাবা বললেন, আসলে এইসব ঝামেলার মধ্যে তোর সাথে কথা হয়নি, অনিককে আমি আমার ছেলের মতোই ভাবি তা তো তুই জানিস।
হাঁ বাবা আমি জানি।
আসলে অনিক যেদিন কিডন্যাপ হলো, সেইদিন বিকালে ভাই সাহেব আমার সাথে কথা বললেন।
কি ব্যাপারে বাবা?
উনারা চান অনিকের বউ করে নিতে তোকে।
বাবা।
আমি জানি মা, তোর সমস্যা আছে তাতো উনাদেরকে আমি বলতে পারিনা।
ছায়া চুপ করে রইলো।
রওশনের বাবা আবার বলতে শুরু করলেন, আসলে আমিও চাই তোর আবার বিয়ে হোক, তুই সংসারী হ।
বাবা আপনি সব জানার পরও বলছেন?
দেখ মা, তুই আমার মেয়ে, তোর ভালোর চিন্তা তো আমাকেই করতে হবে নাকি?
বাবা এ আমার দ্বারা সম্ভব নয়, জেনে শুনে আমি কেন ওর ক্ষতি করবো, আপনি এইসব বাদ দেন, আমি রেডি হয়ে আসছি, আপনিও রেডি হয়ে নিন, বলেই ছায়া উঠে গেলো ছায়া নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।
ছায়া রুম থেকে বেরিয়ে ফ্রিজ খুলে আবার চেক করছে দেখে রওশনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কি মা কোনো সমস্যা?
বাবা ঘরে তো বাজার সদাই কিছুই নেই।
কি বলছিস?
বাবা আপনি বসুন, আমি আগে বাজার করে আসি, এই কাছের গ্রোসারিতেই যাবো।
আচ্ছা আমি বসছি।
ছায়া বেরিয়ে গেলো, কাছের গ্রোসারি থেকেই দেখে শুনে বাজার করে ঘরে ফিরে এলো আধা ঘন্টার মধ্যেই ফিরে এলো।
কি মা ফিরে আসছিস?
হাঁ বাবা, আমি অল্প কিছু রান্না করে দিয়ে যায়, নাহলে আন্টি ফিরে আসলেই রান্না করতে হবে।
ঠিক আছে মা, করে নে।
ছায়া দ্রুত রান্না করার জন্য লেগে গেলো।
ঘন্টা খানেক পর ছায়া ফ্রি হয়ে এলে রওশনের বাবা বললেন, ছায়া অনিক জেগেছে।
তাহলে বাবা দ্রুত চলেন, দেরি হয়ে গেছে আমাদের।
দাড়া মা, একটু বোস।
কি হয়েছে বাবা?
অনিক কাউকে চিনতে পারছেনা।
ছায়া দপ করে বসে পড়লো।
…….. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
১৯টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব খারাপ লাগলো অনিকের স্মৃতি হারানোর কথা শুনে। অনিক যে বেঁচে আছে এটাই সুখের লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
সত্যিই অনিকের স্মৃতি হারানোটাই হয়তো গল্পের আরেক মোর হতে পারে, দেখা যাক কি হয়।
ধন্যবাদ অবিরত আপু।
ছাইরাছ হেলাল
স্মৃতি হারিয়ে গিয়ে চমকটুকু থেকেই গেল।
চলুক।
ইঞ্জা
চমকটুকু রেখে দেওয়ায় তো লেখকের এক্সপার্টিজ, বাকিটা দেখার অপেক্ষায় সকল পাঠক।
ধন্যবাদ ভাইজান।
সুরাইয়া পারভীন
আহারে! এতো আঘাত পেলে স্মৃতিশক্তি লোপ পাবে বৈকি। চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
ইঞ্জা
স্বাভাবিক, কিন্তু মনে রাখতে হবে অনিক বড়ই কঠিন মনের মানুষ, ধন্যবাদ নিরন্তর আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
চিন্তা হচ্চে, ছায়ার মতো আমরা পাঠকেরাও দপ করে বসে রইলাম, পরের পর্বের চমকের অপেক্ষায়।
শুভ কামনা ভাইজান 🌹🌹
ইঞ্জা
এটাই তো লেখকের এক্সপার্টিজ, সকল পাঠককে কখনো দপ করে বসাবে, কখনো হাস্যরসে ভরিয়ে দেবে।
ধন্যবাদ অফুরন্ত প্রিয় আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
অনিকের স্মৃতি শক্তি হারানো গল্পে
নাটকীয়তার নতুন মোড় মনে হচ্ছে।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
এই মোর থেকেই শুরু হবে নতুন গল্পের শুরু, পাশে থাকার অনুরোধ রইলো দাদা।
ধন্যবাদ অক্লান্ত।
সুরাইয়া নার্গিস
অনিক বেঁচে আছে এটাই আমার কাছে বড় একটা চমক।
স্মৃতি হারানোটা কষ্ট দ্বায়ক মনে হলো, তারপরও আমরা আশাবাদী পর্বের দারুন কিছু আসবে।
অনেক ভালো লিখছেন দাদা, শুভ কামনা রইল।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সাবধানে থাকুন, নিরাপদে থ্কুন।
ইঞ্জা
বুঝতে পারছি খুব ভালো করে খুটিয়ে পড়ছেন গল্পটি, এর ফলেই ভালো আলোচনা করতে পারছেন, ধন্যবাদ অহর্নিশ আপু।
হালিম নজরুল
হায় হায়! অনিক জেগে উঠেছে, কিন্তু সে কাউকে চিনতে পারছে না।
ইঞ্জা
হাঁ তাই তো খবর পেলাম ভাই, দেখি হাসপাতালে গিয়ে কি হয়?
ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে ধীরে ধীরে,
ছায়ার সঙ্কল্প – ঠকাবে না সে অনিককে, অনিকের পরিবারকে।
ছায়ার শ্বশুরের কাছে এমন কথাই প্রত্যাশিত ছিলো।
অনিকের কাউকে চিনতে না পারাটা পরের পর্বের আকর্ষন বৃদ্ধি করে দিলো।
অপেক্ষা পরের পর্বের।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
উপকার করলে শত্রু পিছে লাগবেই। সেটাই হয়েছে। আচ্ছা ছায়ার কি সমস্যা? যার জন্য সে অনিককে বিয়ে করতে চাইছেনা? আগে উল্লেখ করলে ভুলে গিয়েছি দাদা।
অনিক স্মৃতি হাড়িয়েছে জেনে খারাপ লাগছে।
সুন্দর লেখা পড়লাম দাদা।
ইঞ্জা
নতুন পর্বে সব আবার জানতে পারবেন ভাই, ৩৬তম পর্ব পড়ে দেখুন, আশাহত হবেন না নিশ্চিত।
ভালোবাসা জানবেন।
ধন্যবাদ।
তৌহিদ
আজ পড়বো দাদা।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম।