অনেকেই সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছেন। এখনো পর্যন্ত অনলাইনে-অফলাইনে অনেকেই নিত্য যুদ্ধ করে যাচ্ছেন দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও মানবতার তাগিদে। কিন্ত এই যুদ্ধ করা আমার কাছে তেমন বিশেষ মহিমান্বিত কিছু নয়। কিন্তু, যুদ্ধটা যদি হয় ‘জীবন বাজি রেখে’, ‘মৃত্যুর পরোয়া না করে’, তখন সেটা আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়।
কারণও আছে। মনে পড়ে, অনেক আগে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী পড়ে রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম– পাকিস্তানী মিলিটারী এসেছে, দুয়ারে বুটের আঘাত শুনতে পাচ্ছি। মা আমাকে নিয়ে ছাদে উঠলেন, বাবাকে মিলিটারীরা বের করলেন উঠানে । এদিকে মা আমাকে কোত্থেকে একটি বন্দুক এনে দিলেন আর গুলি চালাতে বললেন। আমি বন্দুক হাতে নিয়ে উঠানে দাঁড়ানো পাকিদের দিকে তাক করলাম ছাদের জানালা দিয়ে। কিন্তু তখন হঠাত আমার মনে হল, এতগুলো সৈন্যকে তো মারা অসম্ভব, গুলিতে যদি সবাই মারা না যায়, যদি কেউ ফিরতি আমাকে গুলি করে দেয়? বরং এখনই তো বেশ আছি, পাকিরা আমাদের দেখছে না। তখন তো দেখে ফেলবে! আবার বাবার কথাও মনে পড়ছে। তাঁকেও বাঁচানো দরকার। কিন্তু তাতে আমাকে মরতে হতে পারে। আমি মরে যাব! গুলি খেয়ে! আমার বুক কাঁপছে, হাত কাঁপছে। মা ও তাগাদা দিচ্ছে, কীরে গুলি করনা। আমি জমে গিয়েছিলাম, নিজের মৃত্যু চিন্তায়। আর তখন আমার সাহসী মা বন্দুক নিয়ে গুলি শুরু করে। আর গোলাগুলির একটু পর দেখি মা গুলি খেয়ে নীতর হয়ে পড়ে আছেন! জেগে উঠে দেখি আমি কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছি!
আমি সেদিন বুঝেছিলাম, বাইরের সাহস আর ভিতরের ভীরুতা সমানুপাতিক। সেদিন থেকে যেখানেই দেখি/ শুনি ‘জীবন বাজি রেখে’ কেউ কিছু করেছে, তাকে আমার বীর মনে হয়। জীবন বাজি রাখা! সহজ কথা! ভাবলেই বুঝা যায় এটা কী পরিমান সাহসের কাজ, আত্মত্যাগের ব্যাপার। আর সেটা যদি হয় দশ বা ‘দেশ’-এর জন্য, ব্যক্তিগত কারণে নয়, তখন বুঝা কতটুকু মহত্ত্ব মিশে আছে তাতে!
আমি নিতান্ত তুচ্ছ। কারো কাছে তার মা-বাবা কিংবা তার প্রিয়া সবচেয়ে প্রিয় হতে পারে, কারো কাছে তার সন্তান। আমার কাছে, সরল স্বীকারুক্তি, আমার জীবনই সবচেয়ে প্রিয়।
তাই, দেশের সার্থে জীবন বাজি রাখা, অকুতভয় প্রাণ, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের মত মানুষগুলোকে আমার হিংসা হয়, বাঙ্গালী হিসেবে গর্ব হয়। আর শ্রদ্ধায় চোখে জল আসে, কন্ঠ রোধ হয়ে আসে যতবার উনাদের আত্মত্যাগের কাহিনী পড়ি।
শুভ জন্মদিন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর।
১৭টি মন্তব্য
জবরুল আলম সুমন
স্যালুট হে শ্রেষ্ঠ বীর… শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বাঙ্গালীর এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে… আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটি শেয়ার করার জন্য।
লজিক্যাল সুমধু
হ্যাঁ।
আপনাকেও অনেক ধন্যাবাদ। লেখাটা আমি লিখেছি, ভাই।
লজিক্যাল সুমধু
হ্যাঁ। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। লেখাটা আমি লিখেছি ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা ।
সময়োপযোগী লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
লজিক্যাল সুমধু
হ্যাঁ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, ভাই।
জিসান শা ইকরাম
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান আমাদের জাতীর অহংকার।
শুভ জন্মদিন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
লজিক্যাল সুমধু
হ্যাঁ, প্রাণদানকারী মানেই বিশেষ কিছু। বীর এরা।
আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। অনেক ধন্যবাদ দাদা।
প্রজন্ম ৭১
শুভ জন্মদিন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। এই দিনে জাতী তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে যতদিন এ জাতী টিকে থাকবে পৃথিবীতে।
লজিক্যাল সুমধু
ঠিক বলেছেন, উনাদের কাহিনী, গৌরব কখনো মলিন হবে না। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা।
লীলাবতী
শুভ জন্মদিন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান । আমার সন্তান যেন এমনি হতে পারে।
লজিক্যাল সুমধু
দোয়া করার সামর্থ্য থাকলে আপনার ইচ্ছা কবুলের জন্য করতাম। অনেক সুন্দর আশা আপনার।
আদিব আদ্নান
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজনকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম ।
লজিক্যাল সুমধু
আফসোস উনি নেই, ভাই।
শিশির কনা
শ্রদ্ধা জানাই আমাদের গর্ব জাতীর বীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে।
লজিক্যাল সুমধু
আপনাকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ, দিদি।
উনি আপনার আমার শুভেচ্ছায় শ্রদ্ধায় সিক্ত হওয়ার জন্য নেই!
দেরিতে জবাবের জন্য দু:খিত।
নীলাঞ্জনা নীলা
শুভ জন্মদিন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ।
লজিক্যাল সুমধু
দু:খিত, জবাব দিতে দেরি হল। আপনাকে আমার ব্লগে স্বাগতম।
যদি জীবদ্দশায় মতিউর জাতির শ্রদ্ধা ভালবাসায় সিক্ত হতেন! সেটা উনার জন্য কত সম্মানের হত!:(