রাত্রির যাপিত জীবনের উল্টোমুখী যাত্রাটা আসলে শুরু হয় তার স্বামী রাশেদের মোটামুটি নামকরা এক গার্মেন্টসে জিএম হবার পর ।
“ সত্যিই তুমি বড় দয়ালু খোদা । কি দাওনি তুমি আমাকে ? আমার জীবন কানায় কানায় ভরে দিয়েছ । তোমার রহমত আমি সবসময় স্বীকার করি । এইভাবে আমাদের সারাজীবন সুখে শান্তিতে রেখ ।“
গুলশানের বিলাসবহুল যে ফ্ল্যাটে অনিয়মিতভাবে উপাসনা করে রাত্রি এইভাবে তার কৃতজ্ঞতা স্রষ্টার সমীপে নিবেদন করে, তার কতটুকুন অংশে প্রথাসিদ্ধ পথের অর্জিত আয়ের বলার মত অবদান আছে – রাত্রি সেইসব গন্ডোগলের হিসেবে যেতে চায় না । এইসব বিষয় প্রশ্ন হয়ে মাথার ভিতর মাথা চাড়া দেয়া মাত্রই সে নিজেকে অন্য বিষয়ে সমর্পিত করবার চেস্টা করে ।
সেই কবে, কতদিন রিক্সা ভাড়া বাঁচাবার জন্য আর যাত্রীভরতি কাত হয়ে যাওয়া বাসে উঠতে না পেরে মতিঝিল থেকে বনগ্রাম লেনের অনেক ভেতরকার দিকের ভাড়া বাসায় হেঁটে আসতে হয়েছে সেই স্মৃতি এখনো রাত্রির কোন উদাস রাত্রিতে মনে পড়ে যায় । আজও রাত্রি অফিস করে, তবে তা এলিয়নে করে ।
রাত্রির বসটাও পড়েছে ভালমানুষ টাইপের । প্রয়োজনের ছুটিগুলো তো আছেই, পাশাপাশি যখনই সুযোগ পায় রাত্রি নানান অজুহাত প্রয়োজনের রঙে রাঙ্গিয়ে যতরকম ভাবে পারা যায় আরো ছুটি বের করে নেয় । অথচ বেসরকারি চাকরিতে আরো বিশেষ করে ব্যাঙ্কের চাকরিতে ছুটি পাওয়া এত সহজ কথা নয় ।রাশেদের মত অনেকেই যেখানে এ সমাজে বড় বড় অনিয়মগুলো করছে, সে হিসেবে এইসব টুকটাক অনিয়ম করলে ক্ষতি কি – এমন ভাবনায় হয়ত কখনো রাত্রি নিজের অজান্তেই ফিক করে হেসে দিয়েছে ।
আজ রাতের খাবার শেষে কাজের মেয়েকে তাগাদা দিয়ে রাত্রি তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছিল কারণ আজ তার ভীষণ “ইচ্ছে” করছিল । আরো খুশি হয়েছিল রাশেদ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসায় । প্রায় দিনই সে দেরি করে ফেরে । আর বলে বেশি টাকা কামাতে হলে পরিশ্রম তো বেশি করতেই হবে । অপ্রথাসিদ্ধ পথে এত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা – এটা রাত্রির কাছে জাদুবিদ্যার কোন বিষয় মনে হয় । রাশেদও সিস্টেমটা ক্লিয়ার করে বলে না । দু’একবার সে স্বামীকে বলেছে – এত টাকা দিয়ে কি হবে ? তাছাড়া যার এত কাজ সেও মাঝে সাঝে শরীর খারাপের কথা বলে দুপুরে বাসায় চলে আসে – এই ব্যাপারটা নিয়েও রাত্রির ভাবনা ও সতর্কতা এবং খটকা বরাদ্দ আছে ।
কাপড়টা পাল্টাতে গিয়ে গোলাপি রঙের একটা জামা বের করল রাত্রি । ছেলেরা লাল জাতীয় রঙের কাপড়ে আকৃষ্ট হয় বেশি – এটা রাত্রি তার ইচ্ছের দিনগুলোতে মনে রেখে ড্রেস চুজ করে । যদিও দুজনের আকর্ষণে এখন ভাটার টান, তবুও এ অভ্যাসটা বহাল আছে ।
ঘরে ঢুকে দেখল রাশেদ উলটা দিকে মুখ ঘুরিয়ে মোবাইলে কি যেন করছে । রাত্রি সুড়সুড়ি দিয়ে বলল
– কি এত কাজ কর মোবাইলে ? নাকি সময় কাটানোর জন্য গুতাগুতি করছ ?
