অহনা,
প্রভাতের আলোয় শুভ্র বাতাসের চাদর গায়ে গলিয়ে তোমাকে লিখতে বসলাম। আজ প্রভাতের স্নিগ্ধতা বার বার তোমার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বার বার বলছে একবার আলিঙ্গনে কাছে থেকে আরও কাছে নিয়ে আসতে তোমায়। কিন্তু নিরুপায় আমি, তাই তোমাকে অন্তরের কাছে রাখা ব্যতীত আর কিছুই করতে পারছি না। আচ্ছা, তোমারও কি কখনো ইচ্ছে জাগে না এভাবেই পাশাপাশি বসে একটা ভোরের আলো গায়ে মেখে নিতে?
গতরাতের ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আজ ভোরে বিদায় নিয়েছে। রেখে গেছে ঠাণ্ডা বাতাসের পরশ। আমি জানি এই সময়টা তোমার খুব প্রিয়। তুমি প্রায়ই এই সময়টাতে তোমাদের বারান্দায় দাড়িয়ে গুন গুন গান গাও, আর তোমার ছোট ছোট ফুল-ফোটা গাছ গুলিকে যত্ন কর। এটা কিভাবে জানলাম? তোমার কর্মব্যস্ত আনন্দিত মুখটা দেখার জন্যে আমি অনেকগুলি ভোর তোমাদের বাড়ির সামনেই অপেক্ষায় কাটিয়েছি। আর সত্যি বলতে কি, আমার কোন অপেক্ষাই বৃথা যায় নি। তুমি প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার কিছু সময় পরই চলে আসতে তোমার সেই ফুলের গাছগুলির কাছে। আর আমি দূর থেকেই তোমার আনন্দিত মুখখানি দেখতে থাকতাম। জানি, এটা জানার পর তুমি আমাকে বেহায়া আর কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবতে শুরু করেছো। কিন্তু তোমার ঐটুকু আনন্দ উপভোগের জন্যে কাণ্ডজ্ঞানহীন বেহায়া উপাধিটাও আমার কাছে কম মনে হয়।
দুটি পরিপূর্ণ মন যারা একে অপরের জন্যে অস্থির হয়ে থাকে, তাদের মনের ভেতরে জমানো অব্যক্ত কথার মালা আর একটুখানি দেখা করার, একটু সময় কাছে থাকার যে ব্যাকুলতা তাদের ভেতরে চলতে থাকে, একেই কি ভালোবাসা বলবে না তুমি? আমি ঠিক জানি না তোমার মধ্যেও এমন ব্যাকুলতা কাজ করে কি না। তবে জানি, তুমি অগোছালো হয়ে যাও। যখন এক দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে বুঝতে চেষ্টা করি, তখন তুমি নিজেকে লুকানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়। কিন্তু বিশ্বাস কর, তোমাকে বুঝে নেবার জন্যে মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরন কণা তখন ব্যস্ত থাকে। তোমাকে তোমার মত উপলব্ধি করতে প্রতিটা আবেগ বার বার নিজেদের পরিবর্তন করে নেয়। কিন্তু তবুও তুমি নিজের ভেতর থেকে বারংবার নিজেকেই লুকাও।
এভাবে আর নয় অহনা, আমি তোমার সম্পূর্ণটা জানতে চাই। এভাবে লুকিয়ে ফিরিয়ে নয়, তুমি যেভাবে ভাবো, যেভাবে চিন্তা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ কর, যেভাবে তোমার নিজেকে মুক্ত মনে হয় ঠিক ঐভাবেই আমি তোমাকে চিনতে চাই। জানতে চাই ঐ আপন কর্মব্যস্ততায় হাস্যোজ্জল মেয়েটাকে যে তার ছোট টবে ফোটা ফুলগুলির সামনে গেলে খুকি মেয়েদের মত মুখে হাসি ধরে রাখতে পারে। জানতে চাই ঐ বালিকাকে যে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অজানা কোন কারণে কান্না করতে থাকে। আমি জানতে চাই তোমাকে, যে প্রতিটা প্রহরে নিজের মনের আকাশে পাখি হয়ে উড়ে।
জানি না অহনা, কোনদিন এতটা অধিকার তুমি দেবে কি না। তবুও বলি, দুর্গম কোন পথেও যদি তুমি একবার হাত বাড়িয়ে ইশারা কর তোমার পথের সঙ্গী হতে। আমি সেখানেও তোমার সঙ্গী হয়ে তোমার পাশেই হাঁটবো। তোমার একলা পথের একমাত্র সঙ্গী হবো। কিন্তু তুমি ইশারা করে একবার ডাকবে তো ??
