মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।

হ্যালো!

পরিচয় পেয়ে দেখি যুঁথি আপু আর সাদিয়া আপু আগেই চলে এসেছে। বিকেলে ওরা পতেঙ্গা যাবে, ওদের সঙ্গ দিতে হবে।

এদিকে জিসান দাদার কথামতো ফয়েজ লেক সিলেক্ট করেছি। ওখানকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমার বন্ধু। সবকিছু ৩০%  কমিশনে করেছি। আর ওখানে লেক, পাহাড়, কটেজ, রেস্টুরেন্ট,  ওয়াটার পার্ক, এ্যামিজমেন্ট পার্ক, চিড়িয়াখানা।  এক কথায় চমৎকার। সবাইকে মুগ্ধ করবে আশা করি।

আমি ডেট অনুসারে যথাসম্ভব গুছিয়ে কাজ করছি।

পরেরদিন ফয়েজলেকে গিয়ে সবকিছু ঠিক আছে কিনা চেক দিলাম। আমার এক বন্ধু ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। ওকে মঞ্চের দায়িত্ব দিলাম। আমি ৫ কেজি ছুরি শুটকি আর রূপচাঁদা মাছ কিনে বাড়ি ফিরলাম।

১০ তারিখ আমি, নাবা, ওর বাবা, ফয়েজলেকের গেটে ১০০ গোলাপ দিয়ে তাদের বরণ করে কটেজে পৌঁছে দিলাম। আমাদের নারী ব্লগাররা যেহেতু চটপটে, ওনারা দ্রুত ফ্রেশ হয়ে যা যা তৈরি নাস্তা আনছে ওগুলো হলরুমে আনলো। ওখানকার বয় বেয়ারা সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করলো।

এবার বেড়িয়ে পরার পালা। লেকে নৌকা ভ্রমণ এবং সেই সাথে ওয়াটার পার্কে ভ্রমণ। ফিরে খাওয়া দাওয়া সারা হলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে।

লেকের পাশে মঞ্চ রেডি। ব্লগারদের হাতে ছোট ছোট কাগজ দেয়া আছে। সবাই ঐ অনুসারে গান, নাচ অভিনয়, কৌতুক বলে আসর জমিয়ে তুললো। সবশেষে, আমাকে ইন্জা ভাইয়ের টপিকস অনুসারে বক্তৃতা দিতে বলা হলো।

#স্বপ্ন

ছোট শব্দ। অথচ এই শব্দটাই পাল্টে দিতে পারে আমাদের জীবনকে। প্রতিকূলতাকে জয় করতে, নিজের জীবনের মোড় ঘোরাতে হলে আমাদের  দেখতে হয় স্বপ্ন। এটা মানুষের মানবিকতার একটা অংশ। হয়তোবা সবচেয়ে বড়। রোবট বা কম্পিউটার এদের সাথে মানুষের বড় পার্থক্য এটাই।

আমরা হয়তো বিদ্যুৎ গতিতে কাজ না করতে পারি। কিন্তু অসাধারণ অসম্ভব সব স্বপ্ন দেখতে পারি। নানা জটিলতায় পিছিয়ে গেলেও ইতিহাস বলে বহু মানুষ পেরেছে।

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতো আমিও বলি, ” #স্বপ্ন মূলত মানুষের গোপন আকাঙ্খা এবং আবেগগুলোর বহিঃপ্রকাশ। ” প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন, স্বপ্নের মাধ্যমেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়া যায়।

কলেজে পড়ার সময় রসায়ন স্যার বলেছিলো, ” স্বপ্নেই যখন খাবি, বড় রসগোল্লাটাই খাইস।”

বন্যেরা বনে সুন্দর,  শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এই চিরসত্য কথাটা পথশিশুদের ক্ষেত্রে খাটেনা। মায়ের স্নেহ কী, ওরা জানেনা। তাদের বাবা মা নেই, অনেকের থেকেও নেই। অবহেলা শব্দটি ওদের সঙ্গে জড়িত। যে সময় ওদের হাতে বই থাকার কথা, তখন খাদ্যের সন্ধানে ওদের কাটে কাগজ কুড়িয়ে, বোঝা টেনে কিংবা ভ্যানের পিছনে ঠেলা দিয়ে। কেউবা খারাপ লোকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। এদের এমন এক স্কুল দরকার যেখানে তারা খেলার মাধ্যমে কাজ করবে এবং পড়বে। সাথে থাকবে নৈতিক শিক্ষা।

আমার বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরে একটা এতিমখানা আছে। যেখানে তারা শুধু একবেলা খায়। আশেপাশের গ্রাম থেকে কিছু খাবার না আসলে, তাদের এভাবেই দিন কাটে। কতো কষ্টকর জীবন তাদের!

সোনেলার প্রত্যেক সদস্যকে বলছি। আমরা কি পারিনা এদের জন্য কিছু করতে? আমরা মাসে যদি ২০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে একটা ফান্ড করে জমা দেই। তাহলে বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়। এভাবে পাঁচ বছর পর যে এ্যামাউন্ট দাঁড়াবে। তা দিয়ে এরকম একটা এতিমখানা বা পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানো যায়।

জানি, এ পথে সাফল্য এতো সহজ নয়। তবে, অসম্ভব নয়।

আমরা কিন্তু ২০ টাকা দিয়ে এক প্লেট ফুচকা বা চটপটি প্রতিদিন খাই।

আমার ভাবনাটা আপনাদের মাঝে দিলাম। স্বপ্ন তো নিছক কল্পনা নয়। স্বপ্ন মানে গন্তব্য।

বাইবেল থেকে একটা উক্তি দিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

” He who liveth, he who believeth, shall never die. ”

সবাই ভালো থাকবেন। সোনেলার অগ্রযাত্রা শুভ হোক।

এরপর বিদায়ের পালা। সবাই সবার মতো সৌজন্য কথাবার্তা সেরে নিচ্ছে। এমন মিলন মেলার জন্য আবারও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সাউন্ড বক্স থেকে গান ভেসে আসছে, ” আবার হবে তো দেখা?  এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো? ”

স্বপ্ন || ১১ (ব্লগারদের সম্মিলিত গল্প)

১৪৩৭জন ৮৪৯জন
0 Shares

৭০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