গতকাল ছোট বাবার স্কুলে বসে থাকতে গিয়ে পুলিশ লাইনের সামনে এক মরা গাছ ও গাছের উপর এসে পড়া এক টুকরো মেঘ দেখে মনে এলো, কতো কতো এলোমেলো কথা। শুরু হলো আমার মনের দ্বৈত সত্ত্বার কথোপকথন।
‘প্রকৃতি এক ধরনের শৃঙ্খলা মানে, কিন্তু শৃঙ্খল মানে না। প্রকৃতির এই শৃঙ্খলাকে আমরা প্রকৃতির এক একটা ধাপ হিসেবেই দেখি, এই যেমনঃ সকাল-বিকাল, রাত-দিন, এ ঋতু সে ঋতু,(শীত, গরম, বর্ষা, হেমন্ত, বসন্ত, শরৎ) যাকে আমরা ছয় ঋতু বলি। কিন্তু এই মানুষই এখন প্রকৃতিতে টিকে থাকতে অতি বিজ্ঞানের প্রয়োগে এই রিতুরও পরিবর্তন করে ফেলল। রিতুও তার রূপ পাল্টালো। আজ সবার প্রশ্ন, রিতু কেন পাল্টালো!
সাগরের ঢেউ বালিয়াড়িতে গিয়ে মিশে যায় খুব ধীর গতিতে শান্ত ভাবে। কারণ এই বালিয়াড়ি সমুদ্র তীর থেকে প্রকৃতিগতভাবেই একটা দূরত্ব নিয়ে থাকে তার ঢেউ সহ্য করার। কিন্তু মানুষ যদি কোনো শৃঙ্খল দিয়ে বালিয়াড়ি থেকে সমুদ্রের অতি গভিরে কোনো বাঁধ দেয়, তখন সমুদ্রের ঢেউ তা ভেঙেচূরে তছনছ করে এগিয়ে আসবে বালিয়াড়ির দিকে। কিন্তু তখন এই ঢেউ হয়ত শান্ত ভাবে ধীর গতিতে আসবে না। বাঁধা পাওয়ার ফলে তখর যে স্বাভাবিকতা ছিল তা নষ্ট হয়ে এখন সে অগ্নিমূর্তি বিশাল এক ঢেউ, ভাসাবে সব।
নদী তার স্বাভাবিক নিয়মেই সমুদ্রে মিশে যায়। কিন্তু এই নদীতে বাঁধ দিলে, হয় সে নদী মরে যাবে এবং বাণে ভাসাবে স্থলের সব। অথবা দিক পাল্টাবে তীর ভেঙ্গে। সর্বহারা হবে এই মানুষই। যেমন ভাসিয়ে নেয় বন্যা।
একটি গাছকে বাড়ন্তর সময় খুব শক্ত কোনো চিকন তার দিয়ে বেঁধে দিলে, হয় সে গাছ মরে যাবে নতুবা গাছের সেই যায়গাটি ফুলে ফেঁপে উঠবে। পরিবর্তন হবেই।
মানুষ যতোই সভ্য হিসেবে নিজেদের দাবি করুক না কেন, মানুষ মূলত সেই আদিম রীতি নিয়েই চলে। আমি কিন্তু আদিম রীতিটকে অসভ্য বলছি না, আমি বলছি অনিয়ম এবং অসামাজিক এর কথা প্রসঙ্গে। যে রীতিতে ছিল না কোনো বৈষম্যের শৃঙ্খল। আমার কাছে সে আদিম যুগটা তাই সভ্যও অবশ্যই। যার যার খাদ্যের যোগান সে তাৎক্ষণিকই করে নিত। ছিলনা মজুদ করার চিন্তা। তাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের অর্থাৎ প্রকৃতির নিয়ন্ত্রনেই ছিল তাদের জীবন ব্যবস্থা। প্রকৃতি কোনো শৃঙ্খল মানে না কিন্তু শৃঙ্খলা মেনে চলে। মানুষ প্রকৃতিরই সন্তান, এই মানুষই গুহা ছেড়ে সভ্য হতে তৈরি করল শৃঙ্খল ও শৃঙ্খলা এক জীবন বিধান। কিন্তু এই মানুষই তা ভাঙতে সব সময়ই তৎপর। অথচ পৃথিবী বরাবরই শৃঙ্খলা মেনে চলে। যখনি প্রকৃতির এই শৃঙ্খলা নষ্ট হবে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক ধরাবাহিকতা হারাবে। যেমন অসময়ে বৃষ্টি।
পৃথিবীতে টিকে থাকতে এবং সমাজটাকে সুশৃঙ্খল করতে আমারা তৈরি করলাম এ তন্ত্র সে তন্ত্র( প্রথমে পরিবার তন্ত্র, তারপর একে একে সমাজ তন্ত্র, রাষ্ট্র তন্ত্র অর্থাৎ আইনের তন্ত্র) কিন্তু নিজেরাই তা ভেঙে ফেলতে চাই সব সময়ই। আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা, আমরা মানুষ, আমরা আল্লাহর সৃষ্টি এই মানুষকেই ভালবাসতে জানি না।
