সুখী জীবন খুঁজে পাওয়া যায়না, তৈরী করে নিতে হয়। অথচ আমরা বারবার সুখ খুঁজে বেড়াই। হা-হুতাশ করতে থাকি। যতোটুকু অভাবে ভুগি আমরা, তার তিনগুণ অভাব তৈরী করি। অল্পতে সন্তুষ্ট হইনা, আর বেশি পেয়ে গেলেও অসুখী থাকি। তার মানে দাঁড়ায় আমরা পেয়ে যাওয়াকেই খুঁজে যেতে থাকি।
এসব কথা কেন! ঢাকা থেকে দিল্লী এয়ারপোর্টে বসে ওয়াইফাই খুঁজছিলাম। কিছুতেই পেলাম না। এতোগুলো বই নিয়ে এসেছি, অথচ ভুলে গিয়ে সবগুলোই লাগেজে থেকে গেছে। এখন না আছে বই, না ওয়াইফাই। সময় কাটানো কী যে দুষ্কর! ঠিক ওই সময়েই টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো একটা লাইন, “You never find the happy life. Have to make it.” ভালো লাগলো কথাটা। আসলেই তো তাই! শোকের পাহাড় ভেঙ্গে আমরা হাসি, বাঁচার জন্য কতো না প্রস্তুতি নিই! সুখ তো এটাই যে, না-পাওয়া আমাদেরকে পিছিয়ে দিতে পারেনা।
তা না হলে এতোক্ষণ বেঁচে থাকতে পারতাম না। বাপি চলে গেছে, আমি বেঁচে আছি। মামনিকে রেখে চলে এসেছি, তারপরও মুষড়ে পড়িনি। জীবন থেমে নেই। বাসায় পৌঁছবো কখন, সেই চিন্তায় ব্যস্ত। কখন আমার নাম ধরে ডাকবে এয়ারলাইনসের লোক, কান পেতে রেখেছি। অথচ এই তো দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্তেও মনে হয়েছে কীভাবে থাকবো আমি এই প্রিয় মানুষগুলোকে ছেড়ে! সুখ তো এটাই যে আমি প্রিয় মানুষগুলোর স্পর্শ সাথে করে নিয়ে এসেছি। যদিও বুকের ভেতর মোচড় থামছেনা, কিন্তু বেঁচে থাকছি। আসলে ওই ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে রাখছেন, কারণ এই পৃথিবীতে আমার প্রয়োজন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। সুখ তো এটাই যে এই জীবনটা আরোও অনেক কিছুর প্রয়োজন মেটাবার জন্য বেঁচে আছে।
ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দিল্লী
২৬ মার্চ, ২০১৯ ইং।
২৯টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
খুব কঠিন বিষয় নিয়ে লিখেছ আপু, সুখ যে আসলে কী জিনিস! আমরা আসলে পাওয়াকেই খুঁজে বেড়াচ্ছি, খুব ভালো লাগলো কথাটা।
সুখের জন্য কোথাও যেতে হয়না, খুঁজতে হয়না। একটা অনাহারী বাচ্চা পান্তা, পেঁয়াজ কাচামরিচ দিয়ে খেলেও বেহেস্তের সুখ পায়, আর আমরা কোথায় না যাচ্ছি, তবুও দুদিন অন্তর ভাল্লাগেনা রোগে ভুগছি।
হ্যাঁ কিছু একটা হয়তো করার আছে আমাদের, যারা চলে যায় হয়তো প্রয়োজন ফুরিয়েই যায় বলে, নয়তো তার যাওয়ায় অন্যের প্রয়োজন থাকে বলে। কিছু কষ্টেতো ফুল ফোঁটে আপু।
ভালো থেকো সারাক্ষণ। ♥
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু “সুখ তুমি কী!”—-রুনা লায়লার এই গানটা মামনির খুব প্রিয়। আমি প্রায়ই শুনি। সেদিনও শুনছিলাম। দিল্লী এমন একটা এয়ারপোর্ট যে কী বলবো! ফ্রি ওয়াইফাই নেই। তাছাড়া বই এনেছিলাম প্রচুর, মৌ খেয়াল করেনি(আমারও দোষ ছিলো, আমিও খেয়াল করিনি) সব লাগেজে চলে গিয়েছিলো। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দিল্লী পৌঁছে, ভোর রাত তিনটায় ফ্লাইট ছেড়েছে। ১১:৫০ এর ফ্লাইট ৩টায় ছাড়লো।
