মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী (প্রথম পর্ব)
মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী (দ্বিতীয় পর্ব)
(৮) বিবাহের আয়োজন
সম্বদ্ধ হইল ঠিক করি লগ্ন স্থির।
ভাল দিন হইল ঠিক পরে বিবাহের।।
দক্ষিণের হাওয়া বয় কুকিল করে রা।
আমের বউলে বস্যা গুঞ্জে ভ্রমরা।।
নয়া পাতা যত গাছে নয়া লতা ঘিরে।
ভাল দিন ঠিক হইল শঙ্করের বরে।।
সেই ত দিনে হইব বিয়া সর্ব্ব সুলক্ষণ।
পানখিল দিয়া করে বিয়ার আয়োজন।।
পাড়ার যতেক নারী পান খিলায়।
যতেক নারীতে মিলি তাঁর গান গায়।।
জয় জুকার গীত আর বাজে ঢুল।
উঠানে আকিল কত নানান জাতি ফুল।।
আধিয়া পুছিয়া সবে পানখিল দিয়া। *
আয়োজন করে সবে উতযোগ হইয়া।।
বিবাহের যত কিছু করে আয়োজন।
যতেক দেবতাগণের করিল পূজন।।
পূজিল শঙ্করে আগে দেব অনাদি।
অন্তরে যাহার নাম রাখিয়াছে বাধি।।
একে একে কৈল পূজা যত দেব আর।
শ্যামাপূজা একাচূড়া বনদূর্গা মার।।
আদিবাস হইল শুভ বিয়ার পূর্ব্বদিনে।
ক্রিয়াকাণ্ড আদি যত হইল সুবিধানে।।
চুরপানি ভরে সবে উঠিয়া প্রভাতে।
গীত জুকার যত হইল বিধিমতে।।
আব্যধিক করে বাপে মণ্ডপে বসিয়া।
তার মাটি কাটে যন্ত সধবা মিলিয়া।।
সেই দা মাটিতে ইটা তৈয়ার করিয়া।
পঞ্চ নারী মিলি দিল তৈল লাল দিয়া।।
আব্যধিক হইল শেষ জানি এক মতে।
সোহাগ মাগিল আর মায় বিধিমতে।।
আগে চলে কন্যার মায় ডালা মাথায় লইয়া।
তার পাছে কন্যার খুড়ি লোটা হাতে লইয়া।।
তার পরে যত নারী গীট জুকারে।
সহাগ মাগিল কত বাড়ী বাড়ী ফিরে।।
* পানখিল : পানের খিলি। বাংলাদেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে পান খাওয়ার প্রচলন প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।
(চলবে)
১১টি মন্তব্য
মর্তুজা হাসান সৈকত
ভালোলাগা রেখে যাচ্ছি ।
কাফি রশিদ
ধন্যবাদ মর্তুজা হাসান।
জিসান শা ইকরাম
যত পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি ভাই ।
মনে হচ্ছে আমাদের বাড়ীর পাশের কারো কথা পড়ছি ।
কাফি রশিদ
হ্যাঁ। খুব আপন লাগে গীতিকাগুলো।
আদিব আদ্নান
এগুলো পড়তে আমার ভালই লাগে ।
কাফি রশিদ
হুম।
ব্লগার সজীব
এসব কিভাবে সংগৃহীত হয়েছে জানেন কিছু ? ভালো লাগছে পড়তে । গর্বিতও হচ্ছি আমাদের বাংলার এই সব সংস্কৃতি দেখে । (y) (y)
কাফি রশিদ
১৯১২ সালে ময়মনসিংহের ‘সৌরভ’ পত্রিকায় চন্দ্রাবতীকে নিয়ে একটা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, লেখক চন্দ্রকুমার দে। প্রবন্ধটা দীনেশচন্দ্রের নজরে আসলে তিনি চন্দ্রকুমারকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দেন গাঁথাগুলো সংগ্রহ করতে। চন্দ্রকুমার ময়মনসিংহের স্থানীয় লোক, তিনি চাষা-ভূষা ধরনের মানুষদের কাছ থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন। গাঁথাগুলো লিখিত ছিল না, তাই এক্ষেত্রে ভরসা ছিলো গায়েনরা। অন্যরাও কিছু কিছু মনে রেখেছিল। চন্দ্রকুমার এগুলো সংগ্রহ করে দীনেশচন্দ্রকে দেন, তখন তিনি এগুলো কিছু কিছু সম্পাদনা করে বিভিন্ন অঙ্কে বিভক্ত করেন।
অন্তরা মিতু
পাড়ার যতেক নারী পান খিলায়।
যতেক নারীতে মিলি তাঁর গান গায়।।
……………………………….. পানের খিলি এবং গান, দুইটাই আমার ব্যাপক পছন্দ 🙂
ছাইরাছ হেলাল
ইতিহাসটি জানা ছিল না ।
এটি জানিয়ে ভাল কাজ করেছেন ।