দেশের শিক্ষিত প্রকৌশলীরা বিশেষ করে যারা সরকারী চাকরী করে, অধিকাংশই দূর্নীতিতে আকুন্ঠ নিমজ্জিত । সেজন্য কোন রাস্তা বা ব্রীজ নির্মান করলে সেটা টেকেনা, রাস্তায় মানহীন মালামাল ব্যাবহার করতে বাধা দেয়না, অনেকে আবার উৎসাহ দেয় । সব সরকারের আমলেই এরকম হয় । এ-জন্য সব সরকারের আমলেই নির্মিত প্রায় অধিকাংশ অবকাঠামো নির্মানের পর খুব কম সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় । যত দিন যাচ্ছে , অতীতের সরকারের তূলনায় চলমান সরকারের অদক্ষতা, অনায্যতা, দূর্নীতি করার মানসিকতা বেড়েই চলছে । এ-রকমভাবে চলতে পারেনা, চলতে দেওয়া উচিৎ হবেনা, আমাদেরকে সঠিক পথ আবশ্য অবশ্য-ই বের করতে হবে ; নতুবা ভবিতব্যের কাছে আমরা দায়ী থাকবো ।
সরকারকে বাধ্য করার পথ অত্যন্ত কঠিন । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বাধ্য করার পথ-ও ভিন্ন হবে । তবে মূল কিন্তু একটাই , জনসমর্থন এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরন । জনসমর্থন আসবে দাবী যদি যথার্থ হয় এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরন সম্ভব হবে নের্তৃত্বের গতিশীলতার কারনে । তবে সব কিছুই সম্ভব হবে জনগনের কাছে এই সংগঠনের নেতৃত্ব ও সদস্যগনের ব্যক্তিগত গ্রহনযোগ্যতার উপর । এ সংগঠনের নেতা এবং সদস্যগন যদি ব্যক্তিগতভাবে মানূষের কাছে গ্রহনযোগ্য না হন , তবে কখনই নেতাদের ডাকে মানূষ এগিয়ে আসবেন না । জনগন বলতে প্রধানতঃ এ-দেশের ছাত্র ও যুব সমাজকে বোঝানো হচ্ছে ।
এ-দেশে ছাত্রলীগ আছে, আছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং যুব সংগঠনসমূহ । এদের কর্মকান্ড দেশের মানূষের কাছে অজানা নয় । সংগঠনগুলি নিজ নিজ মূল দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলে এবং মূল দলের সাথে একীভূত হয়ে কাজ করে । মূল দলের শক্তির উৎস-ই এই ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো । এই ছাত্র-যুব সংগঠন সমূহ ছাড়াও বিশাল ছাত্র, যুব সমাজ এদেশে রয়েছে, যারা কেউ রাজনীতিতে নেই ; কিন্তু দেশ-সমাজ নিয়ে বিভিন্ন স্তরের চিন্তা-ভাবনা তাদের মধ্যে রয়েছে । এরা দেশের শাসনকর্তাদের উপর বিরক্ত, বিক্ষুব্ধ । এরা দীর্ঘদিন পরিবারের অভিভাবকগনের অভাব, দুঃখ-দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে এসেছে, চারপাশের মানুষজনের জীবন-যাপন প্রত্যক্ষ করে এসেছে ; অন্যদিকে সমাজের জনপ্রতিনিধি , সরকারী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে আসছে । এরা রাষ্ট্রের অন্যায়-অবিচারের শিকার । ত্যাগী কিছু ভালোমানূষ রাষ্ট্র হতে সকল অন্যায়, অবিচার দূর করার কাজে তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে, সংযূক্ত হতে আহ্বান জানালে নিশ্চিতভাবে তারা এগিয়ে আসবে । এই ছাত্র-যুবা গোষ্টিকে কখন-ই ডাকা হয়নি সেভাবে । অন্যায় রোখার জন্য উদাত্ত আহবান এদের কখনোই করা হয়নি । তাদের কখনোই বলা হয়নি যে, দেশের কাছে তাদের কিছু ঋন আছে এবং এই ঋন তার শোধ করা উচিত । এই ঋন তাকে শোধ করতে হবে দেশের জন্য কাজ করে ।