ওই কয়টা ঘন্টা লাঠি আর হ্যান্ডলাগেজ নিয়ে কতোটুকু ঘুরে দেখা যায় বলো? তখনই টিভি চোখে পড়লো। ওতে শুধুই বিজ্ঞাপন আর মনিষীদের কথা।
এই দেখো কতো বিশাল লিখে ফেললাম। অনেক ভালো থেকো শুন্য আপু।
শুন্য শুন্যালয়
তোমার মতো লিখতে পারলে টাইম পাস করা কোন ব্যাপার নীলাপু। নেক্সট টাইম কিছু করার না থাকলে ইয়োগা করতে বসবা। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
ইয়োগা করবো? কোমরের হাড্ডি জোড়া লাগানো, আমার শত্রু তো তুমি না গো আপু! 😭😭😭😭
ছাইরাছ হেলাল
আপনি ঠিক-ই বলেছেন, ঈশ্বর আপনাকে বাঁচিয়ে রাখছেন/ রাখবেন,
ঈশ্বর প্রেরিত দেবদূতেরা (আমি/আমরা) আপনার সাথে আছে বলেই।
কত কাজ এখন বাকী!!
ধুর, আসুন, হা হা হি হি করি বরাবরের মত।
নীলাঞ্জনা নীলা
আচ্ছা কুবিরাজ ভাই একটা উত্তর দেবেন? পিতৃশোক ভুলতে কতোদিন লাগে? অথবা কি কি করলে বাপির জন্য আর মন খারাপ হবেনা? যা কিছুই লিখতে যাই, গান গাইতে যাই, কবিতা পাঠ করতে যাই শুধুই বাপিকে খুঁজে পাই। এতো চেষ্টা করি স্বাভাবিকভাবে সেই আগের আমি হয়ে লিখতে, লিখিও। কিন্তু শূন্যতা থেকেই যায়।
ভালো থাকুন।
মোঃ মজিবর রহমান
সুখ ঐ গহীন মনের কোনে দিদিভাই।
সব আছে , কিছুই নাই, তবুও মানুষ থাকে বেচে, যতক্ষন ইশ্বর রাখেন। তাতেও শ্বাস।
সব ছেড়ে সব নিয়ে ভালো থাকুন দিদিভাই। এইটুকুই বলি।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই ছেড়ে তো গেছেই আমার বাপি। এখন মা যেনো আজীবন থাকে আমার পাশে। মনে মনে প্রার্থনা করি, আমার মামনি আর আমার মৃত্যু যেনো খুব দূরত্ব নিয়ে না হয়।
ভালো থাকবেন।
স্বপ্নবিহীন মামুন
একটুকু সুখের জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত কত কিছুই না করছে। মায়ার বন্ধন ত্যাগ করে দূর দেশে পাড়ি জামাচ্ছে। আসলেই কী মানুষের প্রকৃত সুখের দেখা মিলছে?
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি দেশের বাইরে সুখের জন্য আসিনি। দেশেই আমি সুখী ছিলাম। আমার চাওয়ার তালিকা খুবই কম।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আরজু মুক্তা
সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে?দারুণ লিখলেন
নীলাঞ্জনা নীলা
মামনির প্রিয় এই গানটি। গান আর টিভিতে দেয়া মনিষীর লাইনটিই এই লেখাটা লিখিয়ে নিয়েছিলো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
সমস্ত চাওয়া পাওয়া হয়ে গেলে আমরা কিন্তু সুখী হবো না,
আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে হাহাকার করবো- আমার কোন অতৃপ্তি নেই কেনো?
জীবন এক বহতা নদী,
থেমে থাকে না, থেমে যায় না।
আমার ভালো থাকার তুইও একটা অংশ নাতনী,
এর অর্থ তোকে আমার প্রয়োজন,
আমার ভালো থাকার জন্যই।
ভালো লিখেছো, শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা খুব সুন্দর বলেছো তো!
