বেশ কিছুদিন ধরে আমার সাজেশন ভাজাভাজা করা রুমমেট আর নতুন রুমমেট কে নিয়ে কিছু লিখবো লিখবো করেও লেখা হচ্ছিলো না। আজ একটু সময় পেয়েছি। এবং চেষ্টা করছি গুছিয়ে কিছু লেখার। সাজেশন ভাজাভাজা করা রুমমেটের গল্প দিয়েই আমার ব্লগে লেখা শুরু। সেই রুমমেট চলে গেছে অনেক দিন। তার কথা গুলো আমার কাছে খুব ইম্পরট্যান্ট ছিলো। চলে যাওয়ার আগে তার সাথে আমার কথোপকথন:—
উনি: রাজকুমারী আমি তোমাকে একটু জরিয়ে ধরি? তুমি কিছু মনে করবে?
আমি : ছি ছি আপু কি বলেন। কিছু মনে করার কি আছে এতে।
উনি: তুমি সম্ভবত সব সময় ভাব আমি তোমায় অপছন্দ করি। কিন্তু সত্যি কথাটা হলো তোমায় দেখে আমার খুব হিংসা হত।
আমি : আপু থাক না ওসব কথা।
উনি: তোমার কনফিডেন্ট,কাজ,ফান আড্ডা, সব দেখে মনে হত আমি কেন তোমার মত নয়?? কেনো?? আমি: আপু আপনি তো আপনার মত, থাক না।
উনি: আমি সারাদিন পড়ি জন্য তুমি রাগ করতে। আমি জানি। কিন্তু আমি যদি না পড়ি তাহলে পাসই করতে পারবো না।
আমি: ( মাথা তুলে উনার চোখের দিকে তাকাতে পারছি না, কারণ আমি ভুল মানুষ কে এত দিন অপছন্দ করতাম)।
উনি: আচ্ছা থাক আর কিছু বলবো না শুধু এইটা শুনে রাখো “আমি তোমায় অনেক পছন্দ করি”।
ডিসেম……
ডিসেম্বরে উনার বেডে এক নতুন রুমমেট এসেছে। আমার ছোট। আমার নতুন রুমমেটের ইন্ট্রোডাকশান হতে পারে এভাবে ” খুব ভিতু, ভালো, শান্ত্, কোন ভাবেই ক্লাস মিস করতে রাজি নয় টাইপ একটা মানুষ “। এগুলোর কোন দিক থেকেই সে আমার রুমমেট হওয়ার যোগ্য না। কিন্তু সে আবার খুব আড্ডাবাজ বলেই আমার সাথে টিকে গেছে।
তার একমাত্র বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, তার যখনই ওয়াসে যাওয়া দরকার পরবে সে আমার সাধের ঘুম ভাঙ্গায়ে দিবেই। সেটা রাত এক টা বা তিন টা হোক না কেন। সে যেটা করে সেটা হলো চোখ ঘসতে ঘসতে আমার বেডের পাশে এসে বলবে ” আপুউউ ওয়াসে যাবো ওঠেন”। ছোট মানুষ বলে কিছু বলতেও পারি না।
প্রতিরাতের মত আজ রাতের কাহিনী। সে এসে আমায় উঠায়ে নিয়ে গেছে।আমি ঘুমিয়েছি দেড়টা্য আর তখন বাজে দুটা পনেরো কি সতেরো। আমি বেসিনের পাশে দাড়ায়ে আছি। হঠাৎ মনে হলো পাইছি ইহারে পাইছি। আমি ওকে রেখে একাই রুমে এসে গেটে ছিটকানি লাগায়ে শুয়ে পরছি। একটু পরেই শুনি গেটে ধুম ধুম কিল পরছে। তারও কয়েক মিনিট পরে আমি উঠে গিয়ে গেট খুলে গিয়ে মোটামুটি ঘুম জড়ানো কন্ঠেই ওকে প্রশ্ন করলাম – এই এতো রাতে বাইরে কি কর?
– আপু আপনি আমাকে রেখে চলে আসছেন কেনো?
