যদি আপনি দেখেন বর্তমানে কোন মামলায় খুনি,ধর্ষক হিসেবে প্রমানিত মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত কোন ব্যক্তি বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে।তাকে কোন সাঁজাই ভোগ করতে হয়নি,জেল থেকে বিনা শর্তে তাঁকে মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়েছে,আইন এবং বিচার ব্যবস্থার উপর আপনার কোন শ্রদ্ধা থাকবে?
ঠিক এমনই করা হয়েছে।অভিযুক্ত বিচারাধীন এগার হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়েছে ১৯৭৫ সনের ৩১ ডিসেম্বর এক সামরিক অধ্যাদেশ বলে। সেই অধ্যাদেশে ৭৫২ জন খুন ধর্ষন অগ্নিসংযোগ লুঠ ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্তকে মুক্তি দেয়ার কথা না থাকলেও, কোন এক অদৃশ্য কারনে মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়,এই সব রাজাকার আলবদর আলশামসদের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্য। এরাই হয়ে যায় ধর্মের সেবক,মুসলিম নেতা।
আইন এবং বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা আনয়নের জন্য এই সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত দন্ডিত ব্যক্তিদের গ্রেফতার পূর্বক রায় বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরী।
১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রু মুক্ত হবার মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় ঘোষিত হয়।
** প্রথম রায়ঃ রাজাকার চিকন আলীর ফাঁসি।
কুষ্টিয়ার মিরপুর গ্রামের রাজাকার চিকন আলীর বিরুদ্ধে হত্যা,লুঠ,অগ্নি সংযোগ এবং নারীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রমানিত হয়ে ট্রাইব্যুনাল এই রায় প্রদান করেন।
পরবর্তি রায় সমুহঃ
** নেজামে ইসলাম পার্টির কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকার অন্যতম ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ আকিলকে দোষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল তাকে ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড ও চার হাজার টাকা জরিমান করেন।
অভিযোগঃ দখলদার পাক বাহিনীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নভেম্বর মাসে প্রদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন।
** পাকিস্থান ডেমক্রেটিক পার্টির ওবায়দুল কবিরের ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা।
অভিযোগঃ দখলদার পাক বাহিনীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নভেম্বর মাসে প্রদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন।
** সাবেক পুর্ব পাকিস্থান প্রদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পীকার ডাকার আসগর হোসেনের দুই বছর সধ্রম কারাদন্ড।
অভিযোগঃ দখলদার পাক বাহিনীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নভেম্বর মাসে প্রদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান।
** বগুরার ধুনট থানার রাজাকার মুখলেসুর রহমান চান্দ মিয়ার মৃত্যুদন্ড,তার দুই বৈমাত্রেয় ভাই মসিউর রহমান,মফিজুর রহমান এর যাবজ্জীবন।
অভিযোগঃ সারে বার বছরের এক কিশোর শফিকুর রহমানের বুকে রাইফেল ঠেকিয়ে হত্যা।
**কুষ্টিয়ার খোকসা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আকিমুদ্দিন এবং তার সহযোগী চার জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।
অভিযোগঃ আকিমুদ্দিন কুষ্টিয়া শহর থেকে ৩৮ জন পাকিস্থানী সেনা জানিপুর গ্রামে নিয়ে আসে.১৯৭১ সনের ২৪ মে রাতে পাকিদের সহায়তায় এরা গনহত্যা করে।এব্যতীত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সমস্ত কাজে পাক সেনাদের সহায়তা করে।
সুত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এ এস এম সামছুল আরেফিন এর লিখিত মুক্তিযুদ্ধ’৭১- দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ।
৭২ থেকে ৭৫ দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের নাম ও অপরাধের বিবরন-১
৩৭টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
1975 সালের 31 শে ডিসেম্বর তাদের কি অধ্যাদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছিল এটা কি জানতে পারবো ভাইয়া? শেখ মুজিবর রহমানের সাধারণ ক্ষমাকে যখন বিকৃতি করে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে তার বিপরীতে এসব চিহ্নিত অপরাধের প্রচার কম কেনো? এতো সরল অংকের মতোই সহজ 15 ই আগষ্টের হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানা।
জিসান শা ইকরাম
৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বরের সেই অধ্যাদেশের কপি পরবর্তি পোষ্ট এ দিয়ে দেবো।
তবে এসব তথ্য প্রচারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির আগ্রহ তেমন নেই
যা অত্যন্ত হতাশা জনক।
মোঃ মজিবর রহমান
হতাশা না হয়ে উপায় আছে কি?
