11793211_10205745796856778_644495567_n“শেখ মুজিবকে Emotion দিয়ে কাবু কোন সমস্যা না, কিন্তু তার পিছনে যে খাটো মত লোকটা File বগলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, He is very dangerous. I tell u that this Tajuddin will be our only pr…oblem.”
—- তাজউদ্দিন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলতে গিয়ে পাকিস্তানের ঝানু রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টো এ কথাই বলেছিলেন।

আজ ২৩ জুলাই, মহান এই নেতার জন্মদিন। দুর্ভাগা জাতি আমরা, জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করা ছাড়া তাঁর জন্য আর কিছুই করা হয়নি আমাদের দ্বারা। জন্মদিনের এই শুভক্ষনে তাঁর প্রতি রইল অতল শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

একজন নেতা যখন নেতৃত্ব দেন তখন তাঁর সহচর হিসাবে রাজনীতি-কুটনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী একজন সঙ্গী থাকা চাই, তবেই সে নেতা সঠিক দিক নির্দেশণা দিতে সক্ষম হন। বিভিন্ন রূপরেখা প্রনয়ন ও প্রয়োগে নেতাকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে সহচরের ভুমিকা থাকে অগ্রগণ্য। বঙ্গবন্ধুর সেই সহচর ছিলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে একটি প্রবাসী সরকার গঠন, তা পরিচালনা করা এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এদেশের মানুষ এবং যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগ, এককোটি লোকের বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজন বিদেশের মাটিতে বসে পূরণ করা কেবল তাজউদ্দিনের মতো মানুষের পক্ষেই সম্ভব ছিলো।

প্রচারবিমুখ এই নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁর সহকর্মীদের বলতেন – “এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন, ভবিষ্যতে ইতিহাস লেখার সময় সবাই আমাদের দেশটাকে দেখতে পায়, আমাদেরকে না।” সত্যিই আজ তাই ঘটছে।

মুজিবনগগর সরকারের সপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ
মুজিবনগগর সরকারের সপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেধাবী ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। বিচক্ষণ এই নেতা ১৯৭১-এ ভারতে পা রাখার আগমুহূর্তে ঘোষণা দেন, “আমি একজন স্বাধীন দেশের নেতা। অন্য কোন দেশের আমন্ত্রণ বা Protocol ছাড়া আমি অন্য দেশে যেতে পারি না।” তাঁর এই কথার পর ভারত থেকে সৈন্যবাহিনী এসে কুর্নিশের মাধ্যমে তাঁকে ভারতে নিয়ে যায়।
আবার ভারত ত্যাগ করে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকালে বিমান বন্দরে ভারতীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাঁকে বিদায়-সম্ভাষণ জানাবার সময় যখন বলছিলেন যে, তারা আশা করেন বাংলাদেশের সাথে ভারতের গভীর সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে। তখন তিনি তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে দু’টি শব্দ মনে করিয়ে দেন “সমতার ভিত্তিতে”।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকলেও তিনি দ্বিধাহীনভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভুল ধরিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করতেন না। কুচক্রী মুশতাকচক্র সে সুযোগটাই নিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা তাঁর মনে তাজউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে ভুল ধারনা তৈরী করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে দুজনের মধ্যে বৈরীভাব তৈরী হয় আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৫ সালে আমরা প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং তারপরই তাজউদ্দিন আহমদসহ আরও তিন নেতাকে হারাই।

ক্ষমতালোভী ওই চক্রের চক্রান্তের কারণে একদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাজউদ্দিনের মন্ত্রীত্ব চলে যায়, যা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি। আর এভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে বঙ্গবন্ধু আস্তে আস্তে একা হয়ে পড়েন।

এসব ক্ষমতালোভী ষড়যন্ত্রকারীর প্রেত্মাতারা আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার আশেপাশেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবকিছু নিজেদের দখলে রাখার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুয়োগ পেলেই তারা তাঁকে প্রভাবিত করছে। কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা প্রায় ঘটেই গিয়েছিলো কিন্তু শেখ হাসিনা খুব তাড়াতাড়িই তা অনুধাবন করতে পেরে আবার সজাগ হয়ে উঠেন এবং ভুলকে শুধরে নেন।

মুজিব হত্যাকান্ডের কথা জানতে পেরে তাজউদ্দিন স্বগতোক্তি করেছিলেন, “বঙ্গবন্ধু জানতেও পারলেন না কে তার শত্রু আর কে তার বন্ধু ছিল।”

১৯২৫ সালের এই দিনে তাজউদ্দিন আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। কিন্ত আমরা বাঙ্গালী জাতি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যার দিক নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো; তাঁকেই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিতে পারছি না।
লজ্জাবনত হয়েই তাঁকে তাঁর জন্মদিনে স্মরন করছি। তাঁর পবিত্র স্মৃতির প্রতি রইলো শ্রদ্ধাঞ্জলি।

৮০৭জন ৮০৭জন
0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