সংযমের মাস। কেমন প্রস্তুতি আপনার ?
প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ধর্ম রক্ষাকারী গন : ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি, রমযান শুরু হবার আগের দিন বা প্রথম রোজার দিন, প্রায় জংগী মিছিলে শ্লোগান “ দিনের বেলায়, পানাহার চলবে না , বন্ধ কর। ” রমজানের পবিত্রতা রক্ষা কর করতে হবে ” । হুম, ঠিকাছে। কোন ভাবেই কোন হোটেল রেষ্টুরেন্ট খোলা রাখা যাবে না। খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছে করবে। রোজা ভাংতে ইচ্ছে করবে। সংযম সব গিয়ে জমা হয়েছে খাবারের মধ্যে। ওটা কোন ভাবেই বরদাস্ত করা যাবেনা। ঘুষ খাওয়া বন্ধ করতে কোন অফিসে ভুলেও যাবেন না। কারণ ঘুষ খেলে রোজা ভংগ হয়না। আর ঘুষখোর বা দুর্নীতিবাজদের সংযমী হতে বললে – মসজিদ বা মাদ্রাসায় বড় বড় চাঁদাটা কে দিবে ?
প্রিয় ব্যবসায়ী গন : আপনারা বছরের এগারটা মাস, অনেক সংযমী থাকেন। ব্যবসায় খুব একটা লাভ হয়না। লাভ হোক বা না হোক- ইনকাম ট্যাক্স অফিসারদের ঘুষ, বিভিন্ন পার্টিকে চাঁদা দেয়াটাতো আর বন্ধ থাকে না। এই রমজান আপনাদের মাস। সব পণ্য দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিন। চিনি সহ রমজানের যত পণ্য আছে, বিভিন্ন কৌশলে বাড়িয়ে দিন মুল্য। খ্রিষ্টানরা বড় দিনকে সামনে রেখে সব কিছুর মুল্য কমায় । খ্রিষ্টানরা যা করে আপনারা তা কেন করবেন ? আপনারা কি খৃষ্টান ? ভুলেও ওদের মত দাম কমাবেন না। তা হলে আপনারাও খৃষ্টান হয়ে যাবেন। চিন্তার কিছু নাই। রোজা তো রাখছেনই। শুধু খাবার বেলায়ই সংযমী হলে চলবে। এটাকেই তো রমজান বলে। আর কিছুতে তো সংযমের দরকার নেই।
সরকারী আমলা/প্রকৌশলী স্যারগন : সামনে ঈদ। বাড়তি খরচের প্রশ্ন। ঘুষের পার্সেন্টেজ টা বাড়িয়ে দিচ্ছেনতো ? এখনো বাড়িয়ে না থাকলে কবে বাড়াবেন ? ঈদের শপিং করতে হবে না ? খাবার খেলে রোজা ভেংগে যায়। ঘুষ খেলে যায় না। কথাটা কি আপনারা মানেন না ?
পুলিশ ভাইয়েরা : বাড়িয়ে দিন অপরাধীদের প্রতি আপনাদের প্রশ্রয়ের পরিমান। দেশের চোরাচালানি, আড়ৎদার, মজুতদার, নেশা দ্রব্যের বিক্রেতা, বিভিন্ন হোটেলের অবৈধ কাজকে আরো বেশী মুক্ত করে দিন। নইলে ঈদের বাড়তি খরচ আপনারা কোথায় পাবেন ? আপনাদের পরিবারের সবাই রোজা রাখেন। রোজার জন্য বাড়তি খরচ আছেনা ? ফুট পাতের দোকান গুলো থেকে ডেইলি টোল, আন্তজেলা ট্রাক থেকে ডাবল টোল, মাঝে মাঝে রাস্তার মাঝে সব গাড়ী চেকের নামে টোল আদায় শুরু করে দিন। এসব করে টাকা খেলে আপনাদের রোজা ভাংবে নাকি ? শুধু না খেয়ে রোজা রাখার কথা ভাবুন।
