একজন পুরুষকে আলিঙ্গন করে কয়েক মুহূর্ত থমকে গিয়েছিলো টুইটি। পুরুষটি শ্যামবর্ণ এবং দীর্ঘাঙ্গী। সে কারণে নয়, সেটা কোনো কারণ হতেও পারে না। একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে থমকে গিয়েছিলো সে। কিন্তু কেন? সে প্রশ্নটিই তাকে ভাবনায় ডুবিয়ে রেখেছে গত তিনদিন ধরে। কারণটা সে নিজেই উদ্ধার করতে পারেনি, তবে অনুভব করতে পারছে। ওই পুরুষের আলিঙ্গনের মধ্যে কিছু একটা আছে। একটা এমন কিছু, যা সে অনুভব করতে পারছে কিন্তু সেই অনুভবটা ধরা দিচ্ছে না তার কাছে। ধরা না দেয়ায়, আচমকা সে পুরুষটিকে ছেড়ে দিয়ে, এক ঝটকায় বেরিয়ে এসেছিল মৃদুআলোর সুসজ্জিত ঘরটি থেকে।
কাউকে নিয়ে আগে কখনও এত দীর্ঘসময় ধরে ভাবেনি সে। এখন ভাবছে, শুধু একজনই দখল করে আছে তার পুরো ভাবনার রাজ্য, এটা ভীষণই আশ্চর্যজনক। নির্দিষ্ট কোনো একজনকে এতটা গুরুত্ব দেয়ার মত কারণও খুঁজে পেলো না সে। তিনটে দিন…. পুরো তিনটে দিন সে এক ভাবনাতেই কাটিয়ে দিলো? এই ভাবনার কারণে সময়ও নষ্ট হলো অনেকটা। এই তিনদিনে অন্তত আর একজনের সাথে মোলাকাত হতো। হয়ে যেতো বোঝাপড়া আরও একজন পুরুষের সাথে। ধুর!
নিজের ওপরেই বিরক্ত হলো টুইটি। বিরক্ত হয়ে নিজের বিশাল বেডরুমের বিশাল খাটটায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো একসময়।
মিশমিশে কালো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে দু’টো চোখ। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হলো জ্বলজ্বলে চোখের অধিকারীর মুখমণ্ডল, গলা, তারপর পুরো অবয়ব। দুধসাদা এক শিকারী বেড়াল। আঁধারে চোখে আলো জ্বালিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সে তার শিকার। কিন্তু কোথায়? পাচ্ছে না কেন? একটু আগেই তো গন্ধ পেয়েছিল সে! খুঁজতে থাকে…. খুঁজতেই থাকে সে। হঠাৎই জ্বলতে থাকা চোখের তারা নেচে ওঠে তার। এই তো, খুঁজে পেয়েছে!
আচমকা জেগে ওঠে টুইটি। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে থাকে একটু আগে দেখা দুধসাদা শিকারী বেড়ালটাকে। ওটাকে ধরতে হবে। ধরে শেষ করে দিতে হবে এক্ষুণি। নইলে যে সামনে ভয়াবহ বিপদ। গত তিনদিন ধরে যে ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে একরকম, যে আলিঙ্গনে একটা কিছু অনুভব করে থমকে গিয়েছিল টুইটি, কেন যেন মনে হচ্ছে তার সমাধান সে পেয়ে গেছে। স্বপ্নের বেড়াল আর ওই আলিঙ্গনে অদ্ভুত অনুভূতি হওয়া পুরুষটিকে একই মনে হল। উভয়ই শিকারী। পুরুষটিও বেড়ালের মতোই তার শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছে। খুঁজে পেয়েও গেছে সে। শুধু তাকে ফাঁদে ফেলার অপেক্ষা। কিন্তু টুইটিও তো কম নয়! আলিঙ্গনেই টের পেয়েছে বিপদের উপস্থিতি। আর তার অবচেতন মন তাকে জানিয়ে দিয়েছে তা।
হাহ্, এত সহজ ভেবেছো হে পুরুষ! একে একে শেষ করবো সবকটাকে। আমাকে যেমন একই সাথে ছয়জন পুরুষের ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, তেমনই যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করবো তাদেরকে একে একে। তারপর ধরা দেবো স্বেচ্ছায়। তার একদিন আগেও নয়। যতই প্রেমের ফাঁদ পাতো আর আলিঙ্গনে বিগলিত করার চেষ্টা করো না কেন!
২৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
শেষ অংশ পড়ার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি এটি একটি প্রতিশোধ এর গল্প।
টুইটির ইচ্ছে বাস্তব হোক।
গল্প ভাল লেগেছে।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন।
অনন্য অর্ণব
এ তো মারাত্মক শিকারী। প্রেমের ফাঁদে ফেলে দায় দীর্ঘায়িত করার কৌশল। তবে ছয়জনের বিষয়টা রহস্যময় মনে হলো। একটা পরিপূর্ণ ছোটগল্প।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রেমের ফাঁদে প্রতিশোধ !
গল্পটি ভালই লাগলো।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
ধন্যবাদ দাদা।
ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম প্যারা পড়ে মনে হলো মেয়েটি পুরুষ শিকার করতে এসে ছেলেটার প্রেম পরে গিয়েছিলো। এই জন্যেই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে হয়েছে।
২য় প্যারায় এসে ছেলেটিও শিকারী হয়ে গেলো! তার স্পর্শ, তার আলিঙ্গনে ছিলো শিকারীর চাতুর্যতা।
৩য় প্যারায় মেয়েটি তার সাথে হওয়া প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর। সে মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে প্রতারকদের উপযুক্ত সাজা দিচ্ছে,,,
শিকারীও শিকার হয়ে যায়। ভালো বিষয়ের উপর লিখেছেন। তবে এটা গল্প/ ছোট গল্প হতে পারতো। অণুগল্প হিসেবে বড় হয়ে গেছে।
শুভ কামনা রইলো আপু 🌹🌹
রেহানা বীথি
শব্দসংখ্যা সম্ভবত ৩৯৬- ৯৭ ,
অণুগল্পই বলবো এটাকে আমি।
সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
ভালোবাসা সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ছয়জন পুরুষের ধর্ষণের শিকার মেয়েটি নিজেকে প্রতিবাদী হিসেবে তৈরি করছে এটা ভালো লেগেছে। এমন প্রতিবাদী নারী ঘরে ঘরে তৈরি হোক। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ যেন বেছে না নেয়। ভালো লিখেছেন ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা রইলো
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন আপনিও আপু।
শুভকামনা সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
প্রথমে বুঝতে পারিনি কোথায় নিয়ে যাবেন,
সুন্দর উপস্থাপনে প্রতিশোধের গল্প ভাল হয়েছে।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন।
নৃ মাসুদ রানা
এত সহজ ভেবেছো হে পুরুষ…
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।
ফয়জুল মহী
সুসাহিত্য, পাঠক প্রিয় হোক।♥♥।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
স্বপ্নবিহীন মামুন
গল্পটা কোথা থেকে কোথায় চলে গেল।দারুণ লিখছেন আপু
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।
সুরাইয়া পারভীন
এমন দৃঢ় প্রত্যয় না থাকলে টুইটি প্রতিশোধ নিবে কি করে ।সব কটাকে যন্ত্রণায় যাঁতাকলে পিষ্ট করবে কি করে।
চমৎকার লিখেছেন।
রেহানা বীথি
অনেক ভালোবাসা দিলাম।
তৌহিদ
একনাগাড়ে একমনে পড়ে গেলাম লেখাটি। শেষের প্যারা পড়ে থমকে গিয়েছি! স্বার্থক লেখা বুঝি একেই বলে।
টুইটির সকল ইচ্ছে পূরণ হোক একজন পুরুষ হয়ে এটা আমার একান্ত কাম্য।
দারুণ লেখা আপু।
রেহানা বীথি
অনেক খুশি হলাম ভাই।
ভালো থাকবেন।
দালান জাহান
খুব সুন্দর আত্ম উন্মোচন সচেতন ভাবধারার অনুভূতির প্রকাশ করেছেন।
রেহানা বীথি
দালাল জাহান ভাই, অনেক ধন্যবাদ।
রুমন আশরাফ
অসাধারণ লিখেছেন আপু। শুভ কামনা রইলো।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।