জোৎস্নার লুকোচুরিতে ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোর পাটাতনে নিজেদের প্রেম বিলাসে মত্ত একজোড়া কপোত কপোতীর বুভুক্ষু নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যাই আমি ত্রস্তপায়ে। ঠাস করে একটি আওয়াজ ওঠে! নিউটনের তৃতীয় সূত্র মনে পড়ে গেলো। বুঝলাম এটি তৃতীয়পক্ষের উপস্থিতিতে প্রথমপক্ষের তীব্র আবেগের বিপরীত প্রতিক্রিয়া মাত্র।
মৃদুমধুর হাসিতে গাল ফুলে উঠে আমার! একাকীত্বের দহনজ্বালা কি এবার বুঝবে তারা! ক্ষান্ত দিয়ে পা বাড়াতেই নিস্তব্ধতা ভেদ করে কানে আসে ঘেউ ঘেউ ডাক। এদেশে বিলেতি কুকুর এখন বেশ জনপ্রিয়। কে জানে চুরি করতে গিয়ে কার কপাল পুড়লো! ডোবারম্যান পিনশারের লকলকে জিহ্বাকে অগ্রাহ্য করে এমন একজন কাফ্রিও আজ পর্যন্ত জন্মায়নি। মরুর বেদুঈন সেও যে বড্ড অসহায়!
মেঘের চাদর ভেদ করে কালো পিচের রাস্তায় মরীচিকা হয়ে নেমে এসেছে রুপালী চাঁদের আলো। ঘুমন্ত কাঁঠালচাপা আর বেগুনী জারুল মিলেমিশে একাকার। না হলে হাতের লাল গোলাপের পাপড়িতে এত মেরুনের সমাহার কেন! ভাগ্যিস গন্ধেই বর্ণ চেনা যায়। আমি চিরকাল শ্যামের পুজারী। গভীর কালো জলে ভাসমান শুভ্র অ্যামাজনীয়া পদ্মের অর্চনা যে ঋষি করতে জানেনা তাকে সিদ্ধ পুরুষ বলতে রুচিতে বাধে।
হঠাৎ! রেশমি চুরির মৃদু রিনঝিন শব্দ সেতারার ধ্বনি হয়ে কানে বাজে। রেইনট্রির আড়াল থেকে উঁকি দেয় ম্যানগ্রোভ হরিণীর পটলচেরা চোখ! কোথায় দেখেছি আমি এই মুখ! যেন হেলেন এসেছে ট্রয়ের পরে আমাকে পোড়াতে! আমায় সাথে নেবে গো আজ রাত্রিতে? মেশক অম্বরের সুবাসিত লহরে জোৎস্নাস্মাত রাতে এই অবগাহন আহ্বানকে পদদলিত করবে এমন শক্তি ইশ্বর কাউকেই দেননি।
নির্বাক আমি হাত বাড়িয়ে মেরুন গোলাপটি তার হাতে দিলাম। পেলব স্পর্শকাতরতায় নিমিষেই খানখান হয়ে ভেঙ্গে পড়ে নিজের সিদ্ধিপ্রাপ্ত সব অসারতা। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে আমার। নিউরনের অনুরণনে আন্দোলিত হয় দ্যা লাস্ট অফ দ্যা মোহিকানের উদাস করা সুর।
লাস্যময়ী উর্বশীর মায়াবী সেই মুখের হাতছানিতে অবিরত রুপান্তর ঘটছে নিজের নিয়তির। সিদ্ধ হতে অশুরে আবার অশুর হতে সিদ্ধ পুরুষে। আজ রুপালি জোৎস্নার মেরুন গোলাপটির হাতে সঁপে দিয়েছি আমি আমার নিয়তিকে।
——————-
* দ্যা লাস্ট অফ দ্যা মোহিকান- মোহিকান সম্প্রদায়ের একজন মানুষের বেঁচে থাকার করুণ আকুতি নিয়ে নির্মিত বিখ্যাত একটি সিনেমা। সেখানে ব্যবহৃত অসাধারণ টাইটেল মিউজিকটি দেহ-মনে প্রশান্তি আনে।
৩২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
লেখার শব্দ চয়নে মুগ্ধ হলাম ভাই।
লেখার রেটিং দশে আট,
চমৎকার শিরোনামে দশে দুই।
মোট দশে দশ।
এমন লেখা আপনাকেই মানায়।
মুভিটি দেখতে হবে।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
উৎসাহ পেলাম ভাইজান। আপনার মত গুনী লেখক এবং পাঠকের ভালোলাগার অনুভূতি জেনে লেখাটি স্বার্থক বলে মনে হচ্ছে। মুভিটি দেখবেন সময় করে। ভালো লাগবে আশাকরি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
মুভিটি দেখবো আশাকরি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া আপনি তো কবি না মহাকবি। আপনার দ্বারাই সম্ভব এমন কাব্যময় লেখা। লেখাটি প্রিয়তে নিলাম। আপনি হলেন অলরাউন্ডার। যা-ই লিখেন তাতেই মুগ্ধ হই। ভালো থাকুন, শুভ কামনা
তৌহিদ
আরে নাহ! এসব কবি মহাকবি কিচ্ছুনা আসলে। মনের খেয়ালে লিখি। তবে প্রিয়তে নেবার মত এত ভালো লেখা কিনা জানিনা। পাঠকের মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রেখে গেলাম দিদিভাই।
শুভকামনা সবসময়।
শবনম মোস্তারী
অসাধারণ। শব্দ চয়নে অভিভূত।
একরাশ মুগ্ধতা…
তৌহিদ
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয়! ভালোলেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। শুভকামনা সবসময়। মন্তব্যে লেখার উৎসাহ বেড়ে গেলো।
ছাইরাছ হেলাল
এতটা স্তুতির আসল কারণ চট করে বলেই ফেলুন,
লুকিয়ে আর কী হবে!
