সিনেমা!কথাটি শুনলেই মনে একটু আনন্দ আনন্দ অনুভব হয়।একটা সময় ছিল যখন এ দেশে শুধু সাদা কালো ছিল ছবি বা সিনেমা তৈরী হত পরবর্তীতে মাঝে মাঝে কয়েকটি ছবিতে গান এবং শেষ দৃশ্য ছিল রঙ্গীন।সিনেমার দেখার এমন পুক ছিলাম যে রাতে রিক্সা বরগা ভাড়া নিয়ে নিজেই সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ টান বাজার কিংবা নীম তলীর মীনা বাজারের সামনে হংস সিনেমায় যেতাম বাংলা সিনেমা দেখতে।রিক্সাকে এক টাকা  সিকুরিটি দিয়ে সংরক্ষিত রাখতাম আর এর মালিককে পাচ ছয় টাকা দিতাম, সিনেমা দেখে আসা পর্যন্ত।এক বার এক ঘটনা ঘটে যায়…..আশা সিনেমা হলে ছবি দেখা শেষ করে হল থেকে রিক্সা নিয়ে বের হই, রাত দেড়টার দিকে আই টি স্কুল মোড়ে আমাদের রিক্সা পুলিশে আটক করল।আমাদের সে রাত্রটা থানায় মুশার কামড়ের সাথে থাকতে হল।সকালে থানার ডিউটি অফিসার এসে আমাদের কাছে এলো।

-তোমাদের বাসার কারো কোন লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছ?

-না স্যার আমরা তো জেলেই রাত কাটালাম।

-ওহ্ আচ্ছা,বলো তোমাদের ঠিকানা বলো।

ভয়ে কাপছিলাম বাসায় খবর গেলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবে।তাই বার বার স্যারকে মিনতি করছিলাম।

-তোমরা যদি সত্যিই ছাত্র এবং ভাললোক হয়ে থাকো তবে ঠিকানা দিতে সমস্যা কি?আমি আর দেরী সইবো না যদি ঠিকানা দাও ভাল নতুবা কোর্টে চালান করে দেবো।

এবার আমি সত্যিই কেদেঁ দিলাম।আমার সাথের লোকটির এক অাত্ত্বীয় থাকেন হাজী গঞ্জ গোদাড়া ঘাটের পাশে সে তার ঠিকানায় লোক পাঠাতে বলল পুলিশ সেই মোতাবেক লোক পাঠাল।

-তোমাদের বেশ বুসা দেখেতো ভালই মনে হয়।তা কি ছবি দেখতে গেছিলা।

-জ্যি,,,“চোর” ছবি।

-বাহ খুব ভাল নামতো?চোর….চোর….চোর

পুলিশ ভাইটির লাঠি হাতে নিয়ে আমাদের চার পাশে প্রশ্ন করতে করতে ঘুড়ছেন আর লাঠিটি হাতের কবজিতে ঘষছেন।ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছি কখন যে সালার পুলিশ বাড়ি মারেন কে জানে।

-নায়ক কে ?

-রাজ্জাক/ববিতা

-তোর বাপ নাহ্ …..এমন উচ্চ স্বরে বললেন যে পিলে চমকে শুধু জি জি বলছি।ভাগ্যিস সেই মুহুর্তে আমাদের পরিচিত লোকটি এসে পড়েছেন।লোকটির কাছ থেকে কি যেন সই রেখে আমাদের সেই যাত্রায় ছেড়ে দিলেন।

