৪৪ বছর পরের গল্প

আরাফ কাশেমী ১৩ এপ্রিল ২০১৫, সোমবার, ০৩:৩৬:০৩অপরাহ্ন বিবিধ ৭ মন্তব্য

৭১ এর সেপ্টেম্বর মাস ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির পথে পা বাড়ালো বালক ইব্রাহিম ভূঁইয়া।সদরঘাট পর্যন্ত যেতেই পচা লাশ-আর শুকানো রক্তের গন্ধে ভিতর থেকে নিজেকে ঘুলিয়ে ফেলছিলো বার বার।রাস্তার মোড়ে মোড়ে পাঞ্জাবী সেনাদের তল্লাশীর ভিতর দিয়ে সদরঘাট পৌছে অপেক্ষা করতে থাকলো বাড়ি ফেরার।

 

পুরো টার্মিনাল জুড়ে পাঞ্জাবী সেনাদের কড়া পাহারা।কিছুক্ষণ বাদেই এক বৃদ্ধ এলো সঙ্গে তার নবপরিণীতা পুত্রবধূ আর নিজের ১৬ বছরের কন্যা, উদ্দেশ্য মুন্সিগঞ্জ।পাঞ্জাবী সেনারা সবাইকে তল্লাশী চালিয়ে বললো’ ইয়ে দো আওরাত… নাহি যায়েগী”।আকাশ ভেঙ্গে পড়লো বৃদ্ধর মাথায় হাতে পায়ে পড়লো পাঞ্জাবী নরপশুদের,সেনাদের লাথি আঘাতে খানিক দূরে গিয়ে পড়লো।কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে যাকে পাচ্ছে তার কাছেই নিজের মেয়ে আর ছেলের বউ এর প্রাণ ভিক্ষা চাইলো “আমার মেয়ে-পুত্রবধুকে বাঁচান” আর্তনাতে,কিন্তু কারোই কিছুই করার ছিলো না শুধু দু’চোখ মেলে দেখা ছাড়া।সকলের চোখের সামনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে পাঞ্জাবী সেনারা যুবতী মেয়ে ২টি কে টেনে হিঁচড়ে আর্মি ট্রাকে তুলে নিয়ে গেলো।কিছু বলার ভাষা হারিয়ে মেয়ে দুটি শুধু সকলের দিকে চেয়ে রইলো এক করুণ দৃষ্টিতে,ইচ্ছা থাকলেও কেউ বাঁচাতে পারলো না তাঁদের।

 

 

লঞ্চ ছেঁড়ে দিলো “পাগলার” এম এম ওয়েল পাক আর্মি ঘাটিতে থেমে গেলো লঞ্চ,মুহূর্তেই তল্লাশি শুরু কারোই মূল্যবান কিছু আর রইলো না সব জোরে করে লুট করে নিলো হায়নার দল।জানালার কাছেই বসে ছিলো ইব্রাহিম ভূঁইয়া পাশের আর্মির লঞ্চের দিকেই চোখ যেতেই চোখে পড়লো চারজন বিবস্ত্র বাঙালি নারীর দিকে।এলোমেলো চুল,অশ্রুভরা মুখমণ্ডল আর অসহায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুন্যপানে গায়ে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই।

 

৪৪ বছর পড়ে ইব্রাহিম ভূঁইয়া যখন সদরঘাট এর এলাকা দিয়ে হেঁটে যায় আজো তাকে তাড়া করে সেই স্মৃতি,আনমনে সেদিন রক্তমাখা দেয়াল আর লাশের স্তূপ এর পথে থাকলে আজ তার চোখে পড়ে “পাকিস্তানী থ্রী-পিস আর বোরকার বিশাল সমাহার” এর ব্যানার গুলো কিংবা পাকিস্তানী জার্সি পড়ে হেঁটে যাওয়া কোনএক অসভ্য আধা-ছাগল কে অথবা বড় বড় অক্ষরে লেখা “ইসলামী ব্যাংক সদরঘাট শাখা”।

 

 

১জন ১জন
0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