ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সৃষ্টিকর্তা অকৃপণ হাতে ছয়টি বর্ণে, ছয়টি সাজে সজ্জিত করেছেন। এর মাঝে হেমন্ত লাজুক ঋতু।
দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠগুলো সোনালি আলোয় আরও তীব্র হয়। দিগন্তরেখা নীল বর্ণের সাথে মিশে হয় একাকার। ফসলের মাঠ প্রতীক হয় মানুষের আগামীর সম্ভাবনা। বৈষ্ণব পদকর্তা লোচন দাস লিখেছেন,
“অগ্রানে নতুন ধান্য বিলাসে
সর্বসুখ ঘরে প্রভু কি কাজ সন্ন্যাসে।।”
গ্রামের পরিশ্রমী মানুষের মুখে হাসি ফোটায় এ হেমন্ত। আকাশে বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ জানান দেয় নবান্ন। কৃষকের হাসিমুখ মানে আমার দেশের সকলের মুখে হাসি। হেমন্ত এখানে আশীর্বাদ। হেমন্তের অবদানেই মানুষের সুখ ও দেশের সমৃদ্ধি ঘটে। কৃষকের আঙিনা ভরে নতুন ফসলে। গৃহবধূ ধান সিদ্ধ করে। সেই ধান শুকিয়ে, ঢেঁকিতে দম দিয়ে চাল বের করা। জসীম উদ্দীন মনে হয় এই দৃশ্য দেখেই লিখেছেন, ” আশ্বিন গেলো কার্তিক মাসে পাকিলো ক্ষেতে ধান/ সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেনো হলদি কোটার গান।” নতুন চালের ভাত আর সাথে আলু ভর্তা। ভাবা যায় এমনটি কোন ঋতুতে? হেমন্তকে বলা হয়,” মমতাময়ী মায়ের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা। ” হেমন্ত তাই লক্ষ্মী।। এ সময় নাইওর আনা হয় মেয়ে জামাইকে। আপ্যায়ন করা হয় বিভিন্ন পিঠা ও পায়েস দিয়ে।
মাঠগুলোতে দু ধরণের চিত্র দেখা যায়। ধানকাটা জমিতে বিভিন্ন পাখি আর বালি হাঁসের ধান খুঁটে খাওয়ার দৃশ্য। আর আকাশে গাংচিল। অন্যটিতে, পাকা ধানের হলুদ বর্ণ বাতাসে খেলা করে শীষ নাড়িয়ে। মৌমাছির গুঞ্জন পরিপক্ব ধানের শীষে। এ সময় আগমন ঘটে অতিথি পাখির।
আবহাওয়া না শীত, না গরম, না মেঘের বাড়াবাড়ি । উপাদেয় পরিবেশ। প্রকৃতিকে তখন খুব চমৎকার উপভোগ্য মনে হয়।রোদ থাকে মিষ্টি। রাতে, হেমন্ত বিছিয়ে রাখে কুয়াশার নরম চাদর। রবি বাবু গেয়েছেন, ” হিমেরও রাতের ঐ গগনের দীপগুলিরে/ হেমন্তিকা করলো গোপন আচঁল ঘিরে ধীরে ধীরে।”
ঘাসগুলো সতেজ হয় শিশির কণায়। তা হেমন্তের মায়াবী রূপের ঝলক। সকালের প্রথম রোদের বর্ণচ্ছটায় গাছের পাতাগুলি হেসে ওঠে।
মেঘমুক্ত আকাশে ফালি ফালি জোসনা অন্য সময়ের জন্য যেনো একটু বেশি ঠিকরে পরে। কবি নজরুলকে রাতের সৌন্দর্য বিমোহিত করতো।
“চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া নিশি জাগিছে একা নিশীথ
নতুন পথের চেয়ে চেয়ে হলো হরিৎ পাতারা পীত।”
হেমন্তের আগমন ঘটে শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজ অশোকের। উপহার দেয় রূপ, রস, গন্ধে ভরা সুস্বাদু ফল। বিশেষ ফল হলো কামরাঙা, চালতা, আমলকি ও ডালিম। আর নারিকেলের বিস্তার তো পিঠা পাবে পরিপূর্ণতা।
খোলা মাঠে পাড়ার ছেলেরা মাতে ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কানামাছি আর ঘুড়ি উড়াতে। রাখাল রাও গরু ছেড়ে বাঁশী বাজায়।
আগের দিনে বাংলা বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কতো শত কাব্য লিখা হয়েছে এই পাতা ঝরা হেমন্তের অন্তর স্থিত প্রকৃতি নিয়ে।
সবশেষে, “আমি অঘ্রাণের ভালোবাসি বিকেলের এই রঙ রঙের শূন্যতা।”
( জীবনানন্দ)
৩৫টি মন্তব্য
আকবর হোসেন রবিন
লেখাটা ভালো লেগেছে। বিশেষ করে মাঠ গুলোতে যে দুই ধরনের চিত্র দেখা যায়, তার বর্ণনা বেশি ভালো লেগেছে।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ছোট।
নিতাই বাবু