আমরা পুরো অখন্ড পৃথিবীটাকে খন্ড খন্ড করে এক এক সিভিলাইজেশনে ভাগ করে ফেললাম। প্রত্যোক জাত তার নিজস্ব জীবনধারায় স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আনতে লাগলো। প্রতিটি জাতের জীবনের চলার পথ ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হলো।
আমরা বর্ণ, গোত্রে ও পৃথিবীর ভৌগলিক সীমানা ভাগ করে, পড়ে রইলাম নিজের চারপাশের জগৎটাকে নিয়ে। পুরো পৃথিবীটাকে তাই জানাই হলো না। পথের পাশে পড়ে থাকা নুড়িটি কুড়িয়ে জানাই হলো না, মাটি থেকে এটা এতো শক্ত কেন?
আমরা পৃথিবীর সৃষ্টির শুরুর গল্প পড়ে বুঝতে পেরেছি, পৃথিবী সেই নব্য প্রস্তর যুগ থেকে এই অতি আধুনিক যুগ পর্যন্ত পৃথিবী কখনোই এক মুহূর্তের জন্য থেমে থাকেনি। হয়নি হঠাৎ কোনো পরিবর্তন। কালে কালে মানুষ তার সুবিধার জন্য বিজ্ঞানের অতিরিক্ত ব্যবহারে পৃথিবীকে আজ অনেকটা বসবাসের অযোগ্য করে ফেলছে। এখন সবাই স্বার্থপর। সবার এক ভাবনা,”আমি না করলে, অমুক করবে। যেমন একসময় দেখতাম ব্যাক্তি মালিকানাধীন না থাকা খাল বা বিল থেকে কেউ মাছ ধরলে তা যদি ডিম ওয়ালা মাছ হতো সে মাছ ছেড়ে দিত। সত্যি বলছি, আমিও ছেড়ে দিতাম। অথচ আমাদের এই চিন্তা চেতনার কারণে আজ খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়ছে, আর এই খাদ্য শৃঙ্গল ভেঙে পড়াতে আজ সবার আফসোসও কম নয়।
৩১টি মন্তব্য
নীহারিকা
খুব সুন্দর লেখা। ভাবার আছে অনেক কিছু।
মৌনতা রিতু
হুম আপু, ভাবার আছে অনেক কিছু।
কেমন আছো আপু? -{@
নীহারিকা
আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
ইঞ্জা
আপনার দ্বৈত সত্বার কথা মনে ধরেছে আপু, খুবই সত্য কথা গুলিই মনের মাঝে কথা বললো, আসলে আমরা মানুষরাই আজ এই প্রকৃতির শত্রু, জলবায়ুকে আজ আমরা ধ্বংসের পথে ঠেলে নিয়ে গিয়েছি, উচিত ছিলোনা প্রকৃতিকে এই ভাবে বাধাগ্রস্ত করার আর এই কারণেই প্রকৃতি আমাদের উপর রুদ্ররোষ নিয়ে জাপিয়ে পড়েছে।
মৌনতা রিতু
সত্যিই ভাইজু। খুবই খারাপ লাগে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।
ভাল থাকবেন ভাইজু। শুভেচ্ছা রইলো।
ইঞ্জা
আপনিও ভালো থাকবেন আপু
জিসান শা ইকরাম
প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিক প্রবাহে রাখতেই হবে,
নতুবা ঘটবে বিপত্তি।
সব ক্রিয়ারই একটি প্রতিক্রিয়া থাকবেই, প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া হয় ভয়ানক।
রিতুর ভাবনার ক্ষেত্র চমৎকার।
মৌনতা রিতু
হুম ভাইয়া, সবকিছুর অবশ্যই একটা নিয়ম আছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
জিসান শা ইকরাম
