মেধার গল্প ৬

নীরা সাদীয়া ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫২:২৮অপরাহ্ন গল্প ১১ মন্তব্য

ইতিহাসে বুঝি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে মেধাহীন মেধার হাত ধরে। মেধার কল্পনার সূত্র ধরে কল্পনা এগুতে লাগল দূর,বহুদূর। একসময় ঘুমিয়ে গেল ইতিহাসের আগামী নায়ক। ঘুমের মাঝেও চলল মস্তিষ্কের কল্পনা। সকালে উঠে আজ আর স্কুলে না যাওয়ার বায়না করল না মেধা। কেননা, আজ সে আর কারো বকা খেতে চায় না। তাই নাশতায় যা পেল তাই খেয়ে বেরিয়ে গেল। বাড়ি ফিরে ভাল ছেলে হয়ে সকল নিয়ম পালন করল। তারপর বিকেলে সকলে খেয়ে যখন ভাতঘুম দিল মেধা তখন ঘড়িটা নামিয়ে নিয়ে চুপচাপ বাগানে চলে গেল। তার মামার ড্রয়ারে রাখা আরো কিছু যন্ত্রপাতিও নিল।স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে কিকি যেন এনেছিল, সেসব কিছু একত্র করে নিয়ে বাগানে বসে সন্ধ্যে অব্দি কি যেন একটা বানাল। তারপর সব একটা ব্যাগে করে নিয়ে বাগানে গর্ত করে পুঁতে রাখল।তারপর বাড়ি ফিরে গিয়ে শান্ত মেজাজে পড়তে বসে গেল। কিছু পড়া হোক বা না হোক, খাতা নিয়ে কি যেন আঁকাআঁকি করতে লাগল। মা সহ সকলেই খুব অবাক হল মেধার এই উন্নতি দেখে। সারা কিন্তু ঠিকই খেয়াল করল মেধা যা আঁকছে তা তার পড়ার বিষয় নয়। যা হোক, পরদিন সন্ধ্যাবেলা মা সেনানিবাসের একটা অনুষ্ঠানে গেলেন। এটাই সুযোগ,মেধা গেইম না খেলে কম্পিউটারে অন্য কাজ করতে লাগল। কিকরছে তা বাড়ির আর কেউ বুঝলোও না, বুঝতে চাইলোও না। যতই কম মেধা থাকুক না কেন, কম্পিউটারের প্রতিটি বিষয় তার নখদর্পনে। সে সময়টা সে খুব গভীর মনযোগে কি যেন আঁকল,আরো কি কি সব করল। কা শেষ করে ফাইল সেইভ করে পাসওয়ার্ড দিয়ে সেইভ করে রাখল। তারপর যেই শুনল,তার মায়ের গাড়ির আওয়াজ, তড়িঘড়ি করে পড়তে বসে গেল। মা এসে দেখল,তাঁর শান্ত ছেলেটা কত কি না পড়ছে।

রাতে খাবার টেবিলে যেতেই শুরু হল মেজো নানুর নালিশ। মেধার বাবা তখন ফোন করেছিলেন। ফলে ফোনেও চলল তাঁর নালিশ। তিনি মেধাকে কত করে বলেছেন যেন পড়তে বসে, অথচ সে তা না করে কম্পিউটার নিয়ে বসে ছিল।তারপর গাড়ির আওয়াজে…..
সব শুনে আবার সেই বকা….. বকা খেল মেধা। মাথা নিচু করে ভাতের সাথে বকাগুলোকেও হজম করতে হল তাকে। এ আর নতুন কি? বকা আজকাল আর তার অতটা খারাপ লাগেনা।তা ছাড়াও যেহেতু সে আরেকটা বিষয় নিয়ে মেতে আছে,তাই আজকাল আর এত বকা সে মাথায় নিচ্ছেনা। সারাক্ষণ কি যেন ভাবে। ভাবতে ভাবতে নাওয়া খাওয়া সব ভুলে যায়।

পরদিন বিকেলে আবার একি সময়ে সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে বাগানে চলে গেল মেধা।খুটখাট করে কি যেন বানাল। তারপর ফের আগের জায়গায় লুকিয়ে রাখল। কম্পিউটারে আরেকটু কাজ বাকি। সেটা শেষ করতে পারলেই কাজ শেষ।কিন্তু সে সুযোগ তো মিলছেইনা, বরং সেদিন মেজো নানুর নালিশের পর থেকে সে আর কম্পিউটার ঘরের দিকে এগুতেই পারছে না। কেউ না কেউ সারাক্ষণ তাকে চোখে চোখে রাখছে। তার পরীক্ষা সামনে।এখন যদি পড়া বাদ দিয়ে সে গেইম খেলে তাতে তার কিছুই পড়া হবে না,আর পরীক্ষায় পাবে গোল্লা। কি আর করা, রোজ নানা ছলে ঘষেটি বেগমের ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে পড়ে বকা খাওয়ার রুটিনটাও অনবরত চলতে লাগল। শুধু যে মেধাই বকা খায় তা নয়, সারাও খায়। তবে তুলনামূলক কম।

সেদিন মিসেস শবনমের ঘরে বসে মেজো নানু খাজুড়ে গল্প করছিলেন। এর ওর নিন্দে মন্দ, কার কি ক্ষতি করা যায় তার ছক কষা আরো কত কি! মিসেস শবনমের এসব গল্প ভাল না লাগলেও বয়ষ্কা অতিথিকে সম্মান দিতে গিয়ে তার গল্প শোনার মত যন্ত্রনাদায়ক কাজটা করছিলেন। এমন সময় সারা এসে ঢুকল ঘরে। মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।তখনি মেজো নানু চটে গেলেন,

“একি, বড়দের মাঝে তুমি কি করছ? দেখছ না, বড়রা এখানে গল্প করছে। আমার ছেলে মেয়েরাতো এসব ভদ্রতা জানে। তোমরাতো দেখছি কিছুই জানোনা। ”

এসব কথা শুনে মুখ কালো করে সারা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। স্কুল বন্ধ দিয়েছে। শীতের ছুটি চলছে। আজ থেকে তার শুরু হল আরেক দফা একাকী জীবন। গতবারেও শীতের ছুটিতে মেজো নানু ছিলেন। তিনি সারাক্ষণ মায়ের সাথে থাকেন আর বলেন বড়দের মাঝখানে ছোটদের আসতে নেই। ভাইটিও নিজের কাজে ব্যাস্ত থাকে। স্কুল বন্ধ বলে খেলার সাথীরাও নেই। একা একা তার কি করে সময় কাটে? কেন যে বড়রা এটা বোঝেন না। শুধু দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন, কে জানে? এই ছুটিটা যতদিন থাকবে,ততদিন তাকে এরকম একা একা বিষন্নতায় ভূগতে হবে। আর কিছুই করার নেই। এই দিনগুলোতে সারা বেশ করেই মানষিক যন্ত্রনায় ভোগে। মা সব বোঝেন, কিন্তু কিচ্ছু করতে পারেন না।সারা এটা বুঝলেও মেধা বোঝে না। তার ধারনা, মা কেন ঐ নানুটার কথা শোনেন? কেন আগের মত আদর করেন না? এসব ভেবে মায়ের সাথে তার একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে দিনকে দিন। মাও কিছু করতে পারেন না।

এভাবে দেখতে দেখতে নয়দিন কাটল। দশম দিনে সে বাগনে এক বিষ্ময় ঘটাল।….

চলবে…..

৪৫৩জন ৪৫৩জন
0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