পরিবহন মালিক ভাইয়েরা : প্রস্তুত হচ্ছেন তো আপনারা ? পুরান অকেজো গাড়ি / লঞ্চ গুলো- থানা পুলিশকে কিছু টাকা দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা করে ফেলুন। টিকেট এর ক্রাইসিস তো হবেই। যা খুশি দাম রাখুন টিকেটের। অসহায় জনগন বাড়ি যাবেই যতই দাম বাড়ান।
রাজনীতিবিদ গন : আপনারা দেশ পরিচালনা করেন। কত চিন্তা করতে হয় জনগনের কল্যাণের জন্য। এরপর সামনে ঈদ। কর্মীদের জন্য বাড়তি খরচ। এলাকায় যাকাতের কাপড় , আরো কতকিছু আপনাদের চিন্তা করতে হয়। বাড়িয়ে দিন আপনাদের লুটপাটের পরিমান। সংযমের মাস চলছে। লুটপাটের সাথে সংযমের কোন যোগসূত্র নেই। সুতরাং চালিয়ে যান ।
অঃকঃ আমার লেখাটি ৫ আগস্ট ২০১১ তারিখে অন্য একটি ব্লগে লিখেছিলাম ।
২১টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
এত সহজে ওদের রোজা কখনও ভেঙ্গে গেছে বলে শুনিনি ।
জিসান শা ইকরাম
সংযম শুধু খাওয়ায় , আর কিছুতে না ।
সামছা আকিদা জাহান
রমজানের প্রস্তুতি ? ভালই বলেছেন।
গত কয়েক বছর ধরে ঈদ হচ্ছে এমন সময় যখন সরকারের বাজেট শেষ। আর্রথাত অর্থ বছর শেষে। নতুন অর্থ বছরের টাকা আস আর ও পরে। আর এই আমি অধম ভাবি নিশ্চই মানুষের হাতে টাকা নেই। কিন্তু আমার ধারনাকে ভেংচি কেটে শপিং সেন্টার গুলো উপচে পরে। তবে তাও মুষ্টিমেয় কিছু অংশের লোক। গত ঈদের সময় গ্রামের কৃষকের হাতে টাকা ছিল না কারন ফসল ছিল মাঠে। এবার ও ফসল এখন ও হতে মাস খানিক বাকি। টাকা আছে সেইজনের হাতে যে দূর্জন।
জিসান শা ইকরাম
ভালো কথা বলেছেন । সপিং মল গুলো দেখে কে বুঝবে যে আমরা গরীব দেশ ।
ফসল ওঠার বিষয়টি আপনার চিন্তায় আসলো দেখে অবাক হলাম । আমার চিন্তায় এটি কখনো জাগেনি ।
ধন্যবাদ আপনাকে ।
ছাইরাছ হেলাল
সংযমের দোহাই দিয়ে অসংযত হওয়ার এই তো মোক্ষম সময় ।
জিসান শা ইকরাম
হুম , ঠিক ।
বনলতা সেন
আসুন , ভেক না ধরে সত্যি সত্যি একটু খানি সংযমের চেষ্টা করি
এ পবিত্র মাসে ।
জিসান শা ইকরাম
চেষ্টা চলবে আন্তরিক ভাবে , তবে বজায় রাখা কঠিন ।
মিসু
পূরানো লেখা কিন্তু আমাদের দেশের জন্য সব সময়ই এটি নতুন থাকবে ।
জিসান শা ইকরাম
এর পরিবর্তন আর মনে হয় সম্ভব না ।
শিশির কনা
এভাবেই চলবে সব কিছু
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , এভাবেই চলবে , কিছু করার নেই ।
প্রজন্ম ৭১
এভাবেই চলছে চলুক । (y)
জিসান শা ইকরাম
চলুক 🙂
হতভাগ্য কবি
যমলোক কিংবা যমের চিন্তা ছাড়া সংযম ক্যম্নে আসবে??
জিসান শা ইকরাম
🙂 সংযমে আসলে কেউ আগ্রহী নয় ।
হতভাগ্য কবি
কথা সত্য
যাযাবর
এসবের পরিবর্তন হবে না কোন দিন ।
জিসান শা ইকরাম
কোন , সম্ভাবনা আপাতত নেই ।
ব্লগার সজীব
এ থেকে উত্তরনের পথ নেই ? (y)
অযতা
ভাই আপনি মনে হয় সংযমের অরথ টাকে ছোট করে দেখছেন. শুধু মুখের খাবার থেকে বিরত থাকলেই তাকে সংযম বলেনা।