আজ থেকে অনেক বছর হবে
প্রায় শত বছরের কাছাকাছি,
উনবিংশ শতাব্দির প্রথম ভাগে।
বলতে পার, দাদা পরদাদাদের আমলে
ওদের কারো কারো নাম
কুড়ানী, উড়ানী কিংবা ফেলানী কেউবা আবার
চেহারায় সাদৃশ্য অব্যয় , খেঁদি কিংবা বুচি ।
নামের আড়ালে পরিচয়ের অবিচ্ছিন্ন অবগাহন
কখনো’বা সুয়োরানী , দুয়োরানী অথবা সুখু দুখুর মা
অথবা এমন কোন নাম, মুখে যখন যা আসে তা ।
নামের নির্যাসে দ্রবীভূত সর্বময় ওদের পরিচয়
ওরা তখন নিষিদ্ধ হাটের সওদা,
আদিম ব্যাবসায় একমাত্র সহজ লভ্য পণ্য;
এক বা আধুলি দামে ভালই বিকিয়ে যায়
কেই’বা তাদের খবর রাখে , যারা নয় মানুষ নামে গন্য ।
এইত সেদিন বছর পঞ্চাশ আগে,
আধুনিকতার ছোঁয়া সবার মাঝে নামে,
নামে যখন পরিবর্তনের হাওয়া
বিকিকিনির হাটে এল নতুন বাওয়া ।
ব্যাক্তি নয় , এবার বিকায় শ্রম বড়ই সস্তা দরে
ডাল নুন, মোটা চালে পেট চুক্তির ভারে
নতুন নামে আটপৌরে বাড়ীর কারাগারে ।
ফি বছর , জোড়া কাপড়, রুক্ষ চুলে তেল
নামের সাথে তাল মিলিয়ে নবায়িত ভেল ।
আসলের সাথে সুদের মত আরও আছে দেনা
অন্ধ রাতে মনিব শয্যায় অতিরিক্ত পাওনা ।
আজ, এই আমি তুমি আমাদের যুগ
কম্পিউতার, কেবল, মোবাইল আর ইন্টারনেট
আধুনিক পৃথিবীর চুড়ান্ত ভেট
গ্রামগঞ্জ হাটবাজার জনপথ মাড়িয়ে
পেটচুক্তি গৃহস্থালি’র আঙ্গিনা ছাড়িয়ে ;
আধুনিক পৃথিবীর বানিজ্য সভায়
আমদানি পণ , গার্মেন্টস কর্মী , নতুন তাদের নাম।
বিশাল কারখানায় নিয়ন বাতিচ্ছটায়
সকাল সন্ধ্যা অলিখিত অঘোষিত নিয়ম ধারায়
শৃঙ্খলিত শ্রম , সেকেন্ডে শুন্য দামে বিকায় ।
সহজ্র নামে এখন আধুনিকতার তকমা আটা
ববিতা, শাবানা, রোজিনা অথবা শাবনুর
কেউবা আবার ক্যাটরিনা, কারিনা অথবা কারিশমা
নাম বা বেনামে আজও পথভ্রান্ত ওরা , অহরহ হারায় পথদিশা ।
কবে সেই কোন কালে ছেড়েছে গ্রাম্য পরিচ্ছদ,
আদুল পায়ে সস্তা স্যান্ডেল , স্পঞ্জের চটি
বাটিক কিংবা পাখির নকল পাখি ড্রেস,
টেরিলিন ত্রিপিসে আসক্তি সর্বশেষ;
তখনও ওরা , ওরা শুধুই মেয়েলোক।
আজতক ঘরছাড়া , চিরকালীন প্রোষিতভর্তৃকা
বহুভোগ্যা নারী , পিতাহীন শিশুর জননী ।
এখনো সবপ্ন ওদের সস্তা সিনামায়
শ্বাসরুদ্ধ বাক্সবন্ধি রঙিন ফিতায় ।
অতীত নিমজ্জিত ঢেঁকি পাড়ানি, কুড়ানি নাম
নাম আর কাজের হেরফেরে কাল উত্তরণ
ইটপাথরের অট্টালিকায় , কাজের বুয়ার অনেক দাম।
নামধাম আর কালান্তরে উত্তরণ
উন্নয়নের নামে নিত্য নতুন নবায়ন,
মাপকাটির বাটখারায় চিরচেনা অবস্থান ।
তন্ন খোজে যদি জোটে একান্ত একটি ধাম ,
মেয়েলোক ওরা, ওরা শুধুই মেয়েলোক, এই ওদের নাম।
২০টি মন্তব্য