” মানুষ যতোই সভ্য হিসেবে নিজেদের দাবি করুক না কেন, মানুষ মূলত সেই আদিম রীতি নিয়েই চলে। আমি কিন্তু আদিম রীতিটকে অসভ্য বলছি না, আমি বলছি অনিয়ম এবং অসামাজিক এর কথা প্রসঙ্গে। যে রীতিতে ছিল না কোনো বৈষম্যের শৃঙ্খল। আমার কাছে সে আদিম যুগটা তাই সভ্যও অবশ্যই। ” — অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন কথা।
মৌনতা রিতু
এই লাইনকয়টা ভাল হইছে! ওয়াও। আপনার এমন মন্তব্যে আমার এই লেখাগুলোতে আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
এ কোন রিতুর কাছ থেকে ঋতুদেরকে দেখছি? দারুণ লিখেছো আপু। অনেক পুরোনো প্রবাদ, “যেমন কর্ম, তেমন ফল।” আমি পাপ-পূণ্য এসব বিশ্বাস করিনা। কিন্তু আমরা যা কিছু করি, তার ফল অবশ্যই পাই।
ওহ শোনো ইদানিং দেশে যে খুব ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে এবং এখানেও হয়ে গেলো, বিশাল একটা গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ থেকে ঘুরে গেছে। অবশ্য শুধু সেজন্যই নয়। গ্রিনল্যান্ডে হিমবাহের ফাটল দেখা দিয়েছে। এন্টার্কটিকা বরফ গলে যাচ্ছে। পৃথিবীতে আরও অনেকগুলো দেশ অচিরেই ডুবে যাবে। কি সহজে বলে যাচ্ছি! থাক এটুকুই।
ভালো থেকো আপু। -{@
মৌনতা রিতু
তুমি ঠিক বলেছো আপু, তবে কি জান তো কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়, কিন্তু তা একসাথে অনেকের।
ঐ যে বলে না, পাপী মরে সাত ঘর নিয়ে।
ভাল আছ আপু? হাসিটা ধরে রেখো। -{@ (3
ছাইরাছ হেলাল
প্রকৃতিকে শাসন করা যায় না, এমন চেষ্টার ফল মারাত্মক হয়।
তাই তাকে ম্যানেজ করতে হয়।
নারীরাও প্রকৃতির আর এক রূপ!!(থামলাম)
মৌনতা রিতু
তাই সাবধান, নারীকে শাষণ করতে আসবেন না।
পুড়িয়ে দিবে সব।
আসলে তাই তো আমি বলি, নারীর অনেক রূপ।
ছাইরাছ হেলাল
অস্ত্রধারীদের খুব-ই ডরাই!!
প্রহেলিকা
চমৎকার পোষ্ট। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদাহরণের মাধ্যমে নিজের দর্শনগুলো অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির সাথে একেকটি অসংগতির জের টেনেছেন অতি সূক্ষ্মরূপে। বেশ ভালো লাগলো পোষ্টটি। এমন পোষ্ট আরও পাব সে আশা রাখছি। ভাবনার কিছু পেলে আন্দোলিত হই। যেমন এই লাইনটি নিয়ে সেই কখন থেকেই ভাবছি। **পথের পাশে পড়ে থাকা নুড়িটি কুড়িয়ে জানাই হলো না, মাটি থেকে এটা এতো শক্ত কেন?
মৌনতা রিতু
যাদের কাছ থেকে আমি শব্দ ধার নেই, তারাই আমার শব্দ নিয়ে ভাবছে দেখে ভাল লাগে খুব।
সত্যিই, কতো কি যে আছে দেখার।
হুম, দ্বৈত সত্ত্বার আজাইরা প্যাঁচাল যদি ভাল লাগে দিতে পারি, তবে চুল ছিঁড়লে দোষ নেই কিন্তু।
মেহেরী তাজ
তুমি বদলে গেলে? আমাকে না বলেই? এটা কি করলে? 🙁
মানুষ নিজের দরকারে প্রকৃতি কে চেঞ্জ করছে, ব্যালেন্স নষ্ট করছে এর ফলতো মানুষ কে পেতেই হবে।
এতো চিন্তা নিয়ে ঘুমাও কেমনে ভাবীজান? :p
সুন্দর পোষ্ট। 🙂
মৌনতা রিতু
তাই তো ঘুমাই নারে। তোর ভাই ভাবে, বৌ মোর গ্যাছে :p
তা প্রিয় মানুষটি কেমন আছেরে!
