আমি যখন এদেশে আসি, তখন হঠাৎ হঠাৎ বাংলাদেশী চোখে পরতো। দেশ থেকে নতুন আসা’দের ভাষাগত সমস্যাসহ নানাবিধ কারনে জব পাওয়া কঠিন ছিল। স্বামী প্রতিদিন ভোরে কোট, টাই পরে জব খুঁজতে বের হন। ফিরেন সন্ধ্যায়। ক্লান্ত চেহারায় খুশি খুশি ভাব নিয়ে জানায়, অনেকেই ফোন নাম্বার রেখেছে। ফোন করবে। আমরা ধরেই নিয়েছি জব হয়ে যাবে যে কোনদিন। আশায় আশায় থাকি। ফোনের দিকে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকি। মরুভূমির বুকে তৃষ্ণিত চাতক যেমন দু’ফোটা তৃষ্ণার জলের আশায় চেয়ে থাকে, ঠিক তেমন। সপ্তাহ শেষ হয়। ফোন আসে না। তিনি আবারও সেইসব জায়গাগুলোয় দেখা করেন। তাঁরা অবাক হয়। বলে, এখনো জব পাওনি ! বলা বাহুল্য যে, এদেশে জব খুঁজতে যাওয়াদের “পরে ফোন করে জানাবো” কথাটির অর্থ “জব খালি নেই”___ এটি বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগেছিল। এক আমেরিকান বস্ টাই নেড়ে দিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করেন, কি টাইপের জব আশা কর ? তিনি বললেন, যে কোন জব হলেই চলবে। কেননা, সেই সময় একটি জব ভীষণ জরুরি ছিল। ভীষণ রকম……
আমেরিকান বস্ সদয় হলেন। তাঁর রেস্টুরেন্টের সারাদিনের জমে থাকা আবর্জনার ব্যাগগুলো বেইজমেণ্ট থেকে টেনে তুলে বাইরে রাস্তার পাশে নিয়ে রাখতে হবে। একজন নীচ থেকে বিশালাকৃতির গারবেজ ব্যাগগুলো তুলে দিবে, অন্যজন টেনে রাস্তার পাশে নিয়ে রাখবে। তাকে জিগ্যেস করা হল, তুমি নিচে থাকবে, নাকি উপরে ? তিনি নিচেই থাকতে চাইলেন। যদিও নীচ থেকে বিশালাকৃতির ময়লার ভারী ব্যাগগুলো উপরে তুলে দেয়া অধিক কষ্টকর, তবুও তিনি ভাবলেন, সেটিই তাঁর জন্যে স্বাচ্ছন্দ্যের। কেননা, উপর থেকে টেনে নিয়ে রাস্তায় রাখার সময় যদি চেনা কেউ দেখে ফেলে ? যদি দেশে তাঁর নিম্নতর জব করার খবর পৌঁছে যায়, সেটিই হবে লজ্জার। নতুন বিদেশে আসা যে কোন মানুষের মতই ভেতরে নবাবী মানসিকতা লালন করছিলেন তখনো…
সারারাত জব শেষে সকালে বাসায় ফিরেন। ভারী জিনিষ টানা হেঁচড়া চাট্টিখানি কথা নয়। ঘুমাতে যান। ঘুম হয়না। গোঙানির শব্দ ভেসে আসে। ব্যথার গোঙানি। ওষুধ খান। দিনশেষে আবার কাজে যান। এভাবে রাতে কাজ, দিনে গোঙানি হতে হতে একটা সময় সব সয়ে যান। স-ব…
দেশ থেকে যারা নতুন এদেশে আসে, শুরুর দিকে প্রায় সবাইকেই ভীষণ পরিশ্রমের জব করতে হয়। যারা স্টুডেন্ট ভিসায় আসে, তাদের যেমন অড জব করেই নিজের থাকা খাওয়ার খরচ বহন করতে হয়, তেমনি যারা পরিবার নিয়ে আসেন, তাঁদেরও। গুটিকতেক বিত্তশালীর কথা অবশ্য ভিন্ন।
আমার দেশের দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের মতোই আমরাও একটি সময় কাটিয়ে এসেছি। পার্থক্য শুধু, কঠোর পরিশ্রমের ফল স্বরূপ আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়। আমরা ভালো থাকি। বিলাসী জীবন-যাপন করি। কিন্তু সেইসব মেহনতি সংগ্রামী মানুষদের অবস্থার পরিবর্তন হয় না কখনোই …..
শুভকামনা সুবিধা বঞ্চিত সংগ্রামী কর্মজীবী সকলকে…
১৯টি মন্তব্য
অরণ্য
ভাল লাগলো লেখাটি।
“পার্থক্য শুধু, কঠোর পরিশ্রমের ফল স্বরূপ আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়। আমরা ভালো থাকি। বিলাসী জীবন-যাপন করি। কিন্তু সেইসব মেহনতি সংগ্রামী মানুষদের অবস্থার পরিবর্তন হয় না কখনোই …..”
