এখন সহমতের রমরমা যুগ চলছে। অথচ কিছুদিন আগেও একটা সময় ছিলো যখন মতামতের ভিত্তিতে প্রাধান্যতা মুল্যায়িত হতো। সেই সময় বোধকরি এখন আর নেই। সময়ের আবর্তে নিজেদের মত প্রকাশের তেলেবাহী ট্রলার অত্যাধুনিক সহমত ক্রুজশিপে রুপান্তরিত হচ্ছে নিত্যদিন। যার ক্রুজশিপ যত বিলাসবহুল, সমাজে তার বিচরণক্ষমতা তত বেশী।
যে যাই বলুক সহমত না বললে আপনি ভ্যালুলেস। টপ টু বটম সকলেই সহমত শুনতে পছন্দ করে। অফিসের বস কিছু একটা বললেন- বলতে হয় সহমত! কলিগ কিছু বললে – সহমত! সহমত! সহমত! শুনতে পেলেই ওরে তাদের মুখের কি হাসি!
পার্টি, ফান্ডিং, কৌটার মাসিক চাঁদা, খেলাধুলা, পিকনিক যারাই এর উদ্যোক্তা তাদের চাওয়াকে সহমত না জানালে খাবারের সময় সালাদ, মাংস আর সব্জিতে মুলার টুকরা পাবেনই পাবেন। র্যাফেল ড্রতে সহমত জানিয়ে বিশটি টিকেট কিনুন, একটা প্রাইজ ভাগে জুটবেই এটা বহুল পরিক্ষিত।
পিয়নকে কিছু বললে সে যদি সহমত না বলে তো আমার মন খারাপ লাগে। অফিসে চা দেয় যে খালা তাকে কড়া লিকার দিতে বললে তিনি কখনোই সহমত বলেন না। সহমতে মিল না হলে ইদানিং মেজাজ সপ্তমে ঘোরাফেরা করতে থাকে, ধুর! ধুর!
বন্ধুদের কথায় সহমত না বললে মাইন্ড করে। মুদির দোকানদারের সাথে দামদরে সহমত জানাতে পারিনা বলে ইদানিং সুপার শপে যাচ্ছি। কাঁচাবাজারওয়ালাতো সহমতের মাথা কিনে নিয়েছে। কি করবো! তরকারি ছাড়া পান্তাভাত খেতে হবে তা না হলে।
পেট্রল কেনার রশিদ জমা দিতে বলায় সহমতে মিল না হবার কারনে অফিসের ড্রাইভার গাড়ি আর চালাবেনা জানিয়েছে। অন্য বসের সাথে সহমত মিলে যাওয়ায় এখন তার আবদালি করছে ব্যাটা। রিক্সাওয়ালা মামার সাথে সহমত না জানালে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হয়; আজকাল তাই আর রিস্ক নেই না।
বাসার দারোয়ান, সাহায্যকারী মজনু এদের কাছে ছুটি এবং বেতন বাড়ানো যেনো – চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে টাইপ সহমতের অবস্থা হয়েছে। তাদের দাবীতে সহমত না জানালে পরেরদিন থেকে নিজেকেই গেটখোলা আর ঘরমোছার কাজে নেমে যেতে হচ্ছে।
জুকার বাবু যে সিদ্বান্ত দেবে আপনাকে সহমত জানিয়ে তা মেনে নিতে হবে, না হলে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে আপনি ‘এফ’ ওয়ার্ড পেতে বাধ্য। ফেসবুকে যে যাই বলুক সহমত বললে লাভ রিয়েক্ট ছাড়াতো কথাই নেই। আর না বললে বদনা হাতে ধরানোর লোকেরও অভাব নেই তা মন্তব্যেই দেখবেন। প্রচন্ড লাইকের খড়ায় ভুগবেন এবং এই সহমত তত্ত্বটি বহুল প্রমাণিত।
এই যে আপনারা আগ্রহী হয়ে এতক্ষণ লেখাটি পড়লেন এর কারনটাও হচ্ছে লেখার ‘সহমত’ শিরোনামটি। সহমত নামক মায়াবী শব্দটি সহজেই আমাদের আকৃষ্ট করে, সহমতে আমরা সকলেই প্রভাবিত হই। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আপনারাও সহমত জানাতে এবং শুনতে পছন্দ করেন বলেই লেখাটি ধৈর্য ধরে পড়লেন।
সহমত লাভারদের মননে যে গুঢ় সত্যটি লুকিয়ে আছে যা আমরা মুখে কখনোই স্বীকার করিনা কিন্তু কাজটি ঠিকই করি তা হলো- সহমত শুনতে চাই বলে আমরা অন্যকেও সহমত জানাই। ইদানীং সময়ে আপনার মতামতের কোন মুল্য-ই অন্যদের কাছে নেই যতক্ষন না আপনিও তাদের সহমত দিচ্ছেন। আর এ কারনেই ‘সহমত’-কে মতামত মুল্যায়নের অন্যতম মাপকাঠি বলাটা এখন আর মোটেও অত্যুক্তি হবে না।
আমিও আপনাদের মতই সহমত শুনতে পছন্দ করি। তবে মনে রাখবেন, সবসময় ‘সহমত’ বলা– ইট ইজ দ্যা বুলশিট ওয়ার্ড দ্যাট হ্যাজ টার্নড আওয়ার বিউটিফুল মাইন্ড ইনটু আ পীস অফ ডাং!
তাই নিজের বিশ্লেষণী ক্ষমতায় আস্থা রাখুন। তবে কারও বিরাগভাজন হবার সম্ভাবনা দেখলে অবশ্যই সহমতে তেল মারুন। এদেশে তেলের মুল্যগ্রাফ সবসময়ই ঊর্ধ্বমুখী।
[ছবি- নেট থেকে নেয়া]
১৪টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহা! কি শান্তি, শান্তি আর শান্তি !!! কেউ যখন আমার মতের সাথে সহমত বা একমত পোষণ করে কি যে ভালো লাগে। তবে সহমত না হলে কেউ যদি বুঝিয়ে বলে বা গঠনমূলক সমালোচনা করে তা-ও ভালো লাগে। বিষয়টি নিয়ে যে লেখা যায় সেটা আপনার কাছ থেকেই জানলাম ভাইয়া এজন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
খুব ভালো লাগলো। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
নিজের বিবেকের জলাঞ্জলি দিয়ে সবসময় সহমত জানানো উচিত নয়। এতে ব্যক্তিসত্তা থাকে না দি ভাই। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ
নাজমুল আহসান
ঠিক বলেছেন ভাই। সহমত 😛
তৌহিদ
সহমতে সহমত ভাই। ধন্যবাদ জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। আমিও সহমতে সহমত। কেইবা চায় অশান্তি বাড়াতে সে সংসারে হোক আর যেখানেই হোকনা কেন। জামানা চলছে সগমতের। ঠিক বেঠিক বলাবলি বন্ধ শুধু সহমত।
শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
তৌহিদ
শান্তিকে বিনষ্ট করা যাবেনা কিন্তু। জান বাঁচা ফরজ।
ধন্যবাদ অশেষ আপু।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
রম্য রচনা হলেও একদম যথাযথ।
সহমত শব্দটাই মায়াবী
তাইতো পাঠান্তে সহমত পোষন করে গেলাম।
মুগ্ধতায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা অন্তহীণ।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপনাকেও ভাই। শুভকামনা জানবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আজকালকার দিন সহমতের।
নেতা পোস্ট দিলেন সেথায় সবাই বলে উঠে সহমত ভাই।
কিন্তু অনেকে জানেনা সহমতের মর্ম কি!
ভালো তথ্য তুলে ধরেছেন,দাদা।
আপনার লেখায় পঠনপাঠনে বুঝেশুনে সহমত প্রকাশ করছি।
তৌহিদ
বাহ! চমৎকার বললেন দাদা। সহমত কখন বলতে হবে তা জানা থাকা দরকার।
ধন্যবাদ অশেষ।
রেজওয়ানা কবির
আপনার সাথে আমিও সহমত 🤪🤪ভাইয়া। লেখাটি পড়ে একটা কথা মনে পড়ে গেল,
একদা কোনএকসময় একজন বলেছিল,
বস ইস অলওয়েজ রাইট ।
আসলে সব কাজে কিছু মানুষ তেলস্বরুপ সহমত পোষন করে যা ঠিক না। আমার মতে অনেকের সাথে আমাদের সহমত হতেই পারে, আবার নাও হতে পারে। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সহমত হওয়া বা না হওয়ার দরকার কি? আমরা মানুষ ভিন্ন তাই মতও ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।সহমত নিয়ে বিস্তারিত পড়ে ভালো লাগল ভাইয়া। শুভকামনা।
তৌহিদ
কিছু সময় সহমত না বললে চাকরী থাকবে না। তাই বলতেই হবে। জান বাঁচা ফরজ।
ভালো থাকুন আপু।
আরজু মুক্তা
তারপরেও নিজের মতামত বলতে হয়। কার ভালো লাগলো, না লাগলো কিছু যায় আসে না।
তৌহিদ
হ্যা সেটাই উত্তম আপু। ধন্যবাদ।