(এই গল্পটা “প্রহেলিকা”র অনুরোধে লিখতে বসছিলাম।জানি না তার অনুরোধ কতটা রাখতে পেরেছি।বলেছিলাম ট্রাই করবো,আমি জাস্ট সেটাই করেছি।আমি আসলে ভাল গল্পকার নই।লিখতে পারি না তেমন।লিখতে গিয়ে সহজ শব্দের ব্যাবহার করেছি প্রচুর।ছোট ছোট খন্ডে কয় একটা পর্বে পুরা গল্পটা দিবো এখানে।ভূল গুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টীতে দেখলে কৃতজ্ঞ থাকবো।)
দুই দিন ধরে ঘুমাতে পারছে না প্রসুন।চোখ বুজলে শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে।কতদিন বাড়ি যাওয়া হয় না।এদিকে ভার্সিটিও বন্ধ হচ্ছে না।মেজাজ খারাপ করে সকালেই বাইরে বের হয়ে যায় সে।রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে মনে ভাবে দু চার দিন ক্লাশ মিস দিলে কিছু হবে না।যা আছে কপালে আজ বাড়ি চলে যাই।যেই ভাবা সেই কাজ।বাস চেপে সোজা কমলাপুর রেলস্টেশন।সন্ধ্যা ৭,৩০ এ চিত্রা এক্সপ্রেস ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচলকারী আন্ত:নগর ট্রেন এর টিকিট কেটে সোজা বাসায়।ব্যাগ গুছানো কমপ্লিট।সব কিছু নেয়া হয়ে গেছে।এখন একটা ঘুম দিতে হবে,ভাবে প্রসুন।ট্রেনে করে বাড়ি ফিরলে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না।রাতের ট্রেন চলাটা এক কথায় জোস।দূরে বাড়ি গুলোতে বাতি দেখা যায়।মাঝে মাঝে ভুল করে কোন এক স্টেশন থেকে উঠে পড়ে জোনাক পোকা।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলে চেয়ে দেখে মা ফোন দিয়েছে।
-হ্যালো মা
:কিরে তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস যে??ক্লাশ নেই??
-না মা আজ ক্লাশ নেই।আর রাতে ঘুম হয়নি তাই ঘুমাচ্ছিলাম।
:তুই আজ বাড়ি আসবি?
-তুমি কেমন করে টের পাও বলো তো??
:খবরদার ক্লাশ মিস দিয়ে বাড়ি আসা চলবে না।
-মা খুদা লাগছে।খাইতে যাই।
:আচ্ছা শোন,সাবধানে আসিস।ট্রেন থেকে মাথা বের করে রাখবি না।আর শুকনো কিছু নিয়ে ট্রেনে উঠিস কিন্তু।
-আচ্ছা মা।এখন রাখি।বাই
মা রা এমন কেন?সব আগে ভাগেই জেনে যায়।হুর।হায় হায় সন্ধ্যাতো হয়ে এলো।খেয়েই বের হতে হবে।
সন্ধ্যা ৭টা কমলাপুর রেল স্টেশনে প্রসুন এসে দেখে মানুষে বোঝাই।ট্রেন আসতে নাকি আজ লেট হবে।অগ্যতা ওয়েটিং রুমে এসে বসে প্রসুন।পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে ঢুকে স্ট্যাটাস দেয়-“ঝিক ঝিক ঝিক ট্রেনে করে,যাচ্ছি চলে বাড়ী,ফিরবোনা আর এই শহরে,ল্যাম্পোস্টটা তোমার সাথে আড়ী”।মোবাইল থেকে চোখ সরাতেই সামনে বসে থাকা মেয়েটার দিকে চোখ চলে যায়।মুখ থেকে অজান্তেই বেড়িয়ে আসে উফফফ।শ্যম বর্নের একটা মেয়ে বসে আছে।এত সুন্দর চোখ এর আগে কারো দেখেনি প্রসুন।চোখে কাজল দেয়া ছিলো বলে পুরা বুকের মধ্যে এসে লাগে চাহনিটা।চোখে চোখ পড়তেই একটা মুচকি হাসি দেয় মেয়েটা প্রসুনের দিকে তাকিয়ে।বোকার মত হাসির বদলে হাসিনা দিয়ে এক পলকে তাকিয়ে থাকে প্রসুন।মেয়েটা ইতিস্তত বোধ করে প্রসুনের তাকিয়ে থাকা দেখে।মুখটা অন্য দিকে ফিরালে বাস্তবে ফিরে আসে সে।জীবনে প্রথম আজ কোন মেয়ে দেখে প্রসুন নিজের অজান্তেই উফফ বলে ফেলেছে।এটা ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে।
রাত ৮টা।ট্রেন চলে এসেছে ঘোষনা শুনতেই তরিঘরি করে ব্যাগ কাধে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে মেয়েটা নেই।মন খারাপ হয়ে যায় তার।মুখ কালো করে ট্রেনের দিকে এগিয়ে যায়।নিজের বগি খুজে নিয়ে সিট খুজে এসে বসে পড়ে প্রসুন।জানার পাশের সিট।১০০টাকা ঘুষ দিয়ে এই সিট পেয়েছে সে।জানালা দিয়ে মেয়েটাকে খুজতে থাকে প্রসুন।কই যে হারিয়ে গেলো মেয়েটা।ইশশ নামটাও জানা হলো না।মন খারাপ নিয়ে জানালার পাশে হাতে মাথা রেখে বসে আছে সে।এই যে শুনছেন??একটা মিষ্টি গলার কেউ পিছন থেকে ডাকছে প্রসুনকে।মাথা তুলে তাকাতেই দেখে সেই মেয়েটা।
-আমাকে বলছেন??
:হুম।আপনার পাশের এটা কি আমার সিট।একটু দেখবেন??
-হ্যা এটাই আপনার সিট।(টিকিট হাতে নিয়ে বিজ্ঞের মত বলে প্রসুন)।
:আমাকে কি জানালার পাশের সিটটা দেয়া যায়??আমি না এর আগে কখনও ট্রেনে উঠিনি।এবার প্রথম।আপনি কি একটু কষ্ট করবেন প্লিজ??
-হ্যা অবশ্যই।বলেই পাশের সিটে চলে আসে সে,আর মেয়েটাকে তার সিট ছেড়ে দেয়।
:ধন্যবাদ আপনাকে।বলেই মেয়েটা জানালার পাশের সিটে বসে পড়ে।
ইশশ কেন প্রথমেই সিট চাওয়াতে হ্যা বলে বসলাম??মেয়েটা আবার না অন্য কিছু ভাবে।।এই চিন্তা মাথায় আসতেই নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে প্রসুনের।এখন একদম চুপচাপ বসে থাকতে হবে।মেয়ের দিকে ফিরেও তাকানো যাবে না।এই সব ভেবেই বাম পাশে মুখ ফিরিয়ে মেঝেতে তাকিয়ে থাকে প্রসূন।
১৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ভাল হয়েছে ।
যার অনুরোধে লিখছেন সে কী বলে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে আমাকে ।
নীল রঙ
আমিও অপেক্ষায় আছি।
মশাই
আহ!!! মনে হল চোখের সামনে তেতুল ধরে রেখে জিহ্বা থেকে লালা ঝরিয়ে আবার কেড়ে নিয়ে গেলেন? কি এমন ক্ষতি হত যদি পুরো গল্পটা একেবারেই দিতেন? জীবনে এতো লাভ বা ক্ষতির হিসাব করলে চলে নাকি? দেখুনতো কেমন লাগে মনে হচ্ছে নাটকের উত্তেজনায় যখন দর্শক উত্তেজিত ঠিক তখনি বিজ্ঞাপন শুরু হলো এবং বিজ্ঞাপন শেষে লোডশেডিং। ধুর আমার যে অপেক্ষা ভাল লাগে না একদম। বড় মানুষদের নাকি অপেক্ষা করতে মজা লাগে আমিতো অতি ক্ষুদ্র মানুষ তাই হয়তো ভাল লাগে না।
তারপরও এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে ধন্যবাদ আপনাকে শুরু করেছেন বলে। দেখি এই ট্রেন কোথায় গিয়ে থামে। প্রহেলিকার দেখা নাই অনেক দিন তবে বার্তা পৌঁছে যাবে ঠিকই।
ধুররর!!!!! শেষ করে দিলেই হয়তো ভাল হতো গল্পটা।
নীল রঙ
এক বারেই দিতে চেয়েছিলাম।মোটামোটি একটা সমাপ্তি টেনেছি।খন্ড খন্ড করে একারনেই দিচ্ছি যদি মাথায় আরো কিছু আসে যোগ করে দেয়া যাবে।হয়ত এই ট্রেন কোথাও থামবে না।হয়ত দু দিন পর কোন এক অজানা স্টেশনে থেমে যাবে হুট করে।অপেক্ষা বাস্তব অপেক্ষা শ্রেয়।অপেক্ষা মধুর হোক। 🙂
মশাই
কিন্তু অপেক্ষা যে ভাল লাগে না আমার। এক সাথে পুরোটা দিয়ে দিলেই মনে হয় তৃপ্তি পেতাম। গল্পের রেশ টা থেকে যেতো। থাক লেখকের উপরে কথা বলবো না।
নীল রঙ
আপনি চাইলে দিয়ে দিতে পারি।কিন্তু অনেক বড় লেখা তো।তাই ছোট ছোট করে দিতে চাচ্ছিলাম আর কি
মশাই
আমার যেহেতু অপেক্ষা সহ্য হয়না সেহেতু আমি বলতেই পারি দিয়ে দিতে তবে লেখকের মত কেই প্রাধান্য দেই বেশি। আপনার যখন ভাল লাগে দিবেন। গুরুজনের কথাই মেনে নিছি অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।
জিসান শা ইকরাম
আহারে , মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ।
কি আর করা !!
গল্প ভালো হয়েছে , বিরতিহীন ভাবেই পড়ে ফেলেছি ।
” বসে পড়ে প্রসুন।জানার পাশের সিট।১০০টাকা ঘুষ দিয়ে ——- ” এখানে জানার পাশের পরিবর্তে জানালার হবে না ?
শুভ কামনা ।
নীল রঙ
দুঃখিত “লা” টা মিস হইয়া গেছে। 🙁
খসড়া
মেঝের দিকে তাকিয়ে? ছাদের দিকে তাকিয়ে ঘুমালে হতো না।
নীল রঙ
হয়ত হত।লিখতে গিয়ে এটা চিন্তা করিনি।মাথায় থাকলো নেক্সট টাইম ছাদের দিকে তাকিয়ে ঘুমাচ্ছে এমন কিছু একটা লিখবো। 🙂
স্বপ্ন
খুব ভালো উপস্থাপনা । আপনার নয়তো ? :p -{@ (y)
নীল রঙ
হা হা হা।হুম আমার নয়ত অন্য কারো হবে হয়ত। 🙂