হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চুপ চাপ শুয়ে আছি। নরা চড়া করার ও চেষ্টা করছি না একদম ই। খানিক টা ঘোর কাটতেই বুঝতে পারলাম,বুকের ওপর দু হাত রেখে শুয়ে আছি। বাম হাত এর ওপর ডান হাত। অনেক টা লাশ এর মত করে, লাশ এর হাত যেভাবে বুকের ওপর রাখা থাকে, ওরকম। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম ব্যাপার টা। স্বভাব বশত অস্বাভাবিক কিছু খোঁজার চেষ্টা করলাম স্বাভাবিকতার মাঝেও। পেলাম না। আমার ঘড় টা পুরোটা খুঁটিয়ে দেখছি, যদিও আবছা আলোয় খুব ভালো মত যে বোঝা যাচ্ছে তা নয়।এমন সময় পা বরাবর কিছু টা বামে কোনাকুনি একটা অবয়ব দেখতে পেলাম। দেখেই আমার চক্ষু চড়কগাছা।কালো কাপড় জড়ানো পুরো শরীর এ, মুখের অংশ টুকু তে যেখানে চোখ থাকার কথা ওখানে শুধু দুটো আলো জ্বলছে দেখতে পেলাম। পুরো অবয়ব এ আর কিছুই তেমন স্পষ্ট না বিঁধায় দেখতে পাচ্ছি না। বস্তু টি একবিন্দু নড়ছেও না।আমিও চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছি না একদম ই। চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। আমার চক্ষু জোড়াও ওর চোখ বরাবর। ধীরে ধীরে ভয় বাড়তে শুরু করলো। অবয়ব টা যাচ্ছেও না, এগুচ্ছেও না। কিছুই করছে না। একেবারে মূর্তির মত, এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। আমি তখন ভয়ে ঘামতে শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমার হৃৎস্পন্দন ও বেরে চলেছে। কি করবো বুঝতেও পারছি না। অনেক চেষ্টা করে যতটুকু সম্ভব জোর দিয়ে চিৎকার করে আম্মু কে ডাক দিলাম। কিছুক্ষণ এর জন্য থমকে গেলাম। এতো জোরে ডাক দিলাম অথচ আমি নিজেই শুনতে পেলাম না। আবার মুখ দিয়ে শব্দ করার চেষ্টা করলাম এবং শুধু জিহ্বা আর ঠোঁট নড়ল,কোন শব্দ বেরোল না।বিন্দুমাত্র শব্দ বেরোচ্ছে না গলা দিয়ে। আমার ভয় আরও বেড়ে গেলো তখন। হাত, পা নাড়াতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না।চোখ পর্যন্ত সরাতে পারছি না।ঐ মুহূর্তে আবার হঠাৎ করে অবয়ব টা সামনে এগুতে শুরু করলো। আমি মারাত্মক ভয় পেয়ে এবার সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করলাম আর মুহূর্তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
চোখ মেলে ঘাড় না নরিয়েই পুরো টা ঘর দেখলাম, যতটুকু দেখা সম্ভব হচ্ছে।ঘোর তখনও কাটেনি,তাই নড়াচড়া করছিলাম না। নাহ, কিচ্ছু নেই। স্বপ্নই দেখছিলাম তাহলে। হঠাৎ করেই ভয় টা পুরপুরি নেমে গেলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনে মনে হাসছি আর ভাবছি কি ভয় টাই না পেয়েছিলাম,মনে হচ্ছিল এই বুঝে ওটা আমার গলা চিপে ধরবে। যদিও জিনিশটার হাত আছে কি না দেখতে পাইনি। হা হা। এসব ভাবতে ভাবতেই বুকের দিকে তাকালাম, দেখি বাম হাত এর ওপর ডান হাত রাখা। চকিতে চোখ চলে গেলো পা এর দিকে, পা একদম সোজা করে রাখা। একেবারে লাশ এর মত। এটা দেখতে পেয়েই বাম দিকে কোনাকুনি ঐ জায়গায় তাকালাম। নাহ, কিছু নেই তো। আশ্চর্য। এসব কি হচ্ছে আমার সাথে। ভয় আর দ্বিধা দুয়ে মিলে আমি কুপোকাত, গলা শুকিয়ে এসেছে। পানি খাব ভেবে উঠতে গেলাম। আশ্চর্য তো। নড়তে পারছি না কেন? পুরো লাশ এর মত করে শুয়ে আছি। হাত,পা নাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। অদ্ভুত। মনে পড়লো, বোবায় ধরা বলে একটা ব্যাপার আছে। লাশ এর মত করে শুলে নাকি বোবায় ধরে। ভাবলাম তাই হয়তো হয়েছে! কিন্তু তাহলে তো চিন্তাশক্তি কাজ করত না। ভাবতে পারতাম না। যাই হোক, অস্বস্তি বাড়তে লাগলো। এভাবে কতক্ষণ? কতক্ষণ পার হচ্ছে জানিনা। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার পানির তেষ্টা বেরেই চলেছে। সাথে ভয় ও। শান্ত করতে চেষ্টা করলাম মন কে, শেষ চেষ্টা করে দেখি। সর্বচ্চ শক্তি দিয়ে উঠতে চেষ্টা করলাম, পারলাম না। আবার ব্যর্থ হলাম।বিন্দু মাত্র কিছু না ভেবেই সাথে সাথে আম্মু কে ডাক দিলাম চিৎকার করে। ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘাড় না নাড়িয়ে এপাশ ওপাশ দেখলাম। সব ঠিক। ডান পাশে কাত হয়ে শুতে চেষ্টা করলাম। পারলাম! পরক্ষনেই প্রচণ্ড তেষ্টা পেল। উঠে বসে টেবিল থেকে পানির বোতল টা নিলাম। পানি পান করছি আর ভাবছি,যাক অবশেষে বাস্তবতায় আসতে পেরেছি। এতক্ষণ কি চলছিল আমার সাথে? ভাবছি আর পানি পান করছি। যাই চলুক শেষ তো হয়েছে। ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম।পানি পান করা শেষ করে শুয়ে পরলাম। বেশ ক্লান্ত ছিলাম হয়তো। শুতে না শুতেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
ঘটনা টি সত্য। আমার সাথে কিছু দিন আগেই এরকম হয়েছে। হয়তো বা আমি যে পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম তা এখানে লিখে প্রকাশ করতে পারিনি। তবে আসলেই, বেশ ভয় পেয়েছিলাম। স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন, আবার সেই স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন। অনেকটা ‘INCEPTION’ movie টার মত।স্বপ্ন নিয়ে আমার আরও বেশ কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আছে। ধীরে ধীরে সে গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আশা করছি।
২১টি মন্তব্য
শিশির কনা
ভালো লেগেছে খুব । লিখুন এমন স্বপ্ন একের পর এক (y)
রাতুল
হুম। ধন্যবাদ 🙂
লিখবো 🙂
নীলকন্ঠ জয়
ভয়াবহ ব্যাপার ! 😮
আরো ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছেন? তাহলে চটজলদি জানান পরের পর্ব গুলোতে।
রাতুল
হুম, বটে। মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম।
দেখেছি :p :p লিখবো :p
শুন্য শুন্যালয়
শুনেই তো ভয় লাগছে …সত্যি হরোর মুভির মতো …লিখুন বাকিগুলো, অপেক্ষায়
রাতুল
হুম !! :p অবাস্তব কর্মকাণ্ড, বাস্তব অনুভূতি।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
স্বপ্ন চলুক সীমাহীন ভাবে । -{@
রাতুল
এরকম স্বপ্ন না চললেই ভালো !! :p
মা মাটি দেশ
-{@ \|/ গল্পটি মন্দ নয়।
রাতুল
এটি গল্প কম স্বপ্ন বেশি :p
মর্তুজা হাসান সৈকত
ভালো লিখেছেন।
রাতুল
এরকম কিছু লিখতে না হলেই ভালো 🙂
ধন্যবাদ 🙂
ছাইরাছ হেলাল
এ দেখছি ঘরের মধ্যে ঘর ,
তাড়াতাড়ি অন্যগুলো শুরু করুণ।
রাতুল
হুম !!
করবো 🙂
ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
এমন হয় মাঝে মাঝে ,
স্বপ্নে বোবায় ধরে
পানির তৃষ্ণা পায় খুব —
স্বপ্নের লেখা চলুক —
রাতুল
হুম। তবে সপ্নের ভেতরে আরেক সপ্নের ভেতর স্বপ্ন। পুরোপুরি ঘোর কাটার পর বেশ বিস্মিত হয়েছিলাম।
চলবে আশা করছি 🙂
খসড়া
আপনি কি কোন ঔষধ খেয়েছিলেন। কোন কোন ড্রাগে এমন হয়। যেমন এলার্জির জন্য কোন এন্টিহিস্টামিন ড্রাগ বা হাই এন্টিবায়োটিক।
রাতুল
না তো। কোন ওষুধ খাইনি ওইদিন।
আদিব আদ্নান
এর পর কী ! ভাবতে পারছি না ।
রাতুল
হা হা !! ভাবতে না পারাই ভালো, ভাবতে পারলেই ঝামেলা বাড়ে। :p
শান্তনু শুভ্র
জনাব রাতুল, ‘স্বপ্ন দোষ’-ত্রুটি মুক্ত রাখুন… ভালো থাকুন \|/