কাকেরা তাদের কা কা বন্ধ করে দিয়েছে সেই কবেই। একে একে ঘর্মাক্ত দেহে বাসায় ফিরেছে সব পোশাকশিল্পীও। সোডিয়াম বাতির নীচে লীলাখেলা রত আলো আঁধারির আবক্ষ মূর্তিগুলোও ক্ষ্রান্ত কিংবা পরিতৃপ্ত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে রাস্তার স্টার্নাম বরারর ছুটে চলে কিছু মাতাল গাড়ি, যেনো আজ ওদের ফর্মূলা ওয়ানের নেশায় পেয়েছে।
রাত ১ টা। নিভে গেছে সব এপার্টমেন্টের বাতি, কোনোটা কারনে, কোনোটা হয়তোবা অকারনে। নীলের রুমের বাতিটাও নীভে যায়। সন্ধ্যা ৬ টা থেকেই বাতিগুলোকে নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রাম দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে সরকার।
টেবিলে ছড়ানো ছিটানো বই। সেই বিদ্যাসাগরে দ্বীপের মতো জ্বলছে একটা চাইনিজ সার্চলাইট। উঁসখু খুঁশকো চুলে বারবার চোখ মুছে শব্দ করে পড়ে যাওয়াটাই নিয়তি মেনে নিয়েছে নীল। তাই ঘুমের সাথে তার শত্রুতা চিরন্তন। যার কানে ভাসে – ” মেডিকেল টা এনে দে না বাবা! ” আর চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে – ” Medical or Morgue ” ঘুম কি তার সাথে জিততে পারে? না! এক সময় ঘুম জিতেই যায়। কিন্তু স্রেফ ৪ ঘন্টার জন্য। আবার সেই টেবিল, সেই বই আর নীলের ভার বহনকারী ৪ পেয়ে গাধারূপী চেয়ারটা।
এপ্রনটা গায়ে দিয়ে মায়ের সামনে আসামাত্রই মায়ের চোখের পানি দেখে নিজেই ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিলো নীল। এ কান্নার জন্যই তো এতো শ্রম, এতো অপেক্ষা। আজ সবাই কাঁদবে, হাসবে শুধু অন্তরীক্ষে অন্তরালে বসা মহানায়ক ।
আজ সপ্তাহখানেক ধরে অসুস্হ নীল। যে ছেলের ১৫/১৬ ঘন্টা নিয়মিত পড়ার অভ্যাস ছিলো, সে এখন ৫/৬ ঘন্টাতেই হাঁপিয়ে যায়। পড়ার প্রতি কেমন জানি একটা বিতৃষ্ণা ধরে গেছে। তবুও সামনে প্রফ বলে বিছানায় শুয়ে chowrasia তে চোখ বুলাচ্ছে সে। বিছানায় ছড়ানো ছিটানো বোনসগুলা, মাথার কাছেই আরেকটা মাথার খুলি। কিসের যেনো নিমন্ত্রন অনুভব করে সে।
আজ নীলের ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আর আজই তার ফাইনাল প্রফের রেজাল্ট দিলো। পাস করলেও সেই রকম উদযাপন কোথায়? আরো যে ইন্টার্নীর হ্যাপা বাকি। তার প্রকৌশলী বন্ধুরা সব বিয়ে করে ফেলছে ধীরে ধীরে, দু হাতে টাকা কামানো শুরু করে দিয়েছে আর নীল এখনো বাপের টাকাতেই চলে। নিজের উপর কেমন একটা ঘেন্না জমে। মানসিক যন্ত্রনা তাকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে মারতে থাকে। তার সহপাঠীদের অনেকে হাতে তুলে নিয়েছে নেশা। কেমন জানি নিজেকে অনেক দুর্বল মনে হয় তার। তার অনেক টাকা লাগবে, অনেক। তার বন্ধুদের ছেয়েও বেশি। মানবিকতা শব্দটা কেমন জানি হাস্যকর শুনতে লাগে তার কাছে। পৃথিবী বড়ই অদ্ভুদ।
