ট্রেন তখনও ঢাকার ভিতর দিয়ে চলছে।এয়ারপোর্ট স্টেশন পার হয়েছে এমন সময় মেয়েটি বলে উঠে আচ্ছা আপনার কাছে কি পানির বোতল হবে??আমি না নিয়ে উঠতে ভুলে গেছি।খুব তেষ্টা পেয়েছে।প্রসূন ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিতেই মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিয়ে এক ডোকে অনেকটা পানি খেয়ে ধন্যবাদ দিয়ে ফিরিয়ে দিলো।একটা মুচকি হাসি দিয়ে পানির বোতলটা হাতে নেয় প্রসূন।কানে হেডফোন গুজে মোবাইলে গান ছেড়ে দিয়েছে সে।প্রিয় গান শুনে পুরাটা পথ পাড়ি দিবে।শহর ছেড়ে মফস্বলের পথে ট্রেন তখন।মেয়েটা প্রসূনের হাতে খোচা দিতেই কান থেকে হেড ফোন খুলে জানতে চায়-
-কিছু বলবেন??
:গান শুনছেন??
-হুম
:কার গান?
-শীরনামহীন।আমার প্রিয় ব্যান্ড।
:আমি আগে শুনিনি।একটা হেডফোন শেয়ার করা যাবে আমার সাথে???
-হুম যাবে।বলেই একটা হেড ফোন বাড়িয়ে দেয় মেয়েটার দিকে।
গান শেষ হতেই মেয়েটা বলে উঠে-
:সুন্দর গানটা,এদের আর কোন গান আছে??
-হুম আছে,শুনবেন?
:হুম,যদি আপনার সমস্যা না হয় আর কি।
এরপর একে একে চলতে থাকে হাসিমুখ,ক্যাফেটেরিয়া,পরিচয়,বন্ধ জানালা,সর্বনাশ।
মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে গান শুনতে থাকে।এদিকে প্রসূন ভাবে এই মেয়ে গান শুনতে তেমন অভ্যস্ত নয় হয়ত।নয়ত কেউ শীরনামহীনের গান শুনেনি কেমন করে?!!!এই টপিকেই সারা রাত পাড় করে দেয়া যাবে আজ।
তখন মধ্যরাত।যমুনা সেতু কখন পাড় হয়ে এসেছে খেয়াল করেনি প্রসূন।খোলা প্রান্তর দিয়ে ছুটছে ট্রেন তখন।নিরবতা ভেঙ্গে মেয়েটা কথা বলে উঠে-
:আচ্ছা জীবনটা ট্রেনের মত তাই না??সারাদিন এখান থেকে ওখানে ছুটে চলে!!!!!
-হুম,জীবনটা আকাশের মত জমিনে দাঁড়িয়ে দেখা যায় কিন্তু শেষ প্রান্তটা ছোয়া যায় না।
:বাহ আপনি তো স্বভাব কবি।কি সুন্দর করে কথার পিঠে কথা জুড়ে দিলেন।
-হা হা হা।শুনে লজ্জা পাবো নাকি খুশি হবো বুঝতে পারছি না।
:খুশি হোন আপাতত।আচ্ছা সেই সন্ধ্যা থেকে আপনার সাথে এক প্রকার বক বক করে যাচ্ছি।আপনাকে ডিস্টার্ব করছি না তো??
-বক দেখতে অনেক সুন্দর।বিশেষ করে সাদা বক।আই লাইক বক
:হা হা হা।আপনি খুব মজার।আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভাল হইছে নয়ত বোরিং লাগতো পুরাটা রাস্তা।
-পরিচিত তো এখনও হইনি।চলুন পর্বটা শেষ করি-আমি প্রসূন
:আমি মায়াবতি।সবাই ছোট করে এখন মায়া ডাকে।
-হুম আপনার চোখে তা লেগে আছে
:কি??
-আপনি মায়া।একবার ও চোখে তাকালে দুনিয়াটা তুচ্ছ মনে হবে।মায়ায় জড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করবে।
:এমন করে বলছেন কেন??আমার চোখ কি এতই সুন্দর??
-ওমন চোখে চোখ রাখতে অনুমতি দিলে,আমি এখন এই ট্রেন থেকে ঝাপ দিতে রাজি আছি।রাখতে দিবেন??
:জানি না।আমি খুলনা যাবো বাবার কাছে।আপনি??
-আমিও।মায়ের কাছে।
:আপনার বাবা নেই??
-হুম আছে??
:জানেন আমার না মা নেই।
-আমার তো মা আছে।কিন্তু জানেন তার না একটা ছেলের বউ নেই।
:সবসময় ফাজলামো না??
-স্যরি।আর করবো না।
:আমি যদি বলি আমার ভাল লাগে।তাও করবেন না??
-ভেবে দেখতে পারি।
:ট্রেন প্রায় চলে এসেছে।আমি কি আপনার ফোন নম্বর পেতে পারি??
-হুম।০১৭২*******।ফেসবুক একাউন্ড আছে আপনার??
:হুম।আপনি প্রহেলিকা প্রসূন তাই না??
-আরে আপনি কেমন করে জানলেন??
:একটু আগে আপনাকে ফেসবুকে ঢুকতে দেখেছি।তখনই নামটা মনে রেখেছি।
-চোর।লুকিয়ে কারো জিনিস দেখা ঠিক না।
:আচ্ছা দেখেই তো ফেলেছি কি আর করা যাবে এখন।আসি তাহলে।ভাল থাকবেন।টেইক কেয়ার।
মেয়েটা ট্রেন থেকে নেমে যেতেই মন খারাপ লাগে প্রসূনের।ভাবে,ইশশ মেয়েটা চলে যাচ্ছে।তার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না।ফোন নাম্বারটা চাওয়া হয়নি।ওর আব্বু এসেছে নিতে।এখন সামনেও যাওয়া যাবে না।প্রসূনের কেউ আসেনি।একটা রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে এগুতে গিয়েই মনে পড়ে সারারাত সিগারেট খাওয়া হয়নি।রিক্সা পাশে দাড় করিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নেয় প্রসূন।এরপর মোবাইল বের করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখতে শুরু করে সে-
”একজন মায়াবতি,মেরে ফেলা চাহনিতে কুপকাত ছেলে,একটা রাতের ট্রেন,চোখের কোনে মৃদু জল,ভাললাগা,ভালবাসার শুরুটা না হয় এখানেই হোক”।।
১৬টি মন্তব্য
খসড়া
আমরা=তুমি আমি ও সে।
নীল রঙ
আমরা=আমি তুমি সে হলে তো ভেজাল রে ভাই।সারাজীবন ঝগড়া করেই কাটাইতে হবে। 😀
জিসান শা ইকরাম
দারুন লিখেছেন ।
বড় লেখা পড়তে কষ্ট হয় আমার , এটিতে হয়নি 🙂
নীল রঙ
বড় লেখা পড়তে আমারও সমস্যা হয়।নিজে যখন সমস্যা বোধ করি অন্যরাও করতে পারে সেই চিন্তা করেই ছোট ছোট খন্ডে দিচ্ছি লেখা।দোয়া করবেন। 🙂
মশাই
এক কথায় অসাধারন বলা চলে। কিছু ছোট ছোট কথা এবং তার গাঁথুনি গল্পকে নিয়ে গেছে বেশ উঁচু স্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চলুক সাথে আছি থাকবো।
শান্তি পেলাম মায়াবতী যখন ফোন নাম্বার নিয়েই গেছে তখন ফোন সে করবেই, আর এই দিকে প্রহেলিকাও চন্ডিদাস সেজে ফেইসবুকে লগইন করে বার বছর পার করে দিতে পারবে আশায় আশায়।
ইশ, সব বতীদের দেখি একই হাল। নীল রঙ ভাই গল্পকার হোন সে আশির্বাদ সবসময় থাকবে তবে একটু খেয়াল রাখবেন জং ধরা তালা যেন খুলে না যায়।
এবার অপেক্ষা পরবর্তী পর্বের।
নীল রঙ
“একটু খেয়াল রাখবেন জং ধরা তালা যেন খুলে না যায়।”- এই লাইনটা বুঝলাম না।একটু বুঝিয়ে বলুন প্লিজ।
বিটুইন অপেক্ষা মধুর হোক।
মশাই
ওটা বুঝিয়ে বলা যাবে না বুঝে নিতে হবে। নিতান্তই প্রলাপও মনে করতে পারেন। তবে লেখা সম্পর্কিত না বাক্যটি। আচ্ছা থাক বলি শুনুন বলতে চেয়েছিলাম যে এমন কোনো গল্প আবার লিখে ফেলবেন না যেন যা কারো জীবনের সাথে আবার সত্যি সত্যি মিলে যায় তাহলে কিন্তু গল্প আর গল্প থাকবে না বাস্তব ঘটনা হয়ে যাবে। আপনাদের(লেখকদের) নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকতে হয় কখন না আবার কার গোপন কথা গল্পের আড়ালে তুলে ধরেন।
নীল রঙ
আমি জানি না অন্য কেউ কিভাবে লিখে।আমি আমারটা বলতে পারি।আমি লেখার সময় কল্পনার আশ্রয় নেই বেশি।সাথে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি জোড়া লাগিয়ে দেই।এই যেমন ধরুন ঢাকা খুলনা রুটের ট্রেন।আমি জীবনে একবারই ট্রেনে গিয়েছি সাথে স্পেশাল কেউ ছিলো।সে এখন নেই।কিন্তু স্মৃতিটা রেখে দিচ্ছি দেয়ালে টানিয়ে।এইটাই আলাদা একটা প্রশান্তি দেয় আমারে।আর হ্যা অন্য কারো জীবন নিয়ে লেখার ইচ্ছে নাই বা লিখবো না আমি।তবে কেউ লেখার অনুমতি দিলে লিখতে পারি হয়ত। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
পড়ে ফেললাম সহজেই ।
লিখতে থাকুন ।
নীল রঙ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
রিমি রুম্মান
ভাল লাগলো … ছোট পর্ব … ভাল থাকুন
নীল রঙ
ধন্যবাদ 🙂
পুষ্পবতী
ভাল লাগলো -{@
নীল রঙ
ধন্যবাদ। -{@
শুন্য শুন্যালয়
কতো যে বাস আর ট্রেন জার্নি করেছি, এমন কাওরে পাশে পাইনি 🙁
গল্প তো ভালই লেখেন দেখি…লিখুন লিখুন আরো।।
নীল রঙ
আফসোস কি জানেন,আমিও এত এত জার্নি করছি তবে এমন কাউরে কোন দিন পাইনি।আফসোস আরো সেটা হচ্ছে কোন দিন কোন বাচ্চা মেয়ে,কিশরি,সুন্দরি যুবতি,এমনকি বয়স্ক মহিলাও পাশে বসেনি। 🙁