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন। শুভকামনা নিরন্তর।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অনেক ভালো লাগলো পড়ে।
“ঘুমাতে যান। ঘুম হয়না। গোঙানির শব্দ ভেসে আসে। ব্যথার গোঙানি। ওষুধ খান। দিনশেষে আবার কাজে যান। এভাবে রাতে কাজ, দিনে গোঙানি হতে হতে একটা সময় সব সয়ে যান।”
আমার দেশে আরেকটি সমস্যা হলো, পরিবারের একজনকে বিদেশে পাঠিয়ে বাকীরা চান নবাবী হালে চলতে, কিন্তু একবারও ভাবেন না তিনি সেখানে কতোটা পরিশ্রম করে উপার্জন করছেন।
রিমি রুম্মান
দেশে থাকা মানুষগুলোকেও দোষ দেয়া যায় না। কেননা, যিনি বিদেশে থাকেন, তিনি তাঁদের কাছে সঠিক বাস্তবতা তুলে ধরেন না। যে কারনে সবার চাহিদা থাকে বিদেশে থাকা মানুষটিকে ঘিরে।
শুন্য শুন্যালয়
শেষের কথাটা মন ছুঁয়ে গেলো আপু। সত্যিই তাই, আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়, বিলাসী জীবন যাপন করি, আর আমার দেশে তাদের কস্টে অন্যরা বিলাসী জীবন যাপন করে।
রিমি রুম্মান
কঠোর পরিশ্রমের ফল সরূপ আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়, কিন্তু একই রকম পরিশ্রম করা আমার দেশের মানুষগুলোর অবস্থার পরিবর্তন হয়না কখনোই। আর বিদেশ থাকা দের অর্থে তাদের আত্মীয় স্বজনরা বিলাসী জীবন যাপন করে, কারন তাদের বুঝতে দেয়া হয় না যে, বিদেশে তিনি ধরনের জব কি করছেন। বেশিরভাগই শুনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার 😀
খেয়ালী মেয়ে
অনেক সুন্দরভাবে লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তব সত্যগুলোকে….
ভালো লাগলো লেখাটা (y)
শুভকামনা সুবিধা বঞ্চিত সংগ্রামী কর্মজীবী সকলকে..
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন। শুভকামনা রইলো।
ব্লগার সজীব
“পরে ফোন করে জানাবো” কথাটির অর্থ “জব খালি নেই”___ এটি মনে রাখতে হবে। আমাদের দেশে এমন মানসিকতা কবে জন্ম নিবে? জব বা কাজে অড বলে কিছু নেই।
শুভকামনা সুবিধা বঞ্চিত সংগ্রামী কর্মজীবী সকলকে…
রিমি রুম্মান
অফিসে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে কাজ করা আর শারীরিক শ্রম দিয়ে কাজ এক কথা নয়। বিদেশে আমরাই প্রথম জেনারেশন। তাই আমাদের পরিশ্রম বেশি। আমাদের সন্তানরা এখানে দ্বিতীয় জেনারেশন। এদেশে যাদের জন্ম এবং বেড়ে উঠা। ওরা অদূর ভবিষ্যতে ভাল জব করবে, নিশ্চিত। কেননা, বাংলাদেশীরা এদেশে স্কুল কলেজগুলোতে বর্ণনাতীত ভাল রেজাল্ট করছে।
জিসান শা ইকরাম
মে দিবসকে কত ভাবে লেখা যায়…………
ভাল থাকুক সবাই।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও। মে দিবসের শুভেচ্ছা পুরো মে জুড়ে ।
কৃন্তনিকা
ভাবতাম, প্রবাস জীবন বুঝি অনেক ভালো। লেখাটি পড়ে বুঝলাম, জীবন সব খানেই কঠিন…
আপনার লেখা বরাবরই ভালো লাগে আমার…
রিমি রুম্মান
জীবন সবখানে কঠিন। তবে প্রবাসে কঠিনের পরে সহজ আছে। আঁধারের শেষ প্রান্তে আলো আছে। কষ্টের শেষে সুখ আছে। আমার দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সেটা নেই। তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন হয়না কখনোই। ভাল থাকবেন।
লীলাবতী
যে কোন কাজকেই প্রবাসে গুরুত্ব দেয়া হয়,এটি ভাল্লাগে খুব।মে দিবসে সমস্ত কর্মজীবিরা ভালো থাকুক এই কামনা করি।
রিমি রুম্মান
প্রবাসে ছোট কাজ, বড় কাজ বলে কিছু নেই। সব কাজই সমান মর্যাদার। আমি ম্যানহেটানের রাস্তায় আমেরিকানদের রিক্সা চালাতে দেখি।
স্বপ্ন
খুবই ভালো লিখেছেন আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিদেশ জীবন এমনি পরগাছার মতো।ভাল অনুভূতি।
নীলাঞ্জনা নীলা
দেশে এবং প্রবাসের সবাই ভালো থাকুক।