নীলের টেবিলের কোনায় পড়ে আছে ধুলো মাখা কয়েকটা হমায়ুন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ আর মানিক বন্দোপাধ্যায় এর বই। কি সাবলীলভাবেই না তারা অশালীন শব্দগুলোকে, বিকৃত কিন্তু চিরন্তন কামনাগুলোকে, সমাজের প্রচলিত গালিগুলোকে হুবহু সাহিত্যে স্হান দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু নীলের বেলায় কেনো এরূপ হবে না? হঠাৎ আত্মদ্রোহী হয়ে উঠে সে । কিন্তু মানসিকভাবে ভূপাতিত হয়ে তার মনে পড়ে সেই অমীয় বানী – দেবালোকের স্বামীজীদের মর্ত্য কিংবা স্বর্গ সর্বত্র যাতায়াতের অধিকার আছে কিন্তু নীলের মতো “গণ্ডমূর্খের” নেই।
নীল হাতে তুলে নেয় Netter এর বই। আবার হারিয়ে যায় তার নিজের রাজ্যে। এখানে তারর নগ্নতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করবার মতো কেও নেই। নীলের চোখে আপাতত FCPS এর স্বপ্ন।
১০টি মন্তব্য
লীলাবতী
আমার পরিচিত দু বন্ধু আছেন মেডিকেলে পড়েন । রাত দুটোর পূর্বে কোনোদিন ঘুমাতে পারেননি । আবার খুব ভোড়ে জাগতে হয় । অসুস্থ হয়ে পরেন পড়াশুনা করতে করতে ।
নেশা খুব খারাপ অভ্যাস ভাইয়া । বড় সাহিত্যিকগন যা করেন তা তাঁদের সাহিত্য কর্ম , আমরা করলেই তা অশ্লীল ।
ভাইয়া ‘ শব্দটি ‘ নিয়ে আর কস্ট পাবেন না । আমরা আমরাই তো -{@ (y)
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
আসলে এই গল্পছায়াটি পূর্বের পোস্টের ব্যাখ্যা বলতে পারেন। ঠিক কি পরিস্হিতিতে আগের পোস্টটা করেছিলাম, কেন আমরা সমালোচনায় সহজেই রিঅ্যাক্ট করে ফেলি, কেন টাকার পিছেই ছুটে ফিরি তার হাস্যকর কিছু ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। নিজের জীবন দিয়ে শুরু করেছি, শেষটা এক বড় ভাইয়ার জীবন দিয়ে। জানিনা নিজের শেষটা কেমন হবে…..
শুন্য শুন্যালয়
অনেক কথা মনে করিয়ে দিলেন, মন খারাপ করেন না, শুরুটা কস্টের হলেও শেষ টা নিশ্চয়ই সুন্দর হবে, শুভ কামনা…
টাকা একদিন আসবেই, কিন্তু সময় চলে গেলে নিজেকে কিন্তু আর ফিরে পাওয়া যাবেনা… আপনার আগের পোস্টের মন্তব্য পোস্ট আকারে দেবো ভেবেছিলাম, এখন আর ইচ্ছে করছে না, ভালো থাকবেন সবসময়… -{@
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
নিজেকে খুঁজে ফেরা আমার চিরন্তন। এখনি খুঁজে পাচ্ছি ভবিষ্যত তো দুর ছাই? যাই হোক শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ! আশা করি কেও আমাকে ভুল বুঝেন নাই !
খসড়া
পোষ্ট টি দুবার পড়লাম। লেখক ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছেন বুঝিনি। আবারও পড়ে দেখব। 🙂
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
লেখক আপনাকে তার আগের পোস্ট
মন্তব্যসহ পড়ার অনুরোধ করছে। আগের
পোস্টের ব্যাখ্যা বলা যায় এটিকে।
স্বপ্ন
আমার অপমৃত্যু নেই 🙂
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
তবে কি বাকিটা আছে?
জিসান শা ইকরাম
নীলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক
সে FCPS হোক , এ আমার আন্তরিক কামনা ।
ব্যাখ্যা বুঝেছি
কিছু কেনোর উত্তর না খুঁজে , নিজের চিন্তা বিশ্বাস বাস্তবায়নে নিমগ্ন থাকা মনে হয় ভালো ।
শুভ কামনা , সব সময়ের জন্য ।
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় জিসান ভাইয়া।