আমাদের জনপ্রশাসনকে নির্জীব করে অর্থাৎ সরকারের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে । আসলে জনপ্রশাসন তো সরকারী আইন-কানুন মোতাবেক-ই চলবে । জনপ্রশাসন বলতে এখানে পুলিশ , মন্ত্রনালয়সহ সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বোঝনো হচ্ছে । সরকারের নীতি-নির্ধারনী মহল আইন পাশ করবে এবং সেই সমস্ত আইনের বাস্তবায়ন ঘটাবে জনপ্রশাসন । এই জনপ্রশাসনকে প্রতিটি সরকার এমনভাবে কুক্ষিগত করে রাখে যে, সেখান থেকে কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসার কোন উপায় থাকেনা যদি কেউ চাকরী করতে চায় । জ্যেষ্ঠতা ভেঙ্গে দলীয় কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে পদোন্নতি দিয়ে, লোভনীয় ও ক্ষমতাপুর্ন পদে বসিয়ে, বিরোধী-মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তাদের দলন করে প্রতিটি সরকার-ই জনপ্রশাসনকে আজ্ঞাবহ এবং কুক্ষিগত করে রাখে । অনেক কর্মকর্তা আবার সরকারের এরকম নীতির সুযোগে বিভিন্ন রকম অবৈধ সুবিধা নেয় । এভাবেই সরকারের সাথে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটা নেয়া-দেয়ার সম্পর্ক তৈরী হয়, যেখানে সম্পর্কটা হওয়া উচিত নির্দেশ প্রদান এবং পালনের ।
এর মধ্যেও প্রতি সার্ভিসেই মানবিক কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন , যারা এই নেয়া-দেয়ার সম্পর্কের বিরোধী এবং এটা তারা মেনেও নিতে পারেন না । কিন্তু চাকুরিতে থেকে তাদের কিছু আসলে করার থাকেনা । তাই তারা মনে বড় ব্যাথা নিয়ে সব কিছু সহ্য করে কোনমতে কাজ করে যান । পুলিশ বাহিনীতে কিছু কর্মকর্তা আছেন , যাঁরা চান না থানা রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত হয়ে থাকুক ও তাদের কথামত চলুক । কিন্তু চাকুরী হারানোর ভয়ে কিছু না বলে তারা চুপ-চাপ থাকেন । ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেও অনেকে আছেন , যারা টেন্ডারবাজি চাননা এবং হলে তার আশু সমাধান এবং প্রযোজ্যক্ষেত্রে দোষীদের সাজা চান । কিন্তু তারাও অসহায় হয়ে থাকেন । কারন সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করলে বিভাগীয় মামলার ঝামেলায় পড়তে হয়, ক্ষেত্র বিশেষে চাকুরীও চলে যায় । তাই তারা প্রতিবাদী না হয়ে গোবেচারা হয়ে দিন যাপন করেন । দেশে অনায্যতার বিরুদ্ধে সারাদেশব্যাপী প্রতিবাদী কার্য্যক্রম শুরু হলে জনপ্রশাসনের এ-সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগন নিশ্চুপ বসে থাকবেন, মনে হয়না । প্রকাশ্যে না হলেও কিছু ভূমিকা অবশ্য-ই রাখবেন যার যার অবস্থান থেকে, সাধ্যমত ।
দেশে সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটলো, বিশেষ করে সাঈদীর রায়ের পর যে তান্ডবগুলি চললো সারা দেশব্যপী, তাতে মানূষ জান-মালের নিরাপত্তা পেয়েছে, বললে সঠিক বলা হবেনা । জামাত-শিবির কর্তৃক মানুষের উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে, তাদের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে ; সরকার তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু কেন, কেন সরকার জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পারবেনা ? কি নেই সরকারের ! সরকার সেনাবাহিনী ডাকতে পারতো । না পারার কিছু ছিলনা । সরকারপ্রধান যে কোন সময় যে কোন প্রতিষ্ঠানকে যে কোন বৈধ নির্দেশ দিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটি উক্ত বৈধ নির্দেশ পালন করতে বাধ্য । আসলে বিগত চার বছরের কর্মকান্ডের ফলে হয়তো সরকার সেনাবাহিনী ডাকার নৈতিক সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে । নতুবা জামাত-শিবিরের এতো সাহস হয় তান্ডব চালানোর ? আসলে নিজেদের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে অবৈধ সূযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দিয়ে সরকার মিত্রহীন হয়ে পড়েছে । এর-ই প্রতিফলন সেনাবাহিনী ডাকতে না পারা ।
