শকুনির মত তাকিয়ে আছে মিতি সাব্বিরের হাতের চাবির দিকে । ক্রুর চোখে দুই লহমা তাকিয়ে থেকে হা হা করে হেসে ওঠে ।
– চাবি দিয়ে আর কতদিন মৃত্যু ঠেকাবে হ্যা? একদিন তোমার ভুল হবেই।
অসহায় চোখে মিতির দিকে তাকায় সাব্বির। রোগে ভুগে ভুগে মেয়েটার মাথাটা সত্যিই বিগড়েছে। গত সাত মাসে চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। দুইবারই উল্টাপাল্টা রাজ্যের অষুধ খেয়ে। হাতের কাছে যত রকমের অষুধ পেয়েছে সবগুলো খেয়ে নিয়েছিল। প্রথমবার সাব্বির ভেবেছিল মিতি বোধ হয় ঘুমের অষুধ চিনতে না পেরে সব ধরনের অষুধই খেয়ে নিয়েছিল। পরের বারে সাব্বিরের সে ভুল ভেঙ্গেছে।
না, ভুলে নয়। মিতি ইচ্ছে করেই অমনটা করেছে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় নেই এমন শরীরে অতোগুলো অদরকারী অষুধ ভালোই কাজ করে। পাঁচ পদের ড্রাগ রিয়েকশনে মৃত্যুর মূল ফটকে প্রায় পৌছেই গিয়েছিল মিতি গেলবার। একবার হাতের রগ কেটে মরার চেষ্টা করেছিল। দূর্বল হাতে ঠিক মত নেইলকার্টারের ছুরিটা ঘষে ওঠার আগেই ঝি মেয়েটা দেখে ফেলেছিল ভাঁজ করা শুকনো কাপড় গুলো মিতির ঘরে রাখতে এসে। তাতেই রক্ষা হয়েছিল সেবার। আরেকবার সিলিং এর সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নিতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। কাজের মধ্যে মাথা ফাঁটাই সার। তিনটা স্টিচ দিতে হয়েছিল।
প্রতিবার এই সব পাগলামি করে মিতি আর সব ধরনের যন্ত্রনা পোহাতে হয় সাব্বিরকে। ডাক্তার পুলিশ আত্মীয় স্বজন সবাই মিতির এই সব কান্ডের পেছনে সাব্বিরকেই যে দায়ি করে পরোক্ষে এটা সাব্বির বেশ ভালোই বোঝে। শুধু বোঝেনা তার দোষটা কোথায়? হ্যা, অসহায় সাব্বির অনেক চেষ্টা করেও, হাজার ডাক্তার দেখিয়েও মিতিকে সুস্থ্য করতে পারেনি এটাই বোধ হয় সাব্বিরের দোষ ।
মিতির এই সব পাগলামির ভয়ে সাব্বির এখন সব অষুধ তালা বন্দি করেছে। ধারালো জিনিস পত্র মিতির নাগালের যত দূরে রাখা যায় তাইই রাখে। ফ্যান খুলিয়ে ফেলেছে সিলিং থেকে। গরমকালে হালকা ঠান্ডা দিয়ে এসি অন করে রাখে সারাক্ষন । হাজার দুশ্চিন্তায় সাব্বিরের প্রেশারের রোগ হয়ে গেছে। মিতির টেনশনে কায় কারবারও প্রায় লাটে উঠছে। সাব্বিরের নিজেরই এখন পাগলপ্রায় অবস্থা। তাও ভালো একমাত্র ছেলেটাকে পড়ার জন্য দুবছর আগেই মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে। নইলে এই সবে ছেলেটাও…
চোখ জ্বলে ওঠে সাব্বিরের । দুই হাতের ছয় আঙ্গুলে কপালের দুই পাশের রগ চেপে ধরে চোখ বন্ধ করতেই মিতি ডাকে।
– এ্যাই? এ্যাই?
– হুম।
– পানি খাবো।
ক্লান্ত পায়ে প্রায় দুলতে দুলতে উঠে গ্লাসে পানি ঢালে সাব্বির।
– আমার জন্য তোমার অনেক যন্ত্রনা তাই না?’ করুন গলায় কথাটা বলে কাতর চোখে তাকায় মিতি।
কিছু বলে না সাব্বির। আন্তরিক মমতায় পানির গ্লাস এগিয়ে ধরে মিতির মুখের সামনে ।
টপ টপ করে চোখ দিয়ে জল ফেলতে ফেলতে দুই ঢোক পানি খেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় মিতি। শান্ত মুখে গ্লাসটা রেখে মিতিকে ধরে শুইয়ে দেয় সাব্বির।
বাইরে সকালের আলো ফুটছে। পাখিদের কিচির মিচির শুরু হয়েছে। মিতির খুব সূর্য দেখতে ইচ্ছে করে হঠাৎ।
পাখিগুলোকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে । এক দৌঁড়ে ছুটে গিয়ে মাঠটার সবুজ ঘাসের উপরে লেগে থাকা শিশিরে পা ভেজাতে ইচ্ছে করে। ‘আচ্ছা এখন কি কাল? শরৎ না? শিউলি ফুটেছে নিশ্চই নিচের বাগানে?’
পাশ ফিরে দেখে সাব্বির শুয়েছে। চোখ বন্ধ। অনেক চেষ্টা করে মিতি নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ায়। দুই কদমে জানালার কাছে গিয়ে থাই গ্লাসের লক সরিয়ে অল্প একটু ফাঁক করতেই হুড়মুড় করে এক রাশ সুঘ্রাণ ছুটে আসে।
‘হ্যা, শিউলি! শিউলিই!! ফুটেছে তাহলে!