তৌহিদ
তেমন কিছুইনা ভাইজান, গতকাল গভীর রাতে জানালা খুলেই দেখি চাঁদের আলোয় বিছানায় এসে পড়ছে। এ এক অদ্ভুত সৌন্দর্য! হোমিকানের সুরটি মোবাইলে চালিয়ে সে সৌন্দর্য দেখছিলাম আর লেখাটি লিখছিলাম।
আবেগী মনের খেয়াল আর কি! ভালো থাকুন ভাইয়া।
হালিম নজরুল
চমৎকার শব্দচয়ন, অসাধারণ শৈল্পিক বিন্যাসে সাজানো লেখায় মুগ্ধ হলাম।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম।
সুপায়ন বড়ুয়া
মনে হচ্ছিল কবিতা পড়ছি
মনে প্রশান্তি নিয়ে কাব্যিক ঢং য়ে
যা লিখলেন। খুব ভাল লাগলো মাইরি বলছি।
শুভ কামনা
তৌহিদ
দাদা, আপনার মত পাঠকের মন্তব্য পেয়ে লেখাটি স্বার্থক বলে মনে হচ্ছে। উৎসাহ পেলাম ভাই।
শুভকামনা সবসময়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দারুণ লিখেছেন ভাইয়া।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। মন্তব্য করেছেন দেখে ভালো লাগলো। শুভকামনা জানবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
এমন নান্দনিক লেখায় মুগ্ধ দাদা।
একজন লেখকের আসল কারিগরিতা হচ্ছে শব্দের ব্যাবহার। খুবি ভালো লাগলো।
এমন লেখা আরও চাই দাদা।
তৌহিদ
আপনার মত একনিষ্ঠ পাঠকের মন্তব্য সবসময়েই ভালো লাগা তৈরি করে দাদা। ভালো থাকুন সবসময়।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা । লেখা ভালো লেগেছে।
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
বন্যা লিপি
প্রতিটা শব্দে আমি দৃশ্যত অনুভব করলাম যেন রাতের গভীরতা। আহ্…এক কথায় অসাধারন অনুভূতি।
গভীর রাতের জেগে থাকা চাঁদের আলো যখন খেলে যায় ঘরের মেঝেতে, জানলার গ্রীল ভেদ করে বিছানার শিয়রে। আর কানে বাজতে থাকে প্রিয় কোনো সুর! ব্যাস্ হয়ে গেলো এমন অসাধারন সৃষ্টি। গ্রেট আপনি।
তৌহিদ
আসলে কিছু রাত্রি যেন নেমে আসে অনাবিল ভালোলাগা নিয়ে। মোহময় সেসব রাত্রিতে মনে খেলাকরে নানাবিধ স্বপ্নের লাল নীল আলো। আমিও স্বপ্ন বুনি তখন। আর আপবার মত একনিষ্ঠ পাঠকের শাব্দিক মূর্ছনায় নিজে উৎসাহিত হই।
মন্তব্যে ভালোলাগা রইলো আপু। শুভকামনা সবসময়।
আরজু মুক্তা
কাব্য সৃষ্টি হয় যখন অনুভুতির তীব্রতা বেশি থাকে। আপনার মিউজিক আর মস্তিষ্কের নিউরনের আবেগে চমৎকার ভাবে সৃষ্টি হলো কাব্যিক উপাখ্যান। আর আমরাও অভিভূত।
অসাধারণ।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু। মন্তব্যে অনেক ভাললাগা রইলো।
মাহবুবুল আলম
দারুন লেগেছে তৌহিদ ভাই। মনে হলো চাঁদনি রাতে
আপনার সাথে আমি সেই দৃশ্যটি উপভোগ করছি।
শুভেচ্ছা জানাবেন।
ভাল থাকবেন!
তৌহিদ
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। মন্তব্যে উৎসাহ পেলাম। শুভকামনা সবসময়।
ইঞ্জা
চমৎকার এক লেখা দিলেন ভাই, পড়ে মনে প্রশান্তি এলো বলেই ধন্যবাদ।
তৌহিদ
অনেক ধন্যবাদ দাদা। মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। শুভকামনা জানবেন সবসময়।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
শামীম চৌধুরী
দারুন লিখেছো ভাইটি আমার। জোস্নার আলোতেই প্রেমিকার সাথে প্রেমালাপের মধুরতা সেই বুঝে যিনি এই অধ্যায় রচিত হয়। খুব ভাল লাগলো পড়ে।
তৌহিদ
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান। আপনাদের সুগঠিত মন্তব্য লিখতে উৎসাহ যোগায়। শুভকামনা সবসময়।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা অসাধারণ শব্দ চয়নে অভিভূত।
একরাশ মুগ্ধতা…ও ভালোবাসা।
শুভ কামনা দাদা
তৌহিদ
অনেক ধন্যবাদ দাদা। শুভেচ্ছা সতত।