অর্ণবঃ তুই করে না বললে মজা লাগে না। বন্ধুত্ব জমে না।
মোহনাঃ আচ্ছা, আপনি চাইলে বলতে পারেন। সমস্যা নেই।
অর্ণবঃ আবার বলেন,,,, বলেন না বল। আমি একা কেনো বলবো? তুইও বলবি
মোহনাঃ ওরে বাপ্রে,,,আমি বলবো না। ছি ছি!
অর্ণবঃ তাহলে আমিও বলবো না।
মোহনাঃ আমি আপনাকে তুই বলবো!
অর্ণবঃ অবশ্যই।
মোহনাঃ এটা কি করে হয়? না বাবা আপনিই ঠিক আছে। চাইলে আপনি আমাকে তুই বলতে পারেন। আমার আপত্তি নেই।
অর্ণবঃ না তা হয় না। বন্ধুত্বের মাঝে বড়ো ছোট ভেদাভেদ রাখতে নেই।
মোহনাঃ একটা কথা বলি?
অর্ণবঃ বলেন।
মোহনাঃ আজ আপনার রি-কমেন্ট করা দেখে রাগ হয়েছিল।
অর্ণবঃ কোনটা বলুন তো?
মোহনাঃ ঐ যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখা পোস্ট এ একটা রি-কমেন্টে এ রকম লেখা আছে “সবই তো তোর আমিও তো তোর”
এটা বলেই থেমে গেলো মোহনা। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো হঠাৎ অর্ণবের করা এমন রি-কমেন্টে আমার কেনো রাগ হবে? হতে পারে সে অর্ণবের কাছের কেউ। সেটাই তো মোহনার কেনো রাগ হবে?
শিউরে উঠলো মোহনা। পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। হার্টবিট উর্ধ্ব গতিতে চলতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই অনিন্দ্যকে মনে পড়ে গেল। মোহনা আবিষ্কার করলো যখন অনিন্দ্য আমার ছিলো তখন যদি ও কারো (বিশেষ করে কোনো মেয়ের) লেখায় বা ছবিতে হার্ট ইমো দিতো, প্রিয় বলে সম্বোধন করতো এমন লাগতো। অদ্ভুত কাণ্ড তো,,,,!
অর্ণবঃ হা হা হা।
মোহনাঃ আমি জানিও না ওটা ছেলে না মেয়ে। হুদাই রাগ করে বসলাম। পরে অবশ্য লজ্জাও পেয়েছি।কোনো মানে হয়?
অর্ণবঃ কি অবস্থা! হা হা হা
ও আমার খুব ভালো বন্ধু
মোহনাঃ হুম,,,, বুঝতে পেরেছি। কি যেনো নাম আলোর মিছিল!
অর্ণবঃ ওর বফের সাথে ঝগড়া চলছে। কোথাকার কোন ছেলেকে নিয়ে।ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে আনফেন্ড করে দিয়েছে।
মোহনাঃ ওহ ওটা তাহলে মেয়ের আইডি?
অর্ণবঃ হুম। পরে আমি ওর বয়ফ্রেন্ডকে রিকোয়েস্ট করলাম যাতে ওকে ভুল না বোঝে। পরে ঠিক হয়ে গেছে।
মোহনাঃ ভালো খবর।
অর্ণবঃ আর এর জন্য ও আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
মোহনাঃ যাক কৃতজ্ঞতাবোধ তাহলে এখনো আছে মানুষের মধ্যে! জেনে ভালো লাগলো।
কিছু ক্ষণ মোহনা চুপ
অর্ণবঃ আপনি কি বিজি? কই আপনি
মোহনাঃ বিজি না বাপু। ইনবক্সে ঢুঁ মারলাম। বুড়া ছোঁড়া কেউ বাদ যায়নি ম্যাসেজ দিতে। একজন তো ইনবক্সে না পেয়ে পোস্টে এসে বলছে ইনবক্সে কথা বলার জন্য। হা হা হা
অর্ণবঃ ম্যাসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দেন।দরকার পড়লে ফেইসবুক থেকেও ব্লক করে দেন।
মোহনাঃ কল দিলেই ব্লক। কি হলো আপনিও আপনি করে বলছেন?