তানজির খান
সমাজের খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয় তুলে এনেছেন। শুভেচ্ছা। -{@ -{@ -{@
পারভীন সুলতানা
অনেক ধন্যবাদ।
পারভীন সুলতানা
না ভাই খুব সামান্য কিন্তু রুঢ় সত্যকে তুলে ধতে চেয়েছি ।
ইমন
তবোও জীবন যাচ্ছে চলে জীবনের নিয়মে 🙂
পারভীন সুলতানা
হয়ত এমনি করেই একদিন মানুষ নিজের সঠিক অবস্থান খুজে পাবে , যার যে স্থান ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সমাজকে দেখিয়ে দিলেন কোথায় তার অসংহতিগুলো।ধন্যবাদ সুন্দর কবিতা। -{@
পারভীন সুলতানা
এ আমার সামান্য প্রয়াস, যদি একজনও উপলব্ধি করতে পারে।
জিসান শা ইকরাম
অবস্থার পরিবর্তন হয়নি আসলে
সময় পালটেছে কেবল।
পারভীন সুলতানা
আসলেই তাই । অসঙ্গতি যেখানে যেমন ছিল তেমনি আছে ।
কৃন্তনিকা
কবিতাটি ভীষণ অর্থবহ। কবিতার মাধুর্যের মধ্যে বাস্তবতা অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটে উঠেছে।
ভীষণ ভালো লাগলো। (y) (y) (y)
পারভীন সুলতানা
ধন্যবাদ অনেক । আমি ৪৩ এর দুর্ভিক্ষে আট আনায় কেনা বাঁদি দেখেছি ……………তাই মনে ছিল , আছে।
শুন্য শুন্যালয়
কএক শত শত বছর পরেও মেয়েলোক মেয়েলোকই থাকবে। অসাধারন আপনার ভাবনা আর লেখার গভীরতা। এ পর্যন্ত যাওয়া অনেক কষ্ট। ভীষন ভালো। -{@
পারভীন সুলতানা
নমশ্য আপনার উপলব্ধি এবং আপনি ।
অরুনি মায়া
হুম মেয়ে মানুষ আজো মেয়ে মানুষ ই রয়ে গেল।
মানুষ হলোনা,,,,
লীলাবতী
এটিই মেয়ে মানুষের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ (y)
পারভীন সুলতানা
নিজেইত মেয়ে মানুষই রেয়ে গেছি , নহাতি মেয়েলোক ।
মিথুন
আমরা এই অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাবো?
পারভীন সুলতানা
আপ্নারা মুক্তি দিলে …………।এগিয়ে আসুন ।
নীলাঞ্জনা নীলা
মেয়েমানুষ, মেয়েলোক, মেয়েছেলে এসব ভদ্র-ভব্য মানুষদের মুখেই বেশী উচ্চারিত হয়। অশিক্ষিত যারা তারা মাথারী বলে। মেয়েদের জন্যে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ আছে যার পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়না। নারী হলো একধরণের খাদ্যবস্তু, যার স্বাদ অর্থ ছাড়াও নেয়া যায়।
আপু বহুদিন পর এলেন ব্লগে। চেষ্টা করুন একটু বেশী সময় দেয়ার।
পারভীন সুলতানা
জী মেয়েলোকের আবার পছন্দ ! নিজেকে ঢাকতে লাগে দশ হাত ……………আরো কত দুর্বলতা । অথচ একজন পুরুষের জন্ম হবার জন্য একটি মাতৃ জঠর চাই । তারপর নারী , নারী গৃহপালিত জীব ।
্্্্্,…কস্টটা আমার একার নয় সবার।
জী এক্তূ অন্যত্র ব্যাস্ত আছি, এসে যাব।