লাইফ ইজ বিউটিফুল

বন্দনা কবীর ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বুধবার, ০৮:৫১:৪৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

কাল রাতে ল্যাপি অফ করবার আগে আগে নিউজ ফিডে একটি ছদ্মনামের আইডির পোস্ট সামনে এলো। ভালোবাসার ক্রাইসিসে সম্ভবতঃ আর প্রেশার নিতে পারছেনা বিধায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার সুইসাইডাল নোট টাইপের কিছু লিখেছে। চমকে উঠে নিচের কিছু কমেন্ট পড়লাম। বেশিরভাগই হাসাহাসি ঠাট্টা বিদ্রুপ করছে। মেয়েটার ব্যাক্তিগত কজন বন্ধু/কাছের কিছু বন্ধু খুব চিন্তিত দেখলাম। তারা মেয়েটিকে পাগলামি না করতে অনুরোধ করছে। মেয়েটি সম্ভবতঃ এই চেষ্টা আগেও একবার করেছে। তার প্রোফাইল ঘেঁটে যা বুঝলাম, প্রচন্ড ইমোশোনাল বাচ্চা একটা মেয়ে। ১৫ থেকে ১৯-২১ এর মধ্যে হবে হয়তো বয়স বড় জোর।

রাত তখন কত? এক দেড়টা বাজে মনে হয়। কিছু বলবোনা বলবোনা করেও বেশ বড় একটা কমেন্ট লিখলাম। লেখার সময় সারা শরীর থর থর করে কাঁপছিলো। মাত্র ক’দিন আগেই এরকম এক মেয়ে ফেসবুকে নোট রেখে মরে গেলো। ওইদিনও বেশিরভাগ মানুষই সেটাকে এটেনশন সিকার বলে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল।
কমেন্ট লিখে এন্টারে চাপ দিয়ে দেখি যায়না। ট্রাই এগেইন… আবার ট্রাই করলাম, আবার আবার, মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকায় খেয়ালই করিনি নেট কানেকশন নেই যে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম নেট আসার। নাহ্‌।

সারারাত ঘুম হলোনা এক ফোঁটাও। সকালে ফেসবুক ওপেন করে সবার আগে ঐ মেয়ের আইডিতে গেলাম।
হুম্মম… ঘটনা ঘটেছে বটে, তবে এ যাত্রা বেঁচে গেছে মেয়েটা। তার এক বন্ধু আপডেট দিয়েছে তার ওয়ালে। গাদিকখানিক ঘুমের অষুধ খেয়েছিল। আউট অফ ডেঞ্জার, এখন হস্পিটালে।

পয়েন্ট ১
এতোগুলো ঘুমের অষুধ মেয়েটা পেলো কি করে? অষুধের দোকানে গিয়ে যে কেউ এক পাতা ঘুমের বড়ি চাইলেই দিয়ে দেওয়া হয় প্রেসক্রিপশনের বালাই ছাড়াই। শুধুমাত্র এই ঘুমের বড়ির সহজপ্রাপ্যতার কারনেই ‘আত্মহত্যার প্রথম এবং প্রধান’ উপকরন এই ঘুমের বড়ি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রাথমিক চেষ্টা করা হয় এই ঘুমের অষুধ খেয়েই। ওভার ডোজ স্লিপিং পিল এ অনেকের হয়তো তেমন ক্ষতি হয়না, যাদের নার্ভ অনেক স্ট্রং তারা ওয়াশ টোয়াশ ছাড়াই চারদিন ঘুমিয়ে উঠে পড়েন। কিন্তু যাদের নার্ভ সেন্সেটিভ তাদের কিন্তু ক্ষতি হয়ে যায় প্রচুর, যদি বেঁচেও যায় তো। প্রশ্ন হচ্ছে, অষুধের দোকানগুলোতে এই জিনিস দেদারসে বিক্রি হওয়া ঠেকানো কি খুব বেশি কষ্টকর?!