অর্ণবঃ হা হা হা। ট্রিট ফর ট্র্যাট
মোহনাঃ এটা কথা হলো! চাইলে আপনি কিন্তু তুই বলতে পারতেন।
অর্ণবঃ আপনিও বলেন।
মোহনাঃ আরে আজিব তো! আমাকেও বলতে হবে?
অর্ণবঃ বন্ধুত্ব হলে দু’জনকেই সমান হতে হয়।আর এটাই আমাদের মাঝে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক।
মোহনাঃ ধুর বাবা, আমি বলতে পারবো না।মন সায় না দিলে কি করে বলি? মানুষ তো বরকেও আপনি বলে।তবে কি তারা পর?
অর্ণবঃ বন্ধুত্বের বিকল্প কিছু নেই। যদি কখনো এর বেশি কিছু আশা করা হয় তবে আমি সরি দোস্ত।
মোহনাঃ বার বার বন্ধুত্ব বলে বোঝাতে হবে?
অর্ণবঃ হুম
মোহনাঃ আপনার কি মনে হয় আমি আপনার প্রেমে পড়েছি?
মনে মনে,,,বয়েই গেছে আমার আপনার প্রেমে পড়তে 😠😠
অর্ণবঃ যদি আপনি আমাকে আপনি আর আমি আপনাকে তুই বলি কেমন সিনিয়র জুনিয়র দেখায় না?
মোহনাঃ হা হা হা
অর্ণবঃ এই যে আপনি বলবেন আপনি আর আমি বলবো তুই। এটা কি আদৌও সম্ভব বলুন?
মোহনাঃ হুম বুঝলাম।
অর্ণবঃ যদি বন্ধুত্ব করতেই হয় তবে দুজনেই সমান ভাবে করবো।
মোহনাঃ হুম
অর্ণবঃ হুম ব্যস! কিছু বলার নেই।
নিঃশ্চুপ মোহনা,,,,
ঝড় উঠেছে মোহনার মনে, ভয়াবহ ঝড়। এই ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙ্গেচুরে চুরমার হচ্ছে মন নামক বস্তুটি। অর্ণবের সাথে যতো কথা হচ্ছে ততোই তার অনিন্দ্যকে মনে পড়ছে। জেদ করে ভুলে থাকতে চাইলেও এ মুহূর্তে ভুলতে পারছে না তাকে। মানুষটার প্রতি যতোই রাগ অভিমান থাকুক না কেনো মোহনার কিন্ত তাকে ভুলে যাওয়া হয়ে উঠেনি। তবে সুনিপুণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো ভুলে যেতে। কিন্তু অর্ণবের আগমনে বুঝি তা আর সম্ভব নয়।
মোহনা কি তবে অর্ণবের সাথে কথপোকথনে অনিন্দ্যর ছায়া দেখতে পাচ্ছি? না কি অনিন্দ্যকে খোঁজার চেষ্টা করছে? কি ভাবছে মোহনা?
মোহনা,,,,
যাকে হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগে ,যে অন্যের হয়ে গেছে ভুলে আমাকে,তাকে কি সত্যিই খুঁজে পাওয়া যায়?
আজ যখন অন্য কারো সাথে কথা বলে মনে রাঙ্গাবার কথা তখন অনিন্দ্য নামক কাঁটা কেনো বিঁধছে বুকে।
স্বপ্নীল সুখের নিবাসে হারিয়ে ফেলেছি যাকে
তাকে কি আর খুঁজে পাবো ধোঁয়াশার করিডোরে
তবুও খুঁজি ফিরি তারে ভালবাসার রাজপ্রাসাদের-
খসে পড়া পুরোনো পলেস্তারাতে,
খুঁজে ফিরি তারে প্রেমের বন্দীশালার অন্ধ কুটিরে,
খুঁজে ফিরি তারে ব্যথিত হৃদয়ের হাহাকারে,
খুঁজে ফিরি তারে চেনা পথের অলিগলিতে,
সে কি আছে এখনো কোথাও লুকিয়ে!
