শিকড় – ২

জিসান শা ইকরাম ২৪ আগস্ট ২০১৪, রবিবার, ০৯:২৮:৩৮অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪০ মন্তব্য


বারান্দায় বসে উঠোনের দিকে তাকিয়ে আছে কৈলাস। শক্ত সমর্থ ভাদু শক্ত হাতে কাঠ চিরছে দা দিয়ে। উদোম পিঠ, কাপড় পেঁচিয়ে রাখা শুধু, কানে বেশ ওজনদার ঝুমকা, কানের লতি ছিড়ে যাবার মত অবস্থা, কিন্তু ছিড়ে যাবেনা জানে কৈলাস। গলায় মোটা রুপার হাঁসুলি । এ সংসারের কর্ত্রী ভাদু। কৈলাসের মত সবার বিশ্বাস নারীরা সমস্ত শক্তির উৎস । তাঁরা নিজেরা সন্তান উৎপাদন করে, তাই জমিতে চাষাবাদের পূর্বে তাঁদেরকে পূজা করা হয়। মা মনসার প্রতীক তাঁরা । তাই জঙ্গলের বিষাক্ত সাপের হাত থেকে বাঁচতে বউকেই পূজা করতে হয়। তাঁরা মা দূর্গা হয়ে প্রতিটি সংসারে এসেছে, অসুরকে বদ তো তাঁরাই করেন। লক্ষ্মী, সরস্বতী হয়ে আছে তাঁরা সবার সংসারে । ডাকিনী বিদ্যাও তাঁদের আয়ত্বে শুধু। তাই সবসময় তুষ্ট রাখতেই হয়।

সব কিছু দিয়েই ভাদু আগলে রেখেছে এই সংসার। মাটি থেকে ছয় ফুট উচুতে তাঁদের থাকার ঘর। মোটা গাছের গুড়ির সাথে লম্বা লম্বা আস্ত কাঠের পার, মাটাম দিয়ে মজবুত করে বানানো। বাঁশের পাটাতন। সুপারি গাছ চিরে ঘরের বেড়া, গোলের ছাউনি। উচু ঘরে উঠতে হয় কাঠের সিড়ি বেয়ে। রাতে সে সিড়ি সরিয়ে বারান্দায় রাখা হয়। জন্তু জানোয়ার হাটে বাড়ির নীচে, উঠতে পারেনা। মাঝে মাঝে ভয়ংকর পিলে চমকানো ডাক দিয়ে ওঠে। ভাদু আছে বলে এসব থোরাই কেয়ার করে কৈলাস।

রাতের জন্য রান্না শেষ করেছে ভাদু। উঠোনের মাঝে তুলসী তলায় শুয়ে আছে কুকুরটা। ভাদুর দিকে তাঁর নজর। বাঁধা চারটে বোন মোরগের একটি ধরলো ভাদু। এক হাতের ছুঁড়ির এক কোপে মাথা আলাদা, দৌড়ে ঘরের পশ্চিম দিকে মোরগের বিচ্ছিন্ন গলা থেকে বের হওয়া রক্ত ছিটিয়ে দিলো। একে একে সব কটা মোরগের পরিণতি এক হলো, বাড়ির চতুর্দিকে রক্তের একটি সীমানা দিয়ে দিলো ভাদু। কুকুরটা উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গিয়েছে। অপেক্ষা করছে ভাদুর পরবর্তী আচরনের দিকে। রান্না বান্না সব ধীরে ধীরে ঘরের  মধ্যে নিলো। শেষ মাটির পাতিলটা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে ঘরের বারান্দায়, কুকুরটাও তাঁর পিছে পিছে বারান্দায় এসে বসলো। কাঠের সিড়ি উঠিয়ে কুকুরকে কিছু খাবার দিয়ে মাথায় হাত বুলালো। আদর নিলো কুকুর চোখ বন্ধ করে। ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।

কুপির মিটিমিটি আলোতে ভাদুকে অদ্ভুত লাগছে। রাতে খাবার সাজিয়ে কৈলাসকে ডাক দিলো ভাদু। ভাত নেই আজ। হাতে ভাংগা আটার মোটা মোটা রুটি আর নিরামিষ । দ্রুত খেয়ে নে কৈলাস । আজ বছরের সবচেয়ে কালো রাত। অমাবশ্যা । রক্তের বাধ দিয়ে দিয়েছি, ভয় নেই।

বাঁশের উচু খাটে শুয়ে আছে ভাদু কৈলাস । কমানো কুপির মৃদু আলোয় ভাদুর চোখ চকচক করছে। কিছুটা ভীত। ‘ কৈলাস জড়িয়ে রাখ আমাকে। ভয়ের কিছু নেই, আমি আছি না !’ দুজনে দুজনকে জড়িয়ে, তারপরেও অজানা আশংকায় কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে পরে।
=========
এই ভাদু এবং কৈলাসরাই আমাদের পূর্ব পুরুষ। বাঙ্গালীর বিশুদ্ধ রক্তের উৎস। এরপর কেটে গিয়েছে কয়েকশত বছর। আমরা এদের গর্বিত উত্তরাধিকার।

ফিরে যাই শিকড়ের কাছে – সেই হাজার বছর আগের আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে

 

৪৬৮জন ৪৬৮জন
0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