হেমন্তের শুভেচ্ছা জানবেন।
আরজু মুক্তা
আপনাকেও শুভেচ্ছা
ইঞ্জা
বেশ সুন্দর করে হেমন্তকে বিশ্লেষণ করলেন আপু, এতো কিছু আমারও জানা ছিলো।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্ট দিলেন। 😊
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ, ভাই।
ইঞ্জা
ভালো থাকবেন আপু
প্রদীপ চক্রবর্তী
মনের ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে হেমন্তের বন্দনা,
বেশ আপন আলয়ে আপনার মাঝে গ্রথিত বন্ধনে।
বেশ সুন্দর লেখনী দিদি।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ, দাদা
নৃ মাসুদ রানা
এর মাঝে হেমন্ত লাজুক ঋতু।
আরজু মুক্তা
একদম। কুয়াশার আড়ালে থাকে।
বন্যা লিপি
এ এক অনাবিল সৌন্দর্যের বর্ননা উপভোগ করলাম হেমন্তের। হৈমন্তী শুভেচ্ছা।
আরজু মুক্তা
আপনাকেও হৈমন্তী বিকেলের শুভেচ্ছা।
মনির হোসেন মমি
অনেক কিছুই জানালেন। হেমন্তকে জানতে হলে লেখাটি বেশ উপভোগ্য।
খুব ভাল লাগল লেখাটি।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্, লেখায় হেমন্ত এসে বাসা বেঁধেছে!
অনেকদিন থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।!
আরজু মুক্তা
বাসা বাঁধলেও দুইমাস।
হৈমন্তী শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
দারুণ দারুণ! হেমন্তকে আপনার লেখার পড়ছি আর চোখের সামনে অনুভব করছি। হেমন্ত আমার প্রিয় ঋতু। কোমল আবহাওয়ায় মন চাঙা থাকে সবসময়। শিশির ভেজা ঘাসের আলে খালিপায়ে হাঁটতে ভালো লাগে আমার, এ সময় ধান পাকতে শুরু করে। সোনালি রঙের শিশগুলি যখন বাতাসে দোল খায় কি অপরুপ দেখতে লাগে!!
এমন লেখা লেখার জন্য ধন্যবাদ আপু।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে ও।
শিরিন হক
ছোটবেলায় যেমন করে রচনা পড়েছি হেমন্তের আজ আবার পড়ে নিলাম আপনার লেখায়। খুব সুন্দর লিখেছেন।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা আপি।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
অনেক ভালো লিখেছেন,আপু
আরজু মুক্তা
শুভকামনা জানবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
হেমন্তের লাজুকতায় প্রকৃতি সাজে অনন্য রুপে 🙂
ভালো লেগেছে হেমন্ত বন্দনা।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
হৈমন্তী শুভেচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
হেমন্ত নিয়ে তোমার লেখাটি অনেক ভালো হয়েছে,
হেমন্ত হচ্ছে না শীত না গরম,
আকাশে বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ,
শিশির কণার অপরূপ সৌন্দর্য।
সমস্ত বছর হেমন্ত থাকতো 🙂
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
সারা বছর থাকলে খারাপ লাগতো। পরিবর্তন আছে বলেই ভালো লাগে।
শুভেচ্ছা অবিরাম।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
মুগ্ধ হয়ে একটানা পড়ে গেলাম আপনার লেখাটি। অসাধারণ লিখেছেন। এতো সুন্দর করে লিখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলেই লিখাটা সার্থক হয়।
আমি তো কেবল কলম ধরেছি। আপনি আরও ভালো লিখেন।
শুভকামনা।
রেহানা বীথি
সুন্দর তথ্য দিয়ে চমৎকার করে লিখলেন।
হেমন্তের শুভেচ্ছা জানাই।
আরজু মুক্তা
আপনাকেও হৈমন্তী শুভেচ্ছা।
মুক্তা মৃণালিনী
খুব সুন্দর করে আর গুছিয়ে হেমন্তকে বিশ্লেষণ করলেন আপু। খুব ভাল লেগেছে। হেমন্তের শুভেচ্ছা নিবেন আপু।
আরজু মুক্তা
আপনাকেও হৈমন্তী শুভেচ্ছা।
মোহাম্মদ দিদার
হেমন্ত মানেই অন্যরকম ভালোলাগা।
আরজু মুক্তা
রং বেরং হেমন্ত। শুভকামনা।