অবয়বহীন কায়া বুঝি তার যায়নি মিলিয়ে,
অস্পষ্ট ছায়া তাই আজো হাতছানি দেয় আমাকে
অর্ণবঃ কি হলো, কোথায় হারিয়ে গেলেন? আছেন আপনি?
মোহনাঃ এই তো আছি, বলুন।
অর্ণবঃ ঠিক আছেন আপনি?
মোহনাঃ হুম,,, আচ্ছা এখন ছাড়ছি। পরে কথা হবে
অর্ণবঃ আচ্ছা। আল্লাহ হাফেজ ❤️
—————————-
শেষ বিকেলের রোদ্দুর_১
শেষ বিকেলের রোদ্দুর_২
শেষ বিকেলের রোদ্দুর_৩
শেষ বিকেলের রোদ্দুর_৪
১৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
কথপোকথন চলুক। পরের পর্বের অপেক্ষায়। আগেই জেনে নেই আচ্ছা অনিন্দ্য কি আবারো ফিরে আসবে গল্পে?
সুরাইয়া পারভিন
অনিন্দ্য ফিরবে না। কিন্তু তার কথা থাকবে অনেক টা জুড়ে,,,, আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
তৌহিদ
কথোপকথনে তুই তোকারি বন্ধুত্বে হতেই পারে। তবে গল্পটি এতদূর নিয়ে এসেছেন দেখে অবাকই হয়েছি। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা।
ভালো থাকবেন আপু।
সুরাইয়া পারভিন
কেবল তো শুরু ভাইয়া
একজন অপরিচিত মানুষ,,, কাছের মানুষ হয়ে উঠবে
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
জিসান শা ইকরাম
আমাদের জীবনটা ফেইসবুক নির্ভর হয়ে গিয়েছে,
ব্যাক্তিগত যোগাযোগ সীমিত হয়ে আমরা মেসেঞ্জার জীবন বেঁছে নিয়েছি।
সম্পর্কটা বন্ধুত্বের হবে না প্রেমের বুঝতে পারছি না এখনো,
কারো কারো সাথে বিভিন্ন কথায় আমরা পুরাতন কাউকে ভুলতে পারিনা,
পুরাতন কেউ এসে সামনে দাঁড়ায়।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভিন
একদম সঠিক বলেছেন ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
অনন্য অর্ণব
এতো দেখছি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল,,,হা হা হা 😀
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা,,😏
এস.জেড বাবু
হটাৎ মনে হলো-
কেমন হতো যদি ‘অর্নব’ অনিন্দের ফেইক আইডি হতো !!
ইশশ
তিন রাস্তার মোড়ে মিলে যেত দ্বৈত সুর।
চমৎকার এগিয়ে যাচ্ছে- তুই তুমি আর হবে না মনে হয়।
অবশ্য সম্বোধন হিসেবে উভয় পক্ষে আপনিটা তেমন মন্দ না।
ভালই এগুচ্ছে- পরের পর্বগুলির নেশা ধরেছে।
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া
দেখা যাক কি হয়
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ছাইরাছ হেলাল
অনিন্দ্য মোহনা অর্ণব এদের সুনিপুণ মন-টানাটানি এগিয়ে যাক
প্রকার থেকে প্রকারন্তরে।
জীবন হয় ফেসবুকময়!
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
শিরিন হক
ক্যাপশন এ নিজের ছবি দিলেন কি ভেবে?
ফেইসবুকে এমন অনেক ঘটনা হয় যা দিয়ে গল্প লেখা যায় আপনি সাহসিকতার পরিচয় দিলেন গল্পটি লিখে। চমৎকার প্রেম না বিরোহ নাকি ব্ন্ধু অপেক্ষায় রইলাম।
সুরাইয়া পারভিন
আপু গল্প যে কোথায় যাবে এখনই বলতে চাইছি না।নামকরণ ও ছবি সম্পর্কে অবশ্যই বলবো
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু ❤
হালিম নজরুল
সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্বোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার।
সুন্দর লিখেছেন।
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
কৃতজ্ঞতা অশেষ