আমার বাবা পেশায় একজন শিক্ষক। আমার মত যাদের বাবা পেশায় শিক্ষক তাদের গর্ব করার বেশি কিছু নেই বাবার ঐ শিক্ষকতা পেশা টুকু ছাড়া। অভাব আর অর্থকষ্টই আমাদের সম্বল। তাই মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে অভাবের সাথে কি সম্মানের সম্পর্কটা একটু বেশিই কিনা !
লজ্জ্বা আর ক্ষোভের কথা কি জানেন? আমাদের শিক্ষক বাবারা কিংবা আমাদের শিক্ষাগুরুরা সম্মানের সাথে ২য় বা ৩য় শ্রেণীর কর্মকর্তা !! যে দেশে শিক্ষকদের মূল্য নেই সে দেশে প্রকৃত শিক্ষিত সন্তান গড়ে ওঠার কথা না। তবুও গড়ে উঠছে শুধু মাত্র এই পেশার মানুষগুলোর অসীম ভালোবাসার কারণে।
এই পেশার মানুষগুলো তাদের সন্তানদের কখনই সচ্ছল জীবণ উপহার দিতে পারেনা। কারণ ২য়/৩য় শ্রেণীর একজন পেশাজীবীর পে-স্কেল কি হতে পারে তা সকলেরই বোধগম্য। তাই সন্তানদের সুশিক্ষা ছাড়া আর কিছুই তারা দিতে পারেন না। অথবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যের সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে নিজের সন্তানের খোঁজই রাখতে পারেন না!!! একজন মাষ্টার্সধারী মেধাবী কখনই এই পেশাকে তার ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখতে চান না।
অথচ এমনটিই হওয়ার কথা ছিলো দেশের সেরা মেধাবীদের প্রথম চয়েজ হবে শিক্ষকতা। কিন্তু সেই পথে তারা কখনই পা বাড়াতে চান না। কারণ দূর্মূল্যের এই যুগে,যেখানে ৪০টাকা সের দরে চাল কিনতে হয় আর মাছের কেজি ৫০০টাকা; সেখানে ৩০০০/৪০০০ টাকার স্টার্টিং পে-স্কেলের চাকরি কোন পাগলেও কি করতে চাইবে?
তাতেও কি এই পেশা মেধাশুন্য? মোটেও না। এই পেশাকে ভালোবেসে গ্রহণ করছেন অনেক মেধাবীই। কিন্তু তাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকালে একরাশ হতাশা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না। বলতে পারেন কেন এই অবমূল্যায়ণ? কারণ একজন শিক্ষক কখনই একজন রাজনীতিবিদ নন কিংবা অর্থের জন্য নিজের আত্মমর্যাদাটুকু বিকিয়ে দিতে পারেন না কিছু শিক্ষিত নামধারী অশিক্ষিত নিয়মপ্রণেতার কাছে। মুখ ফুটে দাবি জানাতে পারেন না।
কিংবা দাবি জানাতে গেলেও সরকারের সুশিক্ষিত পেটোয়া বাহিনীর বেধড়ক পিটুনির শিকার হতে হয়! মিডিয়া-মানবতা তখন থাকে নির্বিকার। দেখেও না দেখার অভিনয় করে যায় তারা। অথচ তারাই ফলাও করে প্রচার করে এদেশের মূর্খতম নীতিহীন রাজনীতির কুশিলবের খবর কিংবা বলিউডি আইটেম গানের কথা।
এদেশের মিডিয়াকে প্রচার করতে দেখা যায় শিক্ষকদের টিউশনি ব্যাবসার (!) খবর। কিন্তু ভুলেও মুখ ফুটে প্রচার করে না পেটের দায়ে, স্ত্রী-সন্তানদের বাঁচানোর তাগিদটা কতখানি। কেন একজন শিক্ষককে ওভারটাইম হিসেবে দিন-রাত টিউশনি করতে হয়। শহুরে শিক্ষকদের তবু বুঝলাম এই বিশেষ ব্যবসা(!!) আছে। মফস্বল বা গ্রামের শিক্ষকদের কি আছে?
শত হতাশার মাঝেও আমি আমার বাবাকে নিয়ে, শিক্ষাগুরুদের নিয়ে গর্ববোধ করি।কারণ সুশিক্ষার পথটা তারাই আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন।
বিঃদ্রঃ ক্ষোভটি অনেক পুরানো। অনেকেরই ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ এই ব্যাথায় সমব্যথীদের সংখ্যা নাকি কম। পুনশ্চঃ এই লেখাটি অন্য একটি ব্লগেও প্রথম শেয়ার দিয়েছি গতকাল।
১০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ক্ষোভ বা ভালো না লাগার বিষয় এটি নয় ।
শিক্ষকেরা জাতির মেরুদন্ড এ কথাটি অতি সত্য ও শ্বাশত ।
কিন্তু এটির লালন-পালন দেখ-ভাল কি আমরা ঠিক ভাবে করছি বা করতে পেরেছি এ প্রশ্নটি প্রশ্ন আকারেই থেকে যাচ্ছে এবং যাবেও । তবে আশার কথা এই শত প্রতিকূলতার মাঝেও সত্যিকারের শিক্ষকের দেখা পেয়ে ধন্য হয়েছি ।
সচেতনতার জন্য ধন্যবাদ ।
নীলকন্ঠ জয়
অনেক ধন্যবাদ ভাই। সচেতনতা সবার মাঝেই তৈরী হউক।
ভালো থাকুন।
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
” এদেশের মিডিয়াকে প্রচার করতে দেখা যায় শিক্ষকদের টিউশনি ব্যাবসার (!) খবর। কিন্তু ভুলেও মুখ ফুটে প্রচার করে না পেটের দায়ে, স্ত্রী-সন্তানদের বাঁচানোর তাগিদটা কতখানি। কেন একজন শিক্ষককে ওভারটাইম হিসেবে দিন-রাত টিউশনি করতে হয়। শহুরে শিক্ষকদের তবু বুঝলাম এই বিশেষ ব্যবসা(!!) আছে। মফস্বল বা গ্রামের শিক্ষকদের কি আছে? ” — একমত ।
শিক্ষকদের যথাযত সম্মান আমরা দিতে ব্যর্থ ।
ভালো লিখেছেন ।
নীলকন্ঠ জয়
সহমতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
লীলাবতী
শিক্ষদের আমরা তেমন একটা মর্যাদা দেইনা সমাজে । তাঁরা শুধু উপেক্ষাই পেয়ে থাকেন।
নীলকন্ঠ জয়
হা ঠিক তাই।
অনেক ধন্যবাদ লীলাবতী দি নিয়মিত পড়ার জন্য।
আদিব আদ্নান
দেখুন গুণীদের মর্যাদাদানের ক্ষেত্রে তা যে কোন পেশার আমাদের অনীহা সর্বজনবিদিত ।
এটি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বেলায় ও একই ভাবেই প্রযোজ্য ।মর্যাদা না দিলে মর্যাদাবান হওয়া যায় না এ কথাটি
আমরা ভুলতে বসেছি । কিছুদিন পূর্বে শিক্ষকদের রাস্তার হেনস্থা এখন ও চোখে ভাসছে , যা ইতি পূর্বে অন্য
আমলেও সমানভাবেই দেখছি ।
শুধু কখন বা কবে এর অবসান হবে তা জানি না ।
নীলকন্ঠ জয়
হা আমারও একই প্রশ্ন এই অবহেলা থেকে শিক্ষকেরা কবে মুক্তি পাবে?
ধন্যবাদ আদনান ভাই।
শুভ কামনা।
ব্লগার সজীব
সমাজের ভাবখানা এমন , দয়া করে বাচাচ্ছেন শিক্ষকদের । (y) (y) (y)
নীলকন্ঠ জয়
একদম ঠিক বলেছেন সজিব ভাই। ধন্যবাদ।