“শেখ মুজিবকে Emotion দিয়ে কাবু কোন সমস্যা না, কিন্তু তার পিছনে যে খাটো মত লোকটা File বগলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, He is very dangerous. I tell u that this Tajuddin will be our only pr…oblem.”
—- তাজউদ্দিন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলতে গিয়ে পাকিস্তানের ঝানু রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টো এ কথাই বলেছিলেন।
আজ ২৩ জুলাই, মহান এই নেতার জন্মদিন। দুর্ভাগা জাতি আমরা, জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করা ছাড়া তাঁর জন্য আর কিছুই করা হয়নি আমাদের দ্বারা। জন্মদিনের এই শুভক্ষনে তাঁর প্রতি রইল অতল শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।
একজন নেতা যখন নেতৃত্ব দেন তখন তাঁর সহচর হিসাবে রাজনীতি-কুটনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী একজন সঙ্গী থাকা চাই, তবেই সে নেতা সঠিক দিক নির্দেশণা দিতে সক্ষম হন। বিভিন্ন রূপরেখা প্রনয়ন ও প্রয়োগে নেতাকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে সহচরের ভুমিকা থাকে অগ্রগণ্য। বঙ্গবন্ধুর সেই সহচর ছিলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে একটি প্রবাসী সরকার গঠন, তা পরিচালনা করা এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এদেশের মানুষ এবং যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগ, এককোটি লোকের বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজন বিদেশের মাটিতে বসে পূরণ করা কেবল তাজউদ্দিনের মতো মানুষের পক্ষেই সম্ভব ছিলো।
প্রচারবিমুখ এই নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁর সহকর্মীদের বলতেন – “এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন, ভবিষ্যতে ইতিহাস লেখার সময় সবাই আমাদের দেশটাকে দেখতে পায়, আমাদেরকে না।” সত্যিই আজ তাই ঘটছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেধাবী ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। বিচক্ষণ এই নেতা ১৯৭১-এ ভারতে পা রাখার আগমুহূর্তে ঘোষণা দেন, “আমি একজন স্বাধীন দেশের নেতা। অন্য কোন দেশের আমন্ত্রণ বা Protocol ছাড়া আমি অন্য দেশে যেতে পারি না।” তাঁর এই কথার পর ভারত থেকে সৈন্যবাহিনী এসে কুর্নিশের মাধ্যমে তাঁকে ভারতে নিয়ে যায়।
আবার ভারত ত্যাগ করে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকালে বিমান বন্দরে ভারতীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাঁকে বিদায়-সম্ভাষণ জানাবার সময় যখন বলছিলেন যে, তারা আশা করেন বাংলাদেশের সাথে ভারতের গভীর সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে। তখন তিনি তাদেরকে নির্দিষ্টভাবে দু’টি শব্দ মনে করিয়ে দেন “সমতার ভিত্তিতে”।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থাকলেও তিনি দ্বিধাহীনভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভুল ধরিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করতেন না। কুচক্রী মুশতাকচক্র সে সুযোগটাই নিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা তাঁর মনে তাজউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে ভুল ধারনা তৈরী করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে দুজনের মধ্যে বৈরীভাব তৈরী হয় আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৫ সালে আমরা প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং তারপরই তাজউদ্দিন আহমদসহ আরও তিন নেতাকে হারাই।
ক্ষমতালোভী ওই চক্রের চক্রান্তের কারণে একদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাজউদ্দিনের মন্ত্রীত্ব চলে যায়, যা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি। আর এভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে বঙ্গবন্ধু আস্তে আস্তে একা হয়ে পড়েন।
এসব ক্ষমতালোভী ষড়যন্ত্রকারীর প্রেত্মাতারা আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার আশেপাশেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবকিছু নিজেদের দখলে রাখার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুয়োগ পেলেই তারা তাঁকে প্রভাবিত করছে। কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা প্রায় ঘটেই গিয়েছিলো কিন্তু শেখ হাসিনা খুব তাড়াতাড়িই তা অনুধাবন করতে পেরে আবার সজাগ হয়ে উঠেন এবং ভুলকে শুধরে নেন।
মুজিব হত্যাকান্ডের কথা জানতে পেরে তাজউদ্দিন স্বগতোক্তি করেছিলেন, “বঙ্গবন্ধু জানতেও পারলেন না কে তার শত্রু আর কে তার বন্ধু ছিল।”
১৯২৫ সালের এই দিনে তাজউদ্দিন আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। কিন্ত আমরা বাঙ্গালী জাতি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যার দিক নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো; তাঁকেই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিতে পারছি না।
