লন্ডনের বৃদ্ধাশ্রম ও একটি দুর্ঘটনা —
একটু আগে খুবই মহৎ একটি কাজ করতে পেরে গর্ব বোধ করছি !! আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক বিষয়ই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি; তাই আজকের দুর্ঘটনার বিষয়টিও শেয়ার করতে চাচ্ছি !!
এখন মূল ঘটনায় আসি ; প্রায় ঘন্টা দুয়েক আগের ঘটনা !! আমার বাসায় ঠিক কাছেই একটি বৃদ্ধাশ্রম, বিলেতে একে নার্সিং হোম বলে !! আমার বাড়িটি দোতলা ডুপ্লেক্স হাউজ !! নিচ তলায় বসার ঘর, খাবার ঘর ও রান্না ঘর সহ তিনটা রুম !! আর উপরের তলায় বসবাসের তিনটা বড় বেড রুম !! ঘুম থেকে উঠেই আমার দোতলার বেড রুম থেকে আমি আগে দখিনের জানালা দিয়ে আকাশ দেখি !! এটা একটু অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে !! প্রায় দিন লক্ষ্য করি ইংলিশ একজন বৃদ্ধ লোক তার বৃদ্ধ স্ত্রী কে নিয়ে হুইল চেয়ারে পিছন দিক থেকে টেনে টেনে ফ্রেশ আলো বাতাস উপভোগ করেন !!
সপ্তাহ দুয়েক পর পর উনাকে দেখা যায় !! গত সামারে অনেক্ষণ কথাও হয়েছিল আমার সাথে !! বেচারা রিটায়ার্ড কিন্তু স্ত্রী প্যারালাইস ; দুজনের বয়স আশির উপরে !! তাই স্ত্রী কে দিয়ে দিয়েছেন প্রাইভেট বৃদ্ধাশ্রমে !! এখানে একটা জিনিস বলে রাখি বন্ধুরা ; ইংলান্ডে ধনী লোকেরা বয়স বেশি হয়ে গেলে তাদের বাবা কিংবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দেন ভাল জীবন যাপনের জন্য !!
এখানে বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকে ; ভাল খাবার দাবার দেওয়া হয় !! আর বছরে বিভিন্ন অকেশনে তাদের ছেলে মেয়েরা এসে দেখে যান !! অর্থাৎ মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাদের এখানেই থাকতে হয় !! শুনে কষ্ট লাগলেও এটাই এখানকার বাস্তবতা !!
যাই হোক ঘড়িতে তখন তিন টা বাজে !! আমি আমার বেড রুম থেকে আমার বিশাল দখিনের জানালা দিয়ে কেন জানি তাকিয়ে আছি !!
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ঐ ইংলিশ ভদ্রলোক !! তার বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝে হুইল চেয়ারে করে পিছন থেকে ফ্রেশ আলো বাতাস উপভোগ করছিলেন !! আমার বাসার সামনে খুব সুন্দর খোলামেলা জায়গা আছে !!
দেখতে দেখতেই উচু নিচু পাকা রাস্তার মধ্যে হুইল চেয়ার টি উল্টে গেল ; আমি আমার বাসার দোতলা থেকে পাগলের মত দৌড় দিয়ে আসলাম !! তখন ভুলেই গেছিলাম ; আমার পায়ে জুতাও ছিল না !! আজকের তাপমাত্রা ম্যানচেস্টারে ৩ডিগ্রী !! আমি প্রাণ পণ চেষ্টা করছি !! বিশাল দেহের এই দুজন বৃদ্ধকে পাকা রাস্তা থেকে টেনে তুলতে !! মাত্র কয়েক মিনিট সময় খালি পা ,ঠান্ডায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম !!
অনেক কষ্ট করে উনাদের পাকা রাস্তা থেকে উপরে তুললাম !!লক্ষ্য করলাম প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে ; দুজনের শরীল থেকে !! আমার সারা শরী্রে ওনাদের রক্ত !! কি করব ; কি ভাবে লোক গুলোকে বাঁচাব ভেবেই পাচ্ছিলাম না !! মোবাইল বের করে ৯৯৯ এ ফোন দিলাম এম্বুলেন্সের জন্য !! দুই মিনিটের মধ্যে পুলিশ চলে আসে !! বিশাল দেহের দুজন পুলিশ ; একজন পুরুষ আর আরেক জন মহিলা !! আর তখনই ঐ পুলিশদের সহযোগিতায় ঐ দুজনকে নিয়ে যাই তাদের নার্সিং হোমে!!
বিলেতের পুলিশ অনেক উপকারী বন্ধু ও বিনয়ী !! পুলিশ আমাকে অনেক ধন্যবাদ দিল !! পুলিশ যখন নার্সিং হোমের মা্নেজ্যারের কে বার বার বলছিল ঐ ভদ্রলোক যদি না থাকত তবে মনে হয়,এই বৃদ্ধ লোক গুলো মারা যেত ; তখন মনে মনে ভাবছিলাম ; মনে হয় আজ একটি মহৎ কাজ করতে পড়লাম !!
ধন্যবাদ
আলমগীর হোসাইন
ম্যান চেষ্টার , ইংল্যান্ড ।
৭টি মন্তব্য
রিমি রুম্মান
ধন্যবাদ আপনাকে। মানুষ মানুষের জন্যে।
স্বপ্ন নীলা
মানুষ মানুষের জন্য——
জিসান শা ইকরাম
আপনি এমন না করলে হয়ত তারা আর বাঁচতেন না।
শ্রদ্ধা আপনার প্রতি।
মরুভূমির জলদস্যু
দূঘটনা কখনোই কাম্য নয়, তবে এমন সুযোগ সব সময় পাওয়া যায় না, তাচেয়েও বড় কথা এমন সুযোগ সামনে এলেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি না। আপনাকে সেলুট।
মেহেরী তাজ
ভাইয়া আপনি ছিলেন ওখানে,নাহলে চরম একটা দুর্ঘটনা হতে পারতো।
ছারপোকা
আপনার কারনেই হয়ত দুটি প্রান বেঁচে গেছে ।মানুষ মানুষের জন্যে গানটি মনে পড়ে গেলো ।
ভাল থাকবেন ।
আলমগীর হোসাইন
আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ অনেক সুন্দর মন্তব্য জন্য …। -{@