গ্রামের নাম সোহাগপুর।কেন সোহাগ দিয়ে একটি স্থানের নামকরণ করা হয়েছিল তা অজ্ঞাত।হয়ত ঐ গ্রামের কোন নারী তাঁর প্রিয়তম স্বামীর কাছ হতে খুব বেশী সোহাগ পেতেন কোন এককালে যা কালক্রমে সোহাগপুর হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ি উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে একটি গ্রামের নাম ছিল সোহাগপুর।
১৯৭১ সনের ২৫ জুলাই সেই সোহাগপুরের শান্ত নিরিবিলি গ্রামের প্রতিটি পরিবারের ঘুম ভাঙ্গার পরে প্রতিদিনের মত ভোর এসেছিল।পুরুষরা কৃষিকাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেন।কেউ আমন এর চারা রোপনে ব্যাস্ত। বাড়ির নারীগন তাঁদের প্রাত্যহিক কাজে লেগে যান। কেউ চুলা জ্বালাচ্ছেন সকালের খাবার তৈরীর জন্য,কেউ বিছানা গুছাচ্ছেন।মশারীও অনেকে তোলেননি। ঠিক সেই সময় আলবদর কামরুজ্জামান এর পরিকল্পনায় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাক সেনারা প্রচন্ড গুলিবর্ষণ করতে করতে গ্রামে প্রবেশ করে। যেখানে যাকে পায়,পাখির মত গুলি করে হত্যা করে।খুজে খুঁজে গ্রামের প্রতিটি পুরুষকে হত্যা করা হয়।পুরুষ শুন্য করাই যেন এই হত্যার উদ্দেশ্য ছিল। আর গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের ধর্ষন করে নরপিশাচেরা।
সর্বমোট ১৮৭ জন বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়। দাফনের কাপড়ের অভাবে কলাপাতা, মশারীতে পেঁচিয়ে একসাথে দুই তিনজনকেও কবর দেয়া হয়। মোট ৫৭ জন বিবাহিতা নারীর সবাই হয়ে যান বিধবা।সোহাগ পুর থেকে সোহাগকে হত্যা করা হয়।যেহেতু ঐ গ্রামে বড় কোন পুরুষ ছিল না এবং একটি গ্রামের সব বধূরা বিধবা,একারণে গ্রামের নামকরণ হয়ে যায় বিধবা পল্লী।
৫৭জন বিধবা নারীদের মাঝে কালার স্বাক্ষি হয়ে বেঁচে আছেন এখনো ৩৪ জন নারী। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের মেরে ফেলায় পরিবারের নারীরা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন যাপন করেছেন। তাদের মধ্য থেকে তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।
আজ সেই নরপিশাচ আলবদর কমান্ডার কামরুজ্জামান এর মৃত্যু দণ্ডের আপিলের রায় প্রদান করা হয়েছে। আলবদর কমান্ডার কামরুজ্জামান এর পক্ষের রিভিউ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তার ফাঁসি হতে এখন আর কোন বাঁধা নেই।
স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর হলেও দানব পিশাচ নরঘাতক কামরুজ্জামানের বিচার হচ্ছে। ন্যায় বিচার পাবেন সোহাগপুরের বিধবা মায়েরা।কিন্তু যে স্বপ্নগুলো ভেংগে খান খান হয়ে গেল,পুর্ন সংসার,স্বামী,সন্তানের সুখ থেকে এই মায়েরা বঞ্চিত হলেন। এই মায়েদের সোহাগ কে ফিরিয়ে দেবেন?
২৯টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
রায় দ্রুত কার্যকর হোক
লীলাবতী
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি রায় বাস্তবায়নের।
লীলাবতী
লেখার ছবি এবং ধারনা একজন ভাইয়ার। নাম বলা যাবেনা। নিষেধ আছে 🙁
স্বপ্ন
নরপশু কামরুজ্জামানের ফাঁসীর অপেক্ষা করছি।
লীলাবতী
কামরুজ্জামানের ফাঁসীর অপেক্ষা করছি
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অপেক্ষা যেনো আর শেষ হয়না। কতোটা হিংস্র আর অমানবিক ছিলো অই পাষন্ডরা।
অবাক হয়ে যাই এতো কুকর্ম করার পরও কি করে মানুষ এগুলোর হয়ে কথা বলে!
লীলাবতী
এদেরকে মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে,ভাবা যায় এটি আপু?
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যত দ্রুত আবর্জনা পরিষ্কার হবে ততই মঙ্গল।
লীলাবতী
এরা দেশের আবর্জনা ব্যতীত আর কিছুই না।
ফাতেমা জোহরা
শুধু তাই নয়। ওর বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগসমূহ হলঃ-
১. বদিউজ্জামানকে হত্যা-একাত্তরের ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সারা রাত নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।
০২. অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন- কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে প্রায় নগ্ন করে শহরের রাস্তায় হাঁটাতে হাঁটাতে চাবুকপেটা করে।
০৩. গোলাম মোস্তফাকে হত্যা-একাত্তরের ২৩ আগস্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে কামারুজামান ও আলবদররা তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
০৪. লিয়াকত-মুজিবুরকে নির্যাতন ও ১০ জনকে হত্যা- মুক্তিযুদ্ধকালে রমজান মাসের মাঝামাঝি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাদের নির্যাতনের পর থানায় চার দিন আটকে রাখা হয়। পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে ওই দু’জনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পরে লিয়াকত, মুজিবুরসহ ৩ জনকে সরিয়ে নিয়ে ১০ জনকে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের কাছে সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
০৫. টুনু হত্যা- একাত্তরের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
০৬. দারাসহ ছয় হত্যা- মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান কামারুজ্জামান আলবদর সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন সকালে আলবদররা ওই দু’জনসহ সাতজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে হাত বেঁধে সারিতে দাঁড় করান। প্রথমে টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফ দেন। আলবদররা গুলি করলে তার পায়ে লাগে। তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
এসব পড়লে মুখ থেকে একটা কথাই আসে- “শুয়োরের বাচ্চা…” :@
লীলাবতী
এই সব মুখোশধারী শয়তানদের পিছনের ইতিহাস সাধারণ জনতা জানে না।এসব ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হলে এদেরকে মানুষ ঘৃনাই করবে আপু।
জিসান শা ইকরাম
এসব ঘটনার তেমন প্রচার নেই
একারনে মানুষ এই সমস্ত নরপিশাচদের অতীত জানে না
শ্রদ্ধা জানাই ১৯৭১ এ নিহত সোহাগপুর গ্রামের সবার প্রতি
আর মায়েদের প্রতি সহমর্মিতা।
লীলাবতী
একমত ভাইয়া,এদের অতীত ইতিহাস সাধারণকে জানাতেই হবে।এর বিকল্প নেই।
ব্লগার সজীব
কামরুজ্জামানের ফাঁসি হলে এই বিধবা মায়েদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটবে।ফাঁসির অপেক্ষায় আছি আপু।
লীলাবতী
আমিও অপেক্ষায় আছি সজীব।
নুসরাত মৌরিন
অপেক্ষার প্রহর গুনছি কখন পশুটা ঝুলবে… আর তর সইছে না।
লীলাবতী
এই পশুটার ফাঁসীর খবর যখনই শুনবো,তখনই নফল নামাজ আদায় করবো আপু।
ছাইরাছ হেলাল
ঘাতকের কান্না চিরস্থায়ী হোক ওপারেও এই কামনা করি।
লীলাবতী
ঘাতকের কান্না শুনতে পাচ্ছি 🙂
ইমন
ইচ্ছা আছে সোহাগ পুর গ্রামটা দেখার জন্য।
ব্লগার লীলাবতীকে অনেক ধন্যবাদ ,সুন্দর একটা লেখার জন্য .
লীলাবতী
সময় পেলে অবশ্যই যাবেন ভাইয়া।সোহাগপুর গ্রাম দেখে আমাদের সাথে শেয়ার করবেন অবশ্যই।
ব্লগার সজীব
কামরুজ্জামানের ফাঁসি হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র 🙂
লীলাবতী
ফাঁসি কার্যকর :D)
খেয়ালী মেয়ে
মৃত্যদন্ডটাকে আমার কাছে মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীদেরকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া…
এরা যে অপরাধ করেছে তার জন্য এই শাস্তিটা আমার কাছে খুব কম মনে হয়…এদের উচিত ভয়ংকর কোন শাস্তি দেওয়া…
লীলাবতী
আমার কাছেও কম মনে হয়।এদের আরো যন্ত্রণা দিয়ে মারা উচিৎ।
খেয়ালী মেয়ে
আরো অনেক অনেক অনেক বেশী যন্ত্রনা দিয়ে মারা উচিত এদের…
লীলাবতী
আমেরিকায় নাকি পাঁচ ধরনের পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।আমাদের দেশে এ সমস্ত অপরাধীকে তেমন ভাবে মারা উচিৎ।
শুন্য শুন্যালয়
43 বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে আর দীর্ঘনিঃশ্বাস বয়ে বেড়িয়ে কতোটা শান্তি তারা পেলো কে জানে!
তবু যে বিচার পেলো এটুকুই স্বান্তনা।
লীলাবতী
হয়ত বিচার পেতে বিলম্ব হয়েছে,তারপরেও তো বিচার হয়েছে আপু।