.
ইতি
কাণ্ডজ্ঞানহীন বেহায়া যুবক
১২টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
এতো সুন্দর একটি চিঠি যে লিখে তাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন বেহায়া বলাটা একদম মেনে নিলাম না।
অহনা এই লেখাটা পড়ুক।
আমরা অপেক্ষা করে থাকবো অহনা আর কান্ডজ্ঞানহীন ছেলেটার পাশাপাশি পথে হেঁটে যাওয়ার।
অলিভার
হা হা হা হা
সত্যিকারের অহনা থাকলে হয়তো কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবতো না।
কিন্তু এই অহনার অবস্থান তো কল্পনাতে। তাই কিছুটা কাণ্ডজ্ঞানহীন বালক বলাই যায়।
শুভ কামনা জানবেন আপু 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চিঠিটি পড়লে আমি সিউর সে(অহনা) চিন্তাহীনতায় ভূগবেন।সুন্দর হয়েছে। -{@
অলিভার
চিন্তাহীনতায় ভুগে যদি কল্পনা থেকে বাস্তবে চলে আসতে পারতো তাহলে হয়তো কিছু একটা হয়েই যেতো। কিন্তু আফসোস সেটা হবার নয়।
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা থাকলো 🙂
পুষ্পবতী
এমন সুন্দর করে যে চিঠিটা লিখেছে তাকে কান্ডজ্ঞানহীন বলা যায় না। ভালো লাগলো। -{@
অলিভার
ধন্যবাদ আপু।
শুভ কামনা জানবেন 🙂
স্বপ্ন নীলা
এত সুন্দর করেও চিঠি লিখা যায় তা আজ জানলাম । অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন — এত্ত এত্ত ভাললাগা জানিয়ে গেলাম
অলিভার
লজ্জা দিচ্ছেন আপু। আপনাদের লেখা গুলিতে এর থেকেও আরও বেশি আবেগ প্রকাশ পায়।
শুভ কামনা থাকলো আপু 🙂
নুসরাত মৌরিন
বাহ্,খুব সুন্দর চিঠি তো।
এই চিঠি অহনার হাতে পড়লে সে নিশ্চয়ই দুর্গম পথে আপনার দিকে হাত বাড়াবেই…। (y)
অলিভার
ধন্যবাদ আপু।
কখনো যদি পড়েই যায় তাহলে বুঝতে পারবো আপার আশ্বাসটা বাস্তবে রূপ নেয় কি না :p
শুভ কামনা জানবেন 🙂
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
জানি না অহনা, কোনদিন এতটা অধিকার তুমি দেবে কি না। তবুও বলি, দুর্গম কোন পথেও যদি তুমি একবার হাত বাড়িয়ে ইশারা কর তোমার পথের সঙ্গী হতে। আমি সেখানেও তোমার সঙ্গী হয়ে তোমার পাশেই হাঁটবো। তোমার একলা পথের একমাত্র সঙ্গী হবো। কিন্তু তুমি ইশারা করে একবার ডাকবে তো ??——- অমন করে বললে কেউ না ডেকে পারবে না, সে আমি হলফ করে বলতে পারি !! অসাধারন লিখেছেন । -{@ (y)
অলিভার
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সময় নিয়ে পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
শুভ কামনা জানবেন 🙂