পয়েন্ট ২
অল্প বয়সি ছেলেমেয়েরা যখন এই ধরনের স্বিদ্ধান্ত নেয় সাধারনতঃ হুট করে নেয়না। তারা এই বিষয়ে কদিন খুব করে ভাবে। না, অবশ্যই পজেটিভ ওয়েতে নয়। কি কি করে কম কষ্টে মরা যায় বা নিজেকে খুব বেশি যন্ত্রনা দিয়ে মরাটা কোন ওয়েতে সহজ এরকম ভাবনাতেই বুদ থাকে। সারা জীওনের একটি সুখের স্মৃতি তার মনে আসেনা। মাথার মধ্যে কেবল না পাওয়ার স্মৃতগুলোই ঘুরতে থাকে। অভিমান ক্রোধ ক্ষোভ জমতে থাকে। সেই সময়টায় ছেলে-মেয়েগুলোর আচরনে স্পষ্ট পরিবর্তন আসে। কথা বার্তায় হাটাচলায় এমনকি চাহনিতেও। বাচ্চাগুলোর পরিবার তখন কি করে?! বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে সারাদিনে একবারের জন্য পরিপূর্ণ চোখে তাকানোর সময় কি হয়না পরিবারের কারোর?! পিতা মাতা ভাই বোন… তারা কি একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করে, তুই কেমন আছিস? বা কি হয়েছে তোর?
ছেলে অথবা মেয়ে তার রুমে দরজা বন্ধ করে একা একা কি করছে সেই খবর আজকালকার অধিকাংশ পেরেন্টসই জানেননা। একটু বড় হয়ে ওঠা সন্তানকে প্রাইভেসি দিতে হয় এই আধুনিক চিন্তায় সন্তান থেকে সরে যান যোজন দূরত্বে। আর এই ফাঁকে সন্তান জড়িয়ে পড়ে নানান ধরনের মানসিক ব্যাধির নাগপাশে। জড়িয়ে পড়ে ক্রাইমেও। আসক্ত হয় ড্রাগে। নয়তো হতাশায় নিজেকেই শেষ করে দেয় নিজের ঘরে বসেই। অভিভাবকেরা কি এই বোকা অভিমানি বাচ্চাগুলোর দিকে আরো একটু মনযোগ দেবেন?

পয়েন্ট ৩
ভালোবাসা/প্রেমের জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস শতাব্দী পুরোনো। কাউকে ভালো লাগতেই পারে। কারোর সাথে মেন্টাল এটাচমেন্টও থাকতে পারে। কিন্তু তার সাথে বনিবনা না হলে বা ব্রেকাপ হলে বা তাকে না পেলে বা যে তাকে ভালোবাসেনা তার জন্য নিজের জীবনটাই ধ্বংশ করে দিতে হবে?! একবারও তাদের কথা ভাববে না যারা তাকে ভালোবাসে! আত্মহত্যা কোন সল্যুশন নয় এটা কত কোটিবার যে উচ্চারণ হয় এই সময়ে! তাও মাথামোটা ছেলেমেয়েগুলোর মাথায় কথাটা ঢোকেনা কেন?!
নিজের জীবন নিজেরই। নিজের যা ভালো লাগে তাইই করো। যাকে ভালো লাগে তারও তোমাকে ভালো লাগতে হবে এমন কোনই কথা নয়। আর না লাগলেই ‘মরে গেলাম’ বলে টুপ করে ঘুমের অষুধ খেয়ে ফেলতে হবে?!
কেন মনে রাখোনা জীবন একটাই। এটা একবার চলে গেলে আর ফিরবেনা। কিন্তু বেঁচে থাকলে ভালোবাসার জন্য হাজার জনকে পাওয়া যাবে চাইলেই/খুঁজলেই।
________
বাচ্চারা, আর যাই-ই করো, সবার আগে নিজেকে ভালোবাসতে শেখো। সামান্য অপরগতায় বা ব্যর্থতায় বা জেদের বশে নিজেকে শেষ করে নিজের সুন্দর জীবনটাই কেবল নষ্ট করবেনা, তোমার গোটা পরিবারকেই ঠেলে দেবে অনন্ত অন্ধকারে। সো, আর কার কারুর জন্য না হলেও নিজের জন্য বাঁচো। প্রাণভরে বাঁচো।
কারন, লাইফ ইজ রিয়েলি বিউটিফুল।

প্রিয় সোনেলা ব্লগের আজ তৃতীয় বর্ষের পদার্পনের প্রথম দিন। একটি সময়ে অন্য এক ব্লগে লিখতাম খুব, নেশার মত হয়ে গেলেও পরবর্তিতে ব্লগিং একেবারেই বাদ দিয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, আর ব্লগিং নয়। সোনেলা ব্লগ আমার সে সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে দেয়নি। আমার এই পোষ্ট সোনেলার সমস্ত সোনালী স্বজনকে উতসর্গ করলাম।

৭৪৯জন ৭৪৩জন
0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