মিতির গাল বেয়ে গরম জল গড়িয়ে পড়তে থাকে । শক্ত মুঠোয় জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুর্য ওঠা দেখে মিতি ।
চোখের সামনে ধীরে ধীরে প্রকৃতির সোনালী বর্ণ ধারন করা দেখতে দেখতে মন ভালো হয়ে যায় মিতির।
ঠোটের কোনে চিলতে হাসি নিয়ে সাব্বিরের দিকে তাকায় । তার ধরে রাখা পর্দাটার ফাঁক গলে এক চিলতে আলো সাব্বিরের মুখের পরে পড়েছে আঁড়াআঁড়ি।
কী সুন্দর লাগছে সাব্বিরকে!! সোনালী প্রকৃতিটার মত লাগছে!!
১৮টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
পড়লাম মন দিয়ে ,
কিন্তু কী বলতে চাইলেন বা বললেন বুঝিনি ।
আপনি কিন্তু মন্তব্যের উত্তর দেন না ।
বন্দনা কবীর
না বুঝার মতন কঠিন কিছু তো দেইনি!! শীরোনামেই তো আছে মূল বক্তব্য!!
প্রতিদিন যে মরতে চায়, একসময় সেও টের পায় ”জীবনটাই আসলে সুন্দর, মৃত্যু কখনোই নয়” 🙂
ক্ষমা করবেন, আধরাতে লেখা পোস্ট করে এই একটু আগে নেটে ঢুকেছি। এখন থেকে চেষ্টা করবো মন্তব্যের জবাব দিতে।
তাও রাগ করবেন্না প্লজ 🙁 -{@
জিসান শা ইকরাম
শুধু বেঁচে থাকাটাই অনেক সুন্দর
মিতিদের মন ভালো থাকুক সব সময়
ভালোবাসায় ডুবে থাকুক , কাছের মানুষটিকে আলোকিত করুক ।
বন্দনা কবীর
এই তো ভাইয়া কি সুন্দর লক্ষ্ণী ছেলের মতন বুঝে গেছো 😀
খসড়া
ছোটগল্প কিন্তু অনেক প্রশ্ন রেখে গেল। সব মিলে ভাল লাগার চেয়ে তৃষ্ণাই বেশি।
বন্দনা কবীর
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়বার জন্য। -{@
মিসু
এতো আমার কথা লিখলেন আপু । আপনি কিভাবে জানলেন ? এক ভিন্ন রকম ঘোড় লাগা গল্প।
বন্দনা কবীর
কি করে জানলাম??
হু হু… এটা তো অতি গোপন রহস্য। এ ভেদ করে দিলে ফের আপনার মনের মধ্যে গিয়ে ঢুকবো কি করে?
বুঝে ফেল্লেই তো আপনি দরজা বন্ধ করে দেবেন।
অনেক ভালো থাকুন (3
কৃন্তনিকা
ওপেন-এন্ডেড স্টোরি… অন্যরকম… (y)
বন্দনা কবীর
অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য।
ভালো থাকুন -{@
ছাইরাছ হেলাল
এত কষ্ট কষ্ট গল্পের দরকারটা কিসের ?
আনন্দ নিয়ে আনন্দময় লেখা চাই এবং মন্তব্যের উত্তর ও চাই ।
বন্দনা কবীর
অন্ধকার না থাকলে কি আলোর এতো ঠাঁট থাকতো??
কষ্ট আছে বলেই না আনন্দ এতো আনন্দ 🙂
সর্যি, সব সময় ব্লগে ঢোকা হয় না। নইলে মন্তব্যের জবাব দিতে ভালই লাগে।
ফাহিমা কানিজ লাভা
মন্তব্য করব না, আপু দেখে ফেলবে।
বন্দনা কবীর
তুমি আরাম করে মন্তব্য করো লাভা লাভ। এই আমি চোখ বন্ধ রাখলুম 😀
প্রজন্ম ৭১
গল্পটি আগেই পরেছি । কিন্তু মন্তব্য করিনি । আসলে বুঝতে পারছিলাম না শেষ টুকু । একবার ভেবেছি – মিতি কি জানালা খুলে ঝাপ দিল ? কিন্তু এটি সম্ভব না , কারন জানালায় ত গ্রিল আছে। ঝাপ দিলে তো দরজা খুলতো :p
আপনি আবার লেখায় ফিরেছেন দেখে ভালো লাগছে । না লিখে আমাদের এত সুন্দর লেখা থেকে বঞ্চিত করা উচিৎ না । -{@ (y)
বন্দনা কবীর
আসলে আপনি খুব একটা ভুলও ভাবেন্নি। মিতি জানালাটা খুলে ঝাপই দিয়েছে বটে-
তবে তা জীবন সমুদ্রের দিকে \|/ :p
আর ফেরা… আমি তো কখনোই কোথাও যাইনা যে ফেরবো। ডুব মেরে থাকি, থেকে থেকে ভুস দেই, এই আর কি :p
ব্লগার সজীব
এভাবেই যেন সবাই ফিরে আসে জীবনের দিকে । এমন গল্প ভালো লাগে । বিচ্ছেদের নয় । -{@ (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যাপি এন্ডিং বড় ভালো লাগে -{@ (y)