– আমি? কখন? কোথায়? ( খুব হাসতে ইচ্ছা করছে পারছিনা)
– আপনি তো গেলেন আমার সাথে।
– পাগলামো কর না। আমি ঘুমাইছি দেড়টাই। আর ঘুমানোর আগে গেটা লাগায়ে ঘুমাইছি। তুমি বাইরে গেলে কিভাবে? ( ওর চেহারা দেখার মত হয়েছে।)
– আপু তারমানে আপনি সেজে ভুতে আমাকে বের করে নিয়ে গেছে। ( বলেই সে বিছানাই বসে পরছে) – -তাই? বল কি? আল্লাহ মাফ কর। কখন গেছিলা বাইরে?
– দুটার একটু পর।
– এখন তো বাজে পোনে তিনটা।
– আপু আমার হাত পা কাঁপতেছে।
– আমার ও। তুমি যাওয়ার আগে পা দেখো নি? উল্টা না ঠিক ছিলো?
– না আপু ভুলে গেছি।
– আইতুল করসি পরতে পারো?
– হ্যা পারি। তার মানে ভুতে আমাকে পা দেখতে ভুলায়ে দিছে।
– আইতুল কুরসি পড়ে ঘুমায়ে যাও।
– আমি আর একা ঘুমাইতে পারবো না। আপনার সাথে ঘুমাবো।
– আমি তো ডাবল ঘুমাইতে পারি না। এক কাজ করো। তোমার বেডাটা আমার বেডের সাথে জোড়া দিয়ে ঘুমাও।
– আপু আপনার পা দেখি।
– হ্যা দেখো।
– না ঠিক আছে। তারমানে আপনি ভুত না। কিন্তু ওই টা ছিলো। ( বলেই ফিট)
#এই কাহিনী সবাই শুনেছে এবং রাত ১২ টার পরে সবার ওয়াসে যাওয়া বন্ধ।
বি: দ্র:
১। আপু আপনাকে এবং আপনার “রাজকুমারী ” ডাকটা খুব মিস করি।
২। আমার ভুতে তাড়া খাওয়া রুম্মেট সেই সময় ঘড়ি দেখতে ভুলে গেছিলো। ( এটা আমার হিমু পড়ে শেখা।)
৩। সে সন্ধার পরে আর কোন দিন ওয়াসে যাবে না এবং কোন একটা মাত্র রুমমেটকে ঘুম থেকে জাগানোর মত বোকামো ও করবে না প্রমিজ করেছে।
৩০টি মন্তব্য
প্রজন্ম ৭১
দিলেন তো সবার মনে ভুতের ভয় দেখিয়ে।আপনি তো মহা দুষ্ট :D)
মেহেরী তাজ
তা আর বলতে :D)
ছাইরাছ হেলাল
অনেকদিন পরে হলেও আপনার ভুতকে পেয়ে ভালই হল।
চলবে।
মেহেরী তাজ
হুম চলবে ভাইয়া 🙂
শুন্য শুন্যালয়
খুব ভিতু, ভালো, শান্ত্, কোন ভাবেই ক্লাস মিস করতে রাজি নয় টাইপ একটা মানুষ “। এগুলোর কোন দিক থেকেই সে আমার রুমমেট হওয়ার যোগ্য না। হা হা হা হাসতেই আছি। :D)
তুই খুব বদ টাইপের একটা মাইয়া, এন্ড আই লাইক ইউ (3
মেহেরী তাজ
এমন মেয়ে আমার রুমমেট হওয়ার যোগ্য হতেই পারেনা আপু :p আই অলসো লাইক ইউ (3
জিসান শা ইকরাম
আবার বোকা বানানো হয়েছে সবাইকে? 🙂
হোষ্টেলে জানলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
এমন আইডিয়া আসে কিভাবে হঠাৎ তোমার মাথায়?