এ-দেশে আইনের শাসন, সকল ক্ষেত্রে নায্যতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় সরকারগুলোকে তা করতে বাধ্য করার একটি শক্তিশালী প্রেশারগ্রুপ অথবা অন্য কোন নামীয় এ-ধরনের একটি সংগঠন কার্য্যকর থাকা, যে সংগঠন ক্ষমতার জন্য কোনসময় কোন ধরনের চেষ্টা করবেনা । এ-রকম সংগঠন সার্থকতা লাভ করতে পারে কেবলমাত্র প্রচন্ড জনসমর্থনের ভিত্তিতে এবং সেই ভিত রচিত হতে পারে দূঃশাসনের প্রত্যক্ষ শিকার ঐ ছাত্র-যুবকদের দ্বারা, আগে বলা হয়েছে যাদের কথা।
সত্যি বড়ই অবাক লাগে যখন সরকারী , আধা-সরকারী যেকোন নিয়োগ আসে, দেখা যায় শুধু তদবির পার্টি আর অবৈধ অর্থের ছড়াছড়ি । এতোটাই অদক্ষ এই সরকারগুলো যে একটা নিয়োগ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারেনা । বাংলাদেশে এই সরকারগুলোকে চ্যালেঞ্জহীনভাবে আর ছেড়ে দেয়া যায়না, ছেড়ে দেয়া উচিত হবেনা । কত অত্যাচার করতে চায়, কত রক্ত চায় দলগুলো সুশাসন, নায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য, তা দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত ছাত্র-যুবক-জনতাকে বলে যেতে হবে। দিন এসে যেতে হবে, আর নয় ।
সন্দেহাতীতভাবে সৎ আর বলিষ্ট কিছু মানুষ এখনও আছেন এদেশে, যাঁরা এ-ডাক ডাকতে পারবেন ডাকার মতো করে এবং তাঁদের ডাক নিশ্চিতভাবে শুনবে এই ছাত্র-যূবকেরা। আমাদের সকলের সন্মিলিত উদ্যোগই পারে শুধু সকল শ্রেনী-পেশার মানূষকে একীভূত করে এরকম একটি বিরাট-বিশাল প্রেশারগ্রুপ জাতীয় সংগঠন সৃষ্টি করতে এবং দেশ থেকে সকল অনায্যতা , অসততা , অদক্ষতা দূর করে একে একটি মানবতাবাদী, উদারনৈতিক এবং কল্যানকর রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে । (সমাপ্ত)
৭টি মন্তব্য
খসড়া
আসলে এই সব কথা বলতে বলতে আর শুনতে শুনতে ক্লান ও বিরক্ত। কিছু করার নেই।
আজিজুল ইসলাম
আপনাদেরকে বিরক্ত ও ক্লান্ত করার জন্য দু:খিত । আর হয়তো বিরক্ত করবোওনা, করলেও খুবই কম । তবে একটা কথা মনে রাখবেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কিন্তু শুরুই হবে এভাবে, বিলাসিতা করে নয় ।
শুন্য শুন্যালয়
সব কথার শেষ কথা কেউই দেশ নিয়ে সত্যিকারের ভাবনা ভাবেনা.
আজিজুল ইসলাম
আপনার ‘কেউই’ এই কথাটা মানতে পারলামনা । ধন্যবাদ ।
মশাই
পড়লাম পর্ব দুটি। ভাল লিখেছেন। আশায় বুক বাধতে চাই। ব্যস্ত থাকেন সেটা বুঝতে পারছি শ্রদ্ধেয় আজিজুল ইসলাম। আপনার গত লিখাটিতে আমার একটা প্রশ্ন এবং যেভাবে আসবে শুদ্ধতা লিখাটিতে প্রহেলিকার একটি প্রশ্ন ছিলো, যদি সময় করতে পারেন তাহলে একটু ঘুরে আসবেন। ধন্যবাদ আপনাকে। সালাম রইল। -{@
আজিজুল ইসলাম
প্রিয় জনাব মশাই, আমার পুর্বের লেখাটিতে আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে মনে কিছু করবেননা আশা করি । আমি দু:খিত ।
আপনার উপরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘যেভাবে আসবে শুদ্ধতা’ লেখাটির মন্তব্যে উত্তর দিতে চেষ্টা করেছি । আশা করি ঘুরে আসবেন সেখানে । আমার মনে হয়, সেখানে ‘সুশাসনের সন্ধানে’ নামক আমার পূর্বের লিখায় আপনার মন্তব্যের উত্তর রয়েছে কিছুটা ।
জনাব মশাই আপনি আন্তরিক একজন ব্যক্তি । আপনি কিছু মনে করবেননা আমার কোন ভুল হলে । ধন্যবাদ । আপাতত: লিখতে কষ্ট হচ্ছে ।
ব্লগার সজীব
লোক নাইরে ভাই। মানুষ এখন মানুষ নাই।