গ্রীষ্মে আমি যখন বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে হেঁটে যাই,রোজ বিকেলে একদল তরুণকে কোন একটি বাড়ির সামনে বাস্কেটবল খেলতে দেখি। হাসি গল্পে মেতে থাকতে দেখি। ঢালু রাস্তা বেয়ে যেতে যেতে অনেকদূর পর্যন্ত তাদের উচ্ছল হাসির শব্দ শুনতে পাই। হাসির চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। আর অনেকগুলো তরুন যখন গল্পচ্ছলে একসাথে হেসে উঠে, আমার নিরব পাড়াটাই যেন হেসে উঠে। অসাধারন একখণ্ড ভালোলাগা হয়ে থাকে প্রতিটি বিকেল…
শীতে আসা-যাওয়ার পথটুকু নিরিবিলি গান শুনতে শুনতে হেঁটে যাই। কোন জটলা নেই, কোলাহল নেই। বাতাস কাঁপানো হাসির শব্দ নেই। কন্কনে শীতে মানুষজন জরুরী কাজটুকু সেরেই বাড়ি ফিরে যায়। সেই ঢালু পথটুকু বেয়ে হেঁটে যাই একাকি এক নৈঃশব্দ্যের মাঝে। সাথে কখনো রবীন্দ্র, কখনো শ্রীকান্ত……
এখন বসন্ত চলছে। শীত কম্ছে ধীরে ধীরে। সহসাই গাছগুলো ফুল, ফল, পাতায় ভরে উঠবে। আবারো নিরব এলাকাটি সরব হয়ে উঠবে। তরুণদের কোলাহল, বল খেলা, হাসির শব্দে মুখর হয়ে উঠবে। এমনটিই হবার কথা।
আজ এক সপ্তাহ হয়, খুব ভোরে পৃথিবী কোলাহল মুখর হয়ে উঠবার সময়টাতে আমি যখন ছেলেকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে হেঁটে যাই, প্রাণোচ্ছল সেই তরুণটিকে গাড়িতে উঠতে দেখে আঁতকে উঠি। কিছু দেখেও না দেখার মত করে হেঁটে যেতে থাকি। চোখ দু’টোতে অন্ধকার নেমে আসে। অস্বস্তিতে ঘামতে থাকি। ছেলেটি ড্রাইভিং সীটে বস্ছে… হাতের লাঠি দু’টো পাশের সীটে রাখ্ছে…তখনো দরজা বন্ধ করেনি। আমার দৃষ্টি তাঁর পা’য়ে দিকে গিয়ে থম্কে থাকে। ভেতরটা হিম হয়ে আসে, যখন দেখি দু’টো পা-ই হাঁটুর নীচের অংশ নেই ! সেখানে যান্ত্রিক পা ! এই পা দিয়ে কেমন করে ড্রাইভ করবে…কোন অসতর্ক মুহূর্তে, কেমন করে কি হয়েছিলো___ এমনতর নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে ভেতরে। আর এমন করেই গত একটি সপ্তাহের প্রতিটি দিনশুরুর সময়টাতে আমি মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে বাড়ি ফিরি। লিখবো না, লিখবো না করেও লিখি…
কেন লিখি ?