অনেক ভালো থেকো নানা। 🌼🌼
নীরা সাদীয়া
প্রিয় মানুষকে ছেড়ে দূরে যাওয়াটা কী যে হৃদয় বিদারক!
আসলেই আমরা কখনোই সুখী হতে পারি না, অল্পেও না, অনেক পেয়েও না। ধ্রুব সত্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
সুখ আসলে আপেক্ষিক। স্বস্তিটাই আসল। যা অনুভব করা যায়। আপুনি এতো সুন্দর মন্তব্য করেছো, আমার পোস্টটিকে আরোও উজ্জ্বল করে দিলো।
তৌহিদ
এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখলেন! যার সদুত্তর কারো জানা আছে বলে মনে হয়না।
সুখ আসলে নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। মানুষের সব চাওয়া পূরন হয়ে গেলে সে আর সুখী হবে না। না পাওয়ার ব্যর্থতা, কিংবা দুঃখগুলোকে জয় করেই সুখী হতে হয় আপু।
ভালো থাকবেন সবসময়।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক বলেছেন তৌহিদ ভাই। আপনার সাথে একমত।
অনেক ভালো থাকুন।
তৌহিদ
শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
💐💐
সাবিনা ইয়াসমিন
সুখ খুঁজতে গেলে তা আর কখনোই পাওয়া হয় না। যা আছে, যা কিছু আছে তা নিয়ে বেঁচে থাকার মাঝেই সুখ থাকে।
সুখী হতে হলে প্রয়োজন প্রিয়জন। প্রিয়জন খুঁজতে গেলে সুখ হারিয়ে যায়, আবার কারো প্রিয়জন হতে পারা প্রকৃত সুখ এনে দেয়। আপনি আমাদের প্রিয়জন। আপনি ভালো থাকুন, সুখী হোন, এটাই প্রার্থনা করি।
ভালোবাসা নিরন্তর ❤❤
নীলাঞ্জনা নীলা
সাবিনা আপু আচ্ছা এতো সুন্দর করে বলা কোত্থেকে শিখেছেন বলুন তো! মন ভরিয়ে দিলেন।
অনেক ভালো থাকুন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনার প্রতি ভালোবাসা সব সময়ের জন্যে থাকে নীলা আপু। নীল সাগরের মতো সচ্ছ মন আপনার। তাই সেখানে সব কিছুর ছায়াই সুন্দর হয়ে যায়। ❤❤
ইঞ্জা
সুখ তুমি কি আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমার জানতে ইচ্ছে করে, কোন এক মহাঋষি বলেছিলেন “Times heals everything”, মোটেও অমূলক নয় কথাটি, আমি একে একে প্রচুর প্রিয় মানুষ হারিয়েছি, আমার বাভা, মা, খালাম্মা, বন্ধু বলুন বা বড় চাচাত ভাই সবই ছিলো আমার বড় আপার হাসবেন্ড, তাকেও হারিয়েছি, কিন্তু এখনো বেঁচে আছি আপু, এখনো বেঁচে আছি। 😭😢
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাদের প্রয়োজন ফুরোয়নি ভাইয়া। তাই আমরা বেঁচে আছি।
নিজেকে ভালো রাখুন ভাইয়া।
ইঞ্জা
সত্যই বলেছেন প্রিয় আপু, আপনিও ভালো থাকবেন। 😊
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া অদ্ভুত দেখুন আমাদের ভাই-বোনের মতে কতো মিল!
অপার্থিব
সম্ভবত ভারত বর্ষের কোন এক নাম না জানা দার্শনিক বলেছিলেন- সক্রিয়তার মধ্যে কোন সুখ নেই, সুখ লুকিয়ে নিষ্ক্রীয়তায়। মানুষ এখন সামাজিকতার মায়াজালে এমন ভাবে জড়িয়ে যে চাইলেও তার পক্ষে এই সব মায়া জাল ছিন্ন করে নিষ্ক্রিয় হওয়া সম্ভব না, ফলে সুখ তার কাছে দুরের মরিচীকা।
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক সুন্দর বলেছেন তো! আমার লেখার চেয়ে আপনাদের সকলের মন্তব্যই আলো ছড়াচ্ছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।