তুমি সকালে দারুন একটা চিন্তা ঢুকাইছো আমার মাথায়, দুর্বল আর অতি সবল। লিখেও ফেলছি কিছু।
-{@ (3
মেহেরী তাজ
তুমি আবার কই যাবে? ভাইয়া কে ছাড়িয়েরে ভাবীজান কই যাইবারে?? :p
প্রিয় মানুষ টি যে কেমন আছে আজ! শোনা হয় নি । তবে ওর ভালো না থাকার তো কোন প্রশ্নই আসে না। আমি অনেক ভালো না?
আমি আবার কি আইডিয়া দিলাম? নিজেই লিখতে পারছি না উলটা তোমারে আইডিয়া দিচ্ছি? ;? -{@
মোঃ মজিবর রহমান
সব কিছুরই নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে, সব কিছুকেই তাঁর ধারায় চলতে দেওয়া উত্তম এর যেমন ব্যাহত হবে তেমন ঘাত-প্রতিঘাত আসবেই আসবে।
সুতরাং সবার চলার পথ নিজ্বস্ব গতেতে চলায় উত্তম।
মৌনতা রিতু
হুম ভাই। মজিবর ভাই খুব ব্যাস্ততা যাচ্ছে আপনার? কেমন আছেন? পোষ্ট দেখেছি, পড়ব।
ভাল থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
যদি কখনো কেউ সফল বা গর্বিত মায়ের লিষ্ট চায় তবে আপনার নামটি দিবো।সন্তানদের অনেক শ্রম দিয়ে মানুষ করছেন অবশ্যই আপনার আশা পূরণ হবে।এই কামনা।
অল্প অল্প উদাহরণ দিয়ে জীবনের গতিগুলোকে বিশ্লেষণ করলেন খুব সুন্দর ভাবে। -{@
মৌনতা রিতু
ছোটবোনকে কাঁদিয়ে ফেলালেন তো! এতো ভালবাসলে কেঁদে ফেলি কিন্তু।
হুম ভাই, শ্রম কিনা জানি না, ওদের সাথে প্রচুর কথা বলি। আমাদের আড্ডা দেখে সবাই অবাক হয়। একদিন যদি দেখা হয় ওদের মাথায় হাত রেখে দিয়েন।
আমরা গল্প লেখার প্রতিযোগিতা করি। বরাবরই মেমন প্রথম। ছবিসহ ভাবছি এসব একদিন পোষ্ট দিব।
আমি ছোটটাকেও ক্যাডেটে দিতে পারলে, বছরে দুইটা বাচ্চাকে কাছে রেখে পড়াবো।ক্লাস ফোর থেকে সিক্স পর্যন্ত। বেশি নিব না। দুইটা। তাদের নিয়ে আমার টার্গেট থাকবে সমাপনি ও ক্যাডেট।
ভাল থাকবেন ভাই এই বোনটার জন্য দোয়া করবেন।
লীলাবতী
কত গভীর আপনার চিন্তা ভাবনা। আমি অবাক হই আপু।
মৌনতা রিতু
তাই না! কেমন আছো? এই, মা কেমন আছে?
ভাল থেকো সব সময়।
শুন্য শুন্যালয়
নদীতে বাঁধ দেয়া বন্যা ঠেকাবার জন্যই, তাতে আরেক দিক প্লাবিত হবেই। অইযে জিসান ভাই বললেন ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকবেই। তবে কী জানো? সব তো আমরা করছি বেঁচে থাকতে, ভালোভাবে বেঁচে থাকতে। যদিও নিজের ভালো নিজেরাই টের পাচ্ছিনা। এ পৃথিবীর গায়ে এতো মানুষের বাসস্থান এও হয়তো প্রকৃতি সহ্য করতে পারছেনা। আমরা তা বুঝছি কোথায়?
এই না হলে লেখা!
মৌনতা রিতু
আমরা শুধুমাত্র নিজের ভাল বুঝতে গিয়ে বরং বেশি বিপদে পড়ছি।
ঠিক যে কোনো ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া আছে।
এটা কেমুন লেখা! খুইলা কও।
নীরা সাদীয়া
সমৃদ্ধ লেখনী। ভাবনার জগতে যোগ হল এক নতুন দৃষ্টিকোণ। এরকম লেখা অারো চাই।
মৌনতা রিতু
তোমার ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগছে।
ভাল থেকো। -{@ (3