আমি ভীষণ রকম উৎফুল্ল চিত্তে অপেক্ষা করছি। মা অফিস থেকে এসে আমাদের তিন ভাই-বোনকে নিয়ে স্টুডিওতে যাবেন ছবি তুলতে। কতো আয়োজন ! আমরা রেডি হয়ে থাকলাম। কিন্তু আমাকে দেখেই রেগে গেলো মা। মাথা ভর্তি তেল দিয়ে লেপ্টে চুল আঁচড়ে প্রতীক্ষায় থাকার নাম যে রেডি হওয়া নয়, তা কে জানতো ! কেউ কি কখনো আমায় বলেছে, রেডি হওয়া মানে মাথায় শ্যাম্পু করে ঝরঝরে হয়ে থাকা ?!
অতঃপর আমার আধুনিক মা কায়দা করে ক্যামন করে যেন হেয়ার ব্রাশ করে দিলো, তেল চিট্চিটে চুলগুলো ফোলাফোলা ঝরঝরে হয়ে এলো ! যদিও তীব্র বকুনি খেয়ে স্টুডিও যাবার পুরোটা পথ জুড়ে আমি গুমোট হয়ে থাকলাম।
আমার অন্য দুই ভাইবোন হাসি হাসি মুখে ক্যামেরার দিকে তাকায়। সমস্যা শুধু আমাকে নিয়ে। হাসিমুখ করার সীমাহীন প্রচেষ্টা আমার। সোজা-সটান থাকতে গিয়ে ঘাড় বারবার হেলে যায় একদিকে। ক্যামেরাম্যান এসে ঘাড় ঠিক করে দিয়ে যায়। যেই না ক্লিক করে, অমনি লাইটের ঝলসে যাওয়া আলোয় ধপাস্ করে চোখের পলক পড়ে যায় ! বিরক্ত ক্যামেরাম্যান সোজা তাকাতে বলে। আমি নাক বরাবর তাকিয়ে রই। এবার হয়ে যাই ট্যরা ! হাসিমুখ করে থাকা…ঘাড় সোজা রাখা… আর “পড়ে না চোখের পলক” হয়ে থাকা__ সব যেনো এক সাথে হতেই চায় না ! একটা হয় তো অন্যটা হয় না। এ যেনো এক যুদ্ধক্ষেত্র ! ভয়াবহ সেই প্রলয় শেষে অন্ধকার স্টুডিও থেকে বাইরের আলোকিত জগতে এসে শ্বাস নেয়া ছিল বিশাল এক স্বস্তিদায়ক ইতিহাস।
কালের বিবর্তনে কতো কি-ই তো বদলায়। বদলেছি আমিও। আপনি ?
২৬টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
এখন তো সেলফির যুগ ।
হাতে হাতে ক্যামেরা
সবাই ক্যামেরাম্যান ।
রিমি রুম্মান
সেই দিনগুলোর উত্তেজনা কিংবা আনন্দ কিন্তু এই দিনের সেকফিতে পাওয়া যায় না…
ছাইরাছ হেলাল
বদলেছি আমরাও কিন্তু প্রথম স্টুডিওতে তোলা ছবি এখনও দেখি ভাবি ।
ক্যামেরা ম্যানের ধ্মক সবই মনে পড়ে,বাক্স ক্যামেরার যুগ।
রিমি রুম্মান
সেইদিনই ভাল ছিল… আনন্দ ছিল
মরুভূমির জলদস্যু
বদলেছি সবাই। (y)
রিমি রুম্মান
বদলেছি অনেকখানি ।
সায়ন্তনু
যতই বদলাই কী যেন পিছু ডাকে।
রিমি রুম্মান
ফেলে আসা মধুময় দিন, ক্ষণ কেবলই পিছু ডাকে।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
ষ্টুডিওতে ক্যামেরার সামনে ছবি তোলা আসলেই খুব কঠিন। আমি তো এখনো পারিনা। বর্ননায় মুগ্ধ হলাম। ট্যারা ছবির ইতিহাস আমারো আছে :p
রিমি রুম্মান
আমরা সবাই মোটামুটি কাছাকাছি গল্পের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে এসেছি ।
নুসরাত মৌরিন
সবার ছোটবেলা গুলোতে কি মিল!!আশ্চর্য!!
পিচ্চিকালে সেজেগুজে স্টুডিওতে যাওয়া,ঘাড় সোজা রেখে বসে থাকার দিনগুলো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
রিমি রুম্মান
ধন্যবাদ আপনাকেও সাথে থাকার জন্যে।
জিসান শা ইকরাম
আপনার সেই তেলচিটচিটে ছবিটা দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
ঘটনার বর্ননা চমৎকার ।
আমি একটু কম বদলিয়েছি।
রিমি রুম্মান
ছবিটা ফেসবুকে কমেন্টে দিয়ে দিবো । এখানে কেমন করে দিতে হয় বুঝতে পারছি না। আপনিও বদলেছেন, আমি নিশ্চিত । 😀
লীলাবতী
এমন অনেকেরই হয়, তবে আপনার মত এত আকর্ষনীয় ভাবে অনেকেই বলতে পারেনা 🙂
রিমি রুম্মান
জেনে প্রীত হলাম।
খেয়ালী মেয়ে
জীবনে প্রথম স্কুলের আইডি কার্ডের জন্য ছবি তুলতে গিয়ে এমন সমস্যার সম্মুখীন আমাকেও হতে হয়েছিলো–আপনার লেখা পড়ে চোখের সামনে সেই দৃশ্য আবারও ভেসে উঠলো..ধন্যবাদ
রিমি রুম্মান
শুভকামনা আপনাকে।
খসড়া
কুত্তু ইস্টাইলে ফুটূ তুললতাম, ফূন কানে নিয়া পাহাড় ধইরা আহারে সেই স্বর্ণযুগ কই গেল? ;(
রিমি রুম্মান
গাড়ীর পাশে হেলান দিয়েও তুলেছেন নিশ্চয়ই 😀
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
শটুডিওতে ফটো তোলা নিয়েও কত ভালো একটি লেখা দিলেন।
রিমি রুম্মান
বারে বারে মনে পরে… কেন জানিনা
মোঃ মজিবর রহমান
ইচ্ছা না করলেও বদলাতে হয়।
বদলিয়েছি যৎসামান্য।
রিমি রুম্মান
বদলেছি আমরা সবাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জীবননের মানিটাই বদলানো।যখন যেখানে যেমন জীবন তখন সেখানে তেমন।
রিমি রুম্মান
ঠিকই বলেছেন। শুভকামনা রইলো।