এবার আসা যাক মূল কথায়।আমাদের সময় পর্যন্ত মনে হয় বাংলা দেশের সিনেমার স্বর্নালী যুগ ছিল।সে সময় অনেক দুঃসাহসিক ছবিও হতো।“আমার জম্ম ভূমি”মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি সাহসী ছবি।আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন একটা ছবি তৈরী হয়নি।এর মূল কারন সরকারী অসহযোগিতা এবং উৎসুক প্রযোজকের অভাব।বাংলা ছবি সাদা কালোর যুগ পেরিয়ে রঙ্গীনে আসে তখন হয়তো সবারই মনে থাকার কথা “বেদের মেয়ে জোৎস্না”ছবির সাফল্যের কথা যা কল কাতাতেও আলোড়ন তুলেন।একটা সময় ছবি যখন ব্যাবসায়িক হয়ে উঠল তখন নিত্য নতুন প্রযোজক নায়ক খল নায়কের আর্বিভাব ঘটতে থাকে যার পরিনতিতে প্রযোজকের ব্যাবসায় লাভ আর সমাজকে কলুষিত করে ডিপজলের মতন এ্যান্টি হিরো রাতারাতি হয়ে উঠে টাকার হিরো।তার পর এক সময় বাংলা ছবি বাঙ্গালীদের হৃদয় হতে উঠে যায়।বাজার দখলে যায় হিন্দী ছবি আর ডিস ব্যাবসায়ীদের দখলে যা এখনও দখলে।

আমরা মানুষ আর মানুষ হিসাবে সেরাটা গ্রহন করবে এটাই স্বাভাবিক।যা বাংলা ছবিতে দিতে পারে নি বাংলা পরিচালকরা তা চাওয়ার আগেই হিন্দীতে পেয়ে যেত দর্শক।সুতরাং হিন্দী ছবিতো পাবলিক দেখবেই।হিন্দী ছবির আর একটা বিষয় সবচেয়ে বেশী ভাল লাগে যে তাদের প্রতিটা ছবিতেই কোন রকম কাহিনীতে বিরক্তি না ঘটিয়ে দেশ প্রেমের যে চিত্র তুলে ধরেন তাতে লোকের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত থাকবে প্রতিনিয়ত।“জয় হিং” বলে যে ধ্বণি উচ্চারিত হয় তাতে শরীরের প্রতিটি পশমে দেশপ্রেম জাগ্রত করে আর কাহিনীর গভীরতা তাৎপর্য্যতো আছেই।তেমনি একটি ছবি যা প্রশাসন পারেনি, পারেনি রাজনৈতিক বিদ বরং কলুষিত রাজনৈতিক নোংরা রাজনিতীর বিরুদ্ধে সোচ্ছার JAI HOO জয় হো ফুল মুভি২০১৪ সালমান খান এবং বোন টাবুর অনবদ্য অভিনয়ে মাতিয়েছেন দর্শক।জয় হো ছবিটির কাহিনী অত্যান্ত সাদা মাটা যাই হোক ছবিতে সমাজের ঘূণে ধরা বিবেকবান ভঙ্গুর সমাজ পতিতের তিরস্কার করে একটি ছবক পাবলিককে শিখিয়েছেন যা যথাযথ পালনে সমাজ থেকে অভাব অনটন দূর করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

“জীবনে কাউকে যদি মদদ করতে চাও তবে তিন লোককে মদদ করো,আর ঐ তিন লোককে বলো ফের আরো তিন লোককে মদদ করতে….

এভাবে ধীরে ধীরে সহযোগিতার হাত প্রশারিত হতে থাকবে সমাজকে বদলে দেয়া অনেকটাই সহজ হবে।এই যে ছবিতে একটি ম্যাসেজ দিল আজ পর্যন্ত এমন একটি বার্তা পাইনি আমাদের স্ব-দেশীয় বানিজ্যিক ছবিতে।

সিঙ্গাম ফুল মুভি অজয় দেবগণের একটি আলোচিত ছবি।যেখান অজয় সৎ পুলিশ অভিসার হিসাবে সমাজে যত অপ কর্ম সব ধ্বংসের দূত হিসাবে আর্বিভূত হন।তার কাজে উপরের লেভেল হতে অনেক বাধা আসলে তা তোয়াক্কা না করে সে তার নিয়মে কাজ করে যেতে থাকেন।

আমার আলোচ্য বিষয় হলো এক জনতার সচেতনতা এবং জন সেবায় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বদলে দিতে পারে ঘূণে ধরা সমাজের অনেক অমীমাংসিত ইস্যুগুলো।আর সে ক্ষেত্রে প্রশাসন যদি হয় সহায়ক জনতার তবে তো রুখে কে আর সমাজের অন্যায় অবিচারকে বদলে দেবার।

৮৮৯জন ৮৮৯জন
0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