
হুমায়ুন আহমেদের একটা উপন্যাসের নাম আছে মেঘের উপর বাড়ি । সেই উপন্যাস আমার পড়া হয়নি । তবে মেঘের উপরের বাড়িতে একদিন অবস্থান করে আমি বুঝেছি ওখানে বসে নিঃসন্দেহে একটা উপন্যাস লিখে ফেলা যায় । বুঝতে পারছেন না? কোন জায়গার কথা বলছি? জায়গাটার নাম পাসিং পাড়া । ইহা একটি আদিবাসী গ্রাম । কেওকারাডাং পর্বত থেকে পূর্ব দিকের ঢাল বেয়ে ১০/১৫ মিনিটেই ওখানে পৌছে যাওয়া যায় । যার উচ্চতা ৩০৬৫ ফুট । ইহাই বাংলাদেশের সব চেয়ে উঁচু গ্রাম ।
পাড়ার বাসিন্দারা মূলত মুরং সম্প্রদায়ের। প্রচলিত মতে পাড়া প্রধান বা কারবারি পাসিং ম্রো- এর নামে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘পাসিংপাড়া’। ৫০/৬০ টি মুরং পরিবার বাস করে পাসিংপাড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মূল জীবিকা জুমচাষ। গ্রামের ঘরগুলোর বেড়া বাঁশের এবং টিনের চাল। পাসিংপাড়া গ্রামের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রামের মধ্য দিয়ে মেঘ ভেসে যায়। তো আসুন আমরা ক্যামেরা নিয়ে ঢুকে পড়ি পাসিং পাড়ায়।
(১) পাসিং পাড়ায় যেতে হলে কেওকারাডাং এর চুঁড়াকে পেছনে ফেলে পুব দিকের ঢাল নেমে যেতে হবে নিচের দিকে।
(২) তারপরের পথ তুলনা মূলক ভাবে সহজ।
(৩) কয়েক মিনিট হাটলেই ঘাস বনের ভেতর দিয়ে দৃশ্যমান হয় পাসিং পাড়া।
(৪/৫) কেওকারাডাং এর চুড়ায় দাঁড়িয়ে পাসিংপাড়া দেখা যায় না, তবে তবে পুব দিকের ঢাল বেয়ে কিছুটা পথ পার হলেই উপর থেকে দেখা যাবে পাসিংপাড়ার এমন রুপ ।
(৬/৭) মেঘের ভেলার অনেক উপরে পাসিংপাড়া দেখতে খুবই চমৎকার, তবে এখানকার আদিবাসীদের বিশাল একটা কষ্ট হলো অন্যান্য পাহাড়ি গ্রামগুলোতে যেমন ঝরণা থেকে পাইপের সাহায্যে ২৪ ঘন্টা অতি সহজেই পানির সরবরাহ পেয়ে থাকে এখানে সেটা নেই। কারণ কেওকারাডাং ছাড়া আসে পাশের সব পাহাড় এই পাহাড় থেকে নিচু, আর কেওকারাডাংএ কোন ঝর্ণা নাই। তাদের অনেক নিচের ঝর্ণা থেকে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয় আর বৃষ্টির পানি যতটা সম্ভব ওরা জমিয়ে রাখার চেষ্টা করে।
(৮) গ্রামে ঢোকার মুখে তোলা ছবি।
(৯) আশেপাশের পাহাড় আর নির্জনতার ছবি তুললে এমনি কিছু চোখে পড়ে।
(১০) সবাই ক্লান্ত, তাই পাহাড়ি বাতাস একটু ভালোভাবে শরীরে না লাগালে কি হয়? 🙂
(১১) বিশালাকারের পাহাড়ী ঝিঁঝিঁ পোকা । পুরো পাহাড়কে যারা মিষ্টি সূরের আবেশে মাতিয়ে রাখে সর্বদা, যার সুরেলা কন্ঠ পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে পর্যটকদের বিমোহিত করে । পাসিংপাড়ার এক ক্ষুদে আদিবাসীর হাতে সে বর্তমানে বন্দি ।
(১২/১৩) এদিন ওদের ধর্মীয় বড় কোন উৎসব ছিল, তাই আগের দিন সারারাতই ধর্মীয় আরাধনার সূর মাইকে ভেসে আসছিল, আর খানা-পিনার আয়োজন ও ছিল বেশ। শিশু থেকে বুড়ো সবাই উপস্থিত ছিল এই উৎসবে। আর সকালে বাড়ি ফেরার পথে সবার হাতেই কিছুনা কিছু নানা ধরণের ফলমূল ও খাবার ছিল।
(১৪/১৫) গ্রামের ভেতরে ঢোকার পর দেখলাম সবাই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত।
(১৬) বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য মাটিতে ওরা বেশ কিছু গর্ত খুড়ে রেখেছে।
(১৭/১৮) কেওকারাডাং এর বিপরিত দিক থেকে পাসিং পাড়াকে এমনি দেখায়।
(১৯) পাসিং পাড়া থেকে পুবের ঢাল বেয়ে খাড়া নামলেই জাদিপাই পাড়া । পাসিং পাড়ায় দাড়িয়ে জাদিপাই পাড়ার এমন সুন্দর ছবি তোলা যায় অনায়াসেই । যেন পটে আঁকা কোন ছবি । (এখানে টোকা দিয়ে জাদিপাই পাড়া নিয়ে আমার পোষ্ট দেখতে পারেন)
(২০) সব শেষে আমি সহ ভ্রমণ বাংলার আমরা কয়েকজন 😀
যদিও ভ্রমণ ট্যাগ লাগিয়েছি, এটা মূলত একটা ছবিব্লগ
২৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন সবুজে সবুজের মাঝে পাহাড়ের গায় পাড়া। ছবি গুলি কথা বলে। আপনাদের দলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মজিবর ভাই, এসব দেখার জন্য মনটা আমার সব সময় পাগল হয়ে থাকে……….শুভ কামনা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনারা দেশকে তুলে ধরছেন। খুব ভাল লাগছে কামাল ভাই।
তৌহিদ
দারুণ সব ছবি, পাসিং পাড়া সম্পর্কে আজই প্রথম জানলাম। আপনার ভ্রমণ লেখা এবং ছবি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারছি ভাই।
ধন্যবাদ জানবেন।
কামাল উদ্দিন
সাথে থেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই।
নিতাই বাবু
মনমাতানো ছবি আর সুন্দর ভ্রমণকাহিনী। ছবি দেখেই মনটা ভরে গেল। শুভকামনা সবসময়।
কামাল উদ্দিন
শুভ কামনা জানবেন নিতাই দাদা
সঞ্জয় মালাকার
মনমাতানো ছবি আর সুন্দর ভ্রমণকাহিনী। ছবি দেখেই মনটা ভরে উঠলো। শুভকামনা শ্রদ্ধে দাদা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেন।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা আর শ্রদ্ধা
মোহাম্মদ দিদার
পাসিং পারা!!
নামটা বেশ, তবে প্রথম বার জানলাম।।
কামাল উদ্দিন
যারা পাহাড়ে যায় তারা নামটা জানে, শুভেচ্ছা জানবেন দিদার ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
সবুজে সবুজে ভরা এও পাহাড় আর প্রকৃতি দেখেতে ভালই লাগে।
কামাল উদ্দিন
আমারও এসবে হারিয়ে যেতে নেই মানা, শুভ কামনা সব সময়।
মাহবুবুল আলম
“জায়গাটার নাম পাসিং পাড়া । ইহা একটি আদিবাসী গ্রাম । কেওকারাডাং পর্বত থেকে পূর্ব দিকের ঢাল বেয়ে ১০/১৫ মিনিটেই ওখানে পৌছে যাওয়া যায় । যার উচ্চতা ৩০৬৫ ফুট । ইহাই বাংলাদেশের সব চেয়ে উঁচু গ্রাম ।” বিনে পয়সায় এমন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে আনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!
কামাল উদ্দিন
মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ মাহবুব ভাই
এস.জেড বাবু
সুন্দর ছবি ৫,৮
এইবারের বেষ্ট ছবি- ২০
সময়টা ৯২, এসএসসির পরপর, জুন এর শেষদিকে উখিয়াতে ছিলাম বেশ কিছুদিন। প্রচন্ড বৃষ্টির জন্য ইচ্ছে থাকার পরও যাওয়া হয়নি। শেষে মহেশখালি ঘুরে ফেরত আসা।
এরপর প্রবাস পড়াশুনা- আর যাওয়া হল না সর্বোচ্চ শৃঙ্গে।
কামাল উদ্দিন
মহেশখালীতে একবার খুবই স্বল্প সময়ের জন্য যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। শুভেচ্ছা নেবেন ভাই।
নুর হোসেন
২ জন উপজাতী চাকমা মেয়ে আমার কলিগ ছিলো।
তারা চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের মানুষ আচরণে মোটামুটি ভালোই,
তারা অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও সময়ের অভাবে তাদের সাথে বেড়াতে যেতে পারিনি।
আপনার ফটোব্লগ দেখে আফসোস হচ্ছে,
ভারতের অনেক পাহাড় নদী চষে বেড়াচ্ছি অথচ দেশের পাহাড়গুলোই দেখা হচ্ছেনা!
পাসিং পাড়া না হোক এবার শীতাকুন্ড যেতেই পারি।
কামাল উদ্দিন
হুমম, সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণটাও বেশ ভালো হতে পারে, শুভ কামনা।
রুমন আশরাফ
দারুণ। এসব জায়গায় মজা করে ফটোগ্রাফি করা যাবে।
কামাল উদ্দিন
হুমম, যারা ফটোগ্রাফি করে তাদের জন্য এসব জায়গা স্বর্গ
জিসান শা ইকরাম
আপনার সাথে যেন মেধের দেশেই চলে গিয়েছিলাম।
পানির সংকট তো ভয়াবহ ওখানে।
পোস্ট ভাল লেগেছে।
কামাল উদ্দিন
ঠিক বলেছে ইকরাম ভাই, শুকনো মৌসুমে পানি সংকট ওখানে খুবই প্রকট হয়………শুভেচ্ছা জানবেন।
সুরাইয়া পারভিন
দুর্দান্ত ফটোগ্রাফী
চমৎকার উপস্থাপন
সত্যিই অনায়াসে লেখা যায় একটি উপন্যাস