আমরা ভুলে যাই যে, আমরা সুস্থভাবে, সুন্দরভাবে বেঁচে আছি।
আমরা অযথাই হানাহানি করি। একে অন্যের মনঃকষ্টের কারন হই।
সুস্থভাবে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই।
২৩টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
প্রাণোচ্ছল সেই তরুণটির স্থানে নিজকে কল্পনা করে আঁতকে উঠলাম আপু।মন ছুঁয়ে গেল লেখাটিতে।
আমরা অযথাই হানাহানি করি। একে অন্যের মনঃকষ্টের কারন হই।
সুস্থভাবে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। (y)
রিমি রুম্মান
আমরা এইভাবে ভাবি না কেন ? এইভাবে ভাবলে পৃথিবীটাই আরও সুন্দর হয়ে উঠতো ।
জিসান শা ইকরাম
আপনি এমন সব আবেগি লেখা নিয়ে আসেন যে পড়তে গিয়ে স্থবির হয়ে যাই।
লেখার আসল পয়েন্ট এর সাথে একমত।
”আমরা ভুলে যাই যে, আমরা সুস্থভাবে, সুন্দরভাবে বেঁচে আছি।
আমরা অযথাই হানাহানি করি। একে অন্যের মনঃকষ্টের কারন হই।
সুস্থভাবে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই।”
রিমি রুম্মান
চোখের সামনে দেখি এমন সব বিষয়। এরমাঝে কিছু অসংগতি মেনে নেয়া কঠিন হয়। সেইসব থেকে আমাদের শেখার আছে অনেক। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।
শিপু
আমি সোনেলা ব্লগের নতুন সদস্য। আমি দুইটি পোস্ট করেছি গত কাল রাত থেকে তার একটিও দেখতে পারছি না।অনুগ্রহ করে বলবেন কি সমস্যা। পোস্ট গুলো হলঃ ১. কাউকে মিস করলে সে সে কি বুজতে পারে। ২.রিপনের অপেক্ষায় রিতা। আমার ইউজার নাম শিপু
ছাইরাছ হেলাল
সহজে সুস্থভাবে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর আনন্দ আর কিছুতে নেই।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। সুস্থ থাকুন। নিরাপদ থাকুন। শুভকামনা
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন এক অনুভুতির লেখা
ভাল লাগা রেখে গেলাম।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন। নিরাপদ থাকুন।
লীলাবতী
ছেলেটির কথা ভেবে খারাপ লাগছে আপু।আমরা সুস্থ ভাবে বেঁচে আছি,কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহ্র কাছে।
রিমি রুম্মান
সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। ভাল থাকুন।
সঞ্জয় কুমার
সুস্হ ভাবে বেঁচে থাকাটাই বড় পাওয়া
রিমি রুম্মান
সুস্থ থাকুন। নিরাপদ থাকুন। শুভকামনা জানবেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমাদের অনেকের মাঝেই নাই নাই ভাব কাজ করে। চেনা জগতের অনেকের মাঝেই আমি এ আক্ষেপটা খুব দেখতে পাই। কিন্তু একবারও মানুষ ভাবে না যে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই জীবনের বড় পাওয়া।
রিমি রুম্মান
ছেলেটিকে দেখার পর নিজের দিকে ফিরে তাকাই। আমরা কতোটাই না ভাল আছি ভেবে আকাশের দিকে তাকাই। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেলি একদা’র প্রানবন্ত তরুণটির জন্যে ।
কৃন্তনিকা
আসলেই সুস্থভাবে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই।
আমাদের সবার অনেক অভিযোগ, এই নেই সেই নেই…
জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ হল একটি অসুস্থ শরীর, যা কখনো সুস্থ হবে না…
ভালো লাগলো বরাবরের মত আপনার লেখা (y)
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন।নিরাপদ থাকুন। আমি আমার সব বন্ধুদের জন্য দোয়া করি। সুস্থ শরীরের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই।
মেহেরী তাজ
সৃষ্টিকর্তা কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমায় সুস্থা রাখার জন্য। তারুন্যে ভরা ছেলেটার কথা ভেবে খারাপ লাগছে।
রিমি রুম্মান
পরিচয় থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করতাম। কেমন করে কি হয়েছিলো। কিন্তু এখন আর জিজ্ঞেস করতে চাই না। দূর থেকে প্রার্থনা করি।
শুন্য শুন্যালয়
খারাপ লাগলো শুনে। সত্যিই তাই, সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই অনেক সুন্দর। তবু যে আমরা কিসে পেছনে ছুটি!!
রিমি রুম্মান
আমরা কেউ যে এমন করে ভাবিনা ! ভাবলে চারপাশটা অনেক সুন্দর হৃদ্যতাপূর্ণ হয়ে উঠতো।
নুসরাত মৌরিন
সত্যি সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার মত সুন্দর আর কি হতে পারে?আমি তো প্রায়ই বলি জীবনটাই একটা বড় প্রাপ্তি,আর কি চাই?
আপনার লেখাগুলো সবসময় মন ছুঁয়ে যায়।
রিমি রুম্মান
আমাদের বেঁচে থাকাটাই সুন্দর। শুভকামনা আপনাকে।