তোমার পা দেখার পরে ফিট তোমার রুমমেট 🙂
ভালোই ফান করতে পারো তুমি…
মেহেরী তাজ
আইডিয়া চলে আসে ভাইয়া 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনিতো দেখছি বেশ রসিক -{@ কি ভাবে একজন ভুলেভালা মেয়েকে ভূতের ডর দেখাইলেন। -{@ ভাল লাগল এমন আরো ঘটনা চাই -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
পর্ব ২ এর লিংক দিলে ভাল হতো -{@
মেহেরী তাজ
এমন করে মজা পাই ভাইয়া 🙂 লিংক দিতে পারিনা 🙁
লীলাবতী
আমার জানামতে তাজ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দুষ্ট মেয়ে।তোমার বুদ্ধি দেখে চমকে যাচ্ছি 🙂
মেহেরী তাজ
আমি সেরার সেরা হতে চাই আপু :p
খেয়ালী মেয়ে
বুঝা গেলো আপনি খুব খারাপ :p
মেহেরী তাজ
:D) :D) খুবই খারাপ :p
প্রজন্ম ৭১
এই ভুতের জননী আপনি।ভুত আম্মু,আপনি আবার সোনেলায় ভুতকে চালান করে দিয়েন না।
মেহেরী তাজ
বলা যায়না কখন কি করে বসি,সাবধানে থাকুন 🙂
স্বপ্ন
আপু আপনার লেখা পড়ে ভয় করছে আমার 🙁 ভুতে আবার আমাকে না পেয়ে বসে।আপনার রুম মেটের দিকে খেয়াল রাখবেন।ছোট তো আপনার।খুব ভয় পেলে সমস্যা হতে পারে।
মেহেরী তাজ
ভয়ের কিছু নেই,রুমমেটকে ভালোবাসি খুব ভাইয়া 🙂
নুসরাত মৌরিন
:D)
আপনি তো দেখি শয়তান না মহা-শয়তান!!
এমনে কেউ মানুষরে ভয় দেখায়!! 😀
মেহেরী তাজ
এময়াত্র আপনিই মহা-শয়তান বললেন,ধন্যবাদ আপু 🙂 -{@ আমার ভাল লাগে এমন করতে 😀
ব্লগার সজীব
ওস্তাদ আপনার দুষ্টামির কাছে আমি শিশু :D)
মেহেরী তাজ
চিন্তার কিছু নাই শিষ্য,শিখায়ে দেব 🙂
নীতেশ বড়ুয়া
আজ হতে প্রায় ৭ মাস আগের পোস্ট কিন্তু চমকপ্রদ বুদ্ধি ধার সেই মাস থেকে বেড়েছে বৈ কমেনি…
এতো না জেনেই কেন যেন মনে হয়েছিলো গুলতি ছোড়া দুষ্ট মেয়ে। এইবার প্রমাণ পেলাম…
:D) :D) :D) :D)
তবে একটা লাইন মাস্টারপিসঃ আমি ভুল মানুষ কে এত দিন অপছন্দ করতাম। এইজন্যে এই পাজি পিচ্চি তাছাপুকে (3 -{@
মেহেরী তাজ
নীতেশ দা কথা টা কিন্তু ঠিক। আমি কোন দিন বুঝিনি। আমার ফোন নম্বর টা উনার ফোনে রাজকুমারী দিয়ে সেভ করা । আমায় উনি রাজকুমারী ছাড়া ডাকতেন ও না কখনও। আমি গাধা তাও বুঝিনি/ বুঝার চেষ্টাও করিনি। এখন বুঝি। 🙁
নীতেশ বড়ুয়া
আত্মোপলব্দি যখন সেদিন হয়েছে তো আগের সব বাদ 😀
কিন্তু এইসব বুদ্ধি এখন আর চলে না? থেমে আছে?
মেহেরী তাজ
না চলে না। আমি বড় হয়ে গেছি থার্ড ইয়ারে উঠে গেছি। ফ্লোরের সেকেন্ড সিনিয়র ব্যাচ। আমার এখন ছোটদের মত কাজ করলে চলবে??? ছোটদের তাহলে কন্ট্রোল করবে কে???
নীতেশ বড়ুয়া
:p
মেহেরী তাজ
:@ :@ :@ :@
নীতেশ বড়ুয়া
:D)