মুক্তিযুদ্বের নেত্রিত্বদান কারী সরকার ক্ষমতায়
তারায় আতাত করছে তাদের স্বার্থের জন্য।
বরতমান সরকার যা করছে এর খেসারত দিবে আওয়ামীলীগের
অসহায় কর্মী ও সমর্থক। নেতা ও মন্ত্রীরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
তাঁরা একে অপরের পরম আত্বার আত্বীয় যে!
এখন একের পর এক এই পক্ষের লোক খুন হচ্ছে এবং এই সরকার একটার বিচার করেনি খমতার স্বার্থে।
শুধু কি ক্ষমতায় আসল নিতি ও আদর্শ বিবর্জিত।
জিসান শা ইকরাম
অবশ্যই এই খুনের বিচার চাই,
তবে এই খুনগুলো একট ফাদ,সরকারকে ইসলাম বিরোধী প্রমান করার একটি চক্রান্ত।
মোঃ মজিবর রহমান
সরকারকে ইসলাম বিরোধী প্রমান করার যেমন কোশলে লোক আছে ,
তেমনি সরকারকেও প্রমান করতে হবে আমরা তাঁরা কোন ধর্মের বিপক্ষে কোন কার্যকলাপ যাতে না হয় সেরকম সতর্কভাবে চলা।
মানুষ কম মানুষ পাওয়া যাবে রাজনিতিমুক্ত তারপরও সরকারকে খুব সচেতন ভাবে চলতে হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মানুষকে ধংস্ব করা একব্যাপার, আর নিতি আদর্শ দিয়ে পরাজিত করা একব্যাপার।
আমি চাই সরকার নিতি দিয়ে ধর্ম ব্যাবসায়ীদের পরাস্ত করুক।
জিসান শা ইকরাম
ভালো বলেছেন মজিবর ভাই।
রিমি রুম্মান
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত প্রথম রায়গুলো অজানা ছিল। আইন এবং বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা আনয়নের জন্য এই সমস্ত সাজাপ্রাপ্ত দন্ডিত ব্যক্তিদের গ্রেফতার পূর্বক রায় বাস্তবায়ন জরুরী… সত্য।
জিসান শা ইকরাম
আজ একটি নিবন্ধ পড়লাম,তাতে জানলাম যে সাজাপ্রাপ্তদের গ্রেফতার করে সাজা কার্যকরী করতে কোন বাঁধা নেই।
লীলাবতী
এ সম্পর্কে কিছুই জানা ছিলনা।এসবের প্রচার নেই কেন?এই সরকার তো এসব প্রচার করতে পারতেন।
জিসান শা ইকরাম
কেন যে এ বিষয়ে প্রচার নেই, তা আসলে আমি বুঝতে পারছি না।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভাইয়া এই যে আমি লিখছি এত কিছু যুদ্ধের ভয়াবহতা রাজাকারের কাহিনী এদের যে আরো আগেই বিচার শুরু হয়েছিল তা জানা ছিল না।জানলাম।লিখতে থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
আমরা অনেক সত্য ইতিহাস জানিনা।
লিখছি……।।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার লেখায় জানার আগ্রহ বাড়ে …।
জিসান শা ইকরাম
সম্পুর্ন বইটাই প্রকাশ করবো, সাথে নিজের কিছু বিশ্লেষন।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ।
ফাতেমা জোহরা
দারুণ কিছু তথ্যের সন্নিবেশ করেছেন ভাইয়া !! দরকারী পোস্ট !!
জিসান শা ইকরাম
বইটি খুজেছি অনেক,পাইনি এতদিন বলে লিখতে পারছিলাম না।
ব্লগার সজীব
৭৫২ জনের বিষয়ে অধ্যাদেশে সাজা ভোগের কথা থাকলে তারা মুক্তি পেল কিভাবে?
জিসান শা ইকরাম
কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে জাষ্ট মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়েছে।
হিলিয়াম এইচ ই
অনেক কিছু জানলাম!!!! কিন্তু তারা মুক্তি পেল কিভাবে? :/
জিসান শা ইকরাম
তাদেরকে জাষ্ট ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
খেয়ালী মেয়ে
আমি অনেক কিছু জানি না–আপনাদের লেখা থেকেই ধীরে ধীরে জানছি অনেক কিছু…..
জিসান শা ইকরাম
আমরা কেউই সবজান্তা নই।আমরাও অন্যের লেখা পড়া জানছি।
মোঃ মজিবর রহমান
বাংলাদেশের ১৯৭২ সালে প্রথম ১৬ ই ডিসেম্বর প্রথম স্বারক গ্রন্থ
পেয়েছি তাতে অনেক অজানা তথ্য জানা যায় ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
দুর্মুল্য একটি গ্রন্থ সংগ্রহ করেছেন ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাই এই বইটা পিয়াল রহমান পিয়াল ভাই সেই অস্ট্রেলিয়া পাবলিক লাইব্রেরী থেকে আনতে অনেক কষ্ট করেছেন। এর সংগ্রহের ইতিহাস এবার অনেক। আমি ডাউন লোড করে হারিয়ে ফেলেছি সফট কপি। প্রিন্ট বইটি এখন আমার সম্পদ।
জিসান শা ইকরাম
অবশ্যই এটি সম্পদ মজিবর ভাই।
প্রহেলিকা
শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও আপনার এই পোষ্টগুলো মূল্যবান দলিল হিসাবে ব্যবহৃত হবে। এমন দলিল যথা সম্ভব শেয়ার করে ছড়িয়ে দিতে হবে আর তাহলে কেউ ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ পাবে না। দুটো পর্বই সংরক্ষিত করেছি।
জিসান শা ইকরাম
সম্পুর্ন বইটিই প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে নিয়ে টেনশনে আছি । । সাবধানে থাকবেন । । আপনাদের মত মানুষেরা পারে আমাদের সঠিক পথ দেখাতে
জিসান শা ইকরাম
ডাইনোসর হয়েই বাঁচবো
তেলাপোকার মত নয়।
নুসরাত মৌরিন
জিসান ভাই,অসাধারন একটি কাজ করছেন।প্রতিটা পর্বই সংগ্রহে রাখার মত।
যারা এসব না জেনেই গলা ফাটায় তাদের জন্য এর চেয়ে বড় দলিল আর হয় না।
জিসান শা ইকরাম
না জেনে গলা ফাটায়
মিথ্যে খুব বেশি প্রচারিত হওয়ায় মিথ্যেটাই সত্যি হয়ে গিয়েছে আসলে।
ছাইরাছ হেলাল
নগদের ঘটনাই আমরা ভুলে যাই, এতকিছু মনে রাখার দরকার
আমাদের আছে বলেও মনে হচ্ছে না। বিস্মৃতি আনন্দময় এখন।
জিসান শা ইকরাম
তারপরেও কিছু মানুষ থেকে যায় যারা এসব খুঁজে ফেরেন
সেই কিছু মানুষের জন্য লেখা…………
কৃন্তনিকা
আমরা কত কম জানি। কতোটা অন্ধকারে আছি- তা জানি না। কিন্তু সোনেলায় এসে এসব পড়ে মনে হচ্ছে, আগে জানতাম না যে অন্ধকারে আছি। এখন জানি। সোনেলার সাথে যতই দিন যাচ্ছে আমার, নিজের জ্ঞানের কোঠার শুন্যতার গভীরতা ধরা পড়ছে নিজের কাছে। গভীরতা বাড়ছে দিনকে দিন…
এসব রায় কি কার্যকর হয়েছিল?
এসব রাজাকারের নামও শুনি নি কখনো…
এদের রায় দেয়া হলে, বাঘা রাজাকারদের রায়ের কি হয়েছিল?
দিন যায়, মনের প্রশ্ন বাড়ে…
খুবই তথ্যবহুল পোস্ট, এমন পোস্ট আরো চাই। 🙂
জিসান শা ইকরাম
এসব রায় কার্যকর হয়নি
জিয়া কোন আইনের তোয়াক্কা না করে ৭৬ সনে এদেরকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
একজন খুনি একজন ধর্ষক সাজা পেয়েও মুক্ত মানুষের মত চলাফেরা করছে
হয়ত আপনার বাড়ির পাশেই আছে সে।
বাঘা রাজাকাররা কেউ পাকিস্থান,কেউ সৌদি আরব,কেউ অন্য কোন আরব দেশে চলে গিয়েছিল
কেউ দেশের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল অন্য কোন নামে
এরা সব ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে চলে আসে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর।
সাজাপ্রাপ্ত সবার কথা বলা হবে এই ধারাবাহিক পোষ্টে।
সোনেলার সাথে থাকুন 🙂