লজ্জাবনত হয়েই তাঁকে তাঁর জন্মদিনে স্মরন করছি। তাঁর পবিত্র স্মৃতির প্রতি রইলো শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২৪টি মন্তব্য
অরণ্য
“বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেধাবী ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ।” (y)
আমার কাছে লিডারশিপের উপমা তিনিই।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
একমত আপনার সাথে।
জিসান শা ইকরাম
মুক্তিযুদ্ধকালীন নেতৃত্ব তার কাছে ছিল বলেই শত প্রাসাদ ষড়যন্ত্র পেড়িয়ে আমরা স্বাধীনতার দেখা পেয়েছি।
এমন নেতার জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, তাই ৭৫-এ শুধু বঙ্গবন্ধুকে মেরেই হায়েনাচক্র ক্ষান্ত দেয় নি, তারা জানতো তাজউদ্দিন বেঁচে থাকলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। তাই জেলহত্যার ঘটনাটিও পরপর ঘটানো হয়।
আজিম ফাইফ ও ফাইভ
জনাব তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা জনাবা শারমিন এর এক লেখায় পড়লাম, তিনি তাঁর বাবা তাজউদ্দিনের মতো কেউ একজন দেশে গড়ে উঠুক অথবা এর অর্থ এরকমও হতে পারে যে তিনি এরকমটা আশা করেন।
তবে এটা অনিবার্য। চলমান রাজনীতিই সেই সুযোগ করে দিচ্ছে।
এবিষয়ে লিখার জন্য ধন্যবাদ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমিও আশাবাদী। নিশ্চয় এ জাতি একদিন এমন কাউকে খুঁজে পাবে।
তবে এর জন্য আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। বর্তমান প্রজন্মের সামনে এসব কিংবদন্তি নেতাদের পরিচয় তুলে ধরতে হবে বারাবার,অজস্রবার। তাদের মননে গেঁথে দিতে হবে।
খেয়ালী মেয়ে
এই মহান নেতার জন্মদিনে তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই…
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
স্বদেশী যোদ্ধা
আজ সকল আভুলভ্রান্তি ভেঙে দেবার সময় এসে কগেছে! মিথ্যার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার সময় এসে গেছে। গুণীকে করা সম্মান প্রদর্শন করা সকলেরই কর্তব্য।
অবশেষে আজ এই মহৎ ব্যক্তির জন্মদিনে তাঁকে জানাই প্রাণ্ঢালা শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সত্য কখনোই আড়াল থাকে না। সত্যকে সম্মান করতেই হবে।
পারভীন সুলতানা
একগুচ্ছ নেতা ছিল আমাদের। ছিল আলোর দিশারী ………………।আলোর সন্ধান দিয়ে তারা তাদের মত করেই জীবন দান করেছেন। আমরা তাদের সেই দানের মর্যাদা দিতে পারবো কবে? আর কতদিন লাগবে আমাদের।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি, যারা আমাদের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের আমরা উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পারছি না।
অনিকেত নন্দিনী
আমরা এমনই এক ব্যর্থ জাতি যারা উপযুক্ত ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারিনা।
তাঁর অবদানের প্রতি, তাঁর বিচক্ষণতার প্রতি আর তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সঠিক ব্যক্তির সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি না বলেই আমরা ঠিকঠাক এগুতে পারছি না।
বিচক্ষন এই মহান নেতার কর্ম ও আত্মত্যাগের প্রতি রইলো অতল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লীলাবতী
এই মহান নেতার প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
নীলাঞ্জনা নীলা
সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। -{@
তবে এসব নেতা এসেও কি এ দেশে? আমরা কি আর তাকে ভালো থাকতে দিই?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এদিক দিয়ে আমরা বড় অভাগা জাতি!
হীরার কদর আমরা বুঝি না। হীরা ফেলে কাঁচ নিয়েই মেতে থাকি। তা না হলে ৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক জাতির চোখে ধুলো দিয়ে ঠিকে থাকতে পারতো না।
মোঃ মজিবর রহমান
তাঁর মত মেধা ও বাস্তববাদী নেতা ছিল বলেই মুক্তিযুধ্বের সময় বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুধ্ব চালাতে কোন বিঘ্ন ঘটেনি।
তাঁর জন্মদিনে লাল সালাম। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মাত্র ৯ মাসে কোন প্রস্তুতি ছাড়াই একটা নিরস্ত্র জাতি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিততে পারে, তা কেবল তাজউদ্দিন আহমদের মতো মেধাবী ও বিচক্ষন ব্যাক্তির নেতৃত্ব ছিলো বলেই।
স্বপ্ন
শ্রদ্ধা জানাই এই মহান নেতার প্রতি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y)
শুন্য শুন্যালয়
তিনি আমাদের স্বাধীনতার অগ্নি প্রতীক। যারা দেশকে সম্মানের সাথে ছিনিয়ে এনেছেন, তারা আর বিনিময়ের অপেক্ষায় থাকেন না। লজ্জাবনত শ্রদ্ধা প্রিয় নেতার প্রতি। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
তাঁর একটা উক্তিতেই তা প্রকাশ পায়। তিনি বলেছিলেন “এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন, ভবিষ্যতে ইতিহাস লেখার সময় সবাই আমাদের দেশটাকে দেখতে পায়, আমাদেরকে না।”