~ আহা, কাজ করতেছি তো ?
– রাখ তো তোমার কাজ । এদিকে ফির নাইলে কিন্তু সুড়সুড়ি দিতেই থাকব ।
রাশেদ পাশ ফিরতেই রাত্রি আকন্ঠ নিমজ্জিত হল রাশেদের মুখায়বয়ে । কিন্তু শেষমেষ আবিস্কার করল এক অনুত্তেজিত, নিস্তেজ রাশেদকে । বেশ কিছুদিন ধরে এটা নিয়মিত সমস্যায় পরিণত হচ্ছে । রাত্রির নীরবতা ভাংগল ।
– তোমাকে কতদিন ধরে বলছি কি এত কাজ কর ? কাজের প্রেসার কমানোর কি কোন উপায় নেই ? নাকি তুমি কোন বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরে টেনশন করছ ?
~ আরেহ না । কি নিয়ে টেনশন করব । আর কাজ তো থাকবেই ।
– একটু ডাক্তার টাক্তার দেখাও না । চেকাপ করালে ক্ষতি তো নেই ।
~ আচ্ছা দেখাবোনে । এখন ঘুমাও ।
দুজনে দুপাশ ফিরে শুতেই রাশেদ জিহবায় কামড় দেয় । কিছুদিন ধরেই তার মিসটাইমিং হচ্ছে । টাকা কামানোর লোভ যেমন বাড়ছে, তেমনি অন্যান্য কিছু লোভও তার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে । আজ বিকেলে হঠাত বন্ধু আজাদ এসে বলল একদম নতুন জিনিস । শুনেই কাজ টাজ ফেলে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল রাশেদ । সুখভোগও বেশি হয়ে গিয়েছিল আজ ।
এর কদিন পর ।
বেশ জ্যোৎস্না নেমেছে । চাদেলা রাত্রি, বৃষ্টি দিন, এইসব প্রাকৃতিক বিশেষ ব্যাপার-স্যাপারগুলিতে রাত্রি একটু বেশি রোমান্টিক, একটু বেশি আহলাদি । রাশেদও সচেতনভাবে সতর্ক আর প্রস্তুত থাকে এইসব দিনগুলিতে । একটু বেশি মাত্রায় আনন্দিতও থাকে সে ।
আনন্দময় ক্লান্তির পর যে গভীর ঘুমটা আসে, লোভী রাশেদ তার জন্য স্নাইপারের ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে । রাত্রির এই ঘুমটা পরীক্ষিত ।
একসময় রাশেদ ইদানীং নিয়মিত অভ্যাসের পথ ধরে সার্ভেন্টস রুমের দিকে পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় ।
একদিন হয়ত রাত্রি, জোস্নার মত সুন্দরী রাত্রি মুখোমুখি হবে নিকষ কালো অমাবশ্যাময় রাত্রির, প্রতীয়মান পূর্ণ জীবনের মাঝে যে এক হা-মুখ অসম্পূর্ণতা থেকে যায় – সেই উন্মোচনের মুখোমুখি হবে সে ।
তার আগ পর্যন্ত, তার জীবনটা তার কাছে বর্তমানের নিক্তিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ মনে হয়েই থাকুক । ঠিক যেমনটা কেউ চুপসে দেবার আগ পর্যন্ত ঢাউস হাওয়াই মিঠাইয়ের মত ।
১৬টি মন্তব্য
মশাই
আপনার প্রথম লেখাতেই বাজিমাত প্রিয়!!
সোনেলাতে স্বাগতম আপনাকে। আশা করি আপনার লেখা পড়তে পারব। পাশে থাকুন আর লিখুন অবিরাম। -{@
প্রত্যাবর্তন
প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে আপনাকে স্পেশাল ধন্যবাদ এবং উদার প্রশংসার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ।
ছাইরাছ হেলাল
অভিনন্দন আপনাকে এখানে লেখার জন্য ।
হাওয়াই মিঠাই খেতে মন্দ নয় , তা এরিয়ে যাওয়াও অনেক সময় কঠিন ।
লিখুন নিয়মিত , পড়ুন ও ।
প্রত্যাবর্তন
আপনাকেও সুস্বাগতম । লিখা ও পড়ার চেস্টা থাকবে অবশ্যই ।
লীলাবতী
মন খারাপ হয়ে গেলো ভাইয়া। বেশী অর্থ প্রাচুর্য্য ভালো না।
প্রত্যাবর্তন নিক নিয়ে এলেন। এমন লেখা দিলেন মনে হচ্ছে যেনো আপনার লেখা অনেক পড়েছি। সোনেলা পরিবারে আপনাকে পেয়ে আনন্দিত আমি।
প্রত্যাবর্তন
আসলেই, অতিরিক্ত অর্থ মানুষকে সহজেই বেদিশা করার অন্যতম নিয়ামক ।
আমি জানিনা, আমার অন্য নিকের লেখা অন্য ব্লগে পড়েছেন কীনা । তবে নানান কারণে অন্য নিকে আর লেখা হয়ত হবে না । এই নিকই চলুক ।
আন্তরিক অভ্যর্থনায় অভিভূত ।
লীলাবতী
চলুক এই নিকেই । নিক সমস্যা নয় কোন । আসল হচ্ছে লেখা । লেখা পড়ে মনে গেঁথে গেলেই হলো । আমিও অন্য নিকে অন্য ব্লগে ছিলাম । এখানে এই নিকে প্রথম থেকেই আছি। বেশ আছি এখানে , কোন চাপ নেই । নিজের মনে হয় সোনেলাকে ।
প্রত্যাবর্তন
হুম । কীভাবে যেন লিংক পেয়ে গেলাম সোনেলার । ভালোই লাগছে এখানে ।
শুন্য শুন্যালয়
না জেনে রাত্রি গুলো পূর্নিমার মতোই থাকুক।
স্বাগতম আপনাকে আর ধন্যবাদ সুন্দর একটি লেখার জন্য।
নিকটি খুব সুন্দর, তবে চাই আপনি সবসময় থাকুন, চলে গিয়ে যেন বারবার প্রত্যাবর্তন করতে না হয়. এই নিন শুভাগমন শুভেচ্ছা -{@
প্রত্যাবর্তন
থাকুক নাহয় ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আনন্দদায়ী উৎসাহ দেবার জন্য ।
ছাইরাছ হেলাল
একটি সহজিয়া প্রশ্ন ,
আমি কি আগে (তা যে নামেই হোক বা যেখানেই হোক) আপনার লেখা পড়েছি ?
প্রত্যাবর্তন
হুম ।
ছাইরাছ হেলাল
হুম !
প্রত্যাবর্তন
🙂 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
হাওয়াই মিঠাই নামকরন মিলিয়েছেন ভালোই । ভালো লিখেন আপনি …… প্রত্যাবর্তন ।
প্রত্যাবর্তন
হঠাত করে একটা মিল খুঁজে পেলাম বলে মনে হল ।
আর প্রশংসায় না খুশি হয়